somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামের প্রচার ও প্রসারে বঙ্গবন্ধুর অবদান

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভূমিকা: হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমান একটি নাম। একটি ইতিহাস। তিনি বঙ্গবন্ধু। তিনি জাতির জনক। তাঁর এসব উপাধি বাঙালির হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার প্রতীক।
বাঙালির জাতীয়তাবাদে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর বঙ্গবন্ধু ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের স্বাধীনতাসংগ্রামে নেতৃত্বের মাধ্যমে মজলুম জনতার মহামিছিলে নেতৃত্ব দিয়ে মূলত ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা ‘তোমরা অত্যাচারিতের (মজলুমের) পক্ষ নিয়ে তাদের অভিশাপ থেকে বাঁচো’ এর বাস্তব রূপ দান করেছিলেন। জালিমের প্রতিরোধ, জুলুমের অবসান প্রভৃতি ইসলামের মৌল শিক্ষা জীবনব্যাপী অনুশীলনের মাধ্যমে ইসলামী মূল্যবোধকে সারা জীবন লালন করে এর প্রচার ও প্রসারে অনবদ্য অবদান রেখেছেন।

ইসলামি মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর পদক্ষেপ: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য গৃহীত পদক্ষেপগুলো ব্যাপক পরিসরে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা প্রয়োজন। তিনি তাঁর সংক্ষিপ্ত ক্ষমতার সময়ে ইসলামের সম্প্রসারণ এবং ইসলামী মূল্যবোধ প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় যে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন, তা সমকালীন মুসলিম বিশ্বে বিরল। তিনি ইসলামের সঠিক রূপ সমাজ ও জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেন।
এ ক্ষেত্রে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়গুলোর ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন। যেমন:-

১. বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা: বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় আসার পর একদিকে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠনে হাত দিলেন, অন্য দিকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ধর্মব্যবসায়ীদের ধর্ম ব্যবসা চিরতরে বন্ধের লক্ষ্যে শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রচার ও প্রসারের নিমিত্তে হাক্কানী আলিমদের সম্পৃক্ত করার জন্য এক অর্ডিন্যান্স-বলে “ইসলামিক ফাউন্ডেশন” গঠন করেন, যার কর্মকান্ড আজ সমগ্র বাংলাদেশ বিস্তৃত। শুধু তাই নয় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইসলামিক প্রকাশনা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পাচ্ছে। ১৯৭৫ সালের ২৮শে মার্চ বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক অধ্যাদেশ বলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন এ্যাক্ট-এ এ প্রতিষ্ঠানের যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা হয় তা হচ্ছে:

(ক) মসজিদ ও ইসলামি কেন্দ্র, একাডেমি ও ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা ও রক্ষানাবেক্ষন করা।

(খ)মসজিদ ও ইসলামি কেন্দ্র, একাডেমি ও ইনস্টিটিউট এবং সমাজ সেবায় নিবেদিত সংগঠন সমূহকে আর্থিক সহায়তা দেয়া।

(গ) সংস্কৃতি, চিন্তা, বিজ্ঞান ও সভ্যতার ক্ষেত্রে ইসলামের অবদানের উপর গবেষণা পরিচালনা।

(ঘ) ইসলামের মৌলিক আদর্শ বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ, পরমত সহিষ্ণুতা, ন্যায় বিচার প্রভৃতি প্রচার করা ও প্রচারের কাজে সহায়তা করা এবং সাংস্কৃতিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে ইসলামি মূল্যবোধ ও নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ এর সুপারিশ করা।

(ঙ) ইসলামি মূল্যবোধ ও নীতিমালা জনপ্রিয় করে তোলার লক্ষ্যে ইসলামের ইতিহাস, দর্শন, সংস্কৃতি, আয় ও বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কিত গবেষণার আয়োজন করা ও তা প্রসার ঘটানো এবং জনপ্রিয় ইসলামি সাহিত্য সুলভে প্রকাশ করা এবং সেগুলির সুলভ প্রকাশনা ও বিলি-বন্ঠনকে উৎসাহিত করা।

(চ) ইসলাম ও ইসলামের বিষয় সম্পর্কিত বই-পুস্তক, সাময়িকী ও প্রচার পুস্তিকা অনুবাদ করা, সংকলন করা ও প্রকাশ করা।

(ছ) ইসলামের ইতিহাস ইতিহাস, দর্শন, সংস্কৃতি, আয় ও বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কিত বিষয়াদির উপর সম্মেলন, বক্তৃতামালা, বিতর্ক ও সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা।

