somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতিভা অন্বেষণ ও কিছু গিনিপিগ বানানোর কেচ্ছা

১৫ ই জুলাই, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খানিকটা সরলীকরণ হয়ে গেলেও একটি কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়,বলতে গেলে ডেভ হোয়াটমোর নামক ওই পাকানো গোঁফের ভদ্রলোকটিই বাংলাদেশের ক্রিকেটের খোলনলচে অনেকটুকু বদলে দিয়েছিলেন।তবে পাঁড় ক্রিকেটভক্তরা আশা করি বিস্মৃত হননি,হোয়াটমোরের মস্তিষ্কপ্রসূত কিছু থিওরি কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতাতে পর্যবসিত হয়।হ্যাঁ,আমি তার সুবিখ্যাত "মিডিওকার থিওরির" কথাই বলছিলাম।ব্যাটে বলের লড়াইয়ে সবকিছু মোটামুটি করতে পারে,এমন ক্রিকেটারদের দলে নেওয়ার তার খাপছাড়া নীতি শেষ পর্যন্ত যে কতটুকু সফল হয়েছিল,সেটাও নতুন করে বলবার প্রয়োজন নেই বৈকি।

ভাবছেন, কেন এতদিন পর এসব পুরোনো গপ্পো নতুন করে ফাঁদা।না না ,বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের ব্যবচ্ছেদ করা আমার উদ্দেশ্য নয়(সে গুরুদায়িত্ব উৎপলদার হাতেই ছেড়ে দেওয়া ভাল) আর আমি ধান ভানতে শিবের গীতও গাইছিনা।সত্যি বলতে কি,দূরদর্শন বস্তুটার দিকে আজকাল ঘেষা প্রায় হয়না বললেই চলে।কিন্তু কোন কুক্ষনে যে সেদিন টিভি দেখতে বসেছিলাম কে জানে ! এনটিভিতে দেখলাম মার্ক্স অলরাউন্ডার নামে একটি প্রতিভা অন্বেষণমূলক অনুষ্ঠান দেখাচ্ছে।বলে রাখা ভাল,এমনিতেই এসব তথাকথিত "তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ" টাইপ অনুষ্ঠানের প্রতি আমার মারাত্মক অ্যালার্জি আছে।প্রতিভা খোঁজার নামে এসব অনুষ্ঠান অনেকটাই ঠক বাছতে গাঁ উজাড় করার মত ব্যাপার বলে মনে হয়।শুরুর দিকের কিছু প্রোগ্রামকে তাও খানিকটা জাতের বলা যায়।কিন্তু পরের দিকের রীতিমত দৃষ্টিকটুভাবে একের পর এক যে হারে তথাকথিত প্রতিভাদের খুঁজে আনা হচ্ছে,তাতে কয়েকদিন বাদে দেশে প্রতিভার মচ্ছব লেগে যাবে আর এসব প্রতিভা রপ্তানি করে বেশ দুপয়সা কামানোও যাবে।সবচেয়ে হাস্যকর লাগে যখন কোমলমতি শিশুদের মর্মান্তিকভাবে এসব নাটুকেপনার শিকার হতে হয়।অনেকটা এরকমই একটি নির্লজ্জ্ প্রদর্শনীই দেখলাম সেদিন।

