বিষয়টা ভ্যালেন্টাইনস ডে এর জন্য নির্দিষ্ট নয় আসলে। হুজুর টাইপের পোলাপানগুলো সবসময়ই আসলে প্রেম ভালোবাসা, রিলেশান, এফেয়ার এইসব নিয়ে বাগড়া দিতে অভ্যস্ত। প্রবলেম টা হল, যাদের উদ্দেশ্যে হুজুররা এইসব বক্তব্য দেয়, তারা বেশিরভাগই বিষয়টা পাত্তা দিতে চায় না। ভাবে হুজুররা আর 'কাছে আসার' মাজেজা কী বুঝবে।
বিষয়টা আসলেই কমপ্লিকেটেড। ভ্যালেন্টাইন্স ডে'র ইতিহাস নিয়ে ক্যাচাল পারাটা বিরক্তিকর লাগে। ভ্যালেন্টাইন এর ইতিহাস যা-ই হোক, সে যে মড়াই হোক, তাতে কিছু এসে যায় না। এই দিনটা একটা এস্টাবলিশড দিন। এটাই ফ্যাক্ট। ইতিহাস দিয়ে এর অসারতা প্রমাণ করতে চেয়ে ফায়দা নেই। এই দিনটা সারা দুনিয়ায় ভালোবাসার একটা সিম্বলিক দিন হয়ে গেছে, এটাই মূল প্রতিপাদ্য। ভ্যালেন্টাইন সাহেব কে ছিলেন, কী ছিলেন, তিনি রাজা ছিলেন নাকি নামিবিয়া এর ফাস্ট বোলার ছিলেন, এইটা কোন ম্যাটার না।
তবে আমাদের ফোকাস পয়েন্টটা ভিন্ন। আমরা দিবসের বিরোধিতা করছি না। করছি দিবসটার মৌলিক ভিত্তির। ছেলে-মেয়ের মাঝের প্রেম। বিয়ের বাইরে প্রেম।
কেন করছি আমরা? দুটো ছেলে মেয়ে একে অপরকে ভালোবাসলে ক্ষতি কী? ভালোবেসে কাট্টুস কাট্টুস প্রেম করলে কার আঙ্কেলের কী?
আসলে হুজুরদের একটা অবলিগেটরি ডিউটি আছে। তা হল নিজে ইসলামকে আঁকড়ে ধরা আর সাথে অন্যদেরকেও ইসলামের বেইসিক ভ্যালুর দিকে আহ্বান করা। আর নিজের আশেপাশের পরিবেশটাকে যথাসম্ভব পরিষ্কার রাখা - ফিসিক্যালি ও মরালি।
ইসলামে ছেলে মেয়ের ইন্টারএকশানের কিছু রুলিং দেয়া আছে। এটা আল্লাহর সেট করে দেয়া নিয়ম। আল্লাহর সেট করা নিয়মে দ্বিতীয় কথা বলার চান্স নেই। এইখানে নিতান্ত নাস্তিক ও অমুসলিমধর্মী ব্যতিত কোন মুসলিম ডিফার করতে পারে না। সুযোগ নেই। মিলিটারি বেইসে টপ রেইঞ্জের অফিসারের কথাই সর্বশেষ। আর এইখানে তো আল্লাহর হুকুম। ডেপথ বোঝাটা জরুরী।
তো এই ইন্টারএকশানের রুলিং এ হিজাব একটা গুরুতর বিষয়। আমাদের সমাজে মেয়েদের মাথার স্কার্ফকে হিজাব বলা হয়। বলুক, ভালো কথা। কিন্তু হিজাব অর্থ আসলে স্কার্ফ নয়। এর মৌলিক প্রতিপাদ্য মূলভাব করতে গেলে বলতে হয় হিজাব অর্থ প্রটেকশান। পৃথিবীর কোন প্রটেকশানই কেবল শারিরীক নয়। আমরা মোবাইলের ডিসপ্লেতে গ্লাস কাভার লাগালে সেটাও প্রটেকশান, অন্য দেশের কাউকে অনুমতি ছাড়া, ডকুমেন্ট ছাড়া আমার দেশে ঢুকতে না দিলে সেটাও প্রটেকশান, আপনি কিছু একটা ভংচং আবিষ্কার করে সেটার পেটেন্ট নিয়ে নিলে সেটাও প্রটেকশান। তাই হিজাবের বিষয়টা ব্যাপক। এটা কেবল মেয়েদের গায়ে বোরকা চড়ানো নয়। এটা একটা প্রটেকটিভ সিস্টেম। যেটা ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্য অবলিগেশান।
যেমন আল্লাহ সূরা নূরে বলছেন, ছেলেরা বেগানা (শর্টকাটে বললে, যাদের সাথে বিয়ে হওয়া জায়িয) মেয়েদের দেখলে চোখ নামিয়ে ফেলতে হবে। মেয়েরাও তদ্রুপ ছেলে দেখলে চোখ নামিয়ে ফেলবে। এরপর বলছেন মেয়েদের মাথার ওপর থেকে ওড়না ঝুলিয়ে দিতে হবে (এটাকেই আমরা দেশে হিজাব বলি)। আবার আল্লাহ সূরা আহযাবে বলছেন মেয়েদের সাধারণ পোষাকের ওপরে আরো একটা ওভার কোট পরতে হবে। যাকে আমরা সাধারণ অর্থে বোরকা হিসেবে জানি।
পোষাকের হিজাব এই পর্যন্তই। কিন্তু হিজাবের যে ব্যপকতা, তা আমরা বুঝতে পারি না বলেই ভাবি পোষাকের হিজাব করলেই হয়ে গেল ইসলাম। এবার যা ইচ্ছে করা চলে।
প্রব্লেম এইখানেই। ইসলাম কেবল পোশাকের পর্দা করতে বলেই থামে নি। বরং ছেলে মেয়ের মধ্যকার যাবতীয় ইন্টারএকশানের ব্যাপারেও গাইডলাইন দিয়েছে। বেগানা ছেলে ও বেগানা মেয়ের মধ্যকার ইন্টারএকশান খুবই রেস্ট্রিক্টেড করা হয়েছে ফর গ্রেটার গুড। ছেলে-মেয়ে খুব জরুরী প্রয়োজন না হলে একে অন্যের সাথে কথা বলবে না। দুজন একাকী বসবে না। বন্ধুত্ব করবে না। আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীদের প্রতি আল্লাহর নির্দেশ ছিল বেগানা পুরুষদের সাথে যদি কখনো প্রয়োজনে কথা বলতে হয়, তাহলে যেন পর্দার ওপাশ থেকে কথা বলেন আর কণ্ঠ যেন একটু কর্কশ করেন, যাতে মেয়েদের স্বভাবগত কোমলতা প্রকাশ না পায়।
যেখানে নবীর স্ত্রীদের প্রতি এই আদেশ, সেইখানে আমাদের বোনদের এই আদেশের প্রতি কেমন সচেতন হওয়া উচিৎ?
পুরুষদের আল্লাহ স্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করেছেন মেয়েদের দিকে চোখ তুলেও না তাকাতে। বিয়ে করতে চাইলেও যাতে মেয়ের পরিবারের সাথেই মেয়েকে দেখতে যায়। সেখানেও যাতে কোরবানের গরুর মত মাথা লেজ শিং না দেখে। হিজাব পরিহিতা অবস্থাতেই যেন দেখে। যেই মেয়েকে বিয়ে করতে চায়, ইভেন তার সাথেও একাকী যেন না বসে।
তো এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, যে ইসলামে নারী-পুরুষের মাঝে নিতান্ত বাধ্য না হলে কোন ইন্টারএকশানের অনুমতি দেয়া হয় নি। হ্যাঁ, প্রয়োজনে অবশ্যই ইন্টারএকশান হবে। শিক্ষা, সদাইপাতি, চলাফেরা, অভিবাবকত্ব, নানা কারণে বিপরীত লিঙ্গের কারো সাথে ইন্টারএকশান হতেই পারে, তবে তাও ইসলামিক গাইডলাইনে। পর্দা লঙ্ঘন করে নয়। এইখানে অহেতুক অনেকে ত্যানা প্যাঁচায়। এদের দুটো চকলেট খেতে দিন।
দুজন ছেলে-মেয়ে একাকী থাকলে আমাদের নবী বলেছেন সেখানে তৃতীয় একজন থাকে। শয়তান। অথচ আমাদের মুসলিম পরিবারের ছেলে-মেয়েদের জন্য একাকী থাকাতো নস্যি, কত কিছুই তো এরা করে বেড়ায়। রাত ভর ফোনালাপ, দিনভর ঘুরে বেড়ানো, প্রেমালাপ ইত্যাদি। এইসব কখনই ইসলামে এলাউড নয়। কী যুক্তিতে হবে বলুন? যেখানে জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় কাজকর্মেও পর্দার মাঝে থেকে ইন্টারএকশান করতে বলা হয়েছে, সেখানে বাকুম বাকুম প্রেম? হিসেব মেলে?
আমাদের এত কথা, এত আলাপ কেবল মাত্র আমাদের নিজেদের ও আমাদের মুসলিম ভাই বোনদের জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর চেষ্টার প্রয়াস মাত্র। আপনারা কাছে এসে সাহসী হলে আমাদের কিছু যায় আসে না। কিন্তু একজন মুসলিম কখনো অন্য মুসলিমের আখের নষ্ট হোক তা চায় না। এই কারণেই হুজুররা সবসময় প্রেম রিলেশান এইগুলা নিয়ে আপনাদের মাথা খারাপ করে ফেলে। মাথাটা খারাপ না করে একটু যদি ইসলামে কী বলে, কুর'আনে কী লেখা আছে, হাদীসে কী বলা আছে, তা যদি আমরা অনেস্টলি দেখতে চাই, দুনিয়াটা নিশ্চিত অন্য রূপে আবির্ভূত হবে।
মজার একটা তথ্য দিই। আমাদের নবীও জানতেন যে ছেলে মেয়ে একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হবেই। একে অন্যের প্রতি দুর্বল হবে। প্রেমে পড়বে। হৃদয় আন্দোলিত হবে কোন এক বিশেষ মানুষের প্রতি। এর একটা উপায় তিনি বাতলে দিয়েছেন। স্ত্রীদের প্রতি অসম্ভব প্রেমময় এই মানুষটি বলেন,
"দুজন প্রেমে পড়া মানুষ (ছেলে ও মেয়ে) এর জন্য বিয়ের মত কোন কিছুই আমি দেখি নাই"
স্কলাররা এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, যখন একজন মানুষ অন্য কারো প্রেমে পড়ে যায়, ও সে মানুষটির জন্য তার হৃদয় আনচান করে, এইটার একটা মাত্র চিকিৎসা আছে, আর সেটা হল ভালোবাসাময় বিয়ে।
ভালোবাসুন। কীপ ইট হালাল। গেট ম্যারিড।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪৮