somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টাকওয়ালা ছেলেদের ব্যাপারে বাংলাদেশের মেয়েদের আরও উদার হওয়া উচিত

১৮ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


টাকের ব্যাপারে নিজের একটা দুঃখের কাহিনী দিয়ে শুরু করছি। আমার বয়স যখন মাত্র ১৮ বছর তখন থেকেই আমার চুল পরা শুরু করে। যদিও টাক বোঝা যাওয়া শুরু হয় যখন আমার বয়স ২৬ বছর। ১৮ বছর বয়সে আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্নভাবে এক ডাক্তারের শরণাপন্ন হই। আমার আশা ছিল উনি আমাকে কিছু ওষুধ হয়ত দিবেন যেটা খেলে আমার চুল পরা বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু দেখলাম ওনার নিজের মাথাতেই টাক আর উনি আমার সমস্যার কোনও গুরুত্বই দিলেন না। আর আমাকে ওনার মেডিকাল ছাত্র জীবনের কিছু টাক সংক্রান্ত রসালো গল্প বলে আসলে কাউন্সেলিং করলেন এবং ব্যাপারটাকে হেসে উড়িয়ে দিলেন। শেষে এক পাতা সি ভিট লিখলেন প্রেসক্রিপশনে। আমি ভগ্ন মনোরথে চলে আসলাম। ২২ বছর বয়স পর্যন্ত আমি এই টাকের কারণে মানসিকভাবে খুবই কষ্টে ছিলাম। এর পরে কিভাবে যেন ব্যাপারটা আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হতে থাকে।


মেরিব্রাউ নামে অস্ট্রেলিয়ার একজন গবেষক একটি গবেষণার মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে, মাথার সামনের মাঝের অংশে চুল ঝরে পড়ার হার বয়সের ওপর নির্ভরশীল। ৮০ বছরের উপর বয়সী ৫৭% নারী ও ৭৩.৫% পুরুষ এর দ্বারা আক্রান্ত। মডার্ন মেডিক্যাল লাইব্রেরি'র ওয়েবসাইটের ভাষ্যমতে যুক্তরাষ্ট্রের ৪ কোটি পুরুষ আংশিক টাকের শিকার। প্রায় ২৫% পুরুষের ৩০ বছর বয়সের পরেই মাথা টাক হওয়া শুরু হয়। দুই-তৃতীয়াংশের শুরু হয় ৬০ বছর বয়সে।৫০ বছর বয়সে পৌছলে ৫০% এর বেশি পুরুষের চুল পড়ার উল্লেখযোগ্য লক্ষণ দেখা যায় এবং ৭০ বছর বয়সে প্রতি ৫ জনে ৪ জন পুরুষের টাক থাকে। তাছাড়া এই যুগে তরুণ প্রজন্ম আগের যুগের চেয়ে কম বয়সে টাক সমস্যার শিকার হচ্ছে। একটা গবেষণায় দেখা গেছে এখন ২৫% পুরুষের ২০ থেকে ২১ বছর বয়সে চুল পড়া শুরু করে।


