somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওসমানরা এই দেশের শত্রু

১৮ ই মে, ২০১১ দুপুর ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সকালে পান্তাভাত খেয়ে ওসমান স্কুলে যায়। ওসমান এই বছর এসএসসি পরীক্ষা দিবে। স্কুলের টেস্ট পরীক্ষা শেষ কিন্তু মডেল টেস্ট চলছে। ওসমান টেস্টে এ প্লাস পেয়েছে। স্কুলের শিক্ষকরা ওসমানকে নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী। শিক্ষকদের আশা ওসমান এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পাবে। ওসমানের বাবা নেই,মা অসুস্থ। অসুস্থ মা প্রতিদিন সকালে উঠে ওসমানকে আগের রাতের অবশিষ্ট ভাতে পানি দিয়ে মরিচ পুড়িয়ে দেয়। কখনোবা বাসি তরকারী দিয়েও ভাত খেয়ে ওসমান স্কুলে যায়। ওসমানের বড় ভাই দিনমজুর। ওসমানও পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ করে। শুকনো মৌসুমে ইটভাটায় কাজ করে। ইটভাটা বর্ষা মৌসুমে বন্ধ থাকে তাই ঐ সময়টা ওর দিনমজুরি করেই কাটাতে হয়। ওসমান স্কুল থেকে এসে কিছু মুখে দিয়েই কাজে চলে যায়। কাজ শেষে এসে গোসল করে। তখন প্রচন্ড খিদে লাগে। একবারে রাতে ভাত খেয়ে পড়তে বসে যায়। যতক্ষন শরীর মানে ততক্ষণ পড়তে থাকে। ওসমানদের বাড়িতে বিদ্যুত নেই। এলাকায় শুধু চেয়ারম্যান আর কয়েকজন প্রভাবশালীর বাড়িতেই বিদ্যুত সংযোগ আছে।

আজ ওসমানের এসএসসি পরীক্ষার ফল দিয়েছে। ওসমান শিক্ষকদের আশা পূরণ করতে পেরেছে, ও গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। ওসমানের মন খুশিতে ধরে না! বাড়িতে এসে ওসমান মাকে সালাম করেছে। বড়ভাই ছিল না। ওসমানের ফলাফলের খবর শুনে ওসমানের ভাইও আসল। সাথে কিছু বাতাসা আর মোয়া। “ভাইগো তোর লাইগ্যা বুকটা খুশিতে ভইরা যাইতাছে! লগে পয়সা নাই তাই মিষ্টি আনতে পারলাম না। নে বাতাসা খা ” বলে ওসমানের ভাই ওসমানকে বাতাসা খাইয়ে দিল। ওসমানের বাড়িতে এলাকার মানুষ যেন ভেঙ্গে পড়েছে। কিছু সাংবাদিকও আসল তারা ওসমানের পরিশ্রমের ও অধ্যাবসায়ের কথা পরেরদিনের পত্রিকায় লিখল। ওসমানের কৃতিত্বের কথা জানল সারা দেশ। শুধু জানল না কয়েকজন কালো পোষাকের মানুষ।

ওসমান এখন কলেজে পড়ে। ওসমানের এসএসসি ফলাফলের জন্য কলেজে ও ফ্রি পড়তে পারে। এমনকি ওসমানের বই কিনতেও কোন টাকা লাগেনি। ওর স্কুলের হেডমাস্টার ওকে বই কেনার টাকা দিয়েছে। কলেজের একজন স্যার ওসমানকে ফ্রি প্রাইভেট পড়ায়। ওসমান তাও সংসার চালানোর জন্য কাজ করে,দিনমজুরী করে। ওসমানের ভাই বিয়ে করেছে। সংসারের অভাব একজনের আয়ে মিটে না,তাই ওসমানকে সাধ্যমত সাহায্য করা লাগে।

ওসমানের আর কয়েকদিন পর এইচএসসি পরীক্ষা। ওসমান তাই ঘর থেকে বেশি বের হয় না। সংসারের অভাবের কারণে দুপুরে বের হতে হয়। বাড়ির গাছের আম বা কাঁঠাল বিক্রি করে। সেই টাকা এনে মায়ের হাতে দেয়। ওসমান এই রকম একদিন ফল বিক্রি করে বাড়িতে ফিরছে। পথের নিরিবিলি যায়গায় এসে কয়েকজন ওসমানকে থামাল। ওসমানের গায়ে ছিল লাল গেঞ্জি। ঐ দলটার গায়ে কালো পোষাক,চোখে কালো চশমা,মাথায় কালো পট্টি,হাতে কালো অস্ত্র। ওসমান জানে না লোকগুলো তার কাছে কী চায়। ওসমান এদের দেখেছে শুধু পত্রিকায় আর দু একবার টিভিতে খবরের মাঝে। এদের কাজ সন্ত্রাসী নির্মূল করা। ধরে ধরে মেরে ফেলা,বিচারের আগেই। ওসমানকে জিজ্ঞেস করা হল –“তোর নাম কী?”
-ওসমান।
-“মিথ্যা কথা”
-আমি মিছা কমু কেন?
-“তোর নাম ইউনুছ না?”
- জ্বী না, এই নামের কাউরে তো আমি চিনিও না
-“ঐ শালারে নিয়া সাইডে আয়” বলল সর্দার মতো কেঊ।
এরপর একটি গুলির শব্দ সাথে ওসমানের আর্তনাদ। পরেরদিন খবরে প্রকাশ-“কালো পোষাক পরিহিত নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ঘাড়বেকা ইউনুছের বন্দুকযুদ্ধ। সন্ত্রাসী ঘাড়বেকা ইউনুছ গুলিবিদ্ধ। ইউনুছকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই ঘটনায় কালো পোষাক পড়া নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সদস্যও গুরুতর আহত হয়েছেন। উল্লেখ্য যে, সন্ত্রাসী ঘাড়বেকা ইউনুছের নামে থানায় দুটি জিডি, পাঁচটি মামলা ও সাতটি হত্যার অভিযোগ রয়েছে।"


(লিমনের জন্য এখন আমি শুধু একটি ক্রাচই চাইতে পারি,বিচার চাওয়ার সাহস হারিয়েছি আগেই)

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১১ দুপুর ১২:২০
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×