somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প ঃ মন

২৩ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অতৃপ্ত


তুষার পৈশাচিক একটা আনন্দ পাচ্ছে। আজ চারদিন কোথাও বের হয়নি। রুদ্ধদ্বার ছিলো। আপাতত একটা বন্ধুর মেসে আছে। ওর বাসা থেকে খুজছে। কিন্তু পাচ্ছে না। আসার আগে মাকে বলে এসেছে, আগামী চারদিন আমি একটু বাইরে থাকবো। মা অমত করে উঠতেই রাগী চোখে তাকালো। মা আর কিছু বলল না। উনি নিজের ছেলেকে চেনেন। আর যাই হোক এতটুকু ঘটনার জন্য সে নিজের বিপন্ন করার মতো ছেলে না

অদ্ভুত একটা আনন্দে মনটা ভরে গেছে। হোক সেটা কষ্ট দিয়ে তবু একটা দায় থেকে তো মুক্ত সে। এখন ২০টা সিগারেটের প্যাকেটের শেষ সিগারেটটা ধরাচ্ছে। ধোয়ার সাথে সাথে মেয়েটার স্মৃতিও দূরে চলে যাচ্ছে। আর কোনদিন মনে পড়বে না ওকে। গত চারদিন ঘুম, খাওয়া সব বাদ দিয়ে নিজের সাথে যুদ্ধ করে নিজেকে মানিয়েছে। অঝোর ধারায় কেঁদেছে। কিন্তু মায়ের কথাটা ফেলতে পারে নি।

ওদিকে পাপড়িরও বিয়ের বয়স চলে যাচ্ছে। কিছু একটা তো করতে হতো। তাই মানুষের হাতে থাকা শেষ অপশনটা তুলে নিল। যাও সবাই চলে যাও, আমার পৃথিবীতে আসা একা, আমার যুদ্ধ একার, তোমাদের কাউকে প্রয়োজন নেই আমার। আমি ভালো ছিলাম, আছি থাকবো।

চারদিনের প্রথম দিন ওর নিজের সাথে কথা বলতে বলতেই কেটে গেছে। মা কেন এমন করলো? পাপড়িকে চেনে ও থার্ড ইয়ার থেকে। একই ব্যাচ কিন্তু অন্য সাবজেক্টে পড়ত। একদিন আড্ডায় বসেছিলো। ওদের দুজনের কিছু বন্ধু-বান্ধব। সেখান থেকে সম্পর্ক কখন এতো দূরে চলে এসেছে খেয়াল করে নি কেউ! হয়ত দরকার পরে নি। যা চলছে চলুক। মাস্টার্স কমপ্লিট করার পর যখন পাপড়ি বলতে লাগলো এবার কিছু কর তখনও সে বলেছিলো একটা চাকরি পেয়ে নেই। এখনও চাকরি পায় নি তাই সব্বাইকে মুক্তি দিলো।

দ্বিতীয় দিন ভেবেছে শিক্ষা ব্যবস্থাটা পরিবর্তন করা দরকার। তার মতো এরকম কতজন কষ্ট পাচ্ছে এই কেরানী ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থায়। যেই সার্টিফিকেটগুলো আছে তা দিয়ে তো একটা চাকরিও পেলো না সে। অথচ সবগুলাতেই তার প্রথম শ্রেনী আছে। তবে কি সব কিছু তৃতীয় শ্রেণীর লোকদের জন্যে? তৃতীয় বিশ্বের দেশ বলে?

তারপর ভালো কি দরকার এতো ঘাটাঘাটি করে। আজ তৃতীয় দিন, পাপড়ির বিয়ে। আজও সে ভুলতে পারে না পাপড়ির সাথে প্রথম ঘুরতে যাবার দিনটা। পাপড়ি এসেছিলো নীল রঙের একটা শাড়ি পরে। মাথার সামনে চুলগুলো অবাধ্য হয়ে ছোটাছুটি করছিলো। মনে হয়েছিল একদল দুস্ট বালকদল খেলা করছে কপালের উপর, তুষারের সেই বালকগুলোর উপর এতো অভিমান হয়েছিলো। সে যদি অইরকম হত তবে আজ ঐ কপালে খেলা করতে পারত। আজকেও একই অনুভুতি হচ্ছে, ভাবছে ইস, যদি আমি ঐ চুলগুলো হতাম তাহলে আজ আমিও বিয়েতে থাকতে পারতাম।

২০টা প্যাকেট উড়িয়ে দিয়ে আজ ভালো লাগছে। আজ চতুর্থ দিন শেষ সিগারেটটা ধরিয়ে বাইরে এসেছে। বাইরে আযান দিচ্ছে। আযানের ধ্বনি কানে এসে বাজছে।
“আল্লাহ হু আকবর, আল্লাহ”
তুষার চুপচাপ ভাবছে, যে সার্টিফিকেট জীবনের দাম দেয় না তার কি মুল্য আছে? বেচে থাকার জন্যে কিছু অবলম্বন তো প্রয়োজন। সেই প্রয়োজনগুলো যখন পুরন হয় না তখন এক এক করে আশেপাশে থেকে সবাই বিদায় নিতে থাকে। পৃথিবীটা সত্যি খুব নিষ্ঠুর, বড় বেশী সার্থপর।

পাপড়ির বিয়ের সানাইটা মধ্যরাতে থেমে গেছে।বিয়েটা হয় নি। কুলটা বলে ভেঙ্গে দিয়েছে। যে পাত্র পি.এইচ.ডি ডিগ্রি ধারী সে বলেছে, মেয়ের আরেকটা রিলেশন ছিলো। আমি একে বিয়ে করতে পারবো না।আমার ফ্রেশ মেয়ে লাগবে!

পাপড়ির মনে খুব কষ্ট লাগলো। একজন মানুষকে ভালোবাসলেই যদি সে নষ্ট হয়ে যায়, তো পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষ দূষিত। আর মেয়েরা কি ফল নাকি যে তাদের ফ্রেশ না পচা বিচার করতে হবে? কথাগুলো মুখের উপর বলতে ভালো লাগতো।

পাপড়ির ভালো লাগছে একদিক দিয়ে, এ যাত্রায় তো বেঁচে গেলো। তুষারের কাছে ফিরে যেতে পারবে, পাপড়ি ঘরের বাইরে এসে ভাবছে, ঈশ্বর যা করে তা হয়ত ভালোর জন্যেই করে!!!
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×