১ম শ্রেণির অসম্ভাব্যতা
১. বল ক্ষেত্র
“এক. যখন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু বয়স্ক বিজ্ঞানী কোনো কিছুকে সম্ভবপর হিসেবে ঘোষনা দেন, তিনি প্রায় সময়ই সঠিক বলেন। তিনি যখন কোনো কিছুকে অসম্ভবপর বলেন, তখন তাঁর ভুল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
দুই. সম্ভাব্যের সীমানা আবিষ্কারের একটিই উপায় আছে, সেটি হলো আরেকটু আগ বাড়িয়ে অসম্ভাব্যতার মাঝে যাওয়ার সাহস করা।
তিন. যথেষ্ট অগ্রসর যেকোনো প্রযুক্তিকে জাদু থেকে পৃথক করা যায় না।”
- আর্থার সি. ক্লার্কের তিন নীতি
“প্রতিরক্ষা দেয়াল তুলে ধরো!”
স্টার ট্রেক এর বেশিরভাগ পর্বেই ক্যাপ্টেন কার্ক এর মুখ থেকে এই আদেশ শোনা যেত। এটি করা হতো যেন এন্টারপ্রাইজ নামের স্টারশিপটির চারিদিকে বল ক্ষেত্র (বল ক্ষেত্র) তুলে ধরে শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। পুরো স্টার ট্রেক সিনেমায় বা টিভির পর্বগুলিতে এই বল ক্ষেত্রের ভূমিকা অসাধারণ। যখনই বল ক্ষেত্র থেকে শক্তি নিঃশেষ হয়ে আসে তখনই এন্টারপ্রাইজ স্টারশিপ প্রায় ধ্বংস হয়ে পড়ে। তবে শেষমেষ রক্ষা পায়, টিভি সিরিজ টি তো বেঁচে থাকতে হবে দর্শকদের জন্য!
তাহলে বল ক্ষেত্র আসলে কি? বিজ্ঞান কল্পহাহিনীতে বিষয়টি খুবই সহজ একটি বিষয়: খুব পাতলা কিন্তু অভেদ্য দেয়ালের মত একটি বাধার স্তর যা লেজার এবং এমনকি রকেটকেও ফিরিয়ে দেয়। এসব দেখে মনে হতে পারে, এমন জিনিস তো বিজ্ঞানীরা চাইলেই তৈরি করতে পারে। হয়ত কালই কোনো কোম্পানি ঘোষণা দিয়ে বসবে যে তারা এমন একটি প্রতিরক্ষা ব্যুহ সরবরাহ করবে। না, ব্যাপারটি এত ছেলেখেলা নয়, বরং বেশ জটিল।
এডিসনের বৈদ্যুতিক বাতি যেমন পুরো মানব সভ্যতায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটিয়েছে, বল ক্ষেত্রের ব্যবহারও আমাদের জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। সেনা সনস্যদরা হয়ে পড়বে অপ্রতিরোধ্য কারণ তারা শত্রুর মিসাইল বা গুলিকে ঠেকাতে পারবে। তাত্ত্বিকভাবে শুধু এক বোতামের চাপেই সেতু, রাজপথ ইত্যাদি তৈরি করা যাবে। মরুভূমির ভেতর পুরো শহর তৈরি করা যাবে যেখানে কেবল বল ক্ষেত্রের তৈরি আকাশচুম্বি অট্টালিকা থাকবে। শহরগুলোতে বল ক্ষেত্রের সাহায্যে আবহাওয়ার প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করা যাবে - ঝড়ো বাতাস, তুষার ঝড় বা টর্নেডোকে ইচ্ছেমত কাবু করা যাবে। সমুদ্রের নীচে বল ক্ষেত্রের চাঁদোয়ার নীচে শহর বানানো যাবে। বাড়িঘর তৈরিতে কাঁচ, সিমেন্ট এবং স্টীলের আর দরকার হবে না।
কিন্তু পরীক্ষাগারে বল ক্ষেত্র তৈরি করা প্রায় অসাধ্য কাজ। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, এর বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ছাড়া একে তৈরি করা অসম্ভব।
