শৈত্য প্রবাহ তাই— কাঁপিতেছি থরো থরো;
ভালো থাকিবার লাগি একটুখানি উষ্ণতা চাই।
চাই গরম পেঁয়াজু গরম পুরি সিঙ্গারা —এক পেয়ালা উষ্ণ চা
আর উষ্ণ জামাটা তাই ;
বন্ধ করো ঐ জানালা কন কনে ঠান্ডা হাওয়া
আসে সেখন দিয়ে —তা বন্ধ হওয়া চাই।
ভুলেও যেন খুলো না দ্বার হন হনিয়ে শীত ঢুকে যদি আবার
—আছি সেই আশঙ্কায় ; বরফ শীতল হিমেল হাওয়া
কোথা থেকে যে আসে!— আমার জনা নাই
ঠকঠকিয়ে হাটু যেন কাঁপে!
ওগো শৈত্য প্রবাহ অনেক তো হলো— থামো নাগো এবার
শীতের প্রকোপে ঘরের বাহিরে নেই যেন জো, বের হবার;
—এবার পরিত্রান চাই ।
যারা করো দান শীতবস্ত্র শ্রদ্ধা তাদের—এমনতরো পরোপকারের,
প্রচণ্ড শীতে বিপন্ন যারা— করিতেছো যেন তাদের জীবন দান
প্রি য় ত মা, তুমিও পারো ও হে সুধীজন তোমরাও পারেন দিতে
উষ্ণ জামা বস্ত্রহীনে, হইবে তাতে পূণ্য জীবন দানের ।
প্রচণ্ড এই শীতে— মানবতার কল্যাণে তোমাদের এই শীত বস্ত্রদান
স্বাগত জানাই তাদের পৌছে দাও যারা শীতবস্ত্র বিপন্নের দ্বারে দ্বারে ।
আর নহে শৈত্য প্রবাহ এবার উষ্ণতা চাই ।
----------------------------------------------------
সাম্প্রতিক সময়ে একটি পত্রিকায় বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে ESA এবং NASA ‘র কোলাবোরেশনে ৮৯
জন পোলার বিজ্ঞানী সমন্বিত একটি আন্তর্জাতিক দল গ্রীন ল্যান্ডে এ কিভাবে কত পরিমান বরফ বিগলন হয়েছে
তার উপর। তাদের হিসেবে গ্রীনল্যান্ডে প্রায় ৩.৮ ট্রিলিয়ন টন বরফ গলেছে ১৯৯২ থেকে ২০১৮ সাল সময়ে যার
ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে ১০.৮ মিলিমিটার। গবেষণা সময়ে বরফ গলনের পরিমান ১৯৯০ সালের তুলনায়
বর্তমানে প্রায় ৭গুণ বেড়েছে সহজ ভাবে বলতে গেলে যেখানে ১৯৯০ সালে প্রতিবছর ৩৩ বিলিয়ন টন গলত বর্তমানে
তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিবছরে ২৫৪ বিলিয়ন টন ।
The University of Leeds এ Andrew Shepherd এর নেতৃত্বে গঠিত The Ice Sheet Mass Balance Inter-
comparison Exercise ( IMBIE ) আর NASA ‘র জেট প্রপালশন গবেষণাগারে বিজ্ঞানী Erik Ivins ESA’র
ERS-1, ERS-2, Envisat এবং CryoSat মিশন EU Copernicus Sentinel-1 ও Sentinel-2 সহ মোট
এগারোটি স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত সমূহ তুলনা এবং সমন্বয় করেছেন বরফ স্তূপের আয়তন, প্রবাহ এবং অভিকর্ষ
বলের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করার জন্য ।
বিগত তিন দশকের উপাত্ত ব্যবহার করে গ্রুপটি গ্রীনল্যান্ডে বরফ জমা এবং গলনের একটি নেট পরিমাপ হিসেব
করেছেন যা মাস ব্যালেন্স বা ভর ভারসাম্য নামে পরিচিত ।
ESA এর Marcus Engdahl যিনি প্রকাশনাটির এক জন কো-অথার তিনি বলেন ‘‘স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণে এটা
সুষ্পস্ট যে গ্রীনল্যান্ডের বরফ গুলো পরিবেশ পরিবর্তনের সঙ্গে খুব দ্রুত ক্রিয়াশীল । আর তাই এগুলো গলে যাচ্ছে ।