(জ) ইসলাম বিষয়ক গবেষণার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য পুরষ্কার ও পদক প্রবর্তন করা।

(ঝ) ইসলাম সম্পর্কিত প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়া, প্রকল্প গ্রহন করা কিংবা তাতে সহায়তা করা।

(ঞ) ইসলাম বিষয়ক গবেষণার জন্য বৃত্তি প্রদান করা।

(ট) বায়তুল মুকার্রাম মসজিদের ব্যবস্থাপনা ও উন্নতি সাধন করা এবং

(ঠ) উপরোক্ত কার্যাবলির যেকোনোটির ক্ষেত্রে আনুষঙ্গিক বা আপতিত সকল কাজ সম্পাদন করা।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন এখন সরকারি অর্থে পরিচালিত মুসলিম ‍বিশ্বের অন্যতম একটি বৃহৎ সংস্থা হিসেবে নন্দিত। ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে ইসলাম প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু যে অসামান্য অবদান রেখেছেন এজন্য জাতি তাঁর কছে চির কৃতজ্ঞ।

২. বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠন (আগে পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসিত কোনো মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ছিল না): মাদ্রাসা শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্যে শেখ মুজিব মাদ্রাসা বোর্ড গঠন করে মাদ্রাসা শিক্ষকদের চাকরির নিশ্চয়তাসহ যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করেন। ইসলামি আকিদা ভিত্তিক জীবন গঠন ও ইসলামি শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড পুনর্গঠন করেন। পূর্বে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড স্বায়ত্ত্বশাসিত ছিল না। বঙ্গবন্ধুই প্রথম মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডকে স্বায়ত্ত্বশাসন প্রদার করে এর নাম রাখেন “মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড”।

৩. বেতার ও টিভিতে কুরআন তিলাওয়াত প্রচার: বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই বাংলাদেশে সর্বপ্রথম বেতার ও টিভিতে অত্যন্ত গুরুত্ব ও মর্যাদার সাথে কুরআন তিলাওয়াত ও তাফসীর প্রচার শুরু হয়। ফলে, বেতার ও টিভির অনুষ্ঠান সকালের শুভ সুচনা ও দিবসের কর্মসূচী কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে সমাপ্ত করা হয়। বঙ্গবন্ধু প্রদর্শিত এ ব্যবস্থাই বাংলাদেশে চালু রয়েছে।

৪. কাকরাইল মসজিদের জন্য অতিরিক্ত জায়গা বরাদ্দ: বর্তমানে কাকরাইলের যে মসজিদে কেন্দ্রীয়ভাবে তাবলীগ জামাতের মারকাজ অনুষ্ঠিত হয় এ মসজিদটি ছিল খুবই অপ্রশস্ত। বঙ্গবন্ধু কাকরাইলের তাবলীগ জামাতের মারকাজ মসজিদের জন্য স্থান বরাদ্দ করেন এবং মসজিদটি তাঁরই নির্দেশে সম্প্রসারিত হয়।তাবলীগ জামাতের দাওয়াতি কার্যক্রমকে ব্যাপকভিত্তিক করার জন্যই বঙ্গবন্ধু কাকরাইলের মসজিদ ও তৎসংলগ্ন জায়গা তাবলীগি মারকাসকে প্রদান করেন এবং এর মাধ্যমে ইসলামের প্রচার ও প্রসারের পৃষ্ঠপোষকতা করেন।

৫. টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার জন্য স্থান নির্ধারণ: তাবলীগ জামাত একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। ইসলামের পথে দাওয়াত দেয়াই হচ্ছে এ সংগঠনের একমাত্র কাজ। এই সংগঠনটি যাতে বাংলাদেশে অবাধে ইসলামের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে এ উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু তাবলীগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমার জন্য টঙ্গীতে সুবিশাল জায়গা বরাদ্দ করেন। প্রতি বছর বিভিন্ন দেশ থেকে দাওয়াতি কাজে সংশ্লিষ্ট হাজার হাজার তাবলীগি ভাই এ জামাতে সমবেত হন। বঙ্গবন্ধু টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমার এই স্থানটি বরাদ্দ করেছিলেন বলেই ইজতেমায় আগত লক্ষ লক্ষ মুসলিম এখানে সমবেত হয়ে কর্ম পরিকল্পনা গ্রহন করে দাওয়াতি কাজ পরিচালনার জন্য বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

