somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুলিশ শাহীনকে গলায় রাইফেল ঠেকিয়ে গুলী করে হত্যা করে

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পুলিশ শাহীনকে গলায় রাইফেল ঠেকিয়ে গুলী করে হত্যা করে

সংগ্রাম রিপোর্ট : চাঁপাইনবাবগঞ্জে শিবির নেতা হাফিজুর রহমান শাহীনকে সুস্পষ্টভাবেই পুলিশ খুন করেছে। তাকে সরাসরি গুলী করে হত্যার পর ‘পুরনো গল্প' ফেঁদেছে পুলিশ। অন্যদিকে শাহীনের লাশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পুলিশের বাড়াবাড়ি জনমনে ব্যাপক প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ যাবার পর বিদ্যুৎও চলে যায়, তারা ফিরে যাবার পরই বিদ্যুৎ চলে আসে। এটাও এক রহস্য বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
গত বুধবার গভীর রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৈতন্যপুর গ্রামের দালাল পাড়ায় পুলিশী অভিযানের সময় গুলীতে রাজশাহী কলেজ শিবিরের নেতা হাফিজুর রহমান শাহীন নিহত হন। নিহত শাহীনের বাড়ি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী মেহেরচন্ডি গ্রামে। পিতা আবদুল মান্নানের একমাত্র পুত্র এবং পরিবারের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন নিয়ে পিতামাতা তাকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন। জানা গেছে, রাজশাহী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র শাহীন (২৫) গত বুধবার সকালে শিবগঞ্জ উপজেলার ধাইনগর ইউনিয়নের চৈতন্যপুর গ্রামের কলেজবন্ধু মাহফুজের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন। পুলিশ তাদের চিরাচরিত বক্তব্য দিয়ে বলেছে, শাহীনের মৃত্যু পুলিশের গুলীতে হয়নি। শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফজলুর রহমান জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় জড়িত কয়েকজন শিবির নেতা চৈতন্যপুরে শিবির নেতা মাহফুজের বাড়িতে লুকিয়ে আছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে এসআই ইয়ামিনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল অভিযানে যায়। পুলিশ এলাকায় পৌঁছলে তারা গুলীর শব্দ শুনে ঐ বাড়িতে প্রবেশ করে শাহীনের লাশ পড়ে থাকতে দেখে। পুলিশের এই ‘গল্প' এলাকার কেউই বিশ্বাস করেনি। তাদের অনেকের কাছ থেকে প্রকৃত ঘটনার বিবরণ পাওয়া গেছে।

গ্রামের লোকজন জানান, বুধবার দিবাগত রাত প্রায় ১টার দিকে দু'ভ্যান পুলিশ মফিজুল ইসলামের বাড়ির চারপাশ ঘিরে ফেলে। এমনকি ছাদেও উঠে যায়। গভীর রাতে গাড়ির শব্দে গ্রামের লোকজন জেগে যায় এবং ঘটনাস্থলে জমায়েত হয়। পুলিশ স্থানীয় চৌকিদার আনারুলকে সঙ্গে আনে এবং মফিজুল ইসলামের ভাই আজহারকে ডেকে মাহফুজের ঘর চিনিয়ে দিতে বলে। উল্লেখ্য, গৃহকর্তা মফিজুল ইসলামের পুত্র ও শাহীনের কলেজকালীন বন্ধু মাহফুজ তিন দিন আগে বাড়ি আসে। ইতোমধ্যে আরো পুলিশ, র্যা ব ও ডিবি সদস্য ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশ চৌকিদার ছাড়া অন্যদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। বিপুলসংখ্যক আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যের উপস্থিতিতে প্রায় এক ঘণ্টা পর রাত পৌনে দু'টার দিকে ঘরের দরজা নক করা হয়। এসময় শাহীনই দরজা খুলে দেন। পুলিশ তার পরিচয় নিশ্চিত হয়ে গলায় রাইফেল ঠেকিয়ে গুলি করে। কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই শাহীনের দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সেখানেই তিনি মারা যান। তবে পুলিশের দায়িত্ব অনুযায়ী মাত্র কিছুক্ষণ আগেও জীবিত মানুষটির গুলীবিদ্ধ হবার পর তা হাসপাতালে প্রেরণের কথা এবং চিকিৎসকের মাধ্যমে মৃত্যুর নিশ্চয়তার কথা ঘোষণা হবার কথা। কিন্তু সেসব কিছু হয়নি। গুলী করার এক ঘণ্টা পর মফিজের চাচা আজহারকে পাড়ার মোড়ল-মাতববরদের ডাকতে বলা হয়। তাদেরকে বলা হয়, ‘শাহীনকে কারা গুলী করে মেরে পালিয়েছে। আমরা লাশ নিয়ে গেলাম।' রাত প্রায় পৌনে তিনটার দিকে পুলিশের বহর ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। সঙ্গে গুলীর খোসা কুড়িয়ে নিয়ে যায়। গ্রেফতার করে নিয়ে যায় গৃহকর্তা মফিজ ও পুত্র মাহফুজকে। শেষ খবর, গতকাল শুক্রবার মফিজকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
গ্রামবাসী আরো জানিয়েছেন, পুলিশ আসার কিছু সময় পরই বিদ্যুৎ চলে যায় এবং তারা চলে যাবার পরই বিদ্যুৎ চলে আসে। আর বাড়িতে মফিজুল ইসলাম, তার পুত্র মাহফুজ ও শাহীন ছাড়া আর কোন পুরুষ ছিল না। মাহফুজের স্ত্রী নাজমা আক্তার জানান, পুলিশ বাড়িতে ঢোকার পরই গুলীর শব্দ পান তারা। আর শাহীন ছাড়া তাদের বাড়িতে বাইরের আর কেউ ছিল না। গুলীর শব্দের পর পুলিশের পাশে লাশ পড়ে থাকতে দেখেছেন। পুলিশ চারপাশে কথিত ‘অজ্ঞাত ঘাতকের' সন্ধানে আশেপাশে কোন তল্লাশিও চালায়নি। এরপরেও সেখানে পুলিশ যায়নি। কোন অস্ত্রও পাওয়া যায়নি সেখানে।

এলাকাবাসী জানান, গুলী করে হত্যার পর থেকে এক মুহূর্ত পুলিশ লাশের নিয়ন্ত্রণ ছাড়েনি। এমনকি জানাযা পড়তে প্রথমে বাধা দেয়া হয়। তবে জনতার চাপে নবাবগঞ্জে জানাযার সংক্ষিপ্ত ব্যবস্থা করা হয়। সেখান থেকে পুলিশের দায়িত্বেই লাশ রাজশাহী পৌঁছানো হয় এবং অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে জানাযা ও দাফন সম্পন্ন করা হয়। ফলে শাহীনের মাও ভালভাবে প্রিয় পুত্রের লাশ দেখতে পাননি। অনেক আত্মীয়-স্বজন লাশ দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। এলাকায় পুলিশের ভীতিকর উপস্থিতির কারণে অনেক বন্ধুবান্ধব জানাযায় শরীক হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। একটি লাশ নিয়ে পুলিশের এই বাড়াবাড়িও জনমনে ব্যাপক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×