somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুড়ো বয়সে জন্মদিন

০৪ ঠা আগস্ট, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(গত জন্মদিনটা চলে গেছে প্রায় মাস তিনেক হলো। সিসিবিতে জন্মদিনের পোস্ট দেখে আমার প্রবাসে কাটানো দ্বিতীয় জন্মদিন নিয়ে লিখতে ইচ্ছা করছে।)

সুনীলের কবিতাগুলোর নারী চরিত্রদের একটা কমন নাম আছে নীরা। নামটা এমনিতে আহামরি কিছু না। কিন্তু সুনীলের কবিতা পড়ার পর এই নামটাই কেমন যেন আদুরে হয়ে যায়, শুনলেই প্রেম প্রেম ভাব জাগে। মনে হয় আলতো করে ডাক দেই… নী…ই…রা। তারপর দরজার দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা হয় , চম্পাকলির মতো আঙুল দিয়ে ভেজানো দরজাটা খুলে যদি কেউ আসে! যদি কেউ আসে!! আমার বউ এই ব্লগ পড়ে না- এই বিশ্বাসে কতগুলো বেফাঁস কথা বলে ফেললাম। আশা করি সে পড়বেও না। যদি পড়ে, তাহলে আমার নামে ব্লগে যে স্মৃতিচারণমূলক কোন পোস্ট দিতে হবে না সে কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। যাহোক, আসল কথায় আসা যাক। জন্মদিনের সাথে প্রেম পিরীতির যোগাযোগ করিয়ে দিয়ে সুনীলের একটা লাইন আছে - নীরা, মাঝে মাঝে মনে হয় তুমি আমার জন্মদিনের থেকেও দূরে। স্মৃতি থেকে লাইনটা কোট করলাম, হুবুহু নাও হইতে পারে। আমি অবশ্য সুনীলের মতো না, জন্মদিনের প্রতীক্ষায় থাকি না এখন আর। জন্মদিনে গত কয়েক বছর ধরে হালকা বিষন্নতা চেপে বসে আমাকে- বয়েস বেড়ে যাচ্ছে। কৈশোরে অবশ্য একটা আগ্রহ কাজ করতো, কবে ১৫ হবো! ১৫ ছোঁয়ার পর মনে হতো, কবে ২০ হবো! ২০ ছোঁয়ার পর ২৫ হওয়াটা আর আগ্রহের ব্যাপার থাকেনি, একটা ভীতির ব্যাপার হয়ে গিয়েছিল। খুব বেশি বড় হয়ে যাওয়ার ভীতি। গত জন্মদিনে ঠিক এই ব্যাপারটাই হয়েছে, ২৫ ছুঁয়ে ফেলেছি। যদি ধরে নেই ৭৫ বছর বাঁচব (চান্স কম আমার ধারণা), তাহলে জীবনের দুই-তৃতীয়াংশ পার করে ফেলছি। শতাব্দীর হিসাবে পোয়া শতাব্দী। ভাবতেই মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠে। জীবনের হালখাতায় খুব বেশি জমা হয়নি, ভাবলে চক্করটা আরো জোরে চক্কর দেয়।

বাংলাদেশ এখানের সময়ের থেকে সাড়ে আট ঘন্টা এগিয়ে। ফোন করার টাইমিং হিসাবে বেশ ভালো। রাতে শোবার আগে আগে বা সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই দেশে কথা বলা যায়। দিনে ফোন করার ঝামেলা করতে হয় না। আমিই সাধারণত ফোন করি। কারণ দেশ থেকে আমাকে ফোন করলে প্রতিমিনিটের খরচ আমি দেশে ফোন করার তিনগুণ বেশি। তাই সবাইকে নিষেধ করে দিয়েছি দেশ থেকে ফোন না করতে। করলেও লাইন কেটে দিয়ে আমি ব্যাক করি। এখানে তখন জন্মদিনের আগের দিন, দেশে অবশ্য রাত বারোটা বেজে গিয়ে পরের দিন হয়ে গিয়েছে। আমি ফোন করি বাসায়, আম্মা রাত বারোটায় ফোন করার পাঁয়তারা করবে জানি। আম্মার সাথে কথা বলার পর বউকে ফোন দেই। সে দুর্লভ কিছু মিষ্টি মিষ্টি কথা শোনায়, দেশে ফেরার পর কোথায় কোথায় ঘুরতে যাব তার প্ল্যান করে। আমার বত্রিশ ঘন্টার জন্মদিন শুরু হয়ে যায়। ফেসবুকের বদৌলতে পোলাপান উইশ করে, আমি মনে মনে একটু সংকুচিত হই। সম্মিলিত ভালোবাসার বিশালতার সামনে নিজেকে অকিঞ্চিৎকর মনে হয়। দিনটা বাসার ভেতরেই কাটাই, স্পেশাল কিছুও রাঁধি না। কয়েকটা সসেজ ওভেনে গরম করে হটডগ বানিয়ে টমেটো সস দিয়ে খেয়ে ফেলি। বিস্বাদ লাগে বটে, কিন্তু কিছু করার নাই। পরের দিন সুপারের সাথে মিটিং, সেজন্য মাল মসলা রেডি করতে হবে। সুতরাং জন্মদিনটা কেটে যায় ঘরের ভেতর, লেপের নিচে, ল্যাপির সাথে। খুব দুঃখ লাগে যে তা না, বয়েস ২৫ হয়েছে- এতে আনন্দ করার কিছু খুঁজে পাই না। অবশ্য আমার কাজ তখন একটা এক্সাইটিং স্টেজে ছিল, কাজ করতে তাই ভালোই লাগছিল।

জন্মদিনের সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজটা পেলাম রাতের দিকে, ফেসবুকে। দোস্তদের লিস্টে আমার সুপারও আছে, সে ওয়ালে জন্মদিনের উইশ করেছে - Happy birthday Taufiq. I know you didn’t do anything today, but that’s OK. সে জানে গত কয়েকদিন বেশ ভালোই ঝড় গেছে আমার উপর দিয়ে, প্রতি দুই দিনে একবার করে মিটিং করেছি। জন্মদিনের উইশেও আমার দুরবস্থা নিয়ে রস করতে ছাড়ে নাই। হাসবো না কাঁদবো বুঝতে না পেরে কাজে মনোযোগ দিলাম। পরের দিন ঘুম থেকে উঠলাম দেরিতে, দশ মিনিটে শাওয়ার আর ড্রেস আপ করে রওনা দিলাম ভার্সিটির দিকে। মিটিং-এ এমনিতেই দেরি হয়ে যাবে। সুপারের অফিসে গিয়ে দেখি তার বউ বসে আছে। সুপার এইবার সরাসরি উইশ করলো, দেখাদেখি তার বউও। এইবারও নিস্তার দিল না সুপার, বউয়ের সামনে আমি বুড়া হয়ে যাইতেছি দেখে মশকরা করলো। আমি মনে মনে বলি, টাকলু, মানুষের বুড়ো হওয়াতে মশকরা করার আগে নিজের দিকে তাকা।

তবু সুপারকে ধন্যবাদ। উনার কারণেই জন্মদিনে বুড়ো হওয়ার যন্ত্রণা ভুলে হাসতে পারলাম একটু।

গল্পের মোরালঃ অগ্রজপ্রতিম কামরুল ভাই আরেকটু বেশি বুড়া হয়ে গেলেন। জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা। ভালো থাকবেন কামরুল ভাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৩৬
৭টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×