ছবির নাম পিপড়াবিদ্যা
ফারুকী সাহেবের ব্যাপক প্রচারনায় লোকজন জানতে পেরেছেন, একটি ছবি এসেছে নাম পিপড়াবিদ্যা। নামটা অদ্ভুত, তবে ছবির ভিতরে যে সামগ্রীগুলো আছে, মানে যা দিয়ে ছবিটা তৈরী সেগুলো আপনার আমার পাশের অংশ থেকেই তুলে আনা।
ছবিতে প্রথমেই দেখানো হয়েছে এক সদ্য মাস্টার ডিগ্রী পাশ করা যুবক যে বেকারত্তের গ্লানি আচ্ছন্ন। বাসা থেকে কথা শুনে যার মেজাজ সবসময় খিটমিটে হয়ে থাকে। মধ্যবিত্ত পরিবারের টানাপোড়েন।একটা সেলসম্যানের চাকরী পায়। এই ধরেই গল্পের কাহিনী এগিয়ে যায়। সেইসময় তার এম এল এম কোম্পানীর একজন লোকের সাথে পরিচয়। সে তাকে একটা মোবাইল কেনার টাকা দেয়, সে ব্ল্যাকে মোবাইলটা কেনে।তারপর থেকেই তার জীবনে যত ধরনের সমস্যা শুরু।
এক নায়িকার সাথে পরিচয়। তার সাথে চলাফেরা। পুরানো ঢাকা আর কক্সবাজারের লোকেশনগুলো নেয়া। কোন একটা গল্পে পড়েছিলাম যখন একটা নিরীহ মানুষের হাতেও বন্দুক থাকে তখন সেই মানুষটাও পাখির দিকে শ্যেন দৃষ্টিতে তাকায়। এখানেও আছে একটা বেকার যুবক যে অল্পসময়ে অনেক টাকা ইনকাম করতে যেয়ে নিজেকে পাকে ফেলে দেয়।
ফারুকী সাহেবের সবগুলো সিনেমার বৈশিষ্ট্য, শেষে প্রশ্ন দর্শকদের দিকে ছুড়ে দেয়া। এখানেও তার ব্যতিক্রম হয় নি। ছোট ছোট গল্পে কথার ভাজে আরো কিছু চিন্তা ছেড়ে দেয়া। তবে এ ছবি মাথার উপর দিয়ে গিয়ে দেয়ালে দাগ হবার মতো না, এ ছবিতে নির্মল বিনোদন যে খোজে সে পাবে, ভাবুক ভাবনার খোরাক পাবে। সবার কাছে পরিচিত ঘটনাগুলোই সেলুলয়েড ফিতাতে বন্দী হয়েছে। এখন বিষয়টা হচ্ছে কে কিভাবে দেখছে বিষয়গুলো।
ডায়লগ নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই, ডিরেক্টর এখানে সবসময়ই মুন্সিয়ানা দেখিয়ে থাকেন, ফারুকী সাহেব বলে কথা! মেকিং অত বুঝি না,তবে ফিনিশিংটা একটু আনফিনিশড, যদিও এটা পরিচালকের একান্ত ইচ্ছা। ক্যামেরার কারসাজি নেই, এঙ্গেলগুলো ভালোই।নতুনত্ত লেগেছে ভারতীয় সিরিয়ালে এক ডায়লগ বিভিন্ন এঙ্গেলে দেখায় আর এখানে স্বপ্নের কথা, মানে একটা মানুষের স্বপ্নের পর্যায় কয়েকভাবে ধরা হয়েছে। তবে গানে একটু ভিন্ন স্বাদ আছে, খুব অল্প সময়ের গান, তবে কোরিওগ্রাফিটা ভালো লেগেছে।
ইমরান মিঠুকে দেখে মনে হয় নি তার প্রথম ছবি এটা আর শিনা চৌহানও অনেক ভালো অভিনয় করেছেন। তবে এ ছবিতে বাবার কাজটা কি কিছুই বুঝতে পারি নাই। আর শুট্যিংটা আরো বেশী রিয়েলস্টিক করা যেতো।
এ ছবিতে একটা জিনিষ খুব ভালোমতো বুঝিয়ে দিয়েছে, ছেলেদের কিছু না থাকলেও তারা এক ধরনের অহংকার নিয়ে চলতে পছন্দ করে, মানে যা চায় তা পাওয়ার জন্যে উদগ্রীব হয়ে থাকে, কিন্তু মেয়েরা চাইলেই পারে না। আর একটা মানুষের দুর্বলতার কিছু যদি অন্য কারো কাছে চলে যায় তবে সে সেটার কত ধরনের সুবিধা নিতে পারে তাও দেখিয়েছেন পরিচালক।
বেকার যুবকের হাতে হুট করে বড়লোক হবার স্বপ্নে সে কতোটা নিচে নামতে পারে তাও বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে ছবিটা বাস্তবতার গল্প। তবে ব্যতিক্রম যে যার লোভ থাকে না সে হুট করে লোভে পড়লে তাকে কি যেনো পুড়িয়ে মারে। ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়, নৈতিকতার অবক্ষয়ও খুব ভালোভাবেই তুলে এনেছেন। আর মোবাইলের ভুল ব্যবহার!!সবচেয়ে বড় কথা, লোভে পাপ আর পাপে যা মন চায় বসিয়ে নিতে পারেন...
সবাইকে হলে গিয়ে দেখার অনুরোধ করছি ছবিটা। অন্তত বাস্তবতার জায়গাটা দেখতে পাবেন। আমরাতো উট পাখির মতো থাকি, এবার একটু তাকাই, দেখি বাস্তব কি বলে!