বিশেষ প্রতিনিধি
১৭ ডিসেম্বর আমার দেশ-এ প্রকাশিত ‘তৌফিক এলাহী ও জয়ের বিরুদ্ধে ৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ নেয়ার অভিযোগ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে কোনো মিথ্যা, অমূলক, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য দেয়া হয়নি। সব তথ্য মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র থেকে পাওয়া। সাংবাদিকতার নীতিমালা অনুসরণ করে জ্বালানি সচিব, শেভরনের পরিচালক ও পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বক্তব্য প্রতিবেদনে স্থান দেয়া হয়েছে। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য নেয়ারও চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে প্রধানত ৪টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এক. জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কর্তারা শেভরনের কাছে থেকে ৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ নিয়েছেন বলে পেট্রোবাংলার প্যাডে আবু সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রী বরাবর অভিযোগ করেছেন; দুই. ওই অভিযোগ তদন্তে জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলা চিঠি চালাচালি করেছে; তিন. বিনা টেন্ডারে শেভরনকে মুচাইতে কম্প্রেসার স্থাপনের কাজ দেয়া হয়েছে; চার. কম্প্রেসারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে পেট্রোবাংলার কর্মকর্তাদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে।
আমার দেশ-এর প্রতিবেদনে উল্লিখিত চারটি বিষয়ই পুরোপুরি তথ্য ও প্রমাণভিত্তিক। আবু সিদ্দিকীর অভিযোগ মন্ত্রণালয় পেয়েছে এবং তার ভিত্তিতে পেট্রোবাংলাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। পেট্রোবাংলা জবাবিপত্রে বিষয়টিতে উচ্চ পর্যায়ের লোক জড়িত এবং স্পর্শকাতর বিধায় তদন্তে অপারগতা প্রকাশ করেছে। এ সংক্রান্ত কাগজপত্র আমাদের হাতে রয়েছে। শেভরনকে বিনা টেন্ডারে কাজ দেয়ার বিষয়টি প্রতিবাদপত্রেই স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। আর কম্প্রেসারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে পেট্রোবাংলার দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যে প্রশ্ন তুলেছেন তার প্রামাণ্য দলিলও আমাদের হাতে আছে। তাহলে রিপোর্টের কোন অংশ ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বানোয়াট তা আমাদের বোধগম্য নয়। আবু সিদ্দিকীর অভিযোগ ভিত্তিহীন না তথ্যভিত্তিক সে ব্যাপারে প্রতিবেদনে আমার দেশ-এর নিজস্ব কোনো মন্তব্য ছিল না।
প্রতিবাদপত্রে বলা হচ্ছে, আবু সিদ্দিকী নাকি কথিত অভিযোগ করেননি। আমার দেশ-এর প্রশ্ন যদি তাই হবে তা হলে অভিযোগপত্র প্রাপ্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মন্ত্রণালয় কেন পেট্রোবাংলাকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে? পেট্রোবাংলাই বা কেন অভিযোগটি আমলে নিয়ে ২৬ নভেম্বর মন্ত্রণালয়কে ফিরতি পত্র দিয়ে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তদন্তের প্রস্তাব দিয়েছে? শুধু তাই নয়, মন্ত্রণালয়ের পত্রের ওপর হাতে লিখে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জানতে চেয়েছেন ‘কিভাবে পেট্রোবাংলার প্যাড ব্যবহার করে অজ্ঞাত ব্যক্তি চিঠি লিখলেন সে বিষয়টি দেখুন।’
জ্বালানি বিভাগের প্রতিবাদপত্রে ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়ার মতো আশুগঞ্জ ও এলেঙ্গায় কম্প্রেসার স্থাপনের জন্য এডিবির সঙ্গে দেনদরবার ও টেন্ডার সংক্রান্ত জটিলতার ফিরিস্তি দেয়া হয়েছে। আমার দেশ-এর আলোচ্য প্রতিবেদনের সঙ্গে যা মোটেই প্রাসঙ্গিক নয়।
