“শোন! আমারে ধইরা কোরবনী কইরা দিতাছে, তুই বৃহস্পতিবার রাতে আর শুক্রবারে দুপুরে কিউ প্যালেসে চলে আসিস”। দীপুর এই কথা শোনার পরও আমার বুঝতে অনেক দেরি হয় যে, দীপু কিভাবে কোরবানী হচ্ছে। যখন বুঝলাম তখন আনন্দের চেয়ে মনে হয় Xcitement ই বেশি ছিল। আমি দীপুর জায়গায় থাকলে পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দিতাম, সেটা ভেবে সেদিন মনে হয় দীপুর চেয়ে আমিই বেশি অস্থিরতায় ভুগলাম।
বৃহস্পতিবার রাত ৮:৪০, স্থানঃ কিউ প্যালেস। নোবেল আর আমি গিয়ে দেখলাম ডাঃ রিয়াজ ততক্ষনে জামাই বাবাজির treatment শুরু করে দিয়েছেন। আর দীপু কোন xcitement ছাড়াই সবাইকে welcome করছে (আল্লাহই জানে কোথায় বিয়ের প্রস্তুতির Coaching করেছে। বাতাসে একটা খবর যদিও উড়ে যে নানুয়া দিঘীর পূর্বপাড়ে নাকি এরকম একটা ভালো coaching centre আছে, তবে আমি এখনও sure না)। সালাম......... সালাম......... পায়ে ধরে সালাম......... handshake……….. hugging……… পায়ে ধরে সালাম.......... অদ্ভুত সফল Coaching. কিছুক্ষনের মধ্যে কনের লোকজন বরের লোকজন সবাই চলে এলো। চলে এলো আমাদের ইঞ্জিনিয়ার তানভীর সাহেবও। তার রাডারের কারনেই আমরা দেখতে পারলাম কোন প্লেন কোন দিকে বাঁক খাচ্ছে। তার কাছে আরো জানতে পারলাম প্লেন কিভাবে Landing করলে সুবিধা হয়। অবশ্য এই Formula accept করার জন্য ডাঃ অপুই (রিয়াসাত) সবচেয়ে অগ্রগামী ছিল। খাওয়া-দাওয়ার পর সবাই বিদায় নিল কিন্তু কেন জানি Izmm এর তরে আমি দীপুর ম্যাডিকেলের বন্ধুদের সাথে থেকে গেলাম। পরিচয় হলো ডাঃ হাসিব, ডাঃ কন্দন, ডাঃ কুন্ডু, ডাঃ অপু আর ছোটনের নানানমুখী প্রতিভার সাথে। তাদের মধ্যে কেউ Bath tab theory তে বিশ্বাসী, কেউ বা আবার আধুনিক কাপড়ের(!!) বিজ্ঞাপনে পারদর্শী ...... কেউ বা আবার close ছবি তোলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন।
রাত ১:৩০ টায় গোপন সূত্রে খবর পাওয়া গেল দীপুকে নাকি গলায় দড়িসহ (মতান্তরে Tie)কনের বাড়িতে নাচানো হচ্ছে। শুরু হলো আমাদের Mission দীপু rescue। সেখানে গিয়ে যে পরিস্থিতি দেখলাম......... তা আমরা ছাড়া আর কেউ দেখে নাই তাতেই আমি খুশি, নয়তো ব্ল্যাকে টিকেট বিক্রি করেও লোকজন জায়গা দেওয়া যেত না। Rescue করতে গিয়ে ধরা পড়লো আমাদের মধ্যে কেউ কেউ double Agent। Brake dance, ঝাড়ু dance, ব্যালে dance, জগিং dance সবই দেখানো হলো। মহান dancer দুলাভাই তো নতুন উদ্যামে নাচার এবং নাচানোর জন্যে special American জুতাই পড়ে চলে আসলেন (কিন্তু বিরতির কারনে সুবিধা করতে পারলেন না)। তখনই আবিষ্কার হলো আমাদের দীপুর নাম আকিকা ছাড়াই “জয়” (হাসিনা পুত্রের নামানুসারে নাকি পরাজয়ের গ্লানিকে ঢেকে দেওয়ার জন্যে তা এখনও নিশ্চিত নই) হয়ে গেছে। যাই হোক কিঞ্চিৎ ভীত হইয়া সিদ্ধ ডিম চর্বন করিয়া দ্রুত ওখান হইতে প্রস্থান করি......... কে জানে সামনে দীপুর আর কি কি পরিবর্তন হয়।
তবে এখন আমি নিশ্চিত Coaching Centre টা আসলেই খুব ভালো...... কারন যে দীপু জগিং দিয়েই নাচের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলো, সে দীপু হাতের স্পর্শে কি দারুন duet নাচই না দেখালো। মনে মনে Michael Jackson কে স্মরণ করছিলাম...... ব্যাটা মরেই বেঁচে গেল।
কুমিল্লা ক্লাব এ এসে শুরু হলো ব্যাচেলর party (দীপু আমাদের সাথে থাকতে আসায় আমি কৃতজ্ঞ) সেখানে tot………. tot………. tot……… tot………. (party’র বর্ণনাটা কেন জানি show করছে না......... বুঝলাম না কিছু !!)
