যৌন মিলন মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য খুবই অপরিহার্য গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্যএকটি বিষয়। নর-নারীর পারস্পরিক সম্পর্ক সুন্দর করার জন্য এর কোন বিকল্প নেই।
এক্ষেত্রে ভারতের জাতির জনক ও স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধান নেতা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ছিলেন একটু ব্যতিক্রম।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা ও জাতির পিতা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী চাইতেন - শুধু আনন্দের জন্য যৌনমিলন করাকে নারীরা যেন প্রতিরোধ করে। তাঁর মতে নর-নারীর যৌনসম্পর্ক হবে শুধু সন্তান উৎপাদনের জন্য যতটুকু দরকার - ততটুকুই। এর বেশী নয়।
একজন আমেরিকান জন্মনিয়ন্ত্রণকর্মী এবং যৌন শিক্ষাবিদ মার্গারেট স্যাঙ্গারের সাথে ১৯৩৫ সালে গান্ধীজীর যে আলাপ হয়েছিল - তার বিবরণ বছর কয়েক আগে প্রকাশিত হয়েছে।
সম্প্রতি গান্ধীজীর এক নতুন জীবনীগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে যা লিখেছেন ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ। এ বইতে নারী অধিকার, যৌনতা এবং কৌমার্য বিষয়ে গান্ধীজীর ভাবনা ফুটে উঠেছে।
মার্গারেট স্যাঙ্গারের সাথে গান্ধীর আলোচনার বিস্তারিত নোট নিয়েছিলেন তাঁর সচিব মহাদেব দেশাই।
মিঃ দেশাই লিখছেন: 'মনে হচ্ছিল দু'জনেই একমত যে নারীর মুক্তি হওয়া উচিৎ - তার নিজের ভাগ্যের নিয়ন্তা হওয়া উচিৎ' - কিন্তু খুব দ্রুতই তাদের মধ্যে মতভেদ দেখা গেল।
মিসেস স্যাঙ্গার ১৯১৬ সালে নিউ ইয়র্কে আমেরিকার প্রথম পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র খুলেছিলেন । তিনি মনে করতেন, জন্মনিরোধকই হচ্ছে নারীর মুক্তির সবচেয়ে নিরাপদ পথ।
কিন্তু গান্ধীজী বললেন, পুরুষদের উচিৎ তার 'জান্তব কামনা'কে সংযত করা। এ ক্ষেত্রে নারীদের উচিৎ তাদের স্বামীদের বাধা দেয়া।
তিনি মিসেস স্যাঙ্গারকে বললেন, যৌনক্রিয়া করা উচিৎ শুধু সন্তান উৎপাদনের জন্যই।
সে বছর ভারতের ১৮টি শহরে সফর করেছিলেন মিজ স্যাঙ্গার। তিনি কথা বলেছিলেন ডাক্তার ও কর্মীদের সাথে। কথাবার্তার বিষয়বস্তু ছিল - জন্ম নিয়ন্ত্রণ এবং নারীমুক্তি।
তিনি মহারাষ্ট্র রাজ্যে গান্ধীর আশ্রমেও গিয়েছিলেন, এবং সেখানেই তার সাথে মিজ স্যাঙ্গারের এই কৌতুহলোদ্দীপক আলোচনা হয়।
তবে গান্ধীজীর মতামত শুনেও মিসেস স্যাঙ্গার দমে গেলেন না। তিনি বিতর্ক চালিয়ে গেলেন।
"কিন্তু নারীরও তো গভীর যৌন অনুভুতি আছে, তারা পুরুষের মতোই গভীর এবং তীব্র" - তিনি বললেন, "এমন সময় আছে যখন নারীরাও ঠিক তাদের স্বামীদের মতোই শারীরিক মিলন চায়।"
"আপনি কি মনে করেন যে যখন একজন নারী ও পুরুষ পরস্পরের প্রেমে আবদ্ধ এবং সুখী, তখন তারা শুধু বছরে দু'একবার যখন সন্তান চাইবে তখনই যৌনমিলন করবে - এটা কি সম্ভব?" প্রশ্ন করলেন মিসেস স্যাঙ্গার।
তিনি যুক্তি দিলেন - "ঠিক এই ক্ষেত্রেই জন্মনিয়ন্ত্রণ খুবই সুবিধাজনক - যা নারীকে অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ থেকে রক্ষা করবে এবং তার দেহের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে।"
কিন্তু গান্ধীজী একগুঁয়েভাবে তার বিরোধিতা করতে থাকলেন।
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী মহাত্মা গান্ধী নামেই বেশী পরিচিত। তিনি একজন অসাধারণ মহামানব ও নেতা। তাঁর মতো ব্যক্তিত্ব বর্তমান জগতে বিরল।
*তথ্য সূত্রঃ বিবিসি বাংলা অনলাইন।