আর বরফস্তর গলে বৈশ্বিক সমুদ্র পৃষ্ঠের গড় উচ্চতা বৃদ্ধি কোনভাবেই থামানোর উপায় নেই।”
গত স্যাটেলাইটি ভিত্তিক গবেষণায় সাম্প্রতিক দশকে গ্রীণ ল্যান্ড এবং আইস শীট বিগলন এবং সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা
বৃদ্ধিতে এর অবদানের কথা উল্লেখ পাওয়া যায়।
সমুদ্র উপকূল এরিয়া বিশেষ করে যেগুলো খুব ঘনবসতি সম্পন্ন গবেষণাপত্রখানি সেসকল কমিউনিটিকে শুধু পূর্ব-
প্রস্ত্তুতিতে সহায়ক হবে না বরঞ্চ তা গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কি পারিমান হ্রাস করা আবশ্যক সে বিষয়ে সচিত্র
সম্যক ধারণা দিবে ।
আইপিসিসি পূরবাভাস করেছে ২১০০ সালে সমুদ্র পৃষ্ঠ গড়ে প্রায় ৬০ সে.মি. বৃদ্ধি পাবে যা বিশ্বের প্রায় ৩৬০
মিলিয়ন উপকূলবর্তী মানুষের জীবন হুমকির মধ্যে ফেলে দেবে। IMBIE এর মতে সমুদ্র পৃষ্ঠেরে উচ্চতা আরও
৭ সে.মি বেশি হবে।
স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণও আঞ্চলিক জলবায়ু মডেল বিবেচনায় এনে গ্রুপটি বিবৃতি দিয়েছে মোট বিগলিত বরফের
অর্ধেক গলেছে ভূপৃষ্ঠে বহমান উষ্ণ জলপ্রবাহের কারণে আর বাকি অর্ধেক সমুদ্র জলরাশির উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে ।
বরফগলন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে ২০১১ সালে এসময়ে ৩৩৫ বিলিয়ন টন বরফ বিগলিত হয়েছে । পরে যা
কমে ২৩৮ মিলিয়ন টনে এসে দাঁড়ায় ২০১৮ সালে তবু তা ৯০ দশকের তুলনায় ৭ গুন বেশি ।
আমাদের বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ রাষ্ট্র । এর উপকূল সংলগ্ন এলাকাগুলোও কম ঘনবসতি পূর্ণ নয় । ফলে সাম্প্রতিক
জলবায়ু পরিবর্তন সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি গ্লোবাল ওয়ার্মিং আমাদের জন্য যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ । ২১০০ সালে
সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গেলে আমাদের উপকূলে কী অবস্থা হতে পারে। সেটি আমাদের আবাসন পরিকল্পনায় অবশ্যই
বিবেচনার দাবি রাখে ।
সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা হ্রাস বৃদ্ধির খেলা নতুন কোন ঘটনা নয় । প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই তা হয়ে আসছে । বেশ
কয়েকটি বরফ যুগ উষ্ণ যুগ পেরিয়ে আমাদের আজকের পৃথিবী । আমরা উষ্ণ যুগের কোর পর্যায়ে আছি সেটিও বলা
যাচেছ না। কারণঅতীতের উষ্ণ যুগ গুলির সব গুলির ব্যাপ্তি সমান নয় । যদি জলবায়ু ক্রমাগত উষ্ণ হতে থাকে আর
আরও বরফ গলে যায় বন্যার সময় পানির কি অবস্থা হবে তা আশংকার দাবী রাখে। সমুদ্র উপকূল যদি রাজধানী ঢাকা
বরাবর চলে আসে কোনদিন সে আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায় না । আপাতত শৈত্য প্রবাহের ইতি হোক। শীতে যেন কোন
মানব জীবনের বিনাশ না হয় । (বৈদেশিক গবেষণা পত্রিকা অবলম্বনে)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:০৯