মাইকেল ফ্যারাডে
মহান ব্রিটিশ বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডের পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে বল ক্ষেত্রের ধারনার জন্ম হয়। কামারের ছেলে ফ্যারাডে ১৮০০ শতকের শুরুতে শিক্ষানবিশ বুকবাইন্ডার হিসেবে জীবন শুরু করেন। কিন্তু তিনি একসময় বিদ্যুত ও চৌম্বকত্ব নামের দুই নতুন বলের প্রতি প্রচন্ডভাবে আকৃষ্ট হোন। এ বিষয়গুলির উপর যা কিছু তিনি পেয়েছিলেন সব গোগ্রাসে গিলে ফেলে তিনি লন্ডনের রয়াল ইন্সটিটিউশনের প্রফেসর হামফ্রে ডেভির বক্তৃতা শুনতে যেতেন।
একদিন রাসায়নিক দুর্ঘটনায় প্রফেসর হামফ্রে ডেভির চোখে আঘাত লাগলে তিনি ফ্যারাডেকে সচিব হিসেবে নিলেন। ফ্যারাডে ধীরে ধীরে রয়াল ইন্সটিটিউশনের বিজ্ঞানীদের মন জয় করা শুরু করলেন এবং একসময় নিজে নিজে পরীক্ষা চালানোর অনুমতি পেলেন। ধীরে ধীরে ফ্যারাডির খ্যাতি বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে গেল যে এমনকি প্রফেসর হামফ্রে ডেভি ভীষণ ঈর্ষান্বিত হতে থাকলেন। এরপর ১৮২৯ সালে ফ্যারাডে জেনারেটর তৈরি করলেন যা পুরো মানব সভ্যতার গতিপথ পরিবর্তন করে দিল।
ফ্যারাডের এই অত্যাশ্চর্য আবিষ্কারের পিছনে ছিল তার “বল ক্ষেত্র”। কেউ যদি চুম্বকের উপর কিছু লোহার পাত রাখে তাহলে লোহার পাতে মাকড়শার জালের মত এক নকশা তৈরি হয়। এগুলিই ফ্যারাডের বল রেখা। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের দিকে তাকালেও আমরা দেখবো, এমন রেখা উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরুতে গিয়ে ঠেকেছে। ফ্যারাডের মতে শূন্যস্থান আসলে ফাঁকা নয় বরং সেখানে এমন বল রেখা ভর্তি থাকে যা আসলে কোনো বস্তুকেও সরাতে পারে। (ফ্যারাডে গরীব ঘরের সন্তান হওয়ায় গণিতের প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান তাঁর ছিল না। তাই তিনি হাতে এঁকে তাঁর বল রেখাগুলি তুলে ধরতেন। এ কারণেই আমরা আজ পদার্থবিদ্যার পাঠ্যবইয়ে অত সুন্দর বল রেখার ছবি পাই।)
ফ্যারাডে কিভাবে তার বল ক্ষেত্র খুঁজে পেলেন তার খোঁজ করার দায়িত্ব ইতিহাসবিদের হাতে ছেড়ে দিন। আধুনিক পদার্থবিদ্যার সারাংশ আসলে ফ্যারাডের ক্ষেত্রগুলির কোমল ছায়ার আশ্রয়ে লালিত পালিত। ১৮৩১ সালে ঘটনাটি ঘটে। একদিন তিনি এক বাচ্চার চুম্বককে তারের এক কুন্ডলির উপর দিয়ে নাড়ানোর সময় লক্ষ্য করলেন যে সেখানে বিদ্যুত তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ চুম্বকের অদৃশ্য ক্ষেত্র তারের ইলেকট্রনকে সরাতে পারছে, পুরোটাই ঘটছে ফাঁকা স্থান দিয়ে।
