somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঝিরি পথে ট্রেকিং (রুমা বাজার থেকে বগা লেক)

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্বপ্নের ট্রেকিং(০৯-১০-১৪) -----অনেকদিন যাবৎ ভাবছিলাম বন্ধুরা মিলে ট্রেকিং এ যাব । আমি বসে গেলাম ট্রেকিং এর স্থান নির্বাচন করতে, অনেক গবেষণা করে স্থান ঠিক করলাম বান্দারবান এর রুমা বাজার থেকে বগা লেক । দূরত প্রায় ১৯ কি মি , সময় লাগবে কম বেশি ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা । আমরা মোট ৬ জন ,আমি সবাইকে ট্রেকিং বিষয়ে সকল পরিকল্পনা জানাই । আমরা এক সপ্তাহ পূর্বে পরিকল্পনা গ্রহণ করি ।
শুরু হল আমাদের যাত্রা , গাবতলি থেকে রাত ১০ টার বাস এ উঠি, আমরা সকাল ৮ টায় বান্দারবান শহরে আসলাম। সেখান থেকে রুমা বাজার এর গাড়ীতে উঠার জন্য যখন যাই ততোক্ষণে বাস এর সীট পূর্ণ , পরবর্তী গাড়ী ১ ঘন্টা পরে, তাই দেরি না করে ছাঁদে উঠে গেলাম ,আমাদের সাথে আরও ১০ জন ছাঁদে ছিল । শুরু হল বান্দারবান এর আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তায় বাসের ছাঁদে ভ্রমন , আমরা প্রথমে খুব মজা করছিলাম , ছাঁদ থেকে পুরো বান্দারবান এর দৃশ্য উপভোগ করছিলাম । ভয়ংকর ও রোমাঞ্চকর এক ভ্রমন ছিল বাস এর ছাদে ,কিছুক্ষণ পর পর কঞ্চির বারি, গাছের ঢাল এর বারি, বিশাল বট গাছ । সবই ছিল । পাহাড়ে বাস এমনিতেই আসতে চলে । এঁকে বেঁকে চলে যাওয়া সাপের মতো রাস্তাগুলোকে সাথে নিয়ে তাই ধীরে ধীরেই এগুতে হল।তারপর বেরসিক বাস আবার যখন দাঁড়িয়ে পড়ে তখন তাকে কিছুতেই আর নড়ানো যায়না।পারলে ঘুমিয়েই পড়ে যেন! বান্দরবান শহর থেকে রুমা বাজার প্রায় ৩৮ কি.মি, এর মধ্যে তিনজন হালকা আহত হয় ।
অবশেষে ৪ ঘণ্টার ভ্রমন শেষে আমরা রুমা বাজার আসলাম, রুমা বাজারে আমাদের গাইড লিয়াংখুপ হোটেল ঠিক করে রেখেছিল । বিকালে আমরা রুমা বাজার থেকে ট্রলার ভাড়া করে রিঝুক ঝর্ণা দেখতে যায়, রিঝুক ঝর্ণা পুরাপুরি উপভোগ করতে পেরেছি কারণ সেখানে শুধু আমরাই ছিলাম , রাতে বিশ্রাম নিয়ে পরদিন সকালে আমাদের কাঙ্ক্ষিত ট্রেকিং শুরু করি| ট্রেকিং শুরু করার পূর্বে সেনাবাহিনর কাছ থেকে অনুমতি নিতে হল, আমাদের সকলের সাথে ১ লিটার পানি ও শুকনো খাবার ছিল, গাইড এর কাছে আরও ৫ লিটার পানি ছিল| ৩০ মিনিট হাঁটার পর আমরা বাশ বাগান থেকে লাঠি সংগ্রহ করি, ৩০ মিনিট সমতলে হাঁটার পর শুরু হয় আমাদের ঝিরি পথ ধরে হাঁটা ,ঝিরি পথ এর অপরূপ সৌন্দর্য নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না, তবে ঝিরি পথ এর অনেক অংশ কোমর পানি ছিল |



আমরা ঝিরিপথ ধরে প্রায় ৪ ঘণ্টা অতিবাহিত করি, পথে শুধুমাত্র ৩ জন জাম্বুরা বিক্রেতার সাথে দেখা হয় । তারা পাহাড় থেকে জাম্বুরা সংগ্রহ করে, আমরাও ২ পিস কিনলাম ,পাহাড়ি জাম্বুরার স্বাদ অদ্ভুত । আমরা যে পথ ধরে এতক্ষণ আসলাম তাতে সবাইকে সবসময় একসাথে থাকতে হয়েছে , তা না হলে ছয় জন ছয় দিকে চলে যেতাম । কারণ রাস্তাগুলু ছিল গোলকধাঁধার মত ।