৬. হজযাত্রীদের জন্য ভ্রমণ কর রহিতকরণ: পাকিস্তান আমলে হজযাত্রীদের জন্য কোনো সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা ছিল না। বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে প্রথম হজযাত্রীদের জন্য সরকারি তহবিল থেকে অনুদানের ব্যবস্থা করেন এবং তিনি হজযাত্রীদের ভ্রমন কর রহিত করেন।

৭. বাংলাদেশ সিরাত মজলিস প্রতিষ্ঠা ও ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদ্যাপন: স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সর্বপ্রথম হাক্কানী আলেম-ওলামাদের সংগঠিত করে পবিত্র ইসলামের সঠিক রূপ জনগনের সামনে তুলে ধরার উদ্যোগ গ্রহন করেন। তাঁর দিকনির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকায় সিরাত মজলিস নামে একটি প্রতিষ্ঠান জঠন করা হয়। সিরাত মজলিস ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে রবিউল আউয়াল মাসে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম বৃহত্তর আঙ্গিকে ঈদে-মিলাদুন্নবী (স) মাহফিল উদযাপনের কর্মসূচী গ্রহন করেন। সরকার প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধু বায়তুল মুকার্রাম মসজিদ চত্ত্বরে মাহফিলের শুভ উদ্বোধন করেন। একজন সরকার প্রধান হিসেবে জাতীয়ভাবে ঈদে-মিলাদুন্নবী (স) মাহফিলের উদ্বোধন উপমহাদেশের ইতিহাসে প্রথম দৃষ্টান্ত। এরই ধারাবাহিকতায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনে প্রতিবছর জাতীয়ভাবে ঈদে-মিলাদুন্নবী (স) মাহফিল উদযাপন হয়ে আসছে।

৮. ঈদে-মিলাদুন্নবী (স), শব-ই-কদর, শব-ই-বরাত উপলক্ষ্যে সরকারি ছুটি ঘোষনা: ইসলামের ধর্মীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুই প্রথম বাংলাদেশে ঈদে-মিলাদুন্নবী (স), শব-ই-কদর, শব-ই-বরাত উপলক্ষ্যে সরকারি ছুটি ঘোষনা করেন। উল্লিখিত দিনসমূহের পবিত্রতা রক্ষার জন্য সিনেমা হলে চলচ্চিত্র প্রদর্শন বন্ধ রাখার নির্দেশনা প্রদান করেন।

৯. সুশীল সমাজ গঠনে মদ ও জুয়া নিষিদ্ধকরণ এবং শাস্তির বিধান: ইসলামে মদ, জুয়া, হাউজি ও অসামাজিক কার্যকলাপ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। ইসলামের নামে পাকিস্তান সৃষ্টি হলেও পাকিস্তানের ২৪ বছরের শাসনামলে অবাধে মদ, জুয়া, হাউজি ও অসামাজিক কার্যকলাপ চলত। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুই প্রথম আইন করে মদ, জুয়া, হাউজি ও অসামাজিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করে শাস্তির বিধান জারি করেন।

১০. রাশিয়াতে প্রথম তাবলীগ জামাত প্রেরণের ব্যবস্থা: রাশিয়া তথা সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল একটি কমিউনিস্ট দেশ। সেদেশে বিদেশ থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য কেউ অনুমতি পেত না। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে রাশিয়া সহযোগিতা করায় বঙ্গবন্ধুর সাথে সেদেশের নেতৃবৃন্দের একটি সুদৃঢ় বন্ধুত্বের ভিত্তি রচিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে স্বাধীনতার পর প্রথম রাশিয়া তথা সোভিয়েত ইউনিয়নে তাবলীগ জামাত প্রেরণের ব্যবস্থা করেন। বর্তমানে পূর্বের সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশে তাবলীগ জামাতের যেসব দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে তার ভিত্তি রচনা করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

১১. ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতা নিষিদ্ধকরণ: পাকিস্তানি আমলে ঢাকার বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নাম ছিল রেসকোর্স ময়দান। সেখানে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতার নামে চলত জুয়া, হাউজি ও বাজিধরা প্রতিযোগীতা। এই প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহন করে বাজিতে হেরে অনেক মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে যেত। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে রেসকোর্স ময়দানে অনুষ্ঠিত ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতা বন্ধ করেন এবং রেসকোর্স ময়দানের নাম পরিবর্তন করে রাখেন “সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।” আমাদের প্রিয় নবী (স) বৃক্ষরোপণের প্রতি জোর তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “যদি মনে কর আগামীকাল কিয়ামত হবে তবুও আজ একটি বৃক্ষের চারা রোপন কর।” মহানবী (স) এর এই শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে রেসকোর্স ময়দানের অনৈসলামিক কর্মকান্ডের স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলার উদ্দেশ্যে তিনি সেখানে বৃক্ষরোপণ করে সেই স্থানের নাম রাখেন “সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।” ঢাকা মহানগরীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বৃক্ষরাজি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবহন করে চলেছে।