ভোর ৫:৩০ মিনিটে নোবেলের প্রচন্ড শীতের কারনে আমার প্রচন্ড গরম লেগে গেল... ঘুম পুরা মাটি...... ডাঃ হাসিবকে সঙ্গে নিয়ে বের হলাম আমার প্রিয় শহর কুমিল্লা দেখাতে। দীপিকা সিনেমা হলের বিল্ডিং আর পূবালী ব্যাংকের বিল্ডিং দেখেই ডাঃ সাহেব মুগ্ধ...... চলে গেলেন তাদের আলিঙ্গন করে ছবি তুলতে। কুমিল্লার মুল আকর্ষন ধর্মসাগর দেখে তো ডাঃ সাহেবের Expression দেখে আমি সন্দিহান হয়ে গেলাম...... ডাঃ সাহেব কি আদৌ আর চিটাগাং ফিরবেন নাকি ধর্মসাগরের নৌকাতেই বাসা বানিয়ে ফেলবেন। ১০০১ টা ছবি তোলার পরই ডাঃ সাহেব একটু শান্ত হলেন।
শুক্রবার (২৩শে এপ্রিল) কোরবানীর দিন, দুপুর ৩টা আবারও কিউ প্যালেস। দীপুকে gate এ আটকে দেয়া হলো। এবারো দীপুকে ভেতরে ঢুকানোর প্রানান্তকর প্রচেষ্টা। মহান দুলাভাইয়ের দ্বিমুখী কার্যকলাপ, দীপুর ‘সুন্দরী’ শ্যালিকাদের মধুর Negotiation আর Dj LoLY’র বাঁশি সব কিছুই শেষ পর্যন্ত আমাদের ঘামিয়ে দিল। শেষ পর্যন্ত দীপুকে নিয়ে যদিও ভেতরে গেলাম কিন্তু দীপুর দুই পকেট থেকে দুটা মোবাইল ততক্ষনে অন্য কোন পকেটে হস্তান্তর হয়ে গেছে। (যা পরে রাত ১২ ঘটিকায় ফেরত পাওয়া গিয়াছে)
ভেতরে ঢোকার পর শুরু হলো নাঈমের প্রতিভার একক প্রদর্শনী। কখনো দীপুকে বিয়ে পড়ানোর কাজ করছে (যার Audio সংস্করণ ডাঃ গাফ্ফার ও নোবেলের ব্যক্তিগত archive এ সংরক্ষিত আছে), কখনো আম পাড়ার ১০১টি কৌশল শেখাচ্ছে, কখনো behavioral treatment (with Dj LoLY) এর উপর class নিচ্ছে। আবার কখনো বা Dr. গাফ্ফারকে তার ‘Running প্রেমই সর্বশেষ ও সর্বোৎকৃষ্ট প্রেম’ বিষয়ক গবেষনায় সাহায্য করছে।
অবশেষে Dj LoLY’র ললিপপ খাওয়া, দীপুর সুন্দরী শ্যালিকাদের সাথে photo session আর বিয়ের বাকী আনুষ্ঠানিকতা শেষে দীপুকে মহান আল্লাহ’র হেফাজতে ছেড়ে আমরা একে একে বিদায় নিলাম।
চলে গেলাম আবারও ধর্মসাগর...... চাঁদের আলোয় নৌকা ভ্রমন...... হাহাহহা ......... পরিবেশের কারনেই কিনা সবাই Coke খেয়েই মাতাল হয়ে গেল। বাবা সায়েম ফকির যা গাইলেন......... আহহা, বাবার প্রতিটা শব্দ...... সুরের আবেগ...... শুধু কম্পিতই করলো না প্রকম্পিত করলো। সায়েম যখন চাঁদের ওই অদ্ভুত আলোতে গাইছিলো “যেমনি নাচাও...... তেমনি নাচে...... যেমনি নাচাও...... তেমনি নাচে...... আমার আল্লাহ......... এই যে দুনিয়া কিসেরও লাগিয়া...... কত যত্নে গড়াইয়াছেন সাঁই......” তখন আমরা আর আমাদের মধ্যে ছিলাম না...... চলে গেলাম ভাবের এক অন্য দুনিয়ায়......... কতক্ষন নৌকাতে ছিলাম জানি না কিন্তু সে boat journey’র প্রভাব এখনও কাজ করছে.........। এখনো কানে সায়েমের সে দরদী কন্ঠ বাজছে ...... ‘যেমনি নাচাও......... তেমনি নাচে......... আমার আল্লাহ’।