ডিসেম্বর মাসের সম্ভবতঃ প্রথম সপ্তাহ হবে । আমাদের টেস্ট পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে । এখন ফলাফলের জন্য অপেক্ষা।
ফলাফল ঘোষিত হলে ফরম পূরণ করার সময় আসবে। ফরম পূরণ শেষ হয়ে গেলে মার্চ মাসে এসএসসি পরীক্ষা ।
এটাই তখন জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় । তাই এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রস্তুতি চলছিল ।
এই ফাঁকে একটি কাজ করে ফেললাম। একটি গল্প লিখে ফেললাম।
গ্রামের স্কুলে পড়াশোনার কারণে শহরের সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে মোটেই জ্ঞাত ছিলাম না । তবে স্কুলে দৈনিক ইত্তেফাক কিংবা অন্য একটি পত্রিকা আসতো প্রতিদিন সন্ধ্যাকালীন সময়ে।
পত্রিকাটা প্রধান শিক্ষক মহোদয়ের বাসায় রাখা হতো। ওখান থেকে স্যার প্রায় বিকালবেলা মাঠে নিয়ে এসে ঘাসের উপর বসে বসে পড়তেন। আমি প্রায় সামনে বসে দুই একটি পাতা উল্টিয়ে দেখতাম । সাহিত্য সাময়িকী একটি পাতা সম্ভবতঃ রবিবার অথবা শুক্রবারে বের হতো।
সাহিত্য সাময়িকী পাতা টা আমার খুব প্রিয় ছিল । ওখানে প্রচুর পরিমাণে কবিতা ও একটি গল্প একটি প্রবন্ধ এই ভাবে ছাপা হতো।
তখন ইত্তেফাকের এই পাতায় এম আর আক্তার মুকুলের একটি ধারাবাহিক লেখা প্রকাশিত হতো লেখাটির নাম ছিল পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি কলকাতা কেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর ক্রমবিকাশের ধারা। আমি নিতান্তই পোলাপান হওয়া সত্ত্বেও ওই জটিল লেখাটিও পড়ে বোঝার চেষ্টা করতাম । সে যাই হোক তখন থেকেই মোটামুটি ভাবে সাহিত্য প্রীতি অনুভব করতে শুরু করেছিলাম।
যেহেতু টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়নি এবং এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ হয়নি তাই মোটামুটি অবশ্যই ছিল হাতে এই অবসরকে কাজে লাগিয়ে ছোটখাটো একটি গল্প রচনা করে ফেললাম।
কোন ড্রাফট কিংবা খসড়া করিনি। যে কাগজে লিখেছিলাম সেই কাগজটি হাতে নিয়ে স্কুলে চলে গেলাম জাবেদ আলী স্যারকে দেখাবো বলে। তিনিও তখন ফ্রি ছিলেন । ক্লাস ছিল না। তাকে দেখানোর পর তিনি বললেনঃভালোই তো হয়েছে।
বললামঃ স্যার, কোনো পত্রপত্রিকায় পাঠালে কি ছাপা হবে?
জাবেদ আলী স্যার বললেন- না ছাপানোর তো কিছু দেখছি না। কোন পত্রিকায় পাঠিয়ে দাও।
গ্রামের স্কুলের শিক্ষক হলেও জাবেদ আলী স্যার ছিলেন একজন সাহিত্য অনুরাগী ব্যক্তি। তিনি প্রচুর পড়াশোনা করতেন এবং কবিতা নাটক ইত্যাদি সম্পর্কে তাঁর ভালো ধারণা ছিল।

জাবেদ আলী স্যার।
সে যাই হোক স্কুলের ভিতরেই ছিল পোস্ট অফিস। পোস্ট অফিসে গিয়ে পোস্টম্যান কে বললাম - কত টাকার টিকিট লাগবে?
তিনি টিকেট দিলে খামের ভেতর ভরে ঠিকানা লিখে ঢাকার একটি মাসিক সাময়িক পত্রিকাতে পাঠিয়ে দিলাম সেই বছরের একুশে ফেব্রুয়ারি বা শহীদ দিবস সংখ্যায় প্রকাশ করার জন্য।
তারপর অপেক্ষার পালা। জনুয়ারি মাস চলে গেল। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ডাকযোগে পত্রিকাটি পেলাম।
ভয়ে ভয়ে এনভেলপ খুলে পত্রিকাটি বের করে প্রথমে দেখলাম সূচিপত্র।
আশ্চর্য ঘটনা, গল্পটি ছাপা হয়েছে! পত্রিকাটির ঠিক শেষের দুটি পাতা জুড়ে এটি ছাপা হয়েছে । গল্পটির নাম হারানো সন্তান। স্কেচ করেছিলেন শিল্পী সৈয়দ ইকবাল।
তখন আমার যে পরিমাণ আনন্দ লেগেছিল পরবর্তী জীবনে আর সে রকম আনন্দ কখনো কোথাও পেয়েছি বলে মনে পরে না।
সৃষ্টির আনন্দের কোন তুলনাই হয় না। সেটা যে কোনো লেখাই হোক । হোক কবিতা প্রবন্ধ কিংবা গল্প।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:৫৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