কুরআনের আদেশ মেনে চলায় বঙ্গবন্ধু: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর জীবনে পবিত্র কুরআনের আদেশ মেনে চলতেন। তিনি কুরআনের আদেশ মানার লক্ষ্যে উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা প্রদানকারী রাশিয়া ত্ৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে আলেমদের একটি মিশন পাঠান। এসময় আলেমদের সাথে আলোচনাকালে তিনি পবিত্র কুরআনের আয়াত উল্লেখ করেন, “তোমরা কৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই তোমাদের অধিক নিয়ামত দিব, আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই শাস্তি হবে কঠোর।” এবং তিনি বলেন; “সোভিয়েত রাশিয়া আমাদের মুক্তিযদ্ধে সমর্থন দিয়ে যেভাবে সাহায্য সহযোগীতা করেছে আমাদের উচিত তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। বঙ্গবন্ধুর কৃতজ্ঞতা বার্তা এবং কুরআনের আয়াতটি শুভেচ্ছা বার্তা হিসেবে বাংলাদেশের মিশনের সদস্যরা সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃবৃন্দের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন। যখন মধ্য এশিয়ার এদারায়ে দ্বীনিয়া ও কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট বাবা জিয়াউদ্দিন খানভ এর কাছে কুরআনের আয়াতটি উদ্ধৃত করে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছিল তখন আবেগে তার চোখ ছলছল করে উঠেছিল।

ইসলামি চেতনায় যে পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়েছিল, পূর্ব পাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশের মানুষের কাছে তৎকালীন পাক শাসক গোষ্ঠীর কার্যকলাপের ফলে তার আবেদন সম্পূর্ণ রূপে বিলীন হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলার দামাল ছেলেরা পাক হানাদার বাহিনীর বিরূদ্ধে সশন্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। অপরদিকে পাক হানাদার বাহিনীর এ দেশীয় দোসরদের সমন্বয়ে ঘাতক গোষ্ঠী গঠিত হয়।

বঙ্গবন্ধুর ঈমানি দৃঢ়তা: ইসলামের নামে অত্যাচার ও জুলুমে জর্জরিত হয়ে জাতি সেদিন আর্তনাদ করে উঠেছিল। আর সেই আর্তনাদে হয়তোবা আল্লাহর আরশও কেঁপে উঠেছিল। বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষকে এই বলে ডাক দিয়েছিলেন যে, “এবাবের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” এবং তিনি এ-ও বলেছিলেন “বাংলার মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।” তাঁর শেষোক্ত উক্তি থেকে বুঝা যায়, তাঁর ঈমানি শক্তি কত মজবুত ছিল।

১৬ই ডিসেম্বর ’৭১-এ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে এলেন, তার পরপরই তিনি মিত্রশক্তিকে এক নির্দশে ‍নিজ দেশে ফেরৎ পাঠিয়ে দিলেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, বঙ্গবন্ধু ছিলেন আল্লাহর শক্তিতে বলীয়ান। কারন উল্লিখিত কাজটি খুবই সহজেই যে হয়ে গেছে এরূপ ভাবা ঠিক নয়।

সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল এই, বঙ্গবন্ধু বাংলা ও বাংলার মুসলমান জনগোষ্ঠীকে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সাথে পরিচিতি করার লক্ষ্যে ওআইসি সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে প্রতিদ্বন্দী ’৭১-এর পরাজিত সামরিক জান্তার প্রতিনিধি ভূট্টোর দেশে যেতেও দ্বিধা বোধ করেন নাই। তিনি সমস্ত বাধা উপেক্ষা করে এই মুসলিম-অধ্যুষিত রাষ্ট্রের কর্ণধার হিসেবে উক্ত সম্মেলনে যোগদানের মধ্য দিয়েই বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর মাঝে বাংলাদেশের স্হান করে নেন। এ কাজগুলো তিনি কাউকে খুশি ‍কিংবা ব্যথিত করার জন্য করেননি। তাঁর ঈমানি দায়িত্ব পালনার্থই তিনি তা করেছেন।

মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলির সাথে সম্পর্ক রক্ষায় বঙ্গবন্ধু: বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক ফোরামে আরব বিশ্ব, বিশেষ করে প্যালেস্টাইনি ভাইদের প্রতি বলিষ্ঠ সমর্থন অব্যাহত রাখেন। ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় তিনি একটি মেডিকেল মিশন, চা প্রভৃতি সাহায্য দ্রব্য পাঠান। তাতে করে আরব বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই ঘনিষ্ঠতা ছিল সমতার ভিত্তিতে। তাদের নিকট আমাদের পরিচয় ছিল একটি মর্যাদাবান ও সংগ্রামী জাতি হিসেবে। প্রকৃতপক্ষে, আরব দেশগুলোর চাপেই ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। এটা ছিল আরব বিশ্বে বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতির এক বিরাট সফলতা। ১৯৭৪ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত ইসলামি সম্মেলন সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনের প্রাক্কালে ওআইসির একটি শুভেচ্ছা মিশন বঙ্গবন্ধুকে সম্মেলনে নিয়ে যাবার জন্য ঢাকায় আসেন। আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট হুয়ারী বুমেদীন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যাবার জন্য নিজের ব্যক্তিগত বিমান পাঠান। লাহোরে তাঁকে বিভিন্ন আরব রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানান। এই ঐতিহাসিক শীর্ষ সম্মেলনেও বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে প্যালেস্টাইনি আরব ভাইদের প্রতি অকুন্ঠ সমর্থন জানান। লাহোরে অনুষ্ঠিত ইসলামিক সম্মেলন সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ সারা আরব বিশ্বে এক অভূতপূর্ব আলোড়নের সৃষ্টি করে। কারন, তাঁর এই ভাষণটি গতানুগতিক ছিল না, সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী ছিল। তিনি তাঁর ভাষণে প্যালেস্টাইনি ভাইদের অধিকার আদায়ের প্রতি যেমন জোর দিয়েছেন তেমনি মহানবীর আদর্শ বা সত্যিকার ইসলামি মূল্যবোধকে বিশ্বের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের কল্যাণে ব্যবহারের প্রস্তাব করেছেন। বিশ্বের সকল নিপিড়িত জনগনের সঙ্গে একাত্বতা প্রকাশ করেছেন। তাতে করে তিনি ওআইসিকে পরাশক্তির প্রভাবমুক্ত হয়ে সত্যিকার মানব কল্যানে নিবেদিত হওয়ার আহবান জানিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধুর পরমত সহিষ্ণুতা: ১৯৭২ সালে গনপরিষদে রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণী এক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, “ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। তাতে বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্মকর্ম করার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। ধর্ম অতি পবিত্র জিনিস। পবিত্র ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না।” আমাদের জাতির জনকের এই সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বাংলাদেশের ধর্ম নিরপেক্ষতাকে অন্যতম মূলনীতি হিসেবে গ্রহনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পরিষ্কার বলা হয়েছে। ধর্ম নিরেপক্ষতা বা পরমত সহিষ্ণুতা ইসলাম বিরোধী নয়। এটা ইসলামেরই মহান শিক্ষা। ইসলামই সর্বপ্রথম মানবজাতিকে পরমতের প্রতি সহিষ্ণুতা ও শ্রদ্ধাবোধের শিক্ষা দিয়েছে। মহানবী (স), খোলাফায়ে রাশিদিনের জীবন আদর্শেও তার অনেক প্রমান রয়েছে। মদীনায় হিজরতের পর মহানবী (স) ইহুদী-মুশরিকদের সাথে যে সম্মিলিত সমাজ বা রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন, তাতেও ধর্ম নিরপেক্ষতা বা পরমত সহিষ্ণুতাকে মূলনীতি হিসেবে গ্রহন করেছিলেন। তাদের সাথে মুসলমানদের একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। ইতিহাসে এই চুক্তি “মদীনার সনদ” নামে খ্যাত।

উপসংহার: যেদিন আমরা অপবাদ ও বিভ্রান্তির বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে ইসলামের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ঋদ্ধ বঙ্গবন্ধুর আজন্ম লালিত সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারব, সেইদিনই সম্ভব হবে তাঁর অসামান্য ঋণের কিঞ্চিৎ পরিশোধ করা।

উপসংহারে বলা যায় বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে ইসলামের প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর এসব অবদানের কথা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ধর্ম ব্যবসায়ীরা ধর্মর নামে মুসলমানদের ধোঁকা দেয়ার যত কৌশলই অবলম্বন করুক না কেন, এদেশের প্রত্যেকটি সচেতন মুসলিমের মনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঈমানি জ্যোতিতে উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের মত চিরদিন ভাস্বর হয়ে থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×