এনাম ভাই আমার সহকর্মী ছিলেন। আজ কেবলই তাঁর কথা মনে পড়ছে। এমনিতে খুব হাসিখুশী মানুষ। দারুণ মিশুক। রসিয়ে খুব গল্প করতে পারতেন। তবে প্রায়ই রেগে যেতেন। বলতেন- চাইচ্ছা ছুইলা পাতলা কইরা দিমু। আমি আমার বাপকেই ছাড়িনি। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করতেন।
এনাম ভাইর বাড়ি বগুড়ায়। বগুড়ার ছৈল হিসাবে তার গর্বের সীমা ছিল না। প্রচুর বিড়ি খেতেন। সাথে চা। আমাকে বলতেন- আমার কাজগুলো একটু সামলে নিয়েন। আমি একটু রুমে যাবো। হাত-মুখ ধুয়ে চা খাব। বিড়ি খাবো । তারপর আসবো। ঠিক আছে?
অনেক ধার্মিক ছিলেন তিনি। চেষ্টা করতেন প্রথম জামাতেই শরীক হতে। দেখতাম, তিনি প্রথম কাতারে দাঁড়িয়ে গেছেন সবার আগে। নামাজ শেষে দুপুরের আহার। তারপর চা এবং বিড়ি। অবশেষে আবার কাজে ফিরে আসা।
একদিন খোশগল্প হচ্ছিল। নামাজ প্রসঙ্গ এলো। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন- আপনি নামাজ কেন পড়েন?
আমি বললাম- আমারও তো একই প্রশ্ন- আপনি নামাজ কেন পড়েন?
তিনি বললেন- আপনার জবাব শুনি আগে।
আমার তো কাটশাট জবাব। বললাম- আমি নামাজ পড়ি বেহেস্তে যাবার জন্য। আমার উদ্দেশ্য একটাই । আমি বেহেস্তে যাবো। আরামসে থাকবো। খানাপিনার কোন টেনশন থাকবে না। সাথে থাকবে হুর, মাছের কলিজার কাবাব, ফল, শরাব….
আমি বললাম- এবার আপরি বলেন- আপনি কেন নামাজ পড়েন?
তিনি বললেন- আমার নামাজ পড়ার উদ্দেশ্য আপনার থেকে একেবারেই ভিন্ন। আমি নামাজ পড়ি আল্লাহকে রাজিখুশী করার জন্য। আমি আপনার মতো না।
আমি বললাম- আল্লাহ রাজি-খুশী হলে তো আপনাকে অবশেষে বেহেস্তেই পাঠাবে। শেষ পর্যন্ত আমি আর আপনি তো দুই জনেই বেহেস্তে গিয়ে হাজির।
তিনি বললেন- সেটা আল্লাহর বিষয়। তিনি বেহেস্ত দিলে দিবেন। কিন্তু আমার উদ্দেশ্য আল্লাহকে রাজিখুশী করা।
নতুন বছর ২০২৪ সালে এনাম ভাইকে খুব মনে পড়ছে। এনাম ভাই মারা গেছেন ২০২৩ সালের মে মাসের ০৪ তারিখে।
জনাব মোঃ এনামুল হক তালুকদার। বগুড়ার ছৈল, আপনি পরপারে অনেক অনেক ভালো থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:৪১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



