সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জনাব সোহেল তাজ সাহেব তাঁর ফেইসবুক ফেইজে স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার একটা চেকলিষ্ট তুলে ধরেছেন। কি কি লক্ষণ থাকলে ঐ শাসন ব্যবস্থাকে স্বৈরাচারী শাসন বলা যাবে, বা কি কি লক্ষণ থাকলে একজন শাসককে স্বৈরশাসক হিসাবে চিহ্নিত করা যাবে তাঁর কয়েকটি পয়েন্ট উল্লেখ করেছেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি জনাব হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ সাহেবের কল্যাণে স্বৈরশাসক শব্দটির সাথে আমরা কমবেশি সকলেই পরিচিত (জনাব হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ সাহেব স্বৈরশাসক ছিলেন কিংবা তাঁর শাসন ব্যবস্থা স্বৈরতান্ত্রিক ছিল এটা কিন্তু আমার আবিস্কার না, এটা আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি সহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা বক্তৃতা বিবৃতিতে প্রায় সময়ই বলে থাকেন, এখনও অনেকেই বলে)। কিন্তু কি কারণে জনাব হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ সাহেবকে স্বৈরশাসক বলা হয় তা কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না এবং আমিও আজও জানি না। জনাব সোহেল তাজ সাহেবের চেকলিষ্ট দেখে অনুমান করতে পারছি হয়তো জনাব হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ সাহেবের মধ্যে চেকলিষ্টের পয়েন্টগুলো বিদ্যমান ছিল কিংবা উনার শাসন ব্যবস্থায় পয়েন্টগুলো বিদ্যমান ছিল, সেজন্য হয়তো তখনকার সময় উনার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা জনাব হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ সাহেবকে স্বৈরশাসক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। অথচ মুরুব্বীদের কাছ থেকে শুনেছি জনাব হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ সাহেব এর শাসনামল ছিল শায়েস্তা খাঁর পরে বাংলার স্বর্ণ যুগ। দেশের যত উন্নয়ন হয়েছে সবই নাকি এরশাদ সাহেবের শাসনামলে হয়েছে। বর্তমানেও নাকি অনেক উন্নয়নে এরশাদ সাহেবের অবদান আছে। যাই হউক উন্নয়নের ফিরিস্তি গাওয়া আমার মূল উদ্দেশ্য নয়।
শত্রু মিত্রসহ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা যতই এরশাদ সাহেবকে স্বৈরশাসক হিসাবে আখ্যায়িত করুক, গালি দেয় না কেন, জনাব এরশাদ সাহেব কিন্তু কখনো বলেন না তিনি স্বৈরশাসক ছিলেন!! অর্থাৎ তিনি (এরশাদ সাহেব) মনে করেন তাঁর শাসন ব্যবস্থা স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ছিল না। সুতরাং যে যাই বলুক তাতে এরশাদ সাহেবের কিছুই যায় আসে না।
কিন্তু দু:খের বিষয় হল - জনাব সোহেল তাজ সাহেব এর স্বৈরাচারী শাসন এর চেকলিস্ট দেখে অনেকেরই মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। পক্ষে বিপক্ষে সোস্যাল মিডিয়া অনেক স্ট্যাটাস ভাইরাল হচ্ছে। অনেকেই আবার জনাব সোহেল তাজ সাহেবকে একটি রাজনৈতিক দলের প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় করাতে যাচ্ছে। আবার অনেক গুণীজন এই চেকলিষ্টকে জনাব সোহেল তাজ সাহেব এর ব্যক্তিগত মতামত হিসাবে উল্লেখ্ করেছেন।
কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে জনাব সোহেল তাজ সাহেব এর "স্বৈরাচারী শাসন চেকলিস্ট" পোষ্টটি একটি শিক্ষনীয় পোষ্ট। কারণ আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে "স্বৈরাচারী শাসন" বা "স্বৈরশাসক" কাকে বলে বা তার সংজ্ঞা কি তা নিজেই জানতাম না। জনাব সোহেল তাজ সাহেব এর পোষ্টটি পড়ে সহজেই জেনে নিতে পারলাম, কি কি লক্ষণ থাকলে একটি শাসন ব্যবস্থাকে স্বৈরাচারী শাসন বলা যাবে, কি কি লক্ষণ থাকলে একজন শাসককে স্বৈরশাসক বলা যাবে। আরেকটি উপকার হবে, স্কুল কলেজে পড়া শিক্ষার্থীদের। ভবিষ্যতে যদি কোনো পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে প্রশ্ন আসে -
-- স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা কাকে বলে? স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার লক্ষণগুলো কি কি? কিংবা
-- স্বৈরশাসক কাকে বলে? স্বৈরশাসকের লক্ষণগুলো কি কি?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখার জন্য আর নোট বই ঘাটতে হবে না। জনাব সোহেল তাজ সাহেব এর উল্লেখিত ৮টি পয়েন্ট লিখে দিলেই একজন শিক্ষার্থী পাস মার্ক পেয়ে যাবে নিশ্চিত।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
জনাব সোহেল তাজ সাহেব এর স্বৈরাচারী শাসন চেকলিস্ট
১. যখন সাধারণ মানুষ তার মুক্ত চিন্তা ব্যাক্ত করতে ভয় পায় ।
২. যখন দল, সরকার এবং রাষ্ট্র একাকার হয়ে যায় আর সরকারকে সমালোচনা করলে সেটাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলে আখ্যায়িত করা হয়।
৩. যখন দেশের প্রচলিত নানা আইন এবং নতুন নতুন আইন সৃষ্টি/তৈরি করে তার অপব্যবহার করে রিমান্ডে নেয়া এবং নির্যাতন করা হয়
৪. বিনা বিচারে হত্যা ও গুম করে ফেলা হয় ।
৫. রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সমূহকে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ব্যবহার করা হয়।
৬. আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী পুলিশ সহ অন্যন্য সংস্থাকে পেটোয়া বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
৭. যখন সাধারণ নাগরিক সহ সকলের কথা বার্তা, ফোন আলাপ, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট মনিটর ও রেকর্ড করা হয়।
৮. যখন এই সমস্ত বিষয় রিপোর্ট না করার জন্য সংবাদমাধ্যম, সাংবাদিকদের গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে হুমকি দেয়া হয়।
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
[২]
ইদানিং কালে দেখা যাচ্ছে, কেউ যদি সরকারের সমালোচনা করে, আর সেটা যদি সরকারের পক্ষে না যায়, তাহলে সেটা হয়ে যায় রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল। সরকারের সমালোচনা আর রাষ্ট্রদ্রোহিতা কি করে এক হয়ে যায় তা আমার মাথাতে কিছুতেই আসে না। আমি আইনের ছাত্র না, আইনের এত মারপ্যাচ বুঝি না, আইন মেনে চলার চেষ্টা করি, কিন্তু খুব বিপদে না পড়লে আইনের ধারে কাছে যেতে চাই না। কিন্তু এটা এখন মনে পড়ছে, স্কুল কলেজে পড়াকালিন সময়ে কোন এক ক্লাসে "রাষ্ট্র ও সরকার কি? রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে পার্থক্য কি?" এই অধ্যায়টি পড়েছি। যতটুকু মনে পড়ে এবং গুগল মামার সাহায্য নিয়ে এও জেনেছি রাষ্ট্র ও সরকার সম্পূর্ণ আলাদা কিন্তু একে অপরের পরিপূরক। রাষ্ট্র মোটামুটি স্থায়ী কিন্তু সরকার অস্থায়ী বা ক্ষণস্থায়ী। একটি রাষ্ট্রের আপামর জনগণ চাইলে যেকোনো সময় যেকোনো সরকার পরিবর্তন করতে পারে। বা ভোটের মাধ্যমে তার পছন্দের রাজনৈতিক দলকে সরকারী ক্ষমতায় আসীন করতে পারে।
যেকোনো সরকারকে মনে রাখতে হবে - গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ২:৪৫