ব্লগার দার্শনিক এর জবাব পড়ে মনে হলো উনি কোরআনের ২৯ টি আয়াতের কাদিয়ানী ব্যখ্যা যে ভুল তা মেনে নিয়ে এখন ১ টি আয়াত দিয়ে যুক্তি লড়তে চাইছেন। কাদিয়ানীরা অহংকার করে বলতো যে কোরআনের ৩০ টি আয়াতের মাধ্যমে নাকি তারা প্রমাণ করতে পেরেছে যে ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ) আর জীবিত নন। এখন সুর পালটে বলছে একটি আয়াত দিয়ে প্রমাণ করতে পারলেই হবে।
যাই হোক কিছু টা হলেও তারা তো বুঝতে পেরেছে কোরআনের ভুল ব্যখ্যা সহ ব্যখ্যা দিয়ে শুধু শুধু যুক্তির সংখ্যা বারিয়ে মিথ্যাকে সত্য হিসাবে প্রমান করা সম্ভব নয়।
আগ্রহী পাঠকদের প্রথমেই দুটি লিঙ্ক দিচ্ছিঃ
ঈসা (আঃ) এর সম্পর্কে কোরআনের ৩০ টি আয়াতের আহমদিয়া/কাদীয়ানীদের ভুল ব্যাখ্যার জবাব
এবং
ঈসা (আ) এর স্বাভাবিক মৃত্যু: ব্লগার সত্যজিগীষার ভুল সংশোধন
প্রথমেই আসি আমরা যেই জবাব দিয়াছিলাম তার প্রতিউত্তরে তারা কি কি বললেন । প্রথমেই আমরা যেই হাদীসটি উল্লেখ করলাম তা হলো বুখারী শরীফের ত্রিশজন মিথ্যা নবী/রাসুলের আগমন প্রসঙ্গে। অনেকটা প্রত্যাশিত ভাবেই ব্লগার দার্শনিক সেটা এরিয়ে গেলেন। কাদিয়ানীরা এই হাদিসে খুব একটা সাচ্ছন্দ বোধ করে না। তাদের কাদীয়ানী নবীই যদি ভুয়া হয় তাহলে তার বচন-বাচন এর তো আর মুল্য থাকেনা।
ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ) এর আম্মা মরিয়ম (আঃ) যিনি অত্যন্ত সম্মানিত। গোলাম কাদিয়ানীর আম্মা কি মরিয়ম (আঃ)?গোলাম কাদিয়ানীর আব্বা আম্মা দুইজনের মিলিত ফসল ভণ্ড গোলাম কাদিয়ানী।গোলাম কাদিয়ানী কিভাবে ঈসা (আঃ) হলেন তা বোধগম্য হলো না। যাই হোক, বুখারী শরীফের আমরা যে হাদিসটি দ্বিতীয় স্থানে উল্লেখ করলাম তার ও বিষয়বস্তুতে না গিয়ে তিনি দুই জন ভিন্ন ঈসা (আঃ) এর অস্তিত্ত্ব নিয়ে আসলেন।আর আপনারা কাদিয়ানীরাও ভাই আজব চীজ(প্রানী!!) মানুষের আকাশে উঠা বিশ্বাস করেন না আর হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) মিরাযের হাদিসের রেফারেন্স দেন!!
বললেন হাদিসে আছে একজন ঈসা (আঃ) এর চুল আলুথালু, আরেকজনের টা সোজা। তাইলে একইজনের দুই রকম চুল হয় কীভাবে?
আপনি বল্লেনঃ
‘একজনের দু'টো অবয়ব হয় কিভাবে? ‘
মানুষের সোজা চুল কি কখনো আলু থালু হয় না? এতে অবয়ব পরিবর্তন হয় কিভাবে? হায়রে আহাম্মক আহমদীয়া!!
আর আপনাদের গুরু ভণ্ড মির্জা গোলাম কাদিয়ানীর কাছে যেই অহী আসছিল আপনাদের পবিত্র গ্রন্থ তাজকিরাহের ২০০৯ এডিশনের ২৩৩ পৃষ্ঠা অনুয়ায়ী যাতে মির্জা গোলাম কাদিয়ানীকে উল্লেখ করে বলা হয়েছে
“তোমার সাথে ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ) এর খুব নিকট সম্পর্ক রয়েছে এবং তার সাথে গুনে গড়নে(চেহারায়) এবং বয়সে তোমার যে মিল তাতে আর দ্বিতীয় কেউ নেই”
আপনাদের অহিতেই বলা আছে যে দুই জনের চেহারা একই রকম এবং অসম্ভব মিল। তারপরেও আপনারা এই যুক্তিতে দুই জন আলাদা ঈসা (আঃ) কিভাবে দাবী করেন??!!!!!!
ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ) এর গায়ের রং কোন হাদিসে আসছে লালচে এবং সাদা, আর কোন কোন হাদিসে আসছে লালচে অথবা সাদা। এটাও হাদিস অনুযায়ী সাংঘর্ষিক না। কারও গায়ের রং বর্ননা করা সহজ নয়। একেক জন বর্ণনা কারি (রাবী)একেক রকম বর্ণনা দিতে পারেন। সহি তিরমি্যী হাদিসের এক বর্ণনায় হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর গায়ের রং বাদামী আর তিরমি্যী হাদিসেরই অপর এক বর্ণনায় ওনার গায়ের রং বাদামী নয় এসেছে। এখন আপনার কাদিয়ানী ব্যখ্যা অনুযায়ী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কি দুইজন ??!!!
আপনি বল্লেনঃ
‘ আমার বিজ্ঞ বন্ধু 'তাওয়াফ্ফি' শব্দের একাধিক অর্থ আছে বলেই কোনো মতে দৌড়ে গিয়ে 'ঘুমের' আশ্রয় নিয়েছেন’
এটা আমি বলি নাই জনাব!! ঈমাম আল কুরতুবী সহ আল কোরআনের অধিকাংশ তাফসীর কারকদের মতে হলো এটা নিদ্রার ভাবার্থ হিসাবেই এই আয়াতে এসেছে(ইবনে কাছীর)।আমাদের জবাবের
আমাদের জবাবের ইবনে কাছীরের কথা তিনি বললেন কিন্তু ইবনে কাছীরে কি বলা হয়েছে তা সুন্দর ভাবে এড়িয়ে গেলেন।অবশ্য সত্যকে এড়িয়েই আপনাদের ধর্ম; এড়িয়ে তো যাবেনই !!
আরবীর একটি শব্দের যে একাধিক অর্থ হতে পারে সেই ব্যাপার টা আপনার জানা নাও থাকতে পারে। তাই অধিকাংশ তাফসীরকারকের ব্যখ্যাও আপনার বোঝার আওতায় আসে নাই।
সুরা আনআমের ৬০ নাম্বার আয়াতে ("তিনি রাত্রি বেলায় তোমাদেরকে করায়ত্ত করে নেন") আমাদের জবাবের বিপক্ষে আপনি বল্লেনঃ
‘ রাত্রে আল্লাহ তা'লা কী করায়ত্ত করেন? আমাদের দেহ? নাকি আমাদের রুহ? আমাদের দেহটা তো এখানেই পড়ে থাকে, আমরা এপাশ ওপাশ করি, শরীরের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গও কার্যকর থাকে, কী থাকে না? থাকে না আমাদের আয়ত্তে কেবল আমাদের রুহ বা আত্মা। অতএব ঘুমটাও এক প্রকার মৃত্যু তবে অস্থায়ী বা ক্ষণস্থায়ী
আলোচ্য আয়াতে 'তাওয়াফফি' শব্দটি 'লায়ল' বা রাত্রি শব্দের ইঙ্গিত বা 'কারিনা'সহ ব্যবহৃত হয়েছে. তাই এটি মৃত্যু অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে কিন্তু স্থায়ী মৃত্যু অর্থে হয় নি. ’
পাঠকদের কাছে জানতে চাইছি অস্থায়ী মৃত্যু মানে কি স্থায়ী মৃত্যু? আপনারা নিশ্চয়ই বলবেন যে অস্থায়ী মৃত্যু মানে স্থায়ী মৃত্যু নয়, সম্মানিত কাদিয়ানী দার্শনিক ভাইও স্বীকার করলেন এবং করবেন যে অস্থায়ী মৃত্যু মানে স্থায়ী মৃত্যু নয়। ধরলাম আমাদের দার্শনিক ভাই ঘুমাইয়া আছে (ওনার ভাষায় অস্থায়ী মৃত্যু) উনি কি জীবিত না মৃত ?Is he dead or alive ? উত্তর হলো জীবিত। তার শরীর কাজ করে , তিনি ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়ে বিছানা নষ্ট করার ক্ষমতা রাখেন।
ধরলাম আমাদের দার্শনিক ভাইয়ের স্থায়ী মৃত্যু হলো তাহলে উনি কি জীবিত না মৃত ?Is he dead or alive ? উত্তর হলো মৃত।তার শরীর কাজ করে না। তাহলে ‘তাওয়াফ্ফি’ শব্দটি যেহেতু কাদিয়ানীদের মতে স্থায়ী মৃত্যু হিসাবে ব্যবহৃত হয়নি তাহলে জীবিত মানুষের অবস্থা নিদ্রা হিসাবেই উক্ত আয়াতে ব্যবহৃত হয়েছে।
