
ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান সাহেব একবার ওনার ব্যবসায়ীক জীবনের শুরুর দিকের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কথা বলছিলেন। আমরা জানি উনি অনেক ক্ষেত্রে একজন বিতর্কিত ব্যক্তি এবং ওনার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে । তারপরও ব্যবসায়ী হিসাবে সফল, তাই ব্যবসায়ীক বুদ্ধির ( কুবুদ্ধিও বলা যেতে পারে) সফল প্রয়োগের ক্ষেত্রে ওনার উদাহরণ দিচ্ছি। কারণ অনেক গল্পের মধ্যে শিক্ষণীয় বিষয় থাকতে পারে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে বড় ব্যবসায়ী তেমন বেশী কেউ ছিল না। এই সময় নতুন যারা ব্যবসা বাণিজ্যের দিকে ঝুকেছিল তারা সরকারি অফিসগুলিতে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতেন। সালমান এফ রহমানের কোম্পানি ‘বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিঃ (পরবর্তীতে বেক্সিমকো লিঃ)’ একবার বাংলাদেশের কোন এক ক্রেতার জন্য কোন একটা পণ্য বিদেশ থেকে আমদানির প্রয়োজনে মূল বিদেশী রফতানিকারকের (প্রিন্সিপ্যাল) স্থানীয় ইন্ডেন্টর (এজেন্ট) হয় । এই ইন্ডেনটিংএর অনুমতির জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি অফিসে তিনি এবং তার পার্টনার যখন যান তখন সরকারি কর্মকর্তারা তাদেরকে শর্ত দেয় যে বিদেশ থেকে মূল প্রিন্সিপ্যাল (রপ্তানিকারক) সশরীরে না আসলে তারা অনুমতি দেবে না।
সালমান সাহেবরা তখন বিপদে পড়ে যান। কারণ এত সামান্য ব্যাপারে প্রিন্সিপ্যাল আসতে চাবে না এবং তাদের হাতে সময় খুব সীমিত ছিল। আবার অনুমতি না পেলে কাজটা হাত ছাড়া হয়ে যাবে। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তারা কিছুতেই অনুমতি দেবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত বিদেশী প্রিন্সিপ্যাল সশরীরে ওনাদের অফিসে না আসেন। সালমান সাহেবরা তখন নিরুপায় হয়ে একটা ফন্দি আঁটেন। তখন বাংলাদেশে একটা পুরনো লণ্ড্রী শপ (নামটা ভুলে গেছি) ছিল যেটা চালাত এক চাইনিজ নাগরিক। বহু বছর সে বাংলাদেশে আছে, বাংলাও সে জানে। ঐ চাইনিজ ব্যক্তি সালমান সাহেবদের পরিচিত ছিল। সালমান সাহেবরা ওনার কাছে গিয়ে ওনাকে অনুরোধ করলেন যে আপনি দয়া করে আমাদের বিদেশী প্রিন্সিপ্যাল সেজে আমাদের সাথে সরকারি অফিসে যাবেন। আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করলে আপনি শুধু ইয়েস আর নো বলবেন। বেশী কিছু জিজ্ঞেস করলে বলবেন নো ইংলিশ। ঐ চাইনিজকে তারা অনেক কষ্টে রাজি করায় এবং ফন্দি অনুযায়ী সেই সরকারি অফিসের কর্মকর্তাদের সামনে নিয়ে যায়। উনি ইয়েস, নো আর নো ইংলিশ বলে কর্মকর্তাদের সন্তুষ্ট করে ফেলেন। আর সালমান সাহেবরা কাজটা পেয়ে যান।
