somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সামাজিক অবক্ষয়ের মুল কারণগুলো.....প্রতিকার কি? (২য় পর্ব)

১২ ই মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রথম পর্ব পড়তে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন।
সামাজিক অবক্ষয়ের মুল কারণগুলো.....প্রতিকার কি?

৫)। শহর মুখী হওয়া



বাংলাদেশের অর্থনীতি,শিক্ষা,রাজনীতি,উন্নয়ন সমস্ত কিছুই পুরো একটি শহর বা মেগাসিটির উপর নির্ভর হয়ে পরেছে। সরকারের বিকেন্দ্রীকরণ নীতি থেকে দূরে থাকার ফলে বাংলাদেশের গুটি কয়েক শহরের উপর পুরো বাংলাদেশ নির্ভর করে। ফলে গ্রাম থেকে দলে দলে লোক শহর অভুমুখি হয় এবং কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই এসব ঘটার ফলে শহরের উপর একটা চাপ পরে। সরকার সময়মত কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয়ার ফলে এ পরিস্থিতি দুর্বিষহ হয়ে উঠে এবং তা নাগরিকের ব্যাক্তিগত জীবনে পর্যন্ত প্রভাব ফেলে। এই সমস্যা নাগরিক শিক্ষা, নিরাপত্তা, আচার-আচরন সমস্ত কিছুকেই কলাপ্স করে দেয়।
দলে দলে লোক (যাদের অধিকাংশয় স্কিলড না), শহর অভুমুখি হওয়ার ফলে শহরের আইন শৃঙ্খলা অবনতি হয়।
সরকারের উচিত দেশের প্রতিটা জেলার দিকে না হোক অন্তত প্রায়োরিটি বেসিসে কিছু কিছু শহর কে টার্গেট করে ঢাকার সমস্ত অর্থনীতি,শিল্প, কারখানা ছড়িয়ে দেয়া।
৬)। আইনের ভারসাম্যহীনতা



আইনের ভারসাম্যহীনতা সামাজিক অবক্ষয়ের অন্যতম মুল কারন। সমাজের সুশাসনে আইনের উপর যেমন সব নাগরিকের একটা অধিকার আছে ঠিক তেমনি সমাজ গঠনেও আইনের যথাযথ প্রয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের একটি দায়িত্ব রয়েছে। রাষ্ট্র যদি তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় তবে তা সমাজের অবক্ষয় ত্বরান্বিত করে। আইনের ভারসাম্যহীনতা সমাজে একটা অস্থিরতা তৈরি করে। এই অস্থিরতা সমাজের সকল স্তরের মধ্যে একটি হতাশা তৈরি করে যার ফলশ্রুতিতে নাগরিকরা রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্য পালনে অনিহা প্রকাশ করে। আর এতে সমাজ আর রাষ্ট্র অনেকাংশে পিছিয়ে যায়। আইনের ভারসাম্যতার কারনে সমাজের অন্যান্য সিস্টেমও ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও অন্যায়ের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়।

৭)। ইতিহাস পরিবর্তন করা



বলা হয়ে থাকে যে ইতিহাস বিজয়ীদের দ্বারা লিখিত হয়। সেখানে পরাজিতদের কোনও স্থান নেই। অতীত সম্পর্কে আমাদের ধারণা এবং এই নিয়ে আমাদের বর্তমান উপলব্ধি সব কিছুই সুগভীরভাবে নিয়ন্ত্রন করার একটা চেষ্টা রাষ্ট্র করে থাকে।তারা এই কাজটি কখনো কখনো কূটনৈতিক বা হিংসাত্মক উপায়ে করে থাকে যার দরুন সমাজে একটি বিশৃঙ্গলা তৈরি হয় এবং এটি দীর্ঘমেয়াদে সমাজে প্রভাব ফেলে। একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করার সবচেয়ে সহজ উপায় হল তাদের দৃষ্টিভঙ্গিটি বাস্তবতার সাথে শুরু থেকেই ধীরে ধীরে পরিবর্তন করে দেয়া। যার ফলে কয়েক প্রজন্ম পর সমাজ একটি প্রত্যাশিত ইতিহাস পায় এবং সেই সাথে পায় একটি অপ্রত্যাশিত প্রজন্ম যারা মুল ইতিহাস থেকে অনেক দূরে থাকে।
কথায় আছে যে জাতি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে পারে না সে জাতি কখনো মেরুদণ্ড সোজা করে দাড়াতে পারে না। ব্যাক্তি বা দলীয় স্বার্থে ইতিহাস বিকৃতি করা বা ইতিহাসকে অস্বীকার করা বা ব্যাক্তিবিশেস কে অবজ্ঞা করা যে কোনও জাতি বা সমাজের জন্য লজ্জাকর।
এ সংক্রান্ত আমার নিজের আরেকটি লেখা পড়তে পারেন নিচের লিঙ্ক থেকে।
স্বেচ্ছায় ইতিহাস পুনঃলিখনকারীরা....যুগে যুগে

