মাউন্ট এটনা, ইউরোপের সক্রিয় আগ্নেয়গিরির মধ্যে বৃহত্তম আগ্নেয়গিরি। আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতে এই বর্তমান সময়েও এর উচ্চতা বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি।

গ্রিক পুরাণ মতে, টাইটানদের যখন গ্রিক দেবতা জিউস হারিয়ে দেন, তখন পৃথিবীর দেবী গায়া ক্ষিপ্ত হয়ে, তার জায়ান্ট সন্তানদের অলিম্পিয়ান দেবতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামিয়ে দেন।

গায়া এক ভবিষ্যৎ বাণী জানতেন, এই যুদ্ধে কোনো অমর দেবতারা জায়ান্টদের হারাতে পারবে না। যুদ্ধে নামাবার পিছনে অন্যতম সাহস ছিলো গায়ার এটি।
কিন্তু তখন পৃথিবীতে মানব জাতির বসবাস, হারকিউলিসের মতন বীর জীবিত।
জিউস চাইলেই হারকিউলিসের সাহায্য কামনা করতেই পারে, হারকিউলিস তাতে সাহায্যও করবে।

এই পথ বন্ধ করার জন্য, গায়া এক অদ্ভুত ওষুধের খোঁজ করেন, যা জায়ান্টদের বাঁচাতে পারবে, মরণশীল মানুষদের থেকেও।
জিউস যথেষ্ট বুদ্ধিমান ছিলেন, তিনি এই খবর পেয়ে, সূর্যের দেবতা হেলিওস, চন্দ্রের দেবী সেলেন ও ভোরের দেবতা এওসকে উঠতে নিষেধ করেন। যাতে অন্ধকারে গায়া, সে ওষুধ খুঁজে না পায়। এই সুযোগে জিউস, সে ওষুধ নিজে খুঁজে বের করে ধ্বংস করে ফেলেন।

জায়ান্টদের সাথে অলিম্পিয়ান দেবতাদের যুদ্ধ শুরু হয়, জিউস সাহায্য চান পৃথিবীতে থাকা হারকিউলিসের। হারকিউলিস সাহায্য করে জিউসকে। জায়ান্টদের সাথে জয় হয়, জিউস ও হারকিউলিসের।
গায়া আবার ক্ষুব্ধ হন। পৃথিবীর অতল গহ্বরের দেবতা টারটারাসের সাথে মিলিত হয়ে জন্ম দেন, টাইফুন নামে এক ভয়ংকর দানবের। গ্রিক পুরাণ মতে টাইফুনের শরীরের নিচের অংশ ছিলো, সাপের মতন, মাথার জায়গায় ছিলো একশোটি ড্রাগন মাথা। আবার কিছু কিছু মতে জানা যায়, টাইফুনের মাথা মানুষের মতন হলেও, হাতের আঙ্গুলের জায়গায় অসংখ্য ড্রাগন মাথা ছিলো। টাইফুন এতোই বিশাল ছিলো যে, তার মাথা আকাশের তারা পর্যন্ত ছুঁয়ে যেত।

টাইফুন অলিম্পিয়ান দেবতাদের সাথে যুদ্ধে একাই সব লণ্ডভণ্ড করে দিতে লাগলো। শুধুমাত্র এথেনা ছাড়া বাকী দেবতা ও হারকিউলিস বিভিন্ন প্রাণীর রূপ নিয়ে পালিয়ে গেলো। জিউস ভেড়া, আফ্রোদিতে মাছ, হারকিউলিস পাখি, হেরা গাভীর রূপ নিয়ে পালিয়ে রইলো।

এথেনা জিউসকে কাপুরুষ বলে তিরস্কার করার পর, জিউস ফিরে এলেন নিজের রূপে। কিন্তু সেবারও সুবিধা করতে পারলেন না জিউস। টাইফুন জিউসকে আহত করে, বন্ধি করে রাখল।
জিউসের সন্তান ভাগ্যের দেবতা হারমেস ও ছাগলের শিং, মাথা ও পা যুক্ত দেবতা প্যানের সহায়তায় জিউস সুস্থ হয়ে উঠেন।

প্রতিশোধ ও রাগের আগুনে জ্বলতে থাকা জিউস, ব্জ্র নিক্ষেপ করতে থাকেন টাইফুনের উপর। তাড়া করে নিয়ে যায় সিসিলি দ্বীপের কাছে।
বজ্রের আঘাতে জ্বলতে থাকে টাইফুনের বুক, ধরাশয়ী হয় টাইফুন। টাইফুনের বুকের উপর বসিয়ে দেয়া হয়, মাউন্ট এটনা পাহাড়।
সেই বজ্রের আগুনে অগ্নুৎপাত এখনও চলছে মাউন্ট এটনায়।

এই মাউন্ট এটনার অগ্ন্যুৎপাতে ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রায়ই। ১৮৪৩ সালে মাউন্ট এটনার ভয়ংকর অগ্ন্যুৎপাতে মানুষ মারাই যায়, প্রায় চল্লিশ জনের মতন।

ইতালির সিসিলিতে অবস্থিত ইউরোপের এই সর্ববৃহৎ সক্রিয় আগ্নেয়গিরি আর ভয়ংকর রূপ দেখিয়ে যাচ্ছে আজও, হয়ত তার বুকে জমে থাকা টাইফুনের ক্ষোভ ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে প্রতিনিয়ত।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:২৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