ফ্যারাডের বল ক্ষেত্রকে প্রথমে মানুষ অস্বীকার করলেও তা আজ কত কিছু করছে। যে আলোর সাহায্য নিয়ে আপনি এই বই পড়ছেন তা ফ্যারাডের তড়িচ্চৌম্বকত্ব আবিষ্কারের ফলেই সম্ভব হচ্ছে। ঘূর্ণনশীল চুম্বক তারের মাঝে ইলেকট্রনের প্রবাহ সৃষ্টি করে বিদ্যুত তৈরি করে। এরপর সে বিদ্যুত বাল্বের মাধ্যমে আলোতে পরিণত হয়। পানি বিদ্যুত প্রকল্পে পানির ধারা বিশাল চুম্বককে অনবরত ঘুরিয়ে যায়, আর এর ফলে ইলেকট্রনের স্রোতধারা তৈরি হয়, তখন আমরা বিদ্যুত পাই। ফ্যারাডের বল ক্ষেত্রের ফলেই আমরা আজ বিদ্যুচ্চালিত বুলডোজার দিয়ে যা কিছু ইচ্ছে গুড়িয়ে দিতে পারি। কম্পিউটার, ইন্টারনেট বা আইপড, কোনো কিছু্ই এই বিদ্যুত ছাড়া সম্ভব হতো না।
ফ্যারাডে গত প্রায় দেড় শতাব্দি ধরে পদার্থবিজ্ঞানীদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে আছেন। আইন্সটাইন তার দ্বারা এতটাই অনুপ্রাণিত ছিলেন যে ফ্যারাডের বল ক্ষেত্রের অনুসরণে তিনি অভিকর্ষ তত্ত্ব লেখেন। আমি নিজেও ফ্যারাডের বল ক্ষেত্র দ্বারা প্রভাবিত। এ কারণে আমি তার বল ক্ষেত্রকে স্মরনে রেখে সফলভাবে স্ট্রিং ত্বত্ত্ব লিখেছি। কোনো পদার্থবিজ্ঞানী যখন বলেন, “উনি একটি বল রেখার মত ভাবেন,” তখন আসলে প্রশংসাই করা হয়।
চারটি বল
গত দুই হাজার বছরে পদার্থবিজ্ঞানের সবচে গুরুত্বপূর্ণ কৃতিত্বের একটি হলো মহাবিশ্ব শাসন করা চারটি বলকে পৃথকভাবে চিনতে পারা। এগুলোর প্রতিটিই ফ্যারাডের বেঁধে দেয়া ক্ষেত্রের সংজ্ঞা দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়। দুঃখের বিষয় হলো, এগুলির কোনোটিই বিজ্ঞান কল্পকাহিনীতে দেখা বল ক্ষেত্রের মত নয়। এরা হলো:
১. মাধ্যাকর্ষন: এটি সেই অদৃশ্য শক্তি যা আমাদের পা মাটিতে ধরে রাখে, পৃথিবী আর তারাগুলিকে কক্ষচ্যুত হতে বাধা দেয়, সৌরজত আর মহাবিশ্বকে এক অদৃশ্য বাঁধুনিতে আটকে রাখে। মাধ্যাকর্ষন না থাকলে ঘূর্ণনশীল পৃথিবী থেকে আমরা ঘন্টায় ১,০০০ মাইল বেগে মহাশুন্যে ছুটে পড়তাম। মাধ্যাকর্ষন আটকে ধরে রাখে, ছুড়ে ফেলে না, তুলনামূলকভাবে এটি খুবই দুর্বল এবং বহু বহু দূর পর্যন্ত কাজ করে। অর্থাৎ এটি বিজ্ঞান কল্প কাহিনীতে দেখা অদৃশ্য প্রতিরক্ষা ব্যুহের প্রায় বিপরীত। একবার ভাবুন, একটি পাখির পালককে মাটিতে টেনে আনার জন্য পুরো পৃথিবীর প্রয়োজন। আবার, আমাদের এক আঙুলই ৬ ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন কিলোগ্রাম ওজনের পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষনের বিপরীতে কাজে করতে পারে
২. তড়িচ্চৌম্বকত্ব (ইলেকট্রোম্যাগনেটিজম): এটি সেই বল যা আমাদের নগর, বন্দর আলোকিত করে রাখে। লেজার, টিভি, রেডিও, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, বিদ্যুত, চৌম্বকত্ব – এসবই এই তড়িচ্চৌম্বক বলের ফলাফল। এ পযর্ন্ত মানুষের ব্যবহার করা সবচে বেশি প্রয়োজনীয় বল এটি। এটি মাধ্যাকর্ষণের মত নয় কারণ এটি আকর্ষন করে যেমন, তেমনি বিকর্ষনও করে। এটি