৮)। অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতা



বর্তমান রাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে শুধু টাকা থাকলেই আপনি ব্যাবসা করতে পারবেন। আপনার আইডিয়া থাকুক বা মেধা থাকুক রাষ্ট্র আপনাকে কোনও সাহায্য করবে না আপনার আইডিয়া কার্যকর করার ব্যাপারে। সাম্প্রতিক সকল সংসদ সদস্যদের কে খেয়াল করলেই দেখবেন সবাই ব্যাক্তিগত জীবনে ব্যবসায়ি। একচেটিয়া শিল্প- ব্যাংক মালিক গড়ে উঠলে আর ব্যাবসায়িদের সাথে রাজনৈতিকদের বন্ধন তৈরি হলে রাষ্ট্র দুরনিতিগ্রস্ত হয়ে যায়।ঐরূপ কাঠামো চলার ফলে রাষ্ট্রে ধনীরা আরও ধনী হয়ে পড়ে আর গরিবরা আরও গরিব হয়ে যায়।সমাজে স্পষ্টত দুই শ্রেণীর জন্ম হয়।অলিখিত ভাবে একশ্রেণী হয়ে যায় শাসক আর এক শ্রেণী হয়ে যায় শোষিত।ধীরে এর প্রভাব সমাজের অন্যান্য সেক্টরেও পড়ে এবং সমাজের সুযোগ সুবিধাগুলোর মধ্যেও বৈষম্য তৈরি হয়।তখন সমাজের নিন্মশ্রেণীর মধ্যে মৌলিক অধিকার গুলোর জন্যও সংগ্রাম করতে হয়।

৯)। মাদকের প্রসারতা



বর্তমান বিশ্বে পারমাণবিক মারণাস্ত্রের চেয়েও ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে মাদকতা। সমাজের উপর এর প্রভাব বর্তমানে বিশাল আকার ধারন করেছে। এর কারনে ঝরে যাচ্ছে অসংখ্য যুব প্রান, ভেঙ্গে যাচ্ছে কতো সুখের সংসার। বিশ্বায়নের যুগে বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে মাদকদ্রব্যেরও ব্যাপক উন্নয়ন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গাঁজা, আফিম, হেরোইন, মারিজুয়ান, প্যাথেড্রিন, কোকেন, পপি, ক্যানাবিস ইত্যাদির সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে ইয়াবা।মাদকদ্রব্য গ্রহণ ও অসামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়ার মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে।সরকারের পক্ষ হতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কিছু একশন নেয়া হলেও তা যথাযথ নয়।দেশের তরুন সমাজ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এই মাদকদ্রব্যর ছোবলে।এর প্রভাবে সমাজে চুরি, ডাকাতি, খুন, রাহাজানি শুধু বেড়েই চলছে যা সমাজের স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে।
মুলত সামাজিক অবক্ষয়ের মুল কারন হচ্ছে এই মাদক।
মাদকের কুফল শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সবদিকেই রয়েছে।

এখানে প্রতিটা বিষয়ের গভীরতা অনেক বিশাল।আমি খুব সংক্ষেপে শুধু মুল বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি।
আরও কিছু সমস্যা যদি আপনাদের চোখে ধরা দেয় অবশ্যই আলোচনা করবেন।
ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৬
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×