somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষা: শিক্ষানীতিতে শিক্ষকদের নীতির প্রসঙ্গটি আনা হয়েছে কি?

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। এই মেরুদন্ডকে সোজা এবং শক্ত করার প্রয়াস চলছে যুগ যুগ ধরেই। তবে যুগ যুগ বললেও ভুল হবে। বলতে হবে, স্বাধীনতার পর থেকে এই শিক্ষাখাত নিয়ে কাজ চলছে। বিজ্ঞ ব্যক্তিদের মতামতকে অবলম্বন করে শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য কাজ করছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। গত ২৫ সেপ্টম্বর প্রথমআলো শিরোনাম করেছে আমাদের শিক্ষানীতি নিয়ে। নবগঠিত শিক্ষানীতিই এসেছে মূল প্রসঙ্গে। আবার দৈনিক সমকালের মুক্তমঞ্চ পাতায়াও দেখলাম একজন গবেষক আলোচনা করেছেন শিক্ষানীতি ও উন্নয়ন শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে।
আমি একজন ছাত্র। অতসব শিক্ষানীতি বিষয়ক কঠিন কথামালায় নিজেকে আটকাতে চাই না। আমি এও বলতে চাই না, আমি যা বুঝি তাই সর্বোত্তম। তবে আমার কিছু বলার আছে। কারণ আমার বলার অধিকার আছে।
আমি ভঙিতা না করে সরাসরি প্রসঙ্গে ঢুকে যাই। আমি শিক্ষানীতি নিয়ে ভিন্ন দুটি পত্রিকায় কলামগুলো পড়ে দেখলাম আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করার লক্ষে বিবিধ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সেই পরিকল্পনার কথার সাথে বিশিষ্ট শিক্ষক মোহাম্মদ কায়কোবাদ প্রথমআলোর খোলা কলম পাতায় গত ২৫সেপ্টম্বর কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন। এবং সরকারের এই পদক্ষেপকে প্রসংশিত করেছেন। তাই ওনার কিছু কথা দিয়েই আমি আমার পয়েন্টে ঢুকে যাই। কায়কোবাদ স্যার বলেছেন,
আমাদের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে শিক্ষা কীভাবে আমাদের জীবনধারাকে উন্নত করতে পারে, বেকারত্বের অভিশাপ থেকে দেশবাসী কীভাবে মুক্তি পেতে পারে, পৃথিবীতে আমরা একটি গর্বিত জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারব তা এই দলিলের একাধিক জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষা যে দেশ-কালের সীমানা ছড়িয়ে মানবতার, সভ্যতার, সমাজের বিকাশে ভূমিকা রাখবে, জ্ঞান সৃষ্টি এবং সত্যানুসন্ধানে মানুষকে উৎসাহিত করবে তা পরিষ্কারভাবে কোথায়ও উচ্চারিত হয়নি। কিন্তু সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীবদের শিক্ষানীতিতে এসব কথা থাকতেই হবে, আমরা যতই সমস্যাজর্জরিত থাকি না কেন।
শেষের দিকের লাইনগুলো আমাকে মর্মাহত করেছে। শিক্ষানীতির কোথাও মানবতার কথা উচ্চারিত হয়নি। হয়তো নীতিপ্রনয়ণকারীরা বলবেন, শিক্ষাই তো মানবতার সৃষ্টি করে। যদি তাই হয়, তবে তো আর আমাদের পৃথিবীতে এতো শিক্ষিত মানুষগুলো হানাহানিতে মেতে উঠতো না। মানবতার কথা না হয় শিক্ষানীতিতে উঠে আসেনি। কিন্তু তারপরও এই মানবতা কিংবা মনুষত্ববোধ কিন্তু একজন শিক্ষকই তার শিক্ষার্থীদের মাঝে জগিয়ে তুলতে পারেন। তার জন্য নীতিতে আলাদাভাবে স্থানের দরকার নেই। যদি শিক্ষকবৃন্দ শিক্ষার্থীদের মন জয় করে তারা তাদের মনের অভ্যন্তরে অধিপত্য বিস্তার করতে পারেন। একজন সুশিক্ষক অবশ্যই তা পারেন। তাই আমার প্রশ্ন মাননীয় নীতিপ্রণেতাদের কাছে, আপনাদের শিক্ষানীতিতে কি শিক্ষকদের নীতির কথা উঠে এসেছে? আপনাদের নীতিতে কি বলা হয়েছে, সুস্থ-স্বাভাবিক, প্রাণোজ্জল মানসিকতার মানুষগুলোকে দেশগড়ার কারিগর হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে? শ্রেনীকক্ষে শিক্ষার্থীদের সাথে অশালিন ব্যবহার করা মানুষগুলোকে শিক্ষকের পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার কথা কি বলা হয়েছে? নীতিকে আছে, যে শিক্ষক নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর শিক্ষার্থীদের মন জয় করতে সক্ষম না হয়ে বিষয়ের উপর ভয় ঢুকিয়ে দেয় সেসকল শিক্ষকদের বিশেষ মানসিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে?
