
"আপনি কখনও মদ খেয়েছেন?"
"না।"
"আমি খেয়েছি। প্রথমবার যখন নন্দিনী আমাকে ছেড়ে অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করে ফেলল, সেদিন দু চুমুক খেয়েছিলাম"
"ও।"
"চুমো?"
"না।"
"আমাকে খেয়েছে। নন্দিনীর পর যে মেয়েটার সাথে আমার ভালোবাসা হলো, ওর সাথে রিকশা করে যাবার সময়, নির্জন জায়গা পেয়ে চুমো খেয়ে দিলো। মেয়েটার নাম ছিল কথ্য।"
"আচ্ছা।"
"কখনও পুলিশের হাতে মার খেয়েছেন?"
"না।"
"কথ্যও হুট করে বদলে গেল, ওর বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম ও সময়টায়। ওর বাবা পুলিশে গিয়ে খবর দিলো। পুলিশ শালারা আমাকে ধরে বেদম পিটিয়ে, এক রাত থানায় রেখে ছেড়ে দিয়েছিল।"
"বুঝলাম।"
"কখনও রাতের বেলা খোলা ছাদের নিচে কারও হাত ধরে বসে চাঁদ দেখেছেন?"
"হয় নি কখনও দেখা।"
"সিঁথি নামে এক মেয়ের সাথে আমি দেখেছি। সিঁথির বাসায় সেদিন ওর বাবা মা ছিল না। তবুও আমরা ওর রুমে যাই নি, সে পূর্ণিমার রাতে দুজন ছাদে বসে চাঁদ দেখেছি। সিঁথি আমায় কী বলেছিল সেদিন জানেন?"
"না।"
"বলেছিল, ও ওর জীবনের সেরা সময়টা কাটাচ্ছে। এমন করে কত ভাবত, কখনও তা সত্যি হবে ভেবেও দেখেনি।"
"হুম।"
"কখনও কাউকে হারানোর ব্যথায়, নিজের হাত কেটেছেন?"
"না।"
"সিঁথি যেবার আমাকে বলল, তুমি আর কখনও আমার সাথে যোগাযোগ করবে না, সেবার চকচকে একটা ব্লেড হাতে নিয়ে নিজেকে রক্তাক্ত করেছিলাম।"
হিয়া চুপ করে চেয়ে রইল। কোন উত্তর করল না।
"কখনও ঝুম বৃষ্টিতে কাউকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ভিজেছেন?"
"না।"
"আমার অমন ভাগ্যও হয়েছিল। হিয়া নামে মেয়েটার সাথে এইতো দিন কয়েক আগে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম, জড়িয়ে ছিলাম হিয়াকে শক্ত করে।"
হিয়া খানিকটা চমকে উঠল। নিজের নাম শুনবার জন্য কি-না জানে না। হিয়া চুপ করে থাকে, বলে না কিছু।
"হিয়াকে তো আপনি চিনেন, তাই না?"
হিয়া কিছুটা ইতস্তত করল। এদিক ওদিক তাকাল। মামুন হাত দিয়ে মাথার চুল গুলো ঠিক করে হিয়ার একদম কাছে চলে আসলো। মুখের কাছে এসে বলল, "এই যা। আপনিই তো হিয়া। কেমন আছ হিয়া?"
"ভালো।"
মামুনের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল হিয়া। সেভাবেই বলে গেল, "কিন্তু আমি কখনও আপনার সাথে বৃষ্টিতে ভিজি নি।"
"হাহাহা।"
হেসে উঠল মামুন। আরও একটু কাছে এসে বলল, "তুমি কখনও মানুষ খুন করেছ?"