তারপর দার্শনিক ভাই আমাকে সুরা আয যুমারের ৪২ নম্বর আয়াত ব্যবহার করার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ দিয়াছেন। আমিও ওনাকে ধন্যবাদের বদলে ধন্যবাদ দেই। অন্তত এখানে তো মতের অমিল বলে ওনাদের স্বভাবমতো এড়িয়ে যান নাই।
ভেবেছিলাম এই আয়াতের ব্যখ্যা দেয়া লাগবে না।একই আয়াতে ‘তাওয়াফ্ফি’ শব্দটি এসেছে যে আয়াতে মৃত্যু শব্দটি এসেছে দুইবার ‘মাওতিহা’ আর ‘তামুত’ দিয়ে (আরবী মাতা সব্দমুল থেকে )। ‘তাওয়াফ্ফি’ দিয়ে কখনোই কেবল এবং কেবল মাত্র মৃত্যুই বোঝায় না বরং এই আয়াতে ‘তাওয়াফ্ফি’র অর্থ নিদ্রার বেলাও প্রযোজ্য। তার মানে নিদ্রার সময় ‘তাওয়াফ্ফি’ হলেও সে জীবিত(alive) -তার শরীর কাজ করে।
‘তাওয়াফ্ফি’ আর ‘মাওত’ কি এক হলো? কোরআন শরীফের হজরত মোহাম্মদ(সঃ), ইবরাহীম(আঃ), মুসা(আঃ), সুলাইমান(আঃ), দাউদ(আঃ), শুয়াইব (আঃ) এবং লুত (আঃ) এর মৃত্যুর ক্ষেত্রে আরবী ‘মাতা’ শব্দমুলের বিভিন্ন গঠন ব্যবহার করা হয়েছে। কার ও মৃত্যুর ক্ষেত্রে আরবী ‘তাওয়াফ্ফি’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। অন্যদিকে ‘তাওয়াফ্ফি’ শব্দটি কেবল ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ) এর ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়েছে।
তারপর তিনি যে তাফসীরে মারেফুল কোরানের সংযুক্তি দিয়াছেন সেটা মনে হয় সংক্ষিপ্ত সংষ্করনের তাফসীর। উনি যদি একটু কষ্ট করতেন তাহলে বিস্তারিত তাফসীর এর ২য় খণ্ড পরতে পারতেন।সেখানে ৫৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা আছে যে ‘তাওয়াফ্ফি’ শব্দটির অর্থ ‘পুরোপুরি লওয়া’ যা সকল আরবী অভিধান দ্বারা স্বীকৃত। বিস্তারিত নিচে সংযুক্ত পাতাটি থেকে পড়ে নেবেন আশা করি।
আর আপনি যে পৃষ্ঠাটির সংযুক্তি দিয়াছেন হলুদ রঙ দিয়া হাইলাইট (highlight) করেছেন, সেই একই পৃষ্ঠায় স্পষ্ট করে ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে “আমি আপনাকে নিজের কাছে উঠিয়ে নিব এবং শেষ জামানায় স্বাভাবিক মৃত্যুদান করব”
যে পৃষ্ঠার রেফারেন্স দিলেন সেই পৃষ্ঠারই ব্যখ্যা আপনার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে গেলো !!! আল্লাহ পাক এভাবেই আসলে ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দেয়।
আর শেষে যে মাওলানা আকরামের রেফারেন্স দিলেন সে যে কাদিয়ানী ছিলো এটা সবারই জানা। আর আপনাদের প্রেস এ প্রকাশিত আরও যে সব (বি)চ্ছিন্নপত্রের রেফারেন্স দিলেন তার ব্যাপার এ আর কমেন্ট নাই বা করলাম।
পরিশেষেঃ নিজে শুদ্ধ হোন, ভণ্ড কাদিয়ানী নবীর বিশ্বাস থেকে সরে এসে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করুন। ইসলাম ধর্মে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর পরে কোন ধরণের কোন প্রকারের ছোট বড় ক্ষুদ্র মাঝারি নবী আসার সুযোগ নেই। যারা দাবী করে তারা ভণ্ড-তারা মিথ্যাবাদী-তারা ভণ্ড নবী মুসায়লামাতুল কাজ্জাবের মতই দাজ্জাল।
আল্লাহ পাক এসব ভণ্ডদের থেকে আমাদের হেফাজত করুন। আমিন।
তাফসীর মারেফুল কোরানে এর ২য় খণ্ড ৫৯ পৃষ্ঠা
দার্শনিকের সংযুক্ত তাফসিরের পৃষ্ঠা
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৯:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




