সম্প্রতি পাস হওয়া আয়কর আইন, ২০২৩ এ আয়কর নিবন্ধন বাতিলের বিধান রাখা হয়েছে। এ নিয়ে স্পষ্ট ও নির্দিষ্ট করে পৃথক ধারা যুক্ত করা হয়েছে বিদ্যমান বলবৎ আইনে। এ নিয়ে মোটামুটি সকল মহলই খুবই খুশি। কিন্তু বাস্তবতা কি?
তার আগে দেখে আসি, সাধারণ কারণ কি কি যার দরুন এটিকে বাতিল করতে চায় অনেকে?
- YouTube দেখে দেখে খুব সহজে ৫ মিনিটে ই-টিন খুলুন টাকা ছাড়া – এই টাইপ ভিডিও দেখে অনেকেই ই-টিন খুলে ফেলেছেন। এর মধ্যে শিক্ষার্থী, গৃহিণী, উঠতি ছেলেমেয়ে যারা হয়ত পিতামাতার NID দিয়েই খুলে ফেলেছে বা নিজেরটা দিয়েই।
- ক্রেডিট কার্ড নিতে চেয়েছেন, কিন্তু কোন কারণে আর নেয়া হয়নি।
- একটা ই-টিন নাম্বার না থাকলে কেমন কেমন জানি লাগে টাইপ বোধ কাটানোর জন্য।
- NID দিয়ে সরকার ই-টিন করার সুযোগ দিয়েছে, তাই অতি উৎসাহে খুলে ফেলেছেন।
- ব্যাংক একাউন্ট বা লোন নিতে চেয়ে কাগজপত্র অফিসারকে দিয়েছেন, সে আপনার আগোচরেই ই-টিন খুলে ফেলেছে, অনেকে অনলাইনে জমা দেয়া যায় বলে এই দুর্বৃত্ত ও অপেশাদারি অফিসার রিটার্নও অনলাইনে দিয়ে দিয়েছে।
ইত্যাদি নানা কারণে, ই-টিন খোলা হয়েছে, কিন্তু এখন রিটার্ন জমা দেয়া নিয়ে নানান নিয়মনীতি দেখে আর সাথের খরচের ভয়ে এটাকে যত দ্রুত চাই বন্ধ করার চিন্তা করছেন। আর আইনের এই ধারা আসার পর তারা আশার আলো দেখছেন আর এক শ্রেণীর অসাধু অপেশাদার লোকের কথায় ভুল বুঝে প্রতারিত হচ্ছেন। আসুন দেখে আসি আইন কি বলছে এই বিষয়েঃ
ধারা ২৬২ উপধারা ১ (ক) (আ) তে বলা হয়েছেঃ
“পরপর বিগত ৩ (তিন) বৎসর করযোগ্য আয় শূন্য হন এবং শারীরিক অক্ষমতার কারণে বা অন্য কোনো কারণে ভবিষ্যতে কোনো করযোগ্য আয় শূন্য থাকিবেন;”
এখন অনেকে বলছেন যে পরপর ৩ বছর “শূন্য রিটার্ন” জমা দিয়েই বন্ধ করা যাবে। কিন্তু বাস্তবে কি তাই?
আইনে স্পষ্ট বলা হয়েছে “ ….. এবং শারীরিক অক্ষমতার কারণে বা অন্য কোনো কারণে ভবিষ্যতে কোনো করযোগ্য আয় শূন্য থাকিবেন;”।
ফলে, আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে ভবিষ্যতে আপনার আর করযোগ্য আয় থাকবে না।
ধারা ২৬২ এর উপধারা ২ (ঘ) তে বলা হয়েছেঃ
“(ঘ) করদাতা কর্তৃক উপ-ধারা (১) এর অধীনে নিবন্ধন বাতিলের যে কারণ উল্লেখ করিয়াছেন উহার সত্যতা রহিয়াছে”।
এটা থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, যে কারণের উল্লেখ করা হয়েছে, তার সত্যতা প্রমাণ করতে হবে যেটা করাটা সহজ হবে না অনেকের জন্যই। এছাড়াও ধারা ২৬৪ এর অধীন ৪৩টি কারণে আবশ্যকীয়ভাবে রিটার্ন দাখিল করতে হয়। সেটার কোনটার জন্য ভবিষ্যতে রিটার্ন দাখিল ও দাখিলের প্রমাণপত্র দরকার হলে, ই-টিন বন্ধকারী জরিমানার আওতায় পড়তে পারেন, যা নিয়ে এখনও কিছু বলা নেই। তাই, সাবধানতা কাম্য। ভবিষ্যতে এই আওতা বা সেবার পরিধি ৪৩ থেকে আরও বাড়বে।
যাদের বয়স ধরি ২৫ এর কম, যারা এমন “ভুলে” খুলে ফেলেছেন, তারা কি আর কোনদিন আয় করবেন না? এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?
না এমনটা হয় না, স্বাভাবিকভাবে যদি বেঁচে থাকে। তাই, যারা পরের শর্ত পূরণ করতে পারবেন না, তাদের রিটার্ন দিয়েই যেতে হবে। আর আগের আইনে রিটার্ন সাময়িক বন্ধের বিধান ছিল। এই আইনে এমন কোন বিধান রাখা হয়নি। তাই অতি উৎসাহীরা বিপাকে পড়ে আছেন। বাকিদেরকে সচেতন করুন, যারা এই ৫ মিনিটে ফ্রিতে সব করে ফেলছেন।
..
..
সাজ্জাদ হোসেন
অডিটর | আয়কর আইনজীবি | পেশাদার হিসাববিজ্ঞানী (PQ)
২৬ আগস্ট, ২০২৩
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ১১:৪৩