কম্প্রেসারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে গিয়ে প্রতিবাদপত্রে বলা হয়েছে, ঢাকায় বিরাজমান গ্যাসের নিম্নচাপ ও গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধির মহান(!) লক্ষ্যে কম্প্রেসার স্থাপনের জরুরি ব্যবস্থা নিয়ে সরকার কাজের কাজ করেছে। এ দাবিও বাস্তবভিত্তিক নয়। কারণ শেভরনকে দেয়া কম্প্রেসার বসানোর পর মুচাই পয়েন্টে গ্যাসের চাপ ১০৫০ পিএসআইজিতে উন্নীত হবে বলে প্রকল্প সারপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মজার ব্যাপার হচ্ছে বিবিয়ানা, জালালাবাদ ও মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্রে রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়ায় পেট্রোবাংলার নথিপত্র অনুযায়ী মুচাই পয়েন্টে এখনই গ্যাসের চাপ ১০৫০ পিএসআইজি আছে। তাছাড়া শেভরন চলতি বছরের ২৪ আগস্ট পেট্রোবাংলায় গ্যাস উত্তোলনের বর্তমান ও ভবিষ্যত্ সম্পর্কে যে প্রেজেন্টেশন দিয়েছে তাতেই তথ্য দেয়া হয়েছে যে, তাদের পরিচালিত ফিল্ডগুলোয় রিজার্ভ বৃদ্ধির কারণে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১০৫০ পিএসআইজিতে গ্যাস সরবরাহ করা যাবে। এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে গত ১৫ অক্টোবর জিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দেয়া পেট্রোবাংলার পরিচালক ইউসুফ আলী তালুকদার স্বাক্ষরিত পত্রে (নং-৪০.০১.০৪/৩১)।
শেভরনকে বিনা দরপত্রে মুচাইতে কম্প্রেসার স্থাপনের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী ৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে অনুমোদন করার ১ মাস ১০ দিন পর ১৫ অক্টোবর পেট্রোবাংলারই একজন পরিচালক জিটিসিএলকে চিঠি দিয়ে কেন প্রকল্পের যথার্থতা ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন, সে বিষয়টি মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলারই ভালো জানার কথা।
প্রতিবাদপত্রে আরও জানানো হয়েছে, প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্টের (পিএসসি) বিধান মেনে শেভরনকে কাজ দেয়া হয়েছে। বিনিয়োগ কর্মসূচি সংক্রান্ত সংগ্রহ নীতিমালার সব নিয়মাবলি যথাযথভাবে প্রতিপালনের দাবিও করা হয়েছে। পিএসসির কোন ধারায় এ ধরনের সুযোগ রয়েছে তা প্রতিবাদপত্রে উল্লেখ করা হয়নি। পিএসসি পর্যালোচনায় ৩৭০ কোটি টাকার কাজ বিনা টেন্ডারে দেয়া যাবে, এমন কোনো বিধান খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রতিবাদপত্রে আবু সিদ্দিকীর অভিযোগ অনুযায়ী ১৪ অক্টোবর টেক্সাসে জ্বালানি উপদেষ্টা কর্তৃক ২ মিলিয়ন ডলার হস্তান্তরের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। ওই তারিখে জ্বালানি উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে আদৌ গিয়েছিলেন কিনা সে ব্যাপারেও কিছু জানানো হয়নি প্রতিবাদপত্রে।
প্রতিবাদপত্রে দাবি করা হয়েছে, মুচাই প্রকল্পের জন্য শেভরনকে সরকারের পক্ষ থেকে নগদ টাকা দিতে হবে না এ দাবিও যথার্থ নয়। কস্ট রিকভারির আওতায় শেভরন পেট্রোবাংলার মাধ্যমে যে গ্যাস বিক্রি করছে সেই গ্যাস বিক্রির অর্থ নগদ প্রদান করেই শেভরনকে কম্প্রেসারের মূল্য পরিশোধ করতে হবে।
কাজেই সব তথ্য-উপাত্তে প্রমাণিত হচ্ছে, আলোচ্য সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে আমার দেশ-এর একটি সত্ ও দায়িত্বশীল সংবাদপত্র হিসেবে জনগণকে দুর্নীতির অভিযোগ অবহিত করা ছাড়া অন্য কোনো ভূমিকা ছিল না। জ্বালানি মন্ত্রণালয় তাদের প্রতিবাদপত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের যে অধিকারের কথা উল্লেখ করেছে আমার দেশ তাকে স্বাগত জানায়।
Click This Link

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




