somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কানাইয়ের খেয়া/গোদারা *************

০৩ রা এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার অনেক বাল্যকালে কানাই ছিলেন দোহারের বিশেষ করে জয়পাড়া, চর লটাখোলা, পূর্বচর, রামনাথপুর, রাধানগর, বিলাসপুর, হরিচন্ডী ও এর আশেপাশের সব এলাকার মানুষের কাছে অনেক জনপ্রিয় একজন ব্যক্তি। আবাল –বৃদ্ধ-বণিতা এমন কেউ ছিল না যে তাকে এক নামে চিনতো না। কেননা, তিনি সবাইকে নদী পার করতেন। নদীমাতৃক দোহার উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের জন্য জয়পাড়া সদরে তথা দেবীনগরের হাটে আসা-যাওয়াটা সেই আমলে খুবই কঠিন ছিল। এই অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র ছিল জয়পাড়া ও দেবীনগরের হাট। সেই সময়ে এখনকার মতো এতো বেশী রাস্তা-ঘাট ছিল না। ছিল না সেতুর কারবার। কোথাও বাঁশের সাকো ছিল। ফলে মানুষ খেয়া নৌকার উপর বেশী নির্ভরশীল ছিল।

বিশেষ করে ভরা বর্ষার মৌসুমে যখন নদী-খাল-বিল পানিতে কানায় কানায় ভরে যেত তখন নদীর এপার থেকে ওপার যেতে কানাইয়ের সেবা নিতে হতো বিরাট সংখ্যক মানুষকে। কানাইয়ের খেয়া পার হয়ে মানুষের প্রতিদিনের জীবন যেন পূর্ণতা পেত।

সেই আমলে দোহারে আনাচে কানাচে এখনকার মতো বাজারের ছড়াছড়ি ছিল না। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে হাট বসতো। অন্যান্য দিনে বসতো বাজার । ফলে সপ্তাহের হাটটি ছিল সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বেশীর ভাগ মানুষই সাপ্তাহিক বাজারের বেশীর ভাগ মালামাল কিনতেন জয়পাড়া দেবীনগর হাট থেকে। কৃষকের ক্ষেতে উৎপাদিত পণ্যসমূহ বিক্রি হতো এই হাটে। এখান থেকে পাইকাররা এসে মালপত্র কিনে দূরের বড় বড় গঞ্জে নিয়ে যেত।

সেই সময় বড় বড় হাট ও বাজারের বার ও তারিখ পর্যন্ত মানুষের মুখস্ত থাকতো। যেমন- বিষ্যুদবার জয়পাড়া দেবীনগরের হাট, শুক্রবার মেঘুলার হাট, সোমবার – কোমরগঞ্জের হাট, বুধবার বান্দুরার হাট ইত্যাদি। এই সব হাটে আশেপাশের উপজেলার মানুষজন বিপুল সংখ্যায় আসতেন তাদের পণ্যদ্রব্য কেনা-বেচা করতে।

এই সময় কানাই এর খেয়ায় বিপুল চাপ পড়তো। খেয়ায় উঠার জন্য নদীর উভয়পারে অনেক মানুষ লাইন ধরে অপেক্ষা করতো। এক পর্যায়ে কানাই বাবু একটা বুদ্ধি করলেন। নৌকা চালানোর কঠিন কাজকে সহজ করার জন্য নৌকার দুই মাথায় দড়ি বাঁধলেন । এপর নৌকায় উঠার পর উৎসাহীরা টেনে নিয়ে নৌকা অপর পারে যেত।


কানাই বাবুর সব চেয়ে বড় সুবিধা ছিল তিনি হাজারে হাজারে মানুষ পার করতেন । কিন্তু কেউই তাকে নগদ সেলামী দিত না। তিনি বছরে একবার মাত্র দক্ষিণা নিতেন। তাও আবার টাকা নিতেন না। বেশীর ভাগই নগট টাকা দিত না। ব্যতিক্রম থাকতে পারে।

সেই আমলে যখন কৃষকের ঘরে নতুন ধান আসতো তখন কানাই বাবু তার নৌকা নিয়ে বাড়ি যেতেন দক্ষিণা নেবার জন্য। নৌকা নিয়ে বাড়ি বাড়ি যেতেন। এক সময় পাকা সোনার ধানেতে ভরে উঠতো তার সোনার তরী।


কানাই এর সময় ও তার পরবর্তীতে অনেক খেয়া ও তাদের সেবা দেখেছি। টাকা না দিলে বকা ঝকা করতে দেখেছি অনেক মাঝিকে। অথচ কানাই গণহারে পার করতেন। কোন হিসাব রাখতেন না কে পার হলো আর কে পার হলো না।

আজ অনেক বছর পর কানাইয়ের খেয়া/গোদারার কথা খুব মনে পরছে। কানাইয়ের মতো উদার মানুষ এই আমলে থাকলেও খুব বেশী নেই্। এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিপ্লবের নিঃশব্দ মূল্য: অর্থনৈতিক বৈষম্য ও বাংলাদেশি ছাত্র আন্দোলন

লিখেছেন মুনতাসির, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:২৫

এ লেখাটি বেশ বড়ো। এখানে ছোট করে দেয়া হল। পুরো লেখাটি যদি কেও পড়তে চান, তবে নীচের লিঙ্ক থেকে পড়তে পারবেন।


সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন পর্যালোচনা চলছে। জাতিসংঘের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেঁচে থাকার প্রয়াস।

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৮




আমার ভেতরে জন্ম নেয়া বিভিন্ন চরিত্র আজন্ম যুদ্ধে লিপ্ত,যা বিশ্বযুদ্ধ থেকে ভয়াবহ। প্রতি সেকেন্ডে একজন মারছে,একজন উদযাপন করছে, এসব আটকানোর কোনো শান্তি চুক্তি নেই, নেই কোনো মোড়কে বেধে দেয়ে বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিছু কিছু মানুষ বলার শুরু করেছে, "আমরা আগেই ভালো ছিলাম"।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:০২



একাধিক কারণে মানুষ ইহা বলার শুরু করেছেন: (১) সাধারণ মানুষ কোমলমতিদের ক্রমেই চিনতে পারছেন, ইহা ভীতি ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করছে; কোমলমতিরা সরকারের গুরুত্বপুর্ণ অনেক পদে আছে ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি - একাল সেকাল

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮



টানা বৃষ্টির মধ্যে মরিচের দাম বেড়ে হয়েছে ৪০০ টাকা কেজি । অন্যদিকে ফার্মের মুরগির এক পিছ ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫ টাকা।শুধু মরিচ নয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কমলা যদি পরাজিত হয়, "দ্রব্যমুল্য"ই হবে ১ নম্বর কারণ

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৭



দ্রব্যমুল্য হচ্ছে অর্থনৈতিক সুচকগুলোর মাঝে ১ টি বড় প্যারামিটার; ইহা দেশের অর্থনীতি ও চলমান ফাইন্যান্সের সাথে সামন্জস্য রেখে চলে; টাস্কফোর্স, মাস্কফোর্স ইহার মুল সমাধান নয়; ইহার মুল সমাধন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×