যদি না থাকে তাহলে আমি বলবো, আপনাদের নীতি ঐ নীতিই থেকে যাবে। যে জাতির মনের পরিবর্তন হবে না সে জাতির শিক্ষার আধুনিকায়ন করে কোনো লাভ নেই।
আমি বিজ্ঞ শিক্ষাবিদদের বলতে চাই, একটু স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বেক বেঞ্চ শিক্ষার্থীদের গিয়ে প্রশ্ন করুন তারা কেনো পড়াশুনার প্রতি এতো অবহেলা করে। কেনো তারা নির্দিষ্ট বিষয়গুলোর প্রতি অনিহা প্রকাশ করে। দেখবেন নির্ভয়ে তারা কেউ না কেউ কোনো এক শিক্ষকের চড়াও হওয়ার কথা আপনাদের বলবে।
আমি নিজেও স্কুলে পড়াকালীন সময়ে দেখেছি, ভালো ছাত্র এবং খারাপ ছাত্র দুভাগে ছাত্রদের ভাগ করে আগেই ছাত্রদের মনের গহীনে পৌছে দেয়া হয় তুমি খারাপ ছাত্র, তুমি দূর্বল ছাত্র। তাই তোমাকে থাকতে হবে আলাদা। তার সমস্ত আত্মবিশ্বাসকে তখনই ভেঙে চুড়ে ফেলা হয়। কিন্তু আপনারাই বলুন এই কাজটি কি ঠিক?
এই অবহেলার দৃষ্টি তৈরী করে হতাশা। একজন শিক্ষার্থীর আত্মসম্মানবোধকে সম্পূর্ণরুপে হত্যা করা হয়। এই ক্ষতি অপূরনীয়।
কিন্তু একজন শিক্ষকের কাছে তার সকল শিক্ষার্থী সমান হওয়া উচিত। ভালো-খারাপ বলে ক্লাসের মধ্যে ডিসক্রিমিনেশান না করে দূর্বল শিক্ষার্থীদের কিভাবে আগ্রহ ফিরিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে চেষ্টা করা উচিত। তুমি চেষ্টাই করো না তাই তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না এই বলে ডাস্টবিনে ছুড়ে না ফেলে চেষ্টা করানোর জন্য দরকার হলে মানসিক কেন্দ্র তৈরী করা উচিত। ভয় নয় শিক্ষক ভালোবেসে তার বিষয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ তৈরী করবেন এমনটাই তো আধুনিক শিক্ষার নিয়ম হওয়া উচিত। আমার নিজেরও পরিচিত অনেক শিক্ষক আছেন, যাঁরা দূর্বল শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা দিতে নারাজ। শিক্ষকদের নীতির এই জায়গাটি কি শিক্ষানীতিতে আসবে? তা আমার জানা নেই।
আবার দেখলাম, ঝড়ে পড়া ছাত্রদের জীবিকার কথা নাকি শিক্ষানীতিতে এসেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ছাত্ররা কেনো ঝড়ে পড়ছে সে বিষয়ে কি কোনো গবেষণা চলছে? অথবা ঝড়ে পড়া ছাত্রদের কীভাবে আবার পড়াশুনায় ফিরিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে কি কোনো পদক্ষেপ শিক্ষানীতিতে উঠে এসেছে?
সর্বশেষে বলতে চাই, একজন মানব সন্তানকে পৃথিবীতে জন্ম দেয় পিতা-মাতা। কিন্তু সেই মানব সন্তানটির দেহে প্রাণের সঞ্চার করেন একজন শিক্ষক। আমাদের সমাজের সবচাইতে সম্মানিত ব্যক্তিরা হচ্ছেন আমাদের শিক্ষকবৃন্দ। কিন্তু কিছু কিছু অপ্রশিক্ষিত এবং কূরুচিপূর্ণ (কূরুচিপূর্ণ বলার কারণ হলো, একটি বিষয় নিয়ে আমার কথা বলতে ঘিন্না হয় তা হলো আমাদের অনেক শিক্ষকের দ্বারা আমাদের ছাত্রিরা যৌন হয়রানির শিকার হন। ) শিক্ষকরা তাদের আক্রমনাত্মক ব্যবহার দিয়ে শিক্ষার্থীদের মনকে বিষিয়ে তুলে। যে শিক্ষকের কাছ থেকে আমরা ব্যবহার শিখবো, সৌজন্যবোধ শিখবো। সেই শিক্ষকদের কাছ থেকে যদি আমরা পাই দূর্ব্যবহার, অপমানসূচক কথা যা আমার মানবসত্ত্বাটাকে ধ্বংস করে দেবে তেমন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অবশ্যই নীতিতে কিছু থাকতেই হবে। অন্যথায় শিক্ষানীতে শুধু শিক্ষাই আছে। মানবতা কিংবা ব্যক্তিত্ববোধ গড়ে উঠবে না। এ জাতির সন্তাদের মাঝে আসবে না ভালোবাসা আসবে না দেশপ্রেম। তাই সংশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি এই ছাত্রেই আকূল আবেদন, শিক্ষানীতিতে শিক্ষকদের নীতির প্রসঙ্গটিও নিয়ে আসা হোক।
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×