এখন আসল কথায় আসি। আমাদের দেশের সিংহভাগ মেয়ে বিয়ের ব্যাপারে টাকওয়ালা ছেলেদের পছন্দ করে না। প্রথমেই বাদ করে দেয়।আমার এক কলিগ বলেছে যে সে টাক মাথা নিয়ে অনেক বার মেয়ে দেখতে গেছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত টাকের কারণে তার বিয়ে পাকা হয় নাই। শেষে সে নিরুপায় হয়ে মাথায় পরচুলা পরে মেয়ে দেখতে যায় এবং শেষ পর্যন্ত এভাবেই সে বিয়ে পাকা করে ফেলে এবং বিয়ের পরে মেয়ে জানতে পারে যে তার জামাইয়ের মাথায় টাক (হয়তো কাজটা তার ঠিক হয় নাই)। কিন্তু পশ্চিমের দেশগুলিতে দেখা যায় যে মেয়েরা ছেলেদের টাকের ব্যাপারে আমাদের দেশের চেয়ে অপেক্ষাকৃত উদার। বিভিন্ন জরীপে দেখা গেছে মাত্র ১২.৫০% মেয়ে প্রেমের ক্ষেত্রে টাককে নেতিবাচক বলেছেন। আর ৮৭.৫০% টাককে কোনও সমস্যা মনে করেনি।পশ্চিমের বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে টাক সমস্যার সমাধান হিসাবে মেয়েরা সাধারণত ছেলেদের পরামর্শ দেয় ছেলেদের আরও আত্মবিশ্বাসী হওয়ার জন্য, দাড়ি রাখার জন্য, ব্যায়াম করে শরীরকে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য, শরীরে উল্কি করার জন্য যেন টাকের প্রতি মেয়েদের চোখ না যায়, চেহারাকে ফ্যাশনের মাধ্যমে আকর্ষণীয় করার জন্য, আবার অনেক মেয়ে বলেছে টাকই ভালো। অনেক মেয়ে বলেছে যে পুরুষের ব্যক্তিত্বই আসল। অনেকে এমনও বলছে যে টাক হোল এক ধরনের নগ্নতা যার কারণে টাক মাথার ছেলেরা অন্যদের চেয়ে সৎ ও তাদের উপর বেশী আস্থা রাখা যায়। অনেক মেয়ে বলেছে যে ভালবাসার ক্ষেত্রে চুল না থাকা একটা গৌণ বিষয়। তাছাড়া, তারা ছেলেদের রসবোধ এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য যেমন বুদ্ধি, সামাজিকতা, আত্মবিশাস ইত্যাদিকে টাকের চেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। তারা বলতে চেয়েছে যে একটা মেয়ে শুধু একটা ছেলের চেহারা আর মাথার চুল দেখে তাকে ভালবাসে না। আর যারা এরকম করে সেরকম মেয়ের ভালোবাসা না পেলেও সমস্যা নাই। অনেকে বলেছেন যে অনেক ক্ষেত্রেই ছেলেদের টাক মাথা তার চেহারার সাথে মানিয়ে যায়। এ ব্যাপারে তারা ব্রুস উইলিস, প্যাট্রিক স্টুয়ার্ট, জেসন স্ট্যাথাম, ডোয়াইন জনসনের মতো সেলিব্রেটিদের কথা উল্লেখ করেন। তাদের যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছে যে চুল ছাড়া মাথা কি আকর্ষণহীন? এর উত্তরে তারা বলেছে যে মোটেই না। অনেক বলেছে যে যেসব ছেলে টাক ঢাকার চেষ্টা করে তাদের চেয়ে যারা পুরো মাথা কামাই করে ফেলে তাদের দেখতে ভালো লাগে। এর দ্বারা একটি ছেলের আত্মবিশ্বাস ফুটে ওঠে ফলে সে মেয়েদের দ্বারা আকৃষ্ট হয়। তাদের মতে চুলের চেয়ে আত্মবিশ্বাস গুরুত্বপূর্ণ তাই চুল না থাকাটা কোনও ব্যাপার না। মেয়েরা পরিপাটি ছেলে পছন্দ করে ফলে একটা স্নিগ্ধ ও সুশোভিত চেহারা মেয়েদের আকৃষ্ট করে যদিও হয়ত ছেলেটার মাথায় চুল কম। মেয়েরা কি টাক মাথার ছেলেদের পছন্দ করে? জরীপে অংশ নেয়া অধিকাংশ মেয়ে বলেছে যে আসলে টাকটা ব্যাপার না বরং ছেলেদের ব্যক্তিত্ব মেয়েদের আকৃষ্ট করে। ছেলেরা নিজেদের অবয়ব নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলে মেয়েরা তখন ছেলেদের টাক নিয়ে ভাবে না। ছেলেদের ব্যক্তিত্ব, সৌজন্যবোধ এবং সার্বিক আচরণের কারিশমা মেয়েদের আকৃষ্ট করে। মেয়েদের বিবেচনার মোট পরিমাণকে শতকরা হিসাবে দেখলে তারা সাধারণত শারীরিক গড়ন ও চেহারাকে ২০% গুরুত্ব দেয়, টাকা পয়সা, ক্ষমতা, রুচিবোধকে ৪০% গুরুত্ব দেয় এবং আত্মবিশ্বাস, নেতৃত্ব গুন ইত্যাদিকে ৪০% গুরুত্ব দেয়।

পরিশেষে বলা যায় যে কোনও মেয়ে কেবল একজন পুরুষের মুখের চেহারাতে প্রেমে পড়ে না। যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় তা হ'ল একজন মানুষের চরিত্র এবং সে কে। আপনার কেবল আত্মবিশ্বাসের প্রয়োজন এবং আপনাকে টাক সংক্রান্ত হীনমন্যতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। যদি আপনি সত্যিই টাককে আপনার জন্য আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হিসাবে বিশ্বাস করেন তবে অন্যরাও তা দেখতে পাবে। টাক মাথার ছেলেরাও অন্যদের মত আকর্ষণীয় ও সুন্দর হতে পারে। বাংলাদেশের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারনেও মেয়েরা বিয়ের ক্ষেত্রে টাক মাথার ছেলেদের পছন্দ করে না। তাই আমি এদেশের অবিবাহিত মেয়েদের প্রতি আহবান জানাব তারা যেন এ ব্যাপারে আরও উদার হওয়ার চেষ্টা করে। ছেলেদের যেমন কালো মেয়ে বিয়েতে আপত্তি থাকা উচিত না তেমনি মেয়েদেরও টাক মাথার ছেলেদের বিয়ে করতে আপত্তি করা উচিত না। ছেলে মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই দাম্পত্য জীবনে দীর্ঘ মেয়াদে তাদের ব্যক্তিত্ব, ভালোবাসা ও অন্যান্য গুণাবলী মুখ্য হওয়া উচিত। কালো মেয়েরা যেমন তাদের কষ্ট কাউকে বলতে পারে না, তেমনি টাক মাথার ছেলেরাও টাকের কারণে হীনমন্যতায় ভোগে। যদিও আজকাল টাকে চুল গজানোর কিছু টেকনিক আবিষ্কৃত হয়েছে কিন্তু এগুলি সবার সামর্থ্যের মধ্যে না। আমাদের উন্নত দৃষ্টিভঙ্গিই সবার জন্য দিতে পারে এই সমস্যার ভালো সমাধান।
সূত্রঃ
লিঙ্ক ১
লিঙ্ক ২
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:১৮
১৬টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×