somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য

০৩ রা আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের হারিয়ে যাওয়া এক ঐতিহ্যবাহী শিল্পের নাম বায়োস্কোপ। আমার ধারণা আমাদের জ্যেষ্ঠ ব্লগাররা অনেকেই বায়স্কোপ নিজের চোখে দেখেছেন। আশা করি মন্তব্যে তারা তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করবেন। চার কোনা একটি টিনের বাক্সে গোলাকৃতি ৪ থেকে ৬টি কাচের জানালা। বাঁশি বাজিয়ে আহ্বান জানিয়ে দুলদুল ঘোড়া, মক্কা-মদিনা, আজমির শরীফ, ক্ষুদিরামের ফাঁসির ছবি ইত্যাদি দেখানো হতো বায়স্কোপে। দেশ বিদেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, রাজা বাদশা, জনপ্রিয় নায়ক নায়িকা, বিভিন্ন ধর্মীয় পবিত্র স্থাপনা, মৃত্যুর পরের নানা কাল্পনিক কাহিনীর ৩৫ থেকে ৪০টি ছবি জোড়া দিয়ে লাগানো হতো। বাক্সের মধ্যে দুই পাশে দুটি ঘুড়ির লাটাইয়ের মত জিনিস থাকত যা পেচিয়ে স্থির ছবি চলমান রেখে প্রদর্শন করা হত। বায়স্কোপওয়ালা হাত দিয়ে হাতল ঘুরাতে থাকে আর সুর করে ছবির বর্ণনা দিতে থাকে।

"কী চমৎকার দেখা গেলো
ঢাকা শহর আইয়া পড়লো ....."
মীরজুমলার কামান দেখো।
সদরঘাটের জাহাজ দেখো...."
(সৌজন্যে আহমেদ জি এস ভাই)

বাইরে থেকে স্বচ্ছ কাচের ওপর চোখ রাখলে কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যেতে হয় দর্শকদের। হাত দিয়ে প্যাডেল ঘুরিয়ে দর্শনীয় স্থান, কিংবা বিভিন্ন চিত্র কর্মের ছবি দেখানো হতো এই বায়োস্কোপে। গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় সব কাহিনী ও কাল্পনিক চিত্রও দেখানো হতো বায়স্কোপে।



অনেকের কাছে নস্টালজিক, এই বায়স্কোপ নিয়ে বর্তমান সময়েও শিল্পীরা গান গেয়েছেন। দলছুট ব্যান্ডের এই গানটা উপভোগ করুন;
বায়স্কোপ- দলছুট (সৌজন্যে- মিররডল)। বায়স্কোপের ছবি আর সুরেলা কন্ঠের বর্ণনায় জীবন্ত হয়ে উঠতো এক অজানা পৃথিবী। বাংলাদেশে ৭০ এর দশকেও শহরে ও গ্রামে নিয়মিত দেখা যেত বায়স্কোপওয়ালারা কাঁধে বায়স্কোপ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা এটা দেখার জন্য মা-বাবার কাছে আবদার করছে। বাংলার চিরায়ত আদি বিনোদন মাধ্যম ছিল এই বায়োস্কোপ। আধুনিক প্রযুক্তির আগ্রাসনে বর্তমানে বলতে গেলে বিলুপ্ত এক সময়ের বেশ জনপ্রিয় এই শিল্পটি। টিভি, সিনেমা, অন্তরজাল, স্মার্ট ফোন, ডিভিডি, ইউটিউব সহ নানা বিনোদন মাধ্যম মানুষের হাতে আসায় বায়োস্কোপ এখন কেবলই ইতিহাস


আমি নিজে যখন ১৯৯০ সালে খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের কাছে বায়স্কোপ দেখার সুযোগ পাই তখন বায়স্কোপের দিন শেষ। তখন ভিসিআরের যুগ। তার পরও শুধু কৌতূহল মেটানোর জন্য দেখি। আমার বড় বোনের কাছে তার বায়স্কোপ দেখার গল্প শুনেছি। বর্তমানে বায়স্কোপ কদাচিৎ দেখা যায় বিভিন্ন মেলায়। তবে বর্তমানেও দুই একজন বায়স্কোপওয়ালা পুরনো পেশা ধরে রেখেছেন। এদের পরে হয়ত এই বায়স্কোপ আর থাকবে না।


ক্যামব্রিজ ইংরেজি অভিধান অনুযায়ী বায়স্কোপ অর্থ ‘একটি যন্ত্র যার দ্বারা কোন পর্দায় চলমান চিত্র প্রদর্শিত হয়’। সেখানে বলা হয়েছে মুভি ক্যামেরার প্রাচীন নাম হোল বায়স্কোপ। বাংলা চলচ্চিত্র বা বাংলা সিনেমা ১৮৯০ সালে ভারতের কলকাতায় বায়োস্কোপ নামে শুরু হয়েছিল। ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দের কলকাতায় বাঙালিদের মধ্যে প্রথম বায়োস্কোপ কোম্পানি গঠন করেন মানিকগঞ্জ জেলার বগজুরী গ্রামের হীরালাল সেন (১৮৬৬-১৯১৭)। তার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির নাম দ্য রয়েল বায়োস্কোপ কোম্পানি। আশা করি উপমহাদেশের সিনেমার ইতিহাস নিয়ে আলাদা পোস্ট দিব। এই বায়স্কোপের সব চেয়ে সরল সংস্করণ হোল গ্রাম বাংলার কাঁধে করে বয়ে নিয়ে বেড়ানো এই ছোট বায়স্কোপের বাক্স। কলকাতা শহরের কিছু বায়স্কোপে ছোট প্রজেক্টরও ব্যবহার করা হতো।

ইউরোপে ১৫ থেকে ১৭ শতাব্দীতে বায়োস্কোপ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৮৯৪ সালের পর এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় বিশ্বব্যাপি এর প্রদর্শনী শুরু হয়। অনেকে বায়োস্কোপকে চলচ্চিত্র আবিস্কারের পূর্ব রুপ বলে ধারণা করেন।

তবে আনন্দের খবর হোল চোখ ধাঁধাঁনো আধুনিকতার এমন সময়েও গ্রামীণ জনপদে বায়োস্কোপ দেখতে মানুষের ভীড় চোখে পড়ে বিভিন্ন মেলায়। তবে এধরনের প্রদর্শনী বিরল।

সূত্র - উইকিপিডিয়া, বৈশাখী অনলাইন, কালি ও কলম, ভোরের কাগজ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৫০
৩০টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×