হিয়া চোখ বড় বড় করে তাকাল। মুখের ভাষা স্তব্ধ। মামুন বলে যায়, "আমি করেছি। আমার সবচেয়ে অপছন্দের কাজ কি জানো? যে মানুষ গুলো আমার সাথে কাটানো সময় গুলো ভুলে যায়, তাদের আমার খুবই অপছন্দ। ভালোবাসা এক নিমিষেই ঘৃণা হয়ে যায়। তুমি যেমন ভুলে গেলে।"
মামুন একটা স্কস্টেপ দিয়ে হিয়ার মুখ বন্ধ করে দিলো। হাত পা বাঁধা ছিল আগে থেকেই।
"নন্দিনী ভুলে গেল, আমাকে ভালোবাসে। আর একজনকে বিয়ে করে ফেলল। ওর বাসায় গেলাম একদিন শাড়ি ডেলিভারি দেয়ার নাম করে, খুন করে ফেললাম। কথ্য ভুলে গেল আমাকে চুমো খেয়েছিল। রিকশা থেকে নামার সময় একদিন মাইক্রো করে তুলে নিয়ে আসলাম এখানে। খুন করে ফেললাম। সিঁথি ভুলে গেল আমার সাথে ছাদে বসে হাত ধরে চাঁদ দেখেছে। আমি যেখানে থাকি তার উপর তলাতেই থাকত ও। ওর বাবা মা যেদিন বাসার বাহিরে, সেদিন গিয়ে খুন করে আসলাম। আমি জানতাম তুমিও ভুলে যাবে, আমাকে জড়িয়ে ধরে বৃষ্টিতে ভেজার কথা। তোমাকে এখানে তুলে নিয়ে আসলাম। এতো নির্জন জায়গায়, কেউ টেরও পাবে না, কী ঘটে যাচ্ছে!"
মামুন একটা ছুরি দিয়ে বুক বরাবর জামাটা কেটে ফেলল। মুখের মধ্যে ভেজা কাপড় ঢুকিয়ে স্কস্টেপ দিয়ে আবার আটকে দিলো। চাইলেও চিৎকার করতে পারছে না। অন্তর্বাসের উপর দিয়ে বুক বরাবর ছুরিটা ঢুকিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ ছটফট করে নিস্তেজ হয়ে গেল হিয়া। লাশটা নিয়ে ডিপ ফ্রিজের মধ্যে রেখে দিলো।
বেরিয়ে গেল মামুন বাড়ি থেকে। আশেপাশে বাড়িঘর নেই তেমন, চাইলেও যে কেউ এসে এ বাড়িটায় ঢুকতে পারবে না। নিজের বানানো ভুয়া পুলিশের পোশাকটা পরে হেঁটে বেড়াতে লাগল অলিগলি ধরে। রিকশা করে একটা মেয়ে যাচ্ছে। নির্জন রাস্তা। মেয়েটাকে দেখেই ভাবল মামুন, হিয়ার পর এই মেয়েটার সাথে সম্পর্ক হলো, এই তো সেদিন মেয়েটা ওর সাথে বিছানায় গেল। নিশ্চিত ভুলে গেছে। ভুলে গিয়ে এখন অন্য কারও সাথে বিছানায় যাচ্ছে। হাত উঁচু করে রিকশা থামাল। মেয়েটার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, "নাম কী আপনার? কোথায় যাচ্ছেন?"
"জ্বি, রেহনুমা। আমি একটা সুপার শপে কাজ করি। ওখান থেকেই ফিরছি।"
"আচ্ছা। বিবাহিত আপনি?"
"জ্বি।"
যা ভেবেছিল মামুন। রেহনুমা ভুলেই গিয়েছে মামুনকে। এখন দিব্বি আরেকটা ছেলের সাথে বিছানায় প্রতি রাতে শুয়ে বেড়ায়।
রিকশা চলে গেল। পিছন পিছন হাঁটতে লাগল মামুন। একটু সুযোগ দরকার। রেহনুমার শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। ভুলে গিয়েছে মামুনকে। মামুন মাঝে মাঝেই ভেবে পায় না, সব মেয়েই কেন মামুনের সাথে কাটানো সময় গুলো ভুলে যায়।
প্রচণ্ড মাথা ব্যথা করছে। মাথার ভিতর গুছানো হচ্ছে কাহিনী, রেহনুমার সাথে দেখা হয়েছিল কোথায়, কথা হয়েছে কোথায়, এক সাথে থেকেছে কোথায়?
রেহনুমার পর কার সাথে ভালোবাসা হয়েছিল মামুনের, আশেপাশে চোখ বুলিয়ে তাও খুঁজে নিচ্ছে। ভেবে যাচ্ছে। কাহিনীর অন্তরালের কাহিনী মস্তিষ্কে সাজিয়ে যাচ্ছে।
নিস্পৃহ শহরে নিস্পৃহ একজন মানুষ রাতের আঁধারে ঘুরে বেড়াচ্ছে, ঘুটঘুটে অন্ধকারে জ্যোৎস্না খুঁজছে, কখনও ভালোবাসা না পাওয়া মানুষটা ভালোবাসা খুঁজে যাচ্ছে।
১৮-০২-২০১৮
রিয়াদুল রিয়াদ
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ২:৫৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



