somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

The Tong Diaries

১০ ই জুন, ২০১৪ ভোর ৫:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকাল ১০টা ঢাকা বিমানবন্দর রেলস্টেশন এর প্লাটফরমের দৃশ্য। এইমাত্র ভৈরব থেকে একটি ট্রেন এসে প্লাটফর্ম এর ভিতরে ঢুকেছে।প্লাটফরমের হকার আর কুলিদের হন্তদন্ত ছুটোছুটি শুরু হল।বাঙ্গালিদের চিরন্তন তাড়াহুড়োর পরিচিত দৃশ্য এর আরও একটি মঞ্চায়ন।কালো রঙের বিশাল আকৃতির ট্রাঙ্কটি নিয়ে ট্রেন এর দরজায় এসে দাঁড়ালো সোহান। বাইরে তাকিয়েই দেখতে পেল কুলির সাথে উচ্চস্বরে কথা বলছেন এক মধ্যবয়েসি স্যুট টাই পরা ভদ্রলোক।
“কতবার বলব আমার জিনিসে হাত দিবি না। এই তোদের মতো গোলামদের জ্বালায় শালা শান্তি পেলাম না। শুওরের বাচ্চা একদম হাত লাগাবি না”
কুলিটার বয়স খুব বেশি নয়। অল্পবয়স্ক একটি ছেলে। পরনে হাফপেন্ট আর উদাম গা। গালি শুনে বেশ হকচকিয়ে গেল বেচারা। চারদিকে তাকাতেই তার চোখ পরল সোহানের উপর।সোহান হাতে থাকা ব্যাগটা আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।ছেলেটি দৌড়ে এগিয়ে এলো।
“মামা, ধরন লাগব?”
সোহান ট্রাঙ্কটি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো
“কত দিব?”
“ত্রিশ টেহা দিয়েন”
“পনের টাকা দিবো, হবে?”।
“বিশ টেহা দিয়েন”
বলেই সোহানের জবাব এর অপেক্ষা না করেই ট্রাঙ্কটি মাথায় তুলে নিল ছেলেটি। বেশ দ্রুত হাটতে লাগল। দ্রুতপায়ে অনুসরণ করলো সোহান।এই শহরের মানুষের উপর তার কানাকড়ির বিশ্বাস নেই। খবরের কাগজ খুললেই চুরি পকেটমার আর বাটপারির খবর।

রেলস্টেশন থেকে বের হওয়ার গেট।গম্ভীর মুখে দাড়িয়ে আছেন টিকেট চেকার।এই ধরনের চাকরি যারা করে এদের মুখে ভাবগাম্ভীর্য থাকা আবশ্যেক। কুলি ছেলেটি বের হয়ে গেল গেট দিয়ে।যদিও হাতের ব্যাগের ওজন খুব একটা না তারপরও একটু পিছনে পরে গিয়েছিলো সোহান। আর এতেই ঘটলো বিপত্তি। টিকেট চেকার আটকে দিলো সোহান কে।
“টিকেট দেখান”
“টিকেট?”
“হ্যাঁ”
পকেটে হাত বাড়াল সোহান। ওয়ালেট টা বের করে আনতে আনতে গেটের অন্যপাশে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যেতে দেখল ছেলেটাকে। অসহায়ের মতো দেখা ছাড়া কিছুই করার নেই সোহানের। জানে তাকে টিকেট ছাড়া গেটের অন্যপাশে যেতে দিবে না।
ওয়ালেটের মধ্যে খুজে পেলো না তার টিকেট। টিকেট চেকার হাত বাড়িয়ে আছে। চোখেমুখে স্পষ্ট বিরক্তির ভাব। বিসমিল্লাহ বলে পকেটে আবারও হাত ঢুকালো সোহান। বের করে আনল টিকেট। চেকার এর হাতে দিয়েই ছুটে বের হয়ে আসলো গেট দিয়ে।
চারপাশে তাকিয়ে খুজলো ছেলেটাকে। কোথাও দেখতে পেলো না। হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলো ক্ষণিকের জন্য। ধির পায়ে হাটা শুরু করলো। বিশ্বাস করতে পারছেনা তার সাথে এইরকম একটি জিনিস হয়ে গেছে। মনের মধ্যে এখনো আশা খুজে পাবে ছেলেটাকে।
টিকেট কাউন্টার পার হয়ে রাস্তায় নেমে আসলো সোহান। ট্রাঙ্কের ভিতরে তার সব কাপড়চোপড় রয়েছে আর প্রথম মাসের খরচটাও তো এর মধ্যেই ছিল। ঠিক মতো চিন্তা করতে পারছেনা সোহান। সূর্যের আলোটা অসহ্য হয়ে চোখের উপর লাগছে। দিনের শুরুটা এর থেকে খারাপ হতে পারে না ভাবল সোহান।হাত দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে শুনতে পেলো
“অই মামা এইহানে আহেন”
শব্দের স্থলের দিকে তাকাল সোহান। ছেলেটি দাড়িয়ে আছে বেশ খানিকটা দূরে কয়েকটি অটোরিকশার পাশে। পাশেই মাটিতে ট্র্যাঙ্কটি রাখা। এগিয়ে গেল সোহান।
“কি মামা, এত দেরি কল্লেন কে। আমার টেহা দেন আমি জাইগা”
কি বলবে খুজে পেলনