somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সেলিম আনোয়ার
পেশায় ভূতত্ত্ববিদ ।ভালো লাগে কবিতা পড়তে। একসময় ক্রিকেট খেলতে খুব ভালবাসতাম। এখন সময় পেলে কবিতা লিখি। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কার্জন হল ভালো লাগে খুব। ভালোলাগে রবীন্দ্র সংগীত আর কবিতা । সবচেয়ে ভালো লাগে স্বদেশ আর স্বাধীন ভাবে ভাবতে। মাছ ধরতে

দুই কিংবদন্তীর মহাপ্রয়াণ

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দুই কিংবদন্তীর মহাপ্রয়াণ ।সৃষ্টি হলো বিশাল শূন্যতার।এতই বিশাল শূন্যতা যা পূরণ হবার নয়।দুই মিতা।দুই হুমায়ূন।দুজন গড।নামেও মিল অবস্থানেও।দুইজনই আকাশ ছূয়েছেন।বিয়েও করেছেন দুইটি।দুজন ই মরেছেন নি:সঙ্গতায়।দুজনেই স্বীকার করেছেন তাদের কারিগর প্রথম স্ত্রী।
একজন লিখতেন। লিখার সুনিপুণ কারিগর।অন্যজন অভিনয়ের মাধ্যমে আরও সুনিপুণ আর বাস্তব করে তুলতেন। একটি চরিত্রকে।
হুমায়ূন আহমেদ দারুণ সব কালজয়ী চরিত্রের স্রষ্টা হিমু মিছির আলী,বাকের ভাই,লজিং মাস্টার,অচিন বৃক্ষের স্কুল মাস্টার আর কত চরিত্র।বাস্তবের অবহেলিত সাধারণ মানুষগুলোকে এমনকি মন্দ চরিত্রের লোকগুলোর মধ্য থেকেও মহত্ত্ব ভালবাসার পরিস্ফুটন ঘটিয়েছেন্ ।আঙুল কাটাজগলু পাঠকের মনে ভালবাসার জন্ম দিয়েছে।পাঠককে কাঁদিয়েছে।পাড়ার বখাটে বাকের ভাইকে ফাসিতে না ঝুলানোর দাবিতে ঢাকায় মিছিল হয়েছে।হলুদ পাঞ্জাবী পড়া হিমুর সংখ্যাও অনেক। বইমেলায় একক আধিপত্য হুমায়ূন আহমেদের।
হুমায়ূন ফরীদি ।কিংবদন্তীর অভিনেতা।বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের যে অবস্থান অভিনয় জগতে হুমায়ূন ফরীদির সেই একই অবস্থান। অভিনয়ের জাদুকর ।ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করে তিনি ভিলেনকেই নায়কে পরিণত করেছেন।আশ্চর্যজনক হলেও সত্য দর্শকরা চাইত ভিলেন ফরীদিই জিতে যাক।একেই বলে মহাতারকা,ছোট্ট চরিত্রে অভিনয় করলেও সেটি হয়ে যেত মূল আকর্ষণ।জয়যাত্রা ছবি দেখে আমি কয়েকবার কেশে উঠেছি।দর্শক হাসাতে কাঁদাতে রুমান্টিসিজম সৃষ্টিতে অসাধারন তিনি।আকর্ষনীয় কন্ঠস্বর আর সেই ইউনিক অট্টহাসি ফরীদি অতুলনীয়।তার অভিনয়ের ঢং ডাস্টিন হফম্যানের মতন।
হুমায়ুন আহমেদ।তার লেখা পড়ে খিকখিক হাসি উঠে।চোখে অশ্রু ঝরে।বুক ফেটে কান্না আসে।
সাদাকালো জমানার সোনালি দিনে এই দুই কিংবদন্তীর কাজগুলো বাংলার মানুষের মনে আলোড়ণ তুলেছিল।তার দুজনই ছিলেন বিশাল মনের অধিকারি ।প্রখ্যাত সাংবাদিক আবেদ খান বালাই ষাট অনুষ্ঠানের ফরীদির হৃদয়কে তুলনা করেছেন বঙ্গোপসাগরের মত বিশাল বলে। আমি সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম।
হুমায়ুন আহমেদ তার আজকের অবস্থানে আসার পিছনে গুলতেকিনের অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছেন।ফরীদি উল্লেখ করেছেন মিনুকে্ ।যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ফরীদিই প্রথম।বেলি ফুলের মালা দিয়ে বিয়ে করে।নির্লোভ ফরীদি ।
আগুনের আলোর আকর্ষনে পোকা আসবেই্ মধুর লোভে বিষ পিপরা যেমন।হুমায়ূন আহমেদের খ্যাতি আর সম্পদের টানে কালসাপ হয়ে আসল শাওন।পুরো পরিবার থেকে একঘরে হলেন হুমায়ূন। ,নোভা,গুলতেকিন্ শীলা সবাই তাকে ছাড়লেন্ ।শীলার বিয়েতে তিনি দাওয়াত পান নাই।তার নাটক ইউনিটের কর্তৃত্ব শাওনের হাতে।তার ছন্দপতন হলো্,আগাছা পরগাছা অপ্রিয় অখ্যাত লোকজন নিয়ে মাটি বাবা গাছ বাবা নয়নম্বর বিপদসংকেত মার্কা নাটক-সিনামা তার সৃষ্টি।বিয়েটা না করলে তিনি আইকন হতে পারতেন।হলো স্ক্যান্ডাল্ ।মেয়ের বান্ধবীকে বিয়ে করে চরম পঁচা পঁচলেন।তার অগনিত ভক্ত অনেক কষ্ট পেলেন।
ফরীদি সুবর্ণার প্রেমে পড়লেন ,সম্পর্কে জড়ালেন,বিয়ে করলেন।বিয়ে পর আমরা ফরীদিকে হারালাম নাটক থেকে মঞ্চ থেকে।সুবর্ণার মত বউকে অর্থিকভাবে সচ্ছল রাখার জন্যই এই পরিবর্তন অনুমান করা যায়।তবে নাটক প্রেমি মানুষ তাদের জুটিকে মেনে নিয়েছিল্ ।বাংলা নাটকের সেরা জুটি ফরীদি-সুবর্না।
ফরীদি বাংলা সিনেমাকে ঠিকই সমৃদ্ধ করেছিল।ফরীদির অভিনয় দেখতে অনেক অভিনেতা সুশীল সমাজ হলমুখী হয়েছিল।
বাস্তব দেবদাস হুমায়ুন ফরীদি।কি ন্যাচারাল অভিনয়! জাত অভিনেতা। দর্শক মাতানো অভিনয়। একটা সময় বুঝতে পারি তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের নক্ষত্র-সূর্য। ‘যার নিজের আলো আছে, গ্রহ-উপগ্রহ আছে; অন্যকে আলো দেয়, আলোকিত করে’। যিনি স্রষ্টা। লীডার। তিনি পথ দেখান। অন্যরা চলে তার দেখানো পথে। মঞ্চ থেকে চলচ্চিত্র সর্বত্রই ছিল তার সাবলীল ও রাজসিক পদচারণা। অভিনয়ের ভেতরে চলে যাওয়ার অপূর্ব ক্ষমতা। মিশে যাওয়া অভিনয়ের সাথে। এর নাম হুমায়ুন ফরীদি। মৃত্যু হবে। তাই বলে এমন মৃত্যু! ৬০ বছর নেহাত কম নয়। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে যেন খুবই কম! বিশেষ করে ফরীদির মত লোকদের। আর ক’টা দিন থাকলে কি হত না! অভিনেতা যায়, আসে। কিন্তু কিংবদন্তী তৈরি হয়। একবার গেলে আর আসে না। নজরুলের ধুমকেতুর মত-‘আমি যুগে যুগে আসি; আসিয়াসি পুনঃ মহাবিপ্লব হেতু। এই স্রষ্টার শনি মহাকাল ধুমকেতু’। ফরীদিরা বার বার আসে না। যুগেই আসেন। একবার। এসে বিপ্লব সাধন করেই চলে যান। ব্যক্তিগত জীবনে সুবর্ণার সাথে বিচ্ছেদের পর থেকেই অনেকটা নিঃসঙ্গ জীবন-যাপন করতে থাকেন তিনি। নিজের ওপরে হয়ত ‘প্রতিশোধ’ নিতে থাকেন। অভিমান করেই। ঘরের মধ্যে তৈরি করেন আরেক ভুবন। অন্ধকার সে ভুবনের বাসিন্দা শুধু তিনিই। নিঃসঙ্গতা কুড়ে কুড়ে খেয়েছে তাকে এই এত দিনে। ফরীদির জীবনটা যেন অনেকটা ‘দেবদাসে’র মত। বাথ রুমে পড়ে কী করুণ মৃত্যু!
উত্তম কুমারের মৃত্যুর পর সুচিত্রাসেন লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেলেন।আর সুবর্ণা ফরিদির মৃত্যুর কারণ হলেন্।সুবর্ণার পক্ষে অনেকে সাফাই গাচ্ছেন্।সত্য স্বীকার করতেই হবে্।সূবর্ণা ফরীদিকে মদ্য পানের অভিযোগ এনে তালাক দিযেছেন।ডিভোর্সের পর ২২ বছর ধৈর্য্য ধরার পর সংসার ভেঙ্গেছেন উল্লেখ করেছেন।১৫ বছরের ছোট সৌদকে বিয়ে করেছেন।ফরীদির কুৎসা গেয়েছেন্।
গোলাম মোস্তফা কখনও মদ পান করেন নাই?সৌদ মদ পান করে না?আর সুবর্ণা মদ পান করেন না?
মিনু আর গুলতেকিনকে শুভেচ্ছা এমন রত্ন গড়ে দেয়ার জন্য।দুই গ্রেট আমাদের জীবনে আনন্দ দিয়েছেন।উপভোগ করার মত মুহুর্ত দিয়েছেন্।
অসংখ্য অভিনেতা আছেন, আছেন লেখক।তাদের মত কেউ নেই এই বাংলায়।তাদের অবস্থান কিংবদন্তীর।দুশো বছরে একজন ফরীদি জন্মায় তেমনি একজন হুমায়ন আহমেদও।
দেবদাসের করুণ মৃত্যুর পর উপন্যাসের শেষাংশে শরৎচন্দ্রের মন্তব্য ছিল- ‘এখন এতদিনে পার্বতীর কি হইয়াছে, কেমন আছে জানি না। সংবাদ লইতেও ইচ্ছা করে না। শুধু দেবদাসের জন্য বড় কষ্ট হয়। তোমরা যে কেহ এ কাহিনী পড়িবে, হয়ত আমাদেরই মত দুঃখ পাইবে। তবু যদি কখনো দেবদাসের মত এমন হতভাগ্য, অসংযমী পাপিষ্ঠের সহিত পরিচয় ঘটে, তাহার জন্য একটু প্রার্থনা করিও। প্রার্থনা করিও আর যাহাই হোক, যেন তাহার মত এমন করিয়া কাহারও মৃত্যু না ঘটে। মরণে ক্ষতি নাই, কিন্তু সে সময়ে যেন একটি স্নেহ করস্পর্শ তাহার ললাটে পৌঁছে-যেন একটিও করুণার্দ্র স্নেহময় মুখ দেখিতে দেখিতে এ জীবনের অন্ত হয়। মরিবার সময় যেন কাহারও এক ফোঁটা চোখের জল দেখিয়া সে মরিতে পারে’।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৯:০৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×