লেবু অতিরিক্ত কচলালে তিতা হয়ে যায় এটা গতকাল বুঝতে পারলাম। হুমায়ন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকীতে যা চলল সেটা লেবু কচলানির মতই মনে হলো। একটা বিখ্যাত মানুষকে নিয়ে মাতামাতি হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে এতোটা। বেচে থাকতেও কি তিনি এতোটা পেয়েছিলেন। তার লেখাগুলো কালজয়ী নয় তবে তার লেখাগুলো আনন্দদায়ক। গতকাল ফেসবুক এ যা দেখলাম তাতে কোনভাবেই মেনে নিতে পারলাম না। কিছু মানুষ যারা বরাবরই হুমায়ন আহমেদকে দুই চোখে দেখতে পারতেন না , তারাও দেখলাম নাকের জল, চোখের জল এক করে ফেলেছেন। আমার একটাই প্রশ্ন যিনি গিয়েছেন তিনি তো ফিরে আসবেন না, তবে যারা আছে তাদের মধ্যে থেকে কেউ কি বের হবেন না? আমার মনে হয় না। কারন আমরা এখন যান্ত্রিকতার দাস। গতকাল একটা লেখা পড়েছিলাম।
এক রিক্সাওয়ালা চাচার সহজ স্বীকারউক্তি, ‘এখন মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছে না, কিন্তু ভেতরে ভেতরে প্রত্যেকটা মানুষই মৃত’। নির্মম সত্যিটা উনি কিভাবে জানলেন, জানিনা। তবে আমরা কেউ ভালো নেই এতটুকু বুঝতে পারি। আরেকজন ভালো লেখক কি আমরা এখনও পেয়েছি? আদৌ কি পাবো? যে সমাজ কবিকে মেরে কবিতার পুজা করে তাদের কি এতটা আশা করা ঠিক?
গতকাল এক বন্ধুর সাথে কথা হচ্ছিলো। সে আমাকে বলল, আমার মনে হয় আমাদের এই বাংলাদেশে ১০০ জন মানুষের মধ্যে একজন হুমায়ন আছে, একজন কিশোরকুমার আছে, একজন মান্না দে আছে, একজন নজরুল আছে, একজন সত্যজিৎ রায় আছে। কিন্তু সমস্যাটা হল এরা কেউ নিজেদের নিয়ে জানতে পারে না, অথবা অঙ্কুরেই বিনাশ করা হয় এদের।
একটা উদাহরণও দিলো। একদিন সে আর তার এক বন্ধু রিক্সায় করে যাচ্ছে। ঝড় আসলো পথের মাঝে। তারা দুজন বৃষ্টির হাত থেকে বাচতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছিলো। অইসময় সেই রিক্সাচালক একটা ক্যাপ মাথায় দিয়ে গান ধরল। অসম্ভব সুন্দর গলা তার, মনে হয় গড গিফটেড। আমার এই বন্ধুটি তাকে বলল, আপনি তো অনেক সুন্দর গান করেন। রিক্সাচালকের উত্তর, লাভ কি ভাই বলেন, ঐ আপনাদের মতো দু একজন হয়ত বা বাহবা দেয়, শেষ ঐ পর্যন্তই।
আমরা এই মানুষগুলোকে শেষ করছি, যার হবার কথা একজন ভালো লেখক সে ব্যাংক এ বসে বসে হিসাব কষছে। এটা আমার কথা না , এটা সম্ভবত আব্দদুলাহ আবু সায়ীদ স্যারের কথা। কিন্তু আশেপাশে তাকান এরকম অনেক কিছুই চোখে পড়বে। যারা কিছুই পারে না তারাই দেখি ইনোভেটিভ জিনিষ তৈরী করছে। হাস্যকর কিছু জিনিষ যা দেখলেই বমি পায়।
