জীন জাতির কথা কোরআনে পরিষ্কারভাবে আছে। জিন জাতি আল্লাহর বিস্ময়কর ও রহস্যঘেরা সৃষ্টি। কোরআনের কোনও আয়াত কেউ অস্বীকার করলে সে মুসলমান থাকে না। শিয়া, সুন্নি, খারেজি, রাফেদি ইত্যাদি সকল দল জীনের ব্যাপারে একমত। কোরআনের আয়াত অস্বীকারকারী সম্পর্কিত কিছু আয়াত;
[সুরা বাকারাহ : ৩৯ ] 'আর যে লোক তা অস্বীকার করবে এবং আমার আয়াতগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার প্রয়াস পাবে, তারাই হবে জাহান্নামবাসী ; অন্তকাল সেখানে থাকবে'।
[সূরা নিসা : 56] 'এতে সন্দেহ নেই যে, আমার আয়াত সমুহের প্রতি যেসব লোক অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করবে, আমি তাদেরকে আগুনে নিক্ষেপ করব। তাদের চামড়াগুলো যখন জ্বলে-পুড়ে যাবে, তখন আবার আমি তা পালটে দেব অন্য চামড়া দিয়ে, যাতে তারা আযাব আস্বাদন করতে থাকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, হেকমতের অধিকারী'।
কোরআনের শতাধিক আয়াতে জিন শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়। মানুষের মতো তারাও আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতের জন্য আদিষ্ট। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি মানুষ ও জিন জাতিকে কেবল আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা : জুররিয়্যাত, আয়াত : ৫৬)
মানবজাতির মতো তাদের ভেতরও আল্লাহ নবী ও রাসুল প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে জিন ও মানব সম্প্রদায়! তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে রাসুল আসেনি, যারা তোমাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ বর্ণনা করেছে।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৩০)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-ও জিনদের মধ্যে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। কোরআন ও হাদিসের একাধিক বর্ণনা থেকে জিনদের সঙ্গে রাসুল (সা.)-এর সাক্ষাৎ প্রমাণিত হয়। হাদিসের বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, রাসুল (সা.) জিন জাতির কাছে একাধিকবার দ্বিনের দাওয়াত নিয়ে যান এবং তাঁর হাতে জিনদের এক ও একাধিক দল ইসলামও গ্রহণ করে। পবিত্র কোরআনে ‘জিন’ নামে একটি স্বতন্ত্র সুরা রয়েছে। যার শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘বলুন! আমার প্রতি ওহি অবতীর্ণ হয়েছে, জিনদের একটি দল মনোযোগ দিয়ে (কোরআন) শ্রবণ করেছে এবং বলেছে, আমরা এক বিস্ময়কর কোরআন শ্রবণ করেছি, যা সঠিক পথের নির্দেশ করে। ফলে আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমরা আমাদের প্রতিপালকের সঙ্গে কাউকে শরিক করব না।’ (সুরা: জিন, আয়াত : ১-২)
জীন মসজিদ- সৌদি আরব।
সুরা আহকাফেও এমন একটি ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়। যেখানে স্বজাতির মধ্যে জিনদের ইসলাম প্রচারের বিবরণও এসেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করো! যখন আমি তোমার প্রতি জিনদের একটি দলকে আকৃষ্ট করেছিলাম, যারা কোরআন পাঠ শুনেছিল। যখন তারা তার নিকট পৌঁছাল, তখন তারা বলল, চুপ করে শোনো। কোরআন পাঠ শেষে তারা নিজ সম্প্রদায়ের কাছে সতর্ককারী হিসেবে ফিরে গেল। তারা গিয়ে বললো : হে আমাদের কওমের লোকজন! আমরা এমন কিতাব শুনেছি যা মূসার পরে নাযিল করা হয়েছে৷ যা ইতিপূর্বেকার সমস্ত কিতাবকে সমর্থন করে, ন্যায় ও সঠিক পথপ্রদর্শন করে৷হে আমাদের কওমের লোকেরা, আল্লাহর প্রতি আহবানকারীর আহবানে সাড়া দাও এবং তাঁর প্রতি ঈমান আনো৷ আল্লাহ তোমাদের গোনাহ মাফ করবেন এবং কষ্টদায়ক আযাব থেকে রক্ষা করবেন৷’ (সুরা : আহকাফ, আয়াত : ২৯-৩১)
আল্লামা ইবনে ইসহাকের সূত্রে আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) এ ঘটনাকে হিজরতের পূর্বে বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তায়েফ থেকে ফেরার পথে এক উপত্যকায় নামাজ আদায় করছিলেন। তখন জিনদের একটি দল তাঁর কোরআন তিলাওয়াত শুনে থেমে যায় এবং রাসুল (সা.)-এর ঈমানের ঘোষণা দেয়। সম্ভবত তায়েফবাসীর আচরণে তিনি যে ব্যথা পেয়েছিলেন, তার সান্ত্বনাস্বরূপ আল্লাহ তাঁর প্রতি জিনদের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেন। আল্লামা ইবনে ইসহাক ও ইবনে সাদের মতে, সেই দলে দুই গোত্রের ৭০ থেকে ৯০ জন জিন উপস্থিত ছিল।
ড. খালেদ বিন উসমান আস-সাবত বলেন, রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে জিনদের ছয়টি পৃথক সাক্ষাতের বর্ণনা পাওয়া যায়। যার মধ্যে দুইবার মক্কায়, তিনবার মদিনায় এবং একবার মদিনার বাইরে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। কখনো তিনি একা ছিলেন আবার কখনো তাঁর সঙ্গে সাহাবিদের কেউ উপস্থিত ছিলেন।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত অপর হাদিসে পাওয়া যায়, এক রাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে না পেয়ে সাহাবায়ে কেরাম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি ফিরে এসে বলেন, ‘আমার কাছে একদল জিন এসেছিল। আমি তাদের সঙ্গে যাই এবং তাদের সম্মুখে কোরআন তিলাওয়াত করি।’ অতঃপর নবী (সা.) আমাদের নিয়ে যান। আমাদেরকে তাদের চিহ্ন ও তাদের আগুনের চিহ্ন দেখান। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৫০)
মানবজাতির মতো জিন জাতিও আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের ব্যাপারে আদিষ্ট। সুতরাং পরকালে তাদের কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে এবং অবাধ্যতার জন্য শাস্তির মুখোমুখি হবে—এ ব্যাপারে প্রাজ্ঞ ইসলামী ব্যক্তিত্বরা একমত। পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে বলা হয়েছে, অবিশ্বাসী ও অবাধ্য জিনরা মানুষের মতো শাস্তি ভোগ করবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি অবশ্যই জিন ও মানুষ উভয়ের মাধ্যমে জাহান্নামকে পূর্ণ করব।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ১১৯)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি বহু জিন ও মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৭৯)
মানুষ ও জীন উভয় জাতির উচিত আল্লাহর এবাদত করে জাহান্নাম থেকে বাঁচা ও জান্নাতে দাখিল হওয়া। আর মানুষের উচিত খারাপ জীন থেকে বাঁচা। ওয়ামা তৌফিক ইল্লাহ বিল্লাহ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৫