somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফর্মালিটিজ নিয়ে কিছু ইনফর্মাল বাতচিত

২৬ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৩:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেশ ক'বছর আগের কথা।তখন চট্টগ্রামের ফয়েজলেকে অ্যামিউজমেন্ট পার্ক নামের নতুন এক কিসিমের বিনোদন এল।শুনলাম,সেখানে নাকি "রোলার কোস্টার নামের এক অতীব ভয়াবহ " আজাব আছে।তো শুভক্ষণ দেখে এক বিকেলে আমরা কজন সেই অত্যাশ্চর্য নিরীক্ষণে বেরিয়ে পড়লাম।এতক্ষণ বেশ বড় বড় বুলি হাকালেও রোলার কোস্টারের সামনে গিয়ে আমাদের রীতিমত চক্ষু চড়কগাছ।মানুষ দেখি টারজানের মত গলা ফাটিয়ে সর্বশক্তিতে চিৎকার করছে।আমার আবার উচ্চতাভীতি ছিল একটু বাড়াবাড়ি রকমের,অবস্থা বেগতিক দেখে আমি সটকে পড়ার ্মওকা খুঁজছিলাম।ভীত কন্ঠে বন্ধুকে শুধালাম,"আচ্ছা ,সবাই ওখানে উঠেই এত জোরে চিৎকার করছে ক্যান"?বন্ধু বিজ্ঞোচিত জবাব দিল,"আরে বোকচন্দর এটাও বুঝলিনা,এটা হোল এখানকার ফর্মালিটিজ B-)।"



ফর্মালিটিজের(কেতাবী বাংলায় যাকে আনুষ্ঠানিকতা বলাটাই বোধহয় সমীচীন হবে) ব্যবচ্ছেদ করা আপাতদৃষ্টিতে সহজ মনে হলেও বাস্তবিকভাবে খুব একটা সহজ কম্মো নয়।সাধারণভাবে সামাজিক মানুষকে যেসব নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয় সেগুলোকেই ফর্মালিটিজ বলা হয়ে থাকে।তবে এই সরল সত্যের আড়ালের গোমরটা ধরতে না পারলেই বাঝে যত বিপত্তি।ফর্মালিটিজ মেনটেইনের সময় নিজের বুদ্ধি -বিবেচনার ওপর সর্বদা ভরসা না করে খানিকটা অনুকরণ (বা অনুসরণ ) করাটা খুব একটা দূষণীয় নয় তো বটেই,বরং আখেরে বেশ কাজেও দিতে পারে বটে। তাই নিজ বুদ্ধিতে সায় না দিলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্যের বুদ্ধিতে চলা উচিত,তাহলে পস্তাবার শঙ্কা খানিকটা কম থাকে।


তবে অনেকেই আছেন যারা এসব আনুষ্ঠানিকতার বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করে নিজের মর্জিমাফিক বেশভুষা ধারণ করেন,বিনিময়ে এর খেসারতও তাদের দিতে হয় বৈকি।আমাদেরই এক বন্ধুরই পোশাক আশাকের ব্যাপারে ছিল চরম বৈরাগ্য ,এক্ষেত্রে নূন্যতম ভদ্রতা -সভ্যতার ধারও সে ধারত না ।বলাই বাহুল্য,তাকে নিয়ে কোথাও গেলেই একটা কেলো বাঁধার সম্ভাবনা থাকত।কিন্তু একদিন তার কীর্তি আমাদের সব শঙ্কাকেও ছাপিয়ে গেল।আমরা গিয়েছিলাম আইডিবিতে ,কিছু টুকটাক কেনাকাটা সারতে।কিন্তু হঠাৎই বলা নেই কওয়া নেই,আমাদের মাথায় একেবারে বিনা মেঘে বজ্রপাত, সেই বন্ধুবর দেখি দেঁতো হাসি হেসে তার কুখ্যাত সবুজ লুঙ্গি নাচাতে নাচাতে আসছে!!মজার ব্যাপার হল,আমাদের এই হাড়িপানা মুখ দেখেও তার কোনোই ভাবান্তর হলোনা,অম্লান বদনে সে যথারীতি আমাদের সাথে ঘুরতে লাগল !আরেকটু বলে রাখা ভাল,এই "আত্মঘাতী" কম্মোর ফল তাকেও দিতে হয়েছিল,এর পর থেকে তার নাম হোল "লুঙ্গি রাশেদ।"


