চোখ মেলে তাকাতেই লোকটি বলল- আমার বখশিশ কই?
*********************************************************
কোন ডাক্তারেই কাজ হচ্ছে না। গেলাম দেশের সেরা হাসপাতালটিতে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একজন সহযোগী অধ্যাপক আমাকে অনেকগুলো টেস্ট দিলেন। এর মধ্যে একটি টেস্ট আমার কাছে খুবই জটিল মনে হচ্ছিল। কেননা, এই টেস্টটি করাতে নাকি অ্যানেসথেসিয়া দিতে হয়। এটা করাতে আমার কেমন যেন ভয় ভয় লাগে। কেবলই মনে হয় আর যদি জ্ঞান না ফিরে!
সে যাই হোক। শুভ দিন দেখে ধানমন্ডির ২ নম্বর সড়কের একটি বিখ্যাত ডায়াগস্টিক সেন্টারে চলে গেলাম যার নামের প্রথম অক্ষর প ( ইংরেজিতে P) দিয়ে শুরু। রিসেপশন থেকে বলে দিল লিফট ধরে ৬ তলায় চলে যেতে।
লিফটে উঠাও এক মহা বিড়ম্বনার ব্যাপার। কেউই লাইনে দাঁড়িয়ে কিউ মেনটেইন করতে চায় না। সবাই ঠেলাঠেলি করে উঠতে চায় । কেউ কারো জন্য সামান্যতম সৌজন্য দেখাতেও নারাজ। বড়ই অস্থির সবাই।
যাক কোনমতে নির্ধারিত তলায় গিয়ে দেখি আমার মতো আরও শ’ খানেক লোক/রোগী বসে আছেন। অনেক ক্ষণ অপেক্ষার পর আমার পালা এলো। কর্তব্যরত ব্যক্তিটি আমার কাগজপত্র দেখে বললেন- আপনি যদি অ্যানেসথেসিয়ার অষুধ আর সিরিঞ্জ বাইরে থেকে কিনে নিয়ে আসেন তাহলে এক রকম খরচ আর যদি আমাদের কাছ থেকে নেন তাহলে অন্য রকম খরচ। কোনটা করবেন সেটা আপনার বিবেচনা।
আমি একে তো রোগী মানুষ। তারউপর ওই জায়গার দোকান পাট তেমন কিছু চিনি না। চিনি কেবল সিটি কলেজ। তাই উনাদের সাপ্লাই থেকেই নিব বললাম। টাকা পরিশোধ করে আমি অপেক্ষা করতে থাকলাম। অনেক প্রতীক্ষাল পর এক সময় আমার পালা এল। আমি নির্ধারিত জায়গায় শুয়ে পড়লাম। আমাকে ইনজেকশন দেয়া হলো। ধীরে ধীরে এক সময় আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। যেন এক দীর্ঘ কাল সময় কেটে গেল। মনে হলো আমার কোন অসুখই নেই। আহা কি শান্তির ঘুম।
এক সময় আমার ঘুম ভাঙ্গলো। চোখ খুলে আমি অবাক হয়ে তাকালাম। একটু পরেই সব মনে পড়লো। সামনে তাকিয়ে দেখলাম এক লোক। তিনি সাদা এপ্রোন পরিহিত।
আমার সামনে এসে আগ্রহ সহকারে বলল- আমার বখশিশ কই?
আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। কই আছি। চারিদিকে এতো মানুষ কেন। সহসাই সম্বিত ফিরে পেলাম।
- কিসের বখশিশ? কেন বখশিশ? আমি কি সুস্থ হয়ে গেছি!
- আপনার টেস্ট করা শেষ হয়েছে। বখশিশ দিবেন না??
বড়ই আচানক ঘটনা তো। আমি জানতাম- বাংলাদেশের যে কোন সরকারী অফিস, হাসপাতাল, থানা মানা এই সব জায়গায় গেলে চেয়ার টেবিল এমনকি ঘরের দেয়ালও বখশিশ চায়। কিন্তু বেসরকারী ডায়াগস্টিক সেন্টারে গেলেও বখশিশ চাইবে এটা আমার জানা ছিল না।
জীবনে কত কিছুই যে জানি না। এতো কম বুদ্ধি নিয়ে টিকে আছি কি করে। ডারউইনের থিওরী তো আমার দ্বারাই প্রমাণ করা যেতে পারে। মানুষ এতো বোকা হয় কি করে।
আফসোস!