পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াশোনা কালীন আমাদের বাংলা বইয়ের ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ কে নিয়ে একটা লেখা ছিল। সেখানেই প্রথম জানতে পারি, তিনি দেড় ডজন এর মত ভাষা জানেন।
এটা জানার পর ওনার প্রতি যেমন শ্রদ্ধাভক্তি ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছিল তেমনি নিজের প্রতি যতটুকু আত্মবিশ্বাস থাকা দরকার সেটা জিরোতে নেমে এসেছিল। উনিও মানুষ আমিও মানুষ । উনি দেড ডজন ভাষা অবলীলায় বলে যাচ্ছেন । আর আমি বাংলা ইংরেজি দুই ভাষা নিয়েই হিমশিম খাছি।
ভাষা শিক্ষা করাটা আসলে খুবই জটিল একটি ব্যাপার । ইংরেজি টুকটাক সামান্য পারি । এটাকে পুঁজি করে অন্য কোন একটি ভাষা শেখার চেষ্টা । সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে খুঁজে দেখলাম কোন ভাষা শেখার সহজ এবং গুরুত্বপূর্ণ ।
দেখতে পেলাম, ইংরেজি ভাষার পর পরই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাষা হচ্ছে ফরাসি ভাষা । এটি জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত ও জাতিসংঘের দ্বিতীয় অফিশিয়াল ভাষা । এই ভাষাটি শিখতে পারলে মন্দ হয় না । এছাড়াও আরও একটি সহজ তম ভাষা আছে সেটা হচ্ছে স্প্যানিশ । একে ইংরেজি ভাষার খালাতো ভাই ও বলা যেতে পারে। এ কারণে বলা যেতে পারে সেটা হচ্ছে বাংলার সাথে যে রকম হিন্দির মিল আছে ইংরেজির সাথে স্প্যানিশের তার চেয়ে অনেক বেশি মিল পাওয়া যায়।
কিন্তু মাঠে নেমে দেখলাম, এই ভাষার মতো জটিল ভাষা পৃথিবীতে মনে হয় খুব কমই আছে। তারপরেও শিল্প সাহিত্যের রাজধানী যেহেতু প্যারিস আর প্যারিসের ভাষা যেহেতু ফরাসি তাই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম, শিখলে ফরাসি ভাষাই শেখা যায় কিনা।
আরেকটি ভাষা আছে যেটা ইংরেজি ভাষা জানলে শিখতে একটু সহজ হবে সেটা হচ্ছে স্প্যানিশ ভাষা ।
স্প্যানিশ ভাষা টা মোটামুটি সহজ বলা যেতে পারে । স্প্যানিশ এর সাথে তুলনা করলে ফরাসি ভাষা কমপক্ষে ১০ গুন কঠিন ভাষা ।
তারপরও মনেপ্রাণে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি কমপক্ষে ১০ টা বাক্য হলেও শিখব।
যেই ভাবা সেই কাজ । তাই মোটামুটি টুকটাক কিছু হাবিজাবি শিখে ফেলেছি । আরেকটি ব্যাপার নিয়ে খুব অবাক হয়ে চিন্তা করেছি ।
শ্রী হরিনাথ দে
এই চিন্তাটা আমাদের বাংলা ভাষা অঞ্চলের তিনজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়ে । প্রথমজন শ্রী হরিনাথ দে । এই ভদ্রলোক অসাধারণ একজন ব্যক্তি যিনি কিনা তার মাত্র ৩৪ বছরের জীবনে ৩৪ টি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। অথচ এই পৃথিবীতে সর্বসাকুল্যে তিনি আয়ু পেয়েছিলেন মাত্র ৩৪ বছর। অসাধারণ এই লোকটিকে আমার কাছে কম্পিউটারের মত মনে হলো ।
ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
বহু ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে এক জন অসাধারণ ব্যক্তি ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ । তিনি অবশ্য দীর্ঘ জীবন লাভ করেছিলেন । তারপর তিনি ১৮ টি ভাষায় অত্যন্ত দক্ষতা অর্জন করেছিলেন ।
সৈয়দ মুজতবা আলী
সর্বশেষ আরেকজন ব্যক্তি তিনি হলেন সৈয়দ মুজতবা আলী। অসাধারণ এক জন সাহিত্যিক । তিনি ১২ টি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেছিলেন ।
এই তিনজন ব্যক্তিকে যখন চিন্তা করি তখনই মনে হয় উনারা যদি একই সঙ্গে এতগুলো ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে পারেন তাহলে আমি কেন ফরাসি আর স্প্যানিশ ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে পারব না ।
যেই ভাবা শেই কাজ । তাই শুরু করে দিয়েছিলাম এই দুইটি ভাষার সামান্য একটু যাতে শিখতে পারি সেই প্রচেষ্টা।
পৃথিবীতে জনসংখ্যার দিক দিয়ে মান্দারিন ভাষার একটা গুরুত্ব আছে । কিন্তু মান্দারিন শিক্ষার প্রতি আমার কোনো এক অজানা কারণে আমার কোন আগ্রহ আসে না । রোমানস ভাষার একটা সুবিধা আছে । এই ভাষাগুলো ল্যাটিন হরফে লেখা হয় বলে অন্তত অক্ষর চেনার ব্যাপারটা খুব সহজ । মান্দারিন, জাপানিজ, কোরিয়ান বা এরাবিক এই সমস্ত ভাষায় এই সুবিধাটা পাওয়া যায় না । আমাদের সময়ে সব চেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, ইন্টারনেট । যেটা উপরে বর্ণিত তিনজন গুণী ব্যক্তির ছিল না। তাইএকটু চেষ্টা করলেই টুকটাক দক্ষতা অর্জন করা অবশ্যই সম্ভব হবে।
সে যাই হোক । ভাষা নিয়ে নাড়াচাড়া করার অবসরে আরো একটি জিনিস জানা গেছে । সেটা হচ্ছে আমরা বাংলা ভাষা যত সহজে বলি আসলে বাংলা ভাষা কিন্তু খুব একটা সহজ ভাষা ও নয় । যেসব প্রবাসীদের ছেলেমেয়েরা কখনো বাংলাদেশে পড়াশোনা করেনি একমাত্র তারাই জানে বাংলা ভাষা শেখানো কি কঠিন কাজ।
সে যাই হোক আমি চেষ্টা করছি টুকটাক ভাষা শিখার জন্য। অন্ততঃ শ্রী হরিনাথ দে, ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, সৈয়দ মুজতবা আলী প্রমূখ মহান গুণীজনকে সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