সকালে পান্তাভাত খেয়ে ওসমান স্কুলে যায়। ওসমান এই বছর এসএসসি পরীক্ষা দিবে। স্কুলের টেস্ট পরীক্ষা শেষ কিন্তু মডেল টেস্ট চলছে। ওসমান টেস্টে এ প্লাস পেয়েছে। স্কুলের শিক্ষকরা ওসমানকে নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী। শিক্ষকদের আশা ওসমান এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পাবে। ওসমানের বাবা নেই,মা অসুস্থ। অসুস্থ মা প্রতিদিন সকালে উঠে ওসমানকে আগের রাতের অবশিষ্ট ভাতে পানি দিয়ে মরিচ পুড়িয়ে দেয়। কখনোবা বাসি তরকারী দিয়েও ভাত খেয়ে ওসমান স্কুলে যায়। ওসমানের বড় ভাই দিনমজুর। ওসমানও পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ করে। শুকনো মৌসুমে ইটভাটায় কাজ করে। ইটভাটা বর্ষা মৌসুমে বন্ধ থাকে তাই ঐ সময়টা ওর দিনমজুরি করেই কাটাতে হয়। ওসমান স্কুল থেকে এসে কিছু মুখে দিয়েই কাজে চলে যায়। কাজ শেষে এসে গোসল করে। তখন প্রচন্ড খিদে লাগে। একবারে রাতে ভাত খেয়ে পড়তে বসে যায়। যতক্ষন শরীর মানে ততক্ষণ পড়তে থাকে। ওসমানদের বাড়িতে বিদ্যুত নেই। এলাকায় শুধু চেয়ারম্যান আর কয়েকজন প্রভাবশালীর বাড়িতেই বিদ্যুত সংযোগ আছে।
আজ ওসমানের এসএসসি পরীক্ষার ফল দিয়েছে। ওসমান শিক্ষকদের আশা পূরণ করতে পেরেছে, ও গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। ওসমানের মন খুশিতে ধরে না! বাড়িতে এসে ওসমান মাকে সালাম করেছে। বড়ভাই ছিল না। ওসমানের ফলাফলের খবর শুনে ওসমানের ভাইও আসল। সাথে কিছু বাতাসা আর মোয়া। “ভাইগো তোর লাইগ্যা বুকটা খুশিতে ভইরা যাইতাছে! লগে পয়সা নাই তাই মিষ্টি আনতে পারলাম না। নে বাতাসা খা ” বলে ওসমানের ভাই ওসমানকে বাতাসা খাইয়ে দিল। ওসমানের বাড়িতে এলাকার মানুষ যেন ভেঙ্গে পড়েছে। কিছু সাংবাদিকও আসল তারা ওসমানের পরিশ্রমের ও অধ্যাবসায়ের কথা পরেরদিনের পত্রিকায় লিখল। ওসমানের কৃতিত্বের কথা জানল সারা দেশ। শুধু জানল না কয়েকজন কালো পোষাকের মানুষ।
ওসমান এখন কলেজে পড়ে। ওসমানের এসএসসি ফলাফলের জন্য কলেজে ও ফ্রি পড়তে পারে। এমনকি ওসমানের বই কিনতেও কোন টাকা লাগেনি। ওর স্কুলের হেডমাস্টার ওকে বই কেনার টাকা দিয়েছে। কলেজের একজন স্যার ওসমানকে ফ্রি প্রাইভেট পড়ায়। ওসমান তাও সংসার চালানোর জন্য কাজ করে,দিনমজুরী করে। ওসমানের ভাই বিয়ে করেছে। সংসারের অভাব একজনের আয়ে মিটে না,তাই ওসমানকে সাধ্যমত সাহায্য করা লাগে।
ওসমানের আর কয়েকদিন পর এইচএসসি পরীক্ষা। ওসমান তাই ঘর থেকে বেশি বের হয় না। সংসারের অভাবের কারণে দুপুরে বের হতে হয়। বাড়ির গাছের আম বা কাঁঠাল বিক্রি করে। সেই টাকা এনে মায়ের হাতে দেয়। ওসমান এই রকম একদিন ফল বিক্রি করে বাড়িতে ফিরছে। পথের নিরিবিলি যায়গায় এসে কয়েকজন ওসমানকে থামাল। ওসমানের গায়ে ছিল লাল গেঞ্জি। ঐ দলটার গায়ে কালো পোষাক,চোখে কালো চশমা,মাথায় কালো পট্টি,হাতে কালো অস্ত্র। ওসমান জানে না লোকগুলো তার কাছে কী চায়। ওসমান এদের দেখেছে শুধু পত্রিকায় আর দু একবার টিভিতে খবরের মাঝে। এদের কাজ সন্ত্রাসী নির্মূল করা। ধরে ধরে মেরে ফেলা,বিচারের আগেই। ওসমানকে জিজ্ঞেস করা হল –“তোর নাম কী?”
-ওসমান।
-“মিথ্যা কথা”
-আমি মিছা কমু কেন?
-“তোর নাম ইউনুছ না?”
- জ্বী না, এই নামের কাউরে তো আমি চিনিও না
-“ঐ শালারে নিয়া সাইডে আয়” বলল সর্দার মতো কেঊ।
এরপর একটি গুলির শব্দ সাথে ওসমানের আর্তনাদ। পরেরদিন খবরে প্রকাশ-“কালো পোষাক পরিহিত নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ঘাড়বেকা ইউনুছের বন্দুকযুদ্ধ। সন্ত্রাসী ঘাড়বেকা ইউনুছ গুলিবিদ্ধ। ইউনুছকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই ঘটনায় কালো পোষাক পড়া নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সদস্যও গুরুতর আহত হয়েছেন। উল্লেখ্য যে, সন্ত্রাসী ঘাড়বেকা ইউনুছের নামে থানায় দুটি জিডি, পাঁচটি মামলা ও সাতটি হত্যার অভিযোগ রয়েছে।"
(লিমনের জন্য এখন আমি শুধু একটি ক্রাচই চাইতে পারি,বিচার চাওয়ার সাহস হারিয়েছি আগেই)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১১ দুপুর ১২:২০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




