(গত জন্মদিনটা চলে গেছে প্রায় মাস তিনেক হলো। সিসিবিতে জন্মদিনের পোস্ট দেখে আমার প্রবাসে কাটানো দ্বিতীয় জন্মদিন নিয়ে লিখতে ইচ্ছা করছে।)
সুনীলের কবিতাগুলোর নারী চরিত্রদের একটা কমন নাম আছে নীরা। নামটা এমনিতে আহামরি কিছু না। কিন্তু সুনীলের কবিতা পড়ার পর এই নামটাই কেমন যেন আদুরে হয়ে যায়, শুনলেই প্রেম প্রেম ভাব জাগে। মনে হয় আলতো করে ডাক দেই… নী…ই…রা। তারপর দরজার দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা হয় , চম্পাকলির মতো আঙুল দিয়ে ভেজানো দরজাটা খুলে যদি কেউ আসে! যদি কেউ আসে!! আমার বউ এই ব্লগ পড়ে না- এই বিশ্বাসে কতগুলো বেফাঁস কথা বলে ফেললাম। আশা করি সে পড়বেও না। যদি পড়ে, তাহলে আমার নামে ব্লগে যে স্মৃতিচারণমূলক কোন পোস্ট দিতে হবে না সে কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। যাহোক, আসল কথায় আসা যাক। জন্মদিনের সাথে প্রেম পিরীতির যোগাযোগ করিয়ে দিয়ে সুনীলের একটা লাইন আছে - নীরা, মাঝে মাঝে মনে হয় তুমি আমার জন্মদিনের থেকেও দূরে। স্মৃতি থেকে লাইনটা কোট করলাম, হুবুহু নাও হইতে পারে। আমি অবশ্য সুনীলের মতো না, জন্মদিনের প্রতীক্ষায় থাকি না এখন আর। জন্মদিনে গত কয়েক বছর ধরে হালকা বিষন্নতা চেপে বসে আমাকে- বয়েস বেড়ে যাচ্ছে। কৈশোরে অবশ্য একটা আগ্রহ কাজ করতো, কবে ১৫ হবো! ১৫ ছোঁয়ার পর মনে হতো, কবে ২০ হবো! ২০ ছোঁয়ার পর ২৫ হওয়াটা আর আগ্রহের ব্যাপার থাকেনি, একটা ভীতির ব্যাপার হয়ে গিয়েছিল। খুব বেশি বড় হয়ে যাওয়ার ভীতি। গত জন্মদিনে ঠিক এই ব্যাপারটাই হয়েছে, ২৫ ছুঁয়ে ফেলেছি। যদি ধরে নেই ৭৫ বছর বাঁচব (চান্স কম আমার ধারণা), তাহলে জীবনের দুই-তৃতীয়াংশ পার করে ফেলছি। শতাব্দীর হিসাবে পোয়া শতাব্দী। ভাবতেই মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠে। জীবনের হালখাতায় খুব বেশি জমা হয়নি, ভাবলে চক্করটা আরো জোরে চক্কর দেয়।
বাংলাদেশ এখানের সময়ের থেকে সাড়ে আট ঘন্টা এগিয়ে। ফোন করার টাইমিং হিসাবে বেশ ভালো। রাতে শোবার আগে আগে বা সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই দেশে কথা বলা যায়। দিনে ফোন করার ঝামেলা করতে হয় না। আমিই সাধারণত ফোন করি। কারণ দেশ থেকে আমাকে ফোন করলে প্রতিমিনিটের খরচ আমি দেশে ফোন করার তিনগুণ বেশি। তাই সবাইকে নিষেধ করে দিয়েছি দেশ থেকে ফোন না করতে। করলেও লাইন কেটে দিয়ে আমি ব্যাক করি। এখানে তখন জন্মদিনের আগের দিন, দেশে অবশ্য রাত বারোটা বেজে গিয়ে পরের দিন হয়ে গিয়েছে। আমি ফোন করি বাসায়, আম্মা রাত বারোটায় ফোন করার পাঁয়তারা করবে জানি। আম্মার সাথে কথা বলার পর বউকে ফোন দেই। সে দুর্লভ কিছু মিষ্টি মিষ্টি কথা শোনায়, দেশে ফেরার পর কোথায় কোথায় ঘুরতে যাব তার প্ল্যান করে। আমার বত্রিশ ঘন্টার জন্মদিন শুরু হয়ে যায়। ফেসবুকের বদৌলতে পোলাপান উইশ করে, আমি মনে মনে একটু সংকুচিত হই। সম্মিলিত ভালোবাসার বিশালতার সামনে নিজেকে অকিঞ্চিৎকর মনে হয়। দিনটা বাসার ভেতরেই কাটাই, স্পেশাল কিছুও রাঁধি না। কয়েকটা সসেজ ওভেনে গরম করে হটডগ বানিয়ে টমেটো সস দিয়ে খেয়ে ফেলি। বিস্বাদ লাগে বটে, কিন্তু কিছু করার নাই। পরের দিন সুপারের সাথে মিটিং, সেজন্য মাল মসলা রেডি করতে হবে। সুতরাং জন্মদিনটা কেটে যায় ঘরের ভেতর, লেপের নিচে, ল্যাপির সাথে। খুব দুঃখ লাগে যে তা না, বয়েস ২৫ হয়েছে- এতে আনন্দ করার কিছু খুঁজে পাই না। অবশ্য আমার কাজ তখন একটা এক্সাইটিং স্টেজে ছিল, কাজ করতে তাই ভালোই লাগছিল।
জন্মদিনের সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজটা পেলাম রাতের দিকে, ফেসবুকে। দোস্তদের লিস্টে আমার সুপারও আছে, সে ওয়ালে জন্মদিনের উইশ করেছে - Happy birthday Taufiq. I know you didn’t do anything today, but that’s OK. সে জানে গত কয়েকদিন বেশ ভালোই ঝড় গেছে আমার উপর দিয়ে, প্রতি দুই দিনে একবার করে মিটিং করেছি। জন্মদিনের উইশেও আমার দুরবস্থা নিয়ে রস করতে ছাড়ে নাই। হাসবো না কাঁদবো বুঝতে না পেরে কাজে মনোযোগ দিলাম। পরের দিন ঘুম থেকে উঠলাম দেরিতে, দশ মিনিটে শাওয়ার আর ড্রেস আপ করে রওনা দিলাম ভার্সিটির দিকে। মিটিং-এ এমনিতেই দেরি হয়ে যাবে। সুপারের অফিসে গিয়ে দেখি তার বউ বসে আছে। সুপার এইবার সরাসরি উইশ করলো, দেখাদেখি তার বউও। এইবারও নিস্তার দিল না সুপার, বউয়ের সামনে আমি বুড়া হয়ে যাইতেছি দেখে মশকরা করলো। আমি মনে মনে বলি, টাকলু, মানুষের বুড়ো হওয়াতে মশকরা করার আগে নিজের দিকে তাকা।
তবু সুপারকে ধন্যবাদ। উনার কারণেই জন্মদিনে বুড়ো হওয়ার যন্ত্রণা ভুলে হাসতে পারলাম একটু।
গল্পের মোরালঃ অগ্রজপ্রতিম কামরুল ভাই আরেকটু বেশি বুড়া হয়ে গেলেন। জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা। ভালো থাকবেন কামরুল ভাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৩৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