আমি এমন একজন মানুষকে চিনি যার অভিনয় আমার মনে হয়েছে এখনকার টি.ভি অভিনেতাদের চেয়ে হাজারগুন ভালো। অথচ চাপে তিনি আজ ব্যাংক এ জব করেন। খুজেন, খুজলেই পাবেন এরকম হাজারো মানুষ। আরেকজন কবিতা লেখককে চিনি যিনি কাজের চাপে কবিতা হারিয়ে ফেলেছেন।
খুজতে বলছি কারন ,যিনি চলে গেছেন তাকে ফেরানো সম্ভব না। কিন্তু যারা আছে তাদের থেকে ভালো কিছু বের করে আনা সম্ভব। মরা কান্না কেঁদে তো লাভ নেই।
আমাদের সমস্যা হচ্ছে যদি আপনি আপনার পরিবারের কারো কাছে বলেন আমি অভিনেতা হতে চাই, এতো জোরে দৌড়ানি খাবেন, যে অইমুখো হবার সাহস পাবেন না। লেখক হতে চাইলেও একই অবস্থা। অথচ পাশের দেশে দেখেন একজন লোক খুব সিম্পলভাবে ইচ্ছাপূরণের গল্প লিখে সমাদৃত। থ্রি ইডিয়টের লেখকের নাম মনে আছে কারো? সেই লোকটার লেখা আমার কাছে ইচ্ছাপূরণের গল্পই মনে হয়েছে। একটা ছেলের পড়ার প্রতি ভালোবাসা, একজনের লেখক হতে চাওয়া।
আমাদের এখন প্রচুর বই পড়া দরকার। কিন্তু যেই বই পড়তে যান আগেই প্রশ্ন বইটা কি তোমার জন্যে উপযুক্ত!? এখনো যদি কোন বই উপযুক্ত না হয় তবে আর কবে হবে। গতকাল এক বড়ভাইয়ের কথা ভালো লেগেছিলো, উনি বললেন , যতই পড়ালেখা করবি ততই উন্নত হবি। কথাটা সত্যিই মনে হল। আর এখনকার যুগে কাউকে দেখি না একটা ভালো বইয়ের নাম বলতে। এমনকি আমি নিজেও। লিখছি কারন অভ্যাসে পরিবর্ত্ন আনা প্রয়োজন, লিখে যদি নিজের পরিবর্ত্ন আনতে পারি ক্ষতি কি?
আমাদের স্কুলের বাচ্চাদের প্রথমেই শিক্ষা দেয়া হয় অ তে অজগরটি আসছে তেড়ে। কেনো আসছে , কি কারনে এটা আমার পড়ার দরকার এটা নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই। আসলে আসুক, অজগর আসলে তার সঙ্গে কিছুক্ষন গল্প করে নেয়া যাবে। আমরা বড় হয়েও একই অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাই। একটা সরকারী চাকরি পেতে গেলে মুখস্থ করতে ইরানের মুদ্রার নাম কি? এটা আমার কি কাজে লাগবে আদৌ কোন কাজে লাগবে কি না এটা কেউ ভেবে দেখি না। ভালো তো নতুন জিনিষ শিখলাম। যদি কখনো ইরান যাই কাজে লাগবে। আমার কথা হচ্ছে কি লাভ এটাতে। সবসময় অলীক কিছুর পেছনে দৌড়ানো বাঙ্গালীর স্বভাব। আর ব্রিটিশরা খুব সুন্দর মতো গেথে দিয়ে গেছে এটা।
চাকর হবার জন্যে পড়াশুনার কি দরকার আমার মাথায় ঢোকে না। যদিও জানি হতে হবে শেষ পর্যন্ত চাকরই। তবু বলি মনের খোরাক মিটিয়ে চলুন, আর যাদের সুযোগ আছে তারা দয়া করে ঐ মানুষগুলো খুঁজে বের করুন। নইলে যেভাবে আগাচ্ছে তাতে আমাদের নিজস্ব কোনকিছুই আর অবশিষ্ট থাকবে না।
হুমায়ন আহমেদ আপনি যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন । এদিকে কোথাও কেউ নেই!!