ব্যবহারের কিছু সুবিধাজনক দিক আছে। প্রথমত, একে সহেজে নিরপেক্ষ (নিউট্রাল) করা যায়। প্লাস্টিক বা অন্যান্য বিদ্যুত অপরিবাহী বস্তু সহজেই শক্তিশালী বৈদ্যুতিক বা চৌম্বক ক্ষেত্রের মাঝে ঢুকে যেতে পারে। এছাড়া, তড়িচ্চৌম্বকত্ব অনেক জায়গা জুড়ে কাজ করে এবং একে সহজে একটি তলের উপর নিবন্ধ করা যায় না। তড়িচ্চৌম্বকত্বর সূত্রগুলি জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণের মাধ্যমে বর্ণনা করা হয় এবং এই সমীকরণগুলি আমাদেরকে জানায় যে,বল ক্ষেত্রগুলি আসলে আমাদেরকে কোনো সমাধান দিতে পারছে না।
৩ ও ৪. দুর্বল ও শক্তিশালী পারমাণবিক বল: তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের বলটিই হলো দুর্বল বল। এর মাধ্যমে পৃথিবীর কেন্দ্র, যা আসলে তেজস্ক্রিয়, উত্তপ্ত হয়ে আছে। আগ্নেয়গিরি, ভূমিকম্প কিংবা মহাদেশীয় সঞ্চারণের পেছনেও এই বল কাজ করে। শক্তিশালী বলটি অণুর ভেতরের নিউক্লিয়াসকে একত্রে ধরে রাখে। সূর্য ও আরো সব নক্ষত্রের শক্তি এই পারমাণবিক বল থেকে আসে যার ফলে পুরো মহাবিশ্ব আলোকিত হয়। সমস্যা হলো, এই পারমানবিক বল খুব অল্প দূরত্বে কাজ করে, কেবল নিউক্লিয়াসের সমান দূরত্বে। আবার এটি নিউক্লিয়াসগুলির বৈশিষ্ট্যের সাথে এমনভাবে আবদ্ধ যে একে নিয়ে কাজ করা প্রায় দুঃসাধ্য। বর্তমানে আমরা একে যে কাজে ব্যবহার করতে পারছি তা হলো: অ্যাটম স্ম্যাশারে সাব-অ্যাটমিক পার্টিকল ভেঙে আণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটাতে।
বিজ্ঞান কল্পকাহিনীতে যেভাবে বল ক্ষেত্রের ব্যবহার হয় তা বর্তমান পদার্থবিদ্যার নীতির সাথে না মিললেও আমরা কিছু ফাঁক দেখতে পাই। যেমন, পঞ্চম একটি বল থাকতে পারে যা হয়তো আমরা এখনো বিজ্ঞানাগারে দেখতে পাইনি। এমন এক বল যা হয়ত নাক্ষত্রিক দূরত্বে নয় বরং কয়েক ইঞ্চি থেকে কয়েক ফুট দূরত্বে কাজ করে। (এমন পঞ্চম বলের খোঁজে এখন পর্যন্ত নেতিবাচক ফলাফল হিসেবে পাওয়া গেছে।)
তবে এমন তো হতে পারে, আমরা প্লাজমা ব্যবহার করে বল ক্ষেত্রের কিছু বৈশিষ্ট্য নকল করতে পারি। প্লাজমা আসলে “বস্তুর চতুর্থ অবস্থা”। আমরা বস্তুর তিনটি অবস্থার কথা জানি: কঠিন, তরল ও বায়বীয়। কিন্তু মহাবিশ্বে বস্তু সবচে বেশি এর চতুর্থ অবস্থায় বিরাজ করছে, যা প্লাজমা নামে পরিচিত। এটি আয়নায়িত অণুর বায়বীয় অবস্থা। প্লাজমার ক্ষেত্রে অণুগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে এবং সেখানে ইলেকট্রনগুলি অণু থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। এর ফলে অণুগুলি বিদ্যুত আধানযুক্ত থাকে এবং তাই একে সহজেই বৈদ্যুতিক ও চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা প্রভাবিত করা যায়।
দৃশ্যমান বস্তুর কথা ভাবলে মহাবিশ্বে প্লাজমার অস্তিত্ব সবচে বেশি। আমাদের সূর্য, নক্ষত্রগুলি ও আন্তঃনাক্ষত্র গ্যাস- এসবই প্লাজমার তৈরি। পৃথিবীতে এরা দুর্লভ, আর তাই আমরা প্লাজমা সম্বন্ধে তেমন সচেতন নয়। কিন্তু আমরা একে বজ্রপাতে, সূর্যে ও আপনার প্লাজমা টিভিতে দেখতে পায়।
প্লাজমা জানালা
উপরে যেমন ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, কোনো গ্যাসকে খুব উচ্চ তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে প্লাজমা পাওয়া যায়। একে বৈদ্যুতিক ও চৌম্বক বল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত করে আকৃতি দেয়া যায়। যেমন, একে একটি চাদরের মত বা জানালার মত আকৃতি দেয়া যেতে পারে। এই প্লাজমা জানালা ব্যবহার করে সাধারণ বাতাসের ভেতর একটি বায়ুশূন্য স্থান তৈরি করা যেতে পারে। মহাকাশে মহাকাশযানের কোনো ছিদ্র বন্ধ করার জন্য মহাকাশযানের ভেতরের অংশ ও বাহিরের মহাকাশের মধ্যে দেয়াল করা যেতে পারে।
স্টার ট্রেক সিনেমা সিরিজে দেখা যায়, বল ক্ষেত্র ব্যবহার করে ছোট ছোট শাটল যান থাকে এমন ডেকটিকে মহাকাশের বাহিরের শূন্যস্থান থেকে পৃথক করে রাখা হয়। এটি যে কেবল টাকা বাঁচানোর এক চমকপ্রদ উপায়, তাই নয়। এটি সম্ভবপর এক প্রযুক্তিও বটে।
১৯৯৫ সালে নিউ ইয়র্কের লং আইল্যান্ডে ব্রুকহ্যাভেন জাতীয় পরীক্ষাগারে পদার্থবিদ এডি হার্শকোভিচ প্লাজমা জানালা উদ্ভাবন করেন। তিনি ইলেকট্রিক বীমের মাধ্যমে ধাতু ঢালাইয়ের কাজ করার সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে এটি উদ্ভাবন করেন। ঢালাইকারিরা অ্যাসিটোন গ্যাস ব্যবহার করে ধাতুকে প্রচন্ডভাবে উত্তপ্ত করে ঢালাইয়ের কাজ করে, তবে ইলেকট্রন বীম ব্যবহার করে কাজটি আরো দ্রুত করা যায় কারণ এতে সহজেই বেশি তাপ তৈরি হয়। তবে সমস্যা হলো, ইলেকট্রন বীম ব্যবহার করতে গেলে বায়ুশূন্য স্থানে কাজটি করত হবে। অর্থাৎ ঢালাইয়ের কাজ করতে গেলে একটি ঘর বায়ুশূন্য করতে হবে। এটি তেমন সুবিধাজনক বিষয় নয়।
ড. হার্শকোভিচ প্লাজমা জানালা উদ্ভাবন করে এ সমস্যা দূর করলেন। ৩ ফুট উঁচু ও ১ ফুট ব্যাসের একটি প্লাজমা জানালা গ্যাসকে ১২,০০০ ডিগ্রী ফারেনহাইটে উত্তপ্ত করে। উত্তপ্ত গ্যাসের পার্টিকলগুলি প্লাজমা জানালার পরিধি ঘেষে প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করে এবং এর ফলে বায়ুশূন্য স্থানে বাতাম ঢুকতে পারে না। এভাবে বায়ুশূন্য স্থানটির চারিদিকে অদৃশ্য দেয়াল তৈরি হয়। (এক্ষেত্রে আর্গন গ্যাস জ্বালালে নীল রঙ দেখা যাবে, যেমনটি আমরা স্টার ট্রেকে দেখেছি।)
[বল ক্ষেত্র ব্যবহার করে আসলেই আমরা স্টার ট্রেক সিনেমার মত দুর্ভেদ্য দেয়াল করতে পারব কিনা তা আগামী দিন দেখা যাবে।]
আগের পর্বঃ পর্ব তিন: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ২:৫৩