হুজুগে বাঙ্গালীর একটা বড় সমস্যা হল,তারা সবসময় মুদ্রার এক দিকেই দেখে,মুদ্রার উলটো পিঠে কি আছে সেদিকে ভুলেও তাকায়না । কবি শেখ সাদির পোশাক নিয়ে সেই ঘটনার কথা আমরা সকলেই অল্পবিস্তর জানি,।সবাই উচ্চকিত স্বরে শেখ সাদির রসবোধের তারিফ করলেও বিসমিল্লায় যে তাকে ভালোমতোই হেনস্তা হতে হয়েছিল,তা বিস্মৃতি পরায়ন মানুষ বিলকুল ভুলে গেছে।অথচ তিনি যদি কিঞ্চিৎ আনুষ্ঠানিকতা পালন করতেন তাহলে এই হ্যাপার মধ্যদিয়ে তাকে হয়তো যেতে হতোনা !! আসলে মোদ্দা কথা হল এই,সাবেকী আমলে বিখ্যাত ব্যক্তিরা তো বটেই,মায় আমজনতা পর্যন্ত তাদের বসন নিয়ে হয়ত খুব একটা গা করতনা(টিভি সিরিয়ালগুলোতে হরদম দেখানো মোঘল আমলের পাবলিকদের মনি-মুক্তা ইত্যাকার মুল্যবান বস্তু খচিত খুবসুরৎ শাহী পোশাক এই ক্যাটাগরির বাইরে থাকবে )।তবে নির্বোধও মাত্রই জানে,এই ফ্যাশন সচেতন যুগে এটা একেবারেই আকাশ কুসুম ব্যাপার ।হালে পোশাক নিয়ে পুরোদস্তুর গবেষণা হচ্ছে,এবং তথাকথিত ফ্যাশানবিদদের এইসব জ্ঞানগর্ভ পরামর্শও মানুষ গোগ্রাসে গিলছে।কিন্তু সীমা ছাড়ালেই এসব গবেষণা হয় মারাত্মক হাস্যাস্পদ।এই তো সেদিন প্রচেষ্টার দশ বছরে পা দেওয়া একটি বহু প্রচারিত দৈনিকের রুপসজ্জা পাতা দেখেও আক্কেল গুডুম হলাম।রাতের দাওয়াত হলে স্ট্রাইপ শার্টের সাথে ম্যাচিং করে ধূসর প্যান্ট এবং তার সাথে অতি অবশ্যই কালো জুতো বা কোন ইনফর্মাল দাওয়াতে পাঞ্জাবির সাথে ম্যাচ করে কোলাপুরি বা নাগরা পরতে হবে ,ইত্যাদি উপদেশের বহর শুনে এখন আসলেই ভিরমি খেতে হয়।আনুষ্ঠানিকতার নামে অতি আনুষ্ঠানিকতা বা ফ্যাশানের নামে ছ্যাবলামি,যাই বলিনা কেন,নির্মল বিনোদন দেওয়া ছাড়া এসব পরামর্শ আর কোন কাজে আসেনা বলেই মনে হয়।


শেষের কবিতায় পড়া একটি কথা এখনো মনে গেথে আছে,ফ্যাশানটা হল মুখোশ আর স্টাইলটা হল মুখশ্রী ।ফর্মালিটিজের ব্যবচ্ছেদ করতে গেলে এই কথাটিই আসলে সবার শেষ কথা।আপনি আচরি ধর্ম বলে একটা কথা আছে,তাই স্টাইল কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিবিশেষে ভিন্নই হয়ে দাঁড়ায়। পোশাকি আনুষ্ঠানিকতার বেড়াজাল সত্ত্বেও স্টাইলই ব্যক্তিকে আলাদা করে রাখে।একথা অস্বীকার করার জো নেই,কর্পোরেট জগতে কেতাদুরস্ত হয়ে থাকাটা বিশেষভাবে জরুরি ।তবে এই কর্তব্য পালের সময় জবরজং হয়ে থাকাটা আর যাই হোক,স্মার্টনেসের পরিচায়ক নয়।সোজা কথায় বললে,রুচিবোধ ও ঔচিত্যবোধ,এই দুয়ের মেলবন্ধন না ঘটলে পোশাকি আনুষ্ঠানিকতা হবে কেবলই অন্তসারশূন্য,ফর্মালিটিজ হয়ে পড়বে মূল্যহীন।


সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৫৪
২১টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×