১০ই আগষ্ট ২০১৫, গত কালকের ঘটনা।
ক্লাস শেষ করে দুপুরের দিকে আমরা তিন বন্ধু মিলে বাসায় ফিরছিলাম।
তখন, কয়েকজন রিক্সাওয়ালা আমাদেরকে ডাকলো।
দূর থেকেই দেখলাম, তাদের সাথে দু’জন ভিনদেশি রয়েছে। একজন পুরুষ এবং অপরজন মহিলা।
আমরা কাছে যেতেই এক রিক্সাওয়ালা বললো, ‘মামা দেখেন তো উনারা কই যাবে’।
আমার বন্ধু সৌরভ তাদেরকে জিজ্ঞাসা করতেই মহিলাটি বললেন যে তাঁরা কিছু কেনাকাটা করবেন, কিন্তু কোন বড় শপিংমল থেকে নয়, সাধারণ একটা মার্কেট থেকে।
বন্ধু তাদেরকে নিউ মার্কেটে পাঠিয়ে দিতে চাইতেই আমি বললাম, ‘ না ওটা অনেক দূরে উত্তরা থেকে, তার চেয়ে রাজলক্ষীতে যাক’।
ঠিক হলো তাদেরকে একটা রিক্সায় করে পাঠিয়ে দেবো।
আবার আমি ভাবলাম, আমার যেহেতু কাজ নেই তাহলে আমিও যাই সাথে তাদেরকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসতে।
ঠিক হলো আমিও যাবো সাথে।
আমাদেরকে রিক্সায় উঠিয়ে দিয়ে চলে গেলো আমার দুই বন্ধু তারানা এবং সৌরভ।
তিনজনেই একটি রিক্সায় উঠে পরলাম সোনারগাঁও জনপদ থেকে রাজলক্ষীর উদ্দেশ্যে।
রাস্তায় যেতে যেতে অনেক কথা হলো মহিলাটির সঙ্গে।
তার নাম জেল (পুরো নাম জানি না), তিনি একজন ব্যারিস্টার এবং থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতে।
তার কিছু কথা আমার খুব ভালো লেগেছিলো আবার কিছু কথা খুবই খারাপ।
তিনি যেতে যেতে যখন বললেন, আমার দেশের মতো গরীব দেশ আর কোথাও তিনি দেখেননি তখন আমার খুবই খারাপ লেগেছিলো। আবার যখন বললেন, আমার দেশের মানুষের মতো ভালো মনের মানুষ তিনি আর কোথাও দেখেননি তখন গর্বে আমার বুক ফুলে উঠেছিল।
একসময় তিনি কাঁঠালের বর্ণনা দিয়ে জানতে চাইলেন, এটা জ্যাকফ্রুট কিনা, আমি বললাম হ্যাঁ।
তাকে বাংলায় ‘কাঁঠাল’ বলতে শেখাতে গিয়ে আমি যখন বারবার কাঁঠাল বলছিলাম তিনি তখন বলছিলেন ‘থাথাল’। তবে, কয়েকবার চেষ্টার পর অবশ্য ‘কাথাল’ বলতে পেরেছিলেন।আবার আমার নামের উচ্চারণের ক্ষেত্রে তিনি শাদী না বলে শ্যাডি বলতেন।
তিনি আমাকে একবার বলে বসলেন, ‘ তোমার ইংরেজি তো অনেক ভালো, কোথা থেকে শিখলে এমন বলা?’
আমি এই কথার আগে ভালো ভাবেই তাল মিলিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু এটা বলার পর আর কিছু খুঁজে পাচ্ছিলাম না বলার মতো।
শুধু বললাম, ‘ আমার তো মনেহয় আমি ইংরেজি ভালো বলতে পারি না।‘
তিনি বললেন, ‘ না তোমার ইংরেজি অনেক ভালো’।
যাই হোক, তার কোন কথার উত্তরে যদি ইয়েস বলতে হতো তাহলে কেমন করে জানি মুখ দিয়ে ‘হ্যাঁ’ অথবা নাক দিয়ে ‘হুঁম’ বেরিয়ে যেত। তারপরে অবশ্য ঠিক করে নিতাম।
রাজলক্ষীতে পৌঁছে দেখতে পেলাম ফুটপাথের দোকানগুলো আর আগের মতো নাই, বেশিরভাগই উঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
তারপরেও তাদের সাথে থেকে কিছু জিনিস কিনে দিলাম, আবার কিছু জিনিসের দাম তাদের কাছে বেশি মনে হওয়ায় কিনলেন না।
কেনাকাটা শেষ হলে, তাদেরকে তাদের ঠিকানা অনুযায়ি পৌঁছে দিলাম।
উপরের পুরোটা জুড়ে কেবল মহিলাটির কথাই বলেছি, ছেলেটির কথা বলিনি।আসলে ছেলেটির সাথে তেমন কথা হয়নি আমার।শুধু তার নাম ড্যানিয়েল এবং সে ডক্টর জেলের সাথে এসেছে এইটুকুই শুধু জানানো হয়েছে আমাকে।
যাকগে, তাদের সাথে যাবার আমার আরেকটি কারণ ছিল। সেটা হলো, এর আগে আমি অনেকবার শুনেছি যে এখানকার রিক্সাওয়ালা, দোকানদার সবাই নাকি বিদেশি মানুষ দেখলেই ভাড়া বা দাম অনেক বেশি চেয়ে বসে।
আমার শোনা কথা গুলো কালকে ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
আমার দেশের মানুষের মন যে আসলে অনেক ভালো সেটা বুঝতে পেরেছি।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫১