জনসংখ্যার ভারে কাতর বাংলাদেশ। করোনার এই কঠিন সময়ে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে যে, অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে কোন কিছুই ঠিক নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। না লক ডাউন , না করোনা টেস্ট।
আমার বন্ধু আবুলের দাদারা ছিলেন ৯ ভাই, ৪ বোন। আবুলের বাবা ওর দাদার কনিষ্ঠ পুত্র। আবুলরাও ৫ ভাই , ২ বোন।
কেবল আবুলরাই নয়। এক সময় পুরো বাংলাদেশের চিত্রই ছিল এমন। আমি আবুলকে জিজ্ঞেস করেছিলাম- তোর দাদী ছিলেন কয় জন?
আবুল জবাব দিল- না, দাদী তো এক জনই ছিলেন!
আমি দুষ্টুমি করে এক দিন আবুলকে বলেছিলাম- তোর দাদা যদি ছোট বেলায় ডায়রিয়ায় মারা যেত তাহলে বাংলাদেশে কতগুলো মানুষ কম থাকতো একবার ভেবে দেখেছিস? তাহলে তো তুই আজ থাকতি না।
আজকের কোন নারী কি ভাবতে পারেন ৯টি পুত্র ও ৪ টি কন্যা প্রসব করার? অনেকেই পারবেন না। তারপরও আজো কিন্তু আমাদের দেশের জনসংখ্যার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।
৮০ এর দশকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম খুব জোরদার ছিল বলে মনে হয়। আমি খুব রেডিও শুনতাম। তাদের প্রচুর প্রচার-প্রচারণা , জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণমুলক অনেক অনুষ্ঠান প্রচারিত হতো। তেমনি একটি অনুষ্ঠান ছিল সুখী সংসার। এছাড়া বাংলাদেশে বেতারের বিভিন্ন আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলোও খুব সুন্দর সুন্দর জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণমুলক অনুষ্ঠান প্রচার করতো।
খুলনা রেডিও বিকাল ৫টা ৫ মিনিটে এই রকম একটি অনুষ্ঠান প্রচার করতো। তাতে সুন্দর আলী ভাই নামে এক জন থাকতেন। তার সুন্রদ সুন্দর কথা শোনার জন্য আমি ৫ টা বাজলেই খুলনা বেতার টিউন করে বসে থাকতাম।
সেই সময় এই সব অনুষ্ঠানে চিঠিপত্রের জবাব দেয়া হতো। নব দম্পতিরা কি কি ব্যবহার করতে হবে তা নিয়ে রেডিওর মারফত পরার্মশ নিতেন।
আমার বয়স খুব বেশী ছিল না। সব বুঝতামও না। তারপরও অনেক কিছুই মনে আছে। যেমন বিভিন্ন জন্ম নিয়ন্ত্রণ পণ্যের বিজ্ঞাপন।
কিছু বিজ্ঞাপনের কিছু কথা আজো কানে বাজেঃ
১। মুর্খ লোকের মুর্খ কথায় কান দিবেন না। বুদ্ধিমান হোন, ঠিক কাজটি করুন।
২। ব্যবহারের বড়ি জয় , খাবার বড়ি নয়।
৩। রাজার সুখে দিন কাটিবে দুঃখ রবে না।
৪। আমি মফিজ। বাস চালাই। ঢাকা থিকা ভালুকা হইয়া মৈমনসিং যাই। গাড়ীতে আমার রেডিও বাজে। - ও মিয়া, শুনলাম তোমার বউ আবারও পোয়াতী হইছে। ........। মুর্খ লোকের মুর্খ কথায় কান দেও ক্যান?
আমার মনে হয় বাংলাদেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম খুবই ভাটার টানে আছে। এটা খুব একটা ভালো কথা না।
প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। আয়তন ও সম্পদের তুলনায় বাংলাদেশের জনসংখ্যা খুবই বেশী।
বিদেশে এখন আর আগের মতো শ্রমিকের চাহিদা নেই। তাই বাড়তি জনসংখ্যার জন্য কাজের ব্যবস্থা দেশে তো করা যাবেই না । বিদেশেও করা এখন অনেক কঠিন।
অতএব বুদ্ধিমান হোন। ঠিক কাজটি করুন।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১০:০৮