somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই পড়া : শখ না বাতুলতা ?

১৯ শে জুলাই, ২০০৯ রাত ৮:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেই কবে প্রমথবাবু বই পড়া নিয়ে বাঙ্গালি জাতিকে জ্ঞানগর্ভ লেকচার ঝেড়েছিলান,বলাই বাহুল্য, তাঁর এই প্রয়াস মোটামুটি অরণ্য রোদনেই পর্যবসিত হয়েছিল,হাজার হলেও চোরকে ধর্মের কাহিনী বলে তো আর ফায়দা নেই । তবে প্রমথবাবুর সৌভাগ্যই বলতে হবে,বহুকাল আগেই তিনি স্বর্গপ্রাপ্ত হয়েছিলেন,নইলে এই ঘোর কলিকালে বইপড়া যে রীতিমত জাদুঘরে শোভা পাবে,এমনটা বোধহয় তিনিও কস্মিনকালেও ভাবতে পারেননি।বই পড়াকে তিনি বলেছিলেন বিলাসিতা,কিন্ত ওই বিলাসিতাটুকুও মানুষ ওইসময় হরদম করত (সে মুরোদও তাদের ছিল বৈকি ।) আর এখন ! যাদের পক্ষে ওই বিলাসিতাটুকু করা সম্ভব তাদের জন্যও এটা দিল্লি দূর অস্তই বটে।আর হতভাগা বইগুলো সব বৈঠকখানার শোভাবর্ধনই করছে,সেখান থেকে তাদের যে পরিত্রাণ দেবে,এমন আদমীদের সংখ্যাও আজকাল জ্যামিতিক হারে হ্রাস পাচ্ছে।

কোথায় যেন পড়েছিলাম,ক্লাসিক বই হচ্ছে সেগুলোই ,যেগুলো শোকেসবন্দী হয়েই পড়ে থাকে আর কেউ কালেভদ্রেও ছুঁয়ে দেখেনা।
এখন এই সংজ্ঞা বোধহয় মোটামুটি সবধরনের বইয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।এককালে শস্তা বিনোদনের মাধ্যম বলে যেসব বইয়ের নাম শুনে শুদ্ধবাদীরা নাক সিঁটকাতেন ,সেসব বইও হালে সাধারণ পাঠককুলে অচ্ছুৎ হয়ে গেছে। স্রেফ রহস্য -রোমাঞ্চ পড়েই সময় যে কোন ফাঁকে উড়ে যেত টের পাওয়া যেত না,এখন অন্তর্জালের দৌরাত্ম্যে সে সময়টুকু বের করাও বড়ই মুশকিল হয়ে পড়েছে।যান্ত্রিক জীবনের ঠাস বুনোটে বই পড়া যে আজ না হোক,কাল যে রীতিমত বাতুলতা হিসেবে গণ্য হবে,এমন শঙ্কাকেও ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়ার জো বোধহয় আর নেই।

মনে পড়ে,খুব বেশিদিন আগের কথা নয়,আমার শৈশব-কৈশরের সোনায় মোড়ানো সময়টুকুতে রীতিমত নাওয়া খাওয়া ছেড়ে গোগ্রাসে বই গিলতাম।নতুন বইয়ের ঘ্রাণের ছিল আলাদা এক মাদকতা,যার জন্য অধীর হয়ে থাকতাম আমি।এখনো মনে পড়ে ক্লাস ফাইভে উপহার পাওয়া সেই নীল মলাটের জুলভার্ন সমগ্র,পাতায় পাতায় ছড়ানো ইন্দ্রজালের এক অদ্ভুত আবেশ।ক্যাপ্টেন নিমোর সাথে আমিও যেন ঘুরে বেড়াতাম অকুল দরিয়ায়,ক্যাপ্টেন হ্যাটেরাসের সাথে চলে যেতাম বিভীষিকার বরফ রাজ্যে।ফেলুদার ,প্রোফেসর শঙ্কু,শার্লক হোমস থেকে শুরু করে মায় কিশোর,মুসা ,রবিন পর্যন্ত আমার মনোজগতের সবটুকু জায়গা জুড়ে অধীশ্বর হয়ে ছিল,বুঁদ হয়ে থাকতাম তাদের সব লোমহর্ষক কান্ডকারখানায়।যাক সেসব,ধান ভানতে শিবের গীত অনেক গাইলাম,মোদ্দা কথা হোল বই পড়া তখন নাওয়া খাওয়ার চেয়েও অনেক বেশি জরুরি ছিল।

এরপর স্কুল কলেজের গন্ডি ছাড়ানোর পর্যন্ত মোটামুটি বইপোকাই ছিলাম,বইপড়া ছিল শখ ত্তো ছিলনা,ছিল নেশা।এরই মধ্যে বেশ কিছু দুর্দান্ত বই মোটামুটি পড়া হয়ে গেল,মাঝেসাঝে এই নেশায় ভাটা পড়লেও তেমন কোন খরা কখনো আসেনি।কিন্তু এখন ! আমজনতাকেই দোষ দেই কি করে,নিজেরই বই পড়ার হার মোটামুটি আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে।তবে একটা কথা বোধহয় বলাটা অসমীচীন হবেনা,বই পড়ার এই খরাটুকু এখন বোধহয় হাল জমানার শিশু কিশোরদের মাঝেও সংক্রামিত
হয়েছে।প্রতিযোগীতার যুগে পাল্লা দিয়ে দৌড়ানোর জন্য অ্যাকাডেমিক চাপ বা উচ্চাভিলাষী অভিভাবকদের আরোপিত "এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ" বা কম্পিউটার গেমসের প্রতি দুর্বার আকর্ষণ অথবা "খোমাবই" এর মত কিছু সামাজিক যোগাযোগ সাইটে
তাদের যথেচ্ছ বিচরণ ; যেকারণই(বা কারণগুলোই) এজন্য দায়ী হোক না কেন, বই পড়ার দিকে তাদের আপাত ঔদাসীন্য যে আখেরে কোন ভাল ফল বয়ে আনবেনা,সেটা বোধহয় আর নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই।বিশেষ করে যেসব শিশু সুকুমারের আবোল-তাবোল , হ-য-ব-র-ল
বা পাগলা দাশুর মত বই পড়া থেকে বঞ্চিত,তাদের জন্য আমার যুগপত আফসোস ও আশঙ্কা হয় বটে।আজকের দিনেই যারা এসব মনি মুক্তো আহরণ করতে পারলনা,আগামী দিনে তাদের নিয়ে "ডিজিটাল বাংলাদেশ" গড়ারই স্বপ্ন দেখা যেতে পারে,এর বেশি কিছু নয় ।

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০০৯ রাত ৯:০২
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×