একটা বড় ঝর্ণার কাছে এসে আমাদের ঝিরিপথ অথাr ট্রেকিং এর অর্ধেক সমাপ্ত হল । এখন থেকে বাকি পথটুকু শুধু পাহাড়ই বাইতে হবে, ঝিরিপথ এর শেষপ্রান্তে এসে যখন দেখলাম ঝর্ণার পিচ্ছল পথ দিয়ে যেতে হবে , তখন সবার মনে ভয় ঢুকে গেল । ঝর্নাতে কিছুক্ষণ গা ভিজিয়ে শুরু করলাম পাহাড় অংশ । ১০ মিনিট পর আমি একজনের পা তে দেখতে পেলাম কাল কি যেন ? ততক্ষণে বুজতে আর বাকি রইল না কি এটি ? জোঁক , আমি তাড়াতাড়ি করে লবণ বের করে আক্রান্ত স্থানে দিলাম, অনেক রক্তপাত হছিল । ও হ্যাঁ একটি কথা বলা হয়নি , আমরা first aid box সঙ্গে নিয়ে এসেছিলাম । ততক্ষণে সকলের মধ্যে ভয় ঢুকে গেছে , সবাই চেক করতে লাগল জোঁক আছে কি না ? তারপর আবার যাত্রা শুরু হল , পাহাড় এর উপর উঠছি ত উঠছি । পাহাড় এর গা ঘেঁষে হাঁটছি ত হাঁটছি , এর শেষ কোথায় জানা ছিল না । আমরা অল্প সময় পর পর বিরতি দিচ্ছি , আস্তে আস্তে আমাদের পানি ও শুকনো খাবার শেষ হচ্ছে ।


পাহাড় এর কিছু অংশ উঠার পর আমি দেখতে পেলাম আমার পা এর উপরে কাল কি যেন একটা । জোঁক দেখে সাথে সাথে ভয় পেলাম , যদিও জোঁক আমাকে খেয়ে ফেলবে না তারপরও ভয় লেগেছিল । এরপর শুরু হল শরীর এ অন্য কোথাও জোঁক আছে কিনা তা দেখা । যত উপরে উঠছি তত পাহাড়ি পরিবেশ উপভোগ করছিলাম । আমাদের গাইড বলল আরও ৩০ মিনিট লাগবে , একটা বিরতি নিলাম । কিন্তু লাভ হল না আমাদের সকলের কাছে যা পানি ছিল সব শেষ । শেষ পর্যন্ত আমার বোতল এ ২/৩ ফোঁটা পানি ছিল তা দিয়ে তৃষ্ণা নিবারন করলাম, এই প্রথম বুজতে পারলাম পানির অপর না জীবন । অবশেষে আমরা আমাদের গন্তব্যস্থল বগালেক এ আসলাম । আমরা এখন ২৭০০ ফুট উপরে । মোট সময় লাগল ৭ ঘণ্টা দোকানে এক কাঁদি পাহাড়ি কলা পেয়ে সবাই হামলে পড়লাম।ঠিক ক্ষুধার্ত বাঘ যেভাবে তার শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সেভাবে আমরা নিমিষেই সাভার করে ফেললাম প্রায় এক কাঁদি কলা । এবার পেট বাবাজী কিছুটা শান্ত । আমাদের কটেজ ঠিক করা ছিল , কটেজ এ উঠেই আমরা ঝাপ দিলাম বগালেক এ । সবথেকে মজা পেয়েছিলাম একজন আমাদের বলল গাড়িতে আস্থে কতক্ষণ লাগল । ও হ্যাঁ আরেকটা বিষয় বগালেক এ চাঁদের গাড়ীতেও আসা যায় কিন্তু ঝিরি পথ এর ট্রেকিং রোমাঞ্চকর । ঐ লোকটি ট্রেকিং এর কথা শুনে অন্য লোকদের আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিছে । তখন জানতে পারলাম এই মৌসুম এ তেমন কেউ ট্রেকিং করে না , অনেক কঠিন হয়ে যায় । তখন জীবনে এই প্রথম মনে হল যে কিছু একটা করেছি সারা জীবন মনে রাখার মত । রাতে বারবিকিউ এর আয়োজন করা হল। আমরা সবাই এক রুম এই ছিলাম । সকালে চিংড়ি ঝর্ণাতে গেলাম, হেঁটে যেতে ১ ঘণ্টা লেগেছিল । চিংড়ি ঝর্ণাতে যাওয়ার পাহাড়ি রাস্তা একেবারেই সহজ লেগেছিল যদিও এতোটা সহজ ছিল না। সেই দিনেই আমরা বান্দারবান শহর এ ফিরে আসি, রাতে ঢাকার বাসে ফিরে আসি।


সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০৯
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×