এই গল্প উনি করেছিলেন এটা বোঝাতে যে প্রথম দিকে কত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন ওনারা হয়েছেন। বাংলাদেশে প্রথম ফ্যাক্স মেশিন আমদানি নিয়েও একটা গল্প উনি বলেন। প্রথমে সরকারি অফিস থেকে বলা হয় যে এই মেশিন দেশের তথ্য পাচারে সহায়তা করবে। তাই এটা আমদানির অনুমতি দেয়া যাবে না। অনেক কষ্টে তারা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বুঝাতে সক্ষম হন যে এটা একটা অত্যন্ত দরকারি একটা জিনিস এবং এতে দেশের জন্য কোন ঝুকি নেই। সালমান সাহেব অনেক ক্ষেত্রে একজন বিতর্কিত ব্যক্তি হলেও ওনার ব্যবসায়ীক বুদ্ধি (অথবা কুবুদ্ধিও বলা যেতে পারে) যে অনেক ছিল এবং আছে এটা আমাদের স্বীকার করতে হবে। নিজের বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে তিনি বড় বড় ব্যবসায়ীক সমস্যার সমাধান করেছেন। তাই ব্যবসায় করতে গেলে শুধু টাকা যথেষ্ট না। ব্যবসায় সফলতার জন্য তীক্ষ্ণ বুদ্ধিরও প্রয়োজন পড়ে। বুদ্ধি দিয়ে অনেক বড় সমস্যার সমাধান করা যায় যা অনেক সময় টাকা দিয়ে করা যায় না।
বুদ্ধি (কুবুদ্ধিও বলা যেতে পারে) খাটিয়ে শূন্য থেকে অনেক কিছু অর্জনের আরেকটা গল্পটা হয়তো অনেকেই জানেন। তারপরও সেই গল্পটাও নীচে আবার দিচ্ছি। এখানেও নৈতিকতা হয়তো প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তারপরও সাধারণভাবে বুদ্ধি দিয়ে যে চমক দেখানো যায় সেটা বোঝাতেই গল্পটা বলছি।
পিতা আর পুত্রের মধ্যে কথোপকথন চলছে;
পিতাঃ বাবা, আমি তোমাকে আমার পছন্দ অনুযায়ী একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে চাই।
পুত্রঃ না বাবা, এটা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি আমার নিজের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করতে চাই।
পিতাঃ মেয়েটা তো বিল গেটসের মেয়ে।
পুত্রঃ তাই নাকি। তাহলে আমি রাজি।
এরপর পিতা বিল গেটসের কাছে গেলেন। সেখানে গিয়ে বিল গেটসকে বলছেন;
পিতাঃ আমার ছেলের সাথে আপনার মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।
বিল গেটসঃ দুঃখিত। এটা তো সম্ভব না।
পিতাঃ আমার ছেলে তো বিশ্ব ব্যাংকের সিইও।
বিল গেটসঃ তাই নাকি। তাহলে তো কোন সমস্যা নাই। ধরে নেন বিয়ে পাক্কা।
এরপর পিতা গেলেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের কাছে। সেখানে গিয়ে বললেন;
পিতাঃ আমার ছেলেকে আপনার ব্যাংকের সিইও বানানোর অনুরোধ করছি।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্টঃ না। এটা তো সম্ভব না।
পিতাঃ আমার ছেলে কিন্তু বিল গেটসের জামাতা।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্টঃ তাই নাকি। তাহলে ধরে নেন আপনার ছেলে সিইও হয়ে গেছে।
উপরের গল্প দুটি কতটা নৈতিক বা অনৈতিক সেই দিকে না গিয়ে আমার বক্তব্য হল অনেক ক্ষেত্রে বুদ্ধি আর কৌশলের সাহায্যে অনেক অসাধ্যকে সাধন করা যায় যা টাকা দিয়েও করা যায় না। কথায় বলে 'ইচ্ছা থাকিলে উপায় হয়'। তবে নৈতিকতা মেনে আমাদের বুদ্ধি প্রয়োগ করতে হবে। অন্যের ক্ষতি করে কিছু করা যাবে না। অনৈতিক পন্থার ফলাফল শেষ পর্যন্ত ভালো হয় না।
পোস্টের শিরোনামে প্রথমে 'বুদ্ধি' শব্দটা ছিল এখন সেটা পরিবর্তন করে 'কুবুদ্ধি' করে দিলাম। কারণ এই ক্ষেত্রে কুবুদ্ধি শব্দটাই মনে হয় সঠিক হবে।
ছবিঃ quotermaster.org
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০২২ সকাল ৯:২৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