প্রথমত অলরাউন্ডার কথাটাতেই আমার ঘোরতর আপত্তি।ক্রিকেটীয় পরিভাষায় যে ব্যাটিং বোলিং দুটিই টুকটাক করতে পারে তাকেও কিন্তু অলরাউন্ডার বলা হয়।মজার ব্যাপার হল,মার্কস অলরাউন্ডার নামের অনুষ্ঠানটি মোটামুটি সেই ক্যাটাগরিতেই পড়ে। কোন একটা বিষয়ে স্পেশালাইজড না হয়ে সব কিছুই একটু একটু পারে এমন শিশুদেরই দেখলাম বেমালুম অলরাউন্ডার বলা হচ্ছে।তবে আমার চক্ষু চড়কগাছ হল বিচারকদের জ্ঞানগম্যির বহর দেখে।বিশেষ করে আট বছরের একটি শিশু যখন চমৎকার আবৃত্তি করে,তখন গান বা নাচ জানেনা বলে তাকে এককথায় ছেঁটে ফেলাটা কেমন বোধবুদ্ধিসম্পন্ন মানসিকতার পরিচয় দেয়, তা আশা করি বলার প্রয়োজন নেই।বিশেষ করে আব্দুন নুর তুষারের মত একজন লোক এধরনের অবিবেচক কাজ কিভাবে করেন ,সেটাই আমি ভেবে পাইনা।আর অন্যদের কথা(বিপাশা হায়াত,শম্পা রেজা ,শিবলী মোহাম্মদ)নাইবা বললাম।কোন প্রতিযোগী যদি কোন বিভাগে অপেক্ষাকৃত দুর্বল পারফর্ম করে,তাহলে তাকে এমনভাবে তাগাদা দেওয়া হয়,যেন ভাল না করাটা অপরাধ বৈ আর কিছু নয়।সবচেয়ে বড় কথা হল,সবজান্তা যে কোনকিছুতেই ওস্তাদ হয়না সে সত্য তারা কি জাননেনা,নাকি জেনেও না জানার ভান করেন ।তবে আমার মূল আশঙ্কার জায়গা এটা নয়।আরোপিত কোন কিছু কখনোই শুভ ফল বয়ে আনেনা,তা সে যতই উপাদেয় হোক না কেন। আর যে জিনিসে আনন্দ নেই,সে জিনিস যে আখেরে লাভ না করে ফ্যাকড়াই বাঁধায় তা নিয়েও বোধহয় দ্বিমতের অবকাশ নেই।আগে তো তাও এসব প্রতিভা অনুসন্ধান কেবল একটি নির্দিষ্ট ক্যাটাগরিতেই সীমাবদ্ধ ছিল।কিন্তু অলরাউন্ডার খোঁজার নামের যে প্রহসন চলছে,তার চেয়ে আত্মঘাতী আর কিছুই হতে পারেনা।
আর বিচারকেরাও কি একটিবার ভেবে দেখেননি, নিজেদের সন্তানদের গিনিপিগ বানিয়ে তাদের ওপর এহেন বল্গাহীন পরীক্ষা নিরীক্ষা কি আদৌ তাদের জন্য কল্যাণকর হবে ?


আর বলিহারি এইসব অভিভাবকদের,সব কাজের কাজী বানানোর পাঁয়তারায় যারা খুবই যত্নের সাথে নিজ সন্তানদের নিজের অজান্তেই উদ্যমহীন,অন্তঃসারশূন্য করার মত হঠকারী কাজ করতে যাচ্ছেন,সন্তানের পছন্দ অপছন্দের কিছুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করে "এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ " নামের একের পর এক জগদ্দল পাথর চাপিয়ে দিচ্ছেন। "আরও প্র্যাকটিস,আরও প্র্যাকটিস" বলে যে মন্ত্র তাদের কানে জপে দেওয়া হচ্ছে,ভয় হয়,শেষে না এই মন্ত্রের রিভার্স অ্যাফেক্টে এসব ইঁদুর কপালে শিশুরা একসময় প্রাণশক্তিহীন যান্ত্রিক মানবে পরিণত হয় !

পাদটীকাঃ(যতদূর মনে পড়ে,কাছাকাছি বিষয়বস্তুরই একটি পোস্ট কদিন আগেই স্টিকি হয়েছিল।সেক্ষেত্রে ব্যাপারটা খানিকটা চর্বিত চর্বণ হয়ে যায়। আসলে এইসব নচ্ছারপনা দেখে ক্রোধকে অবদমন করতে পারলামনা,শত হলেও এরাইতো আগামী দিনের কর্ণধার। )
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০০৯ রাত ৮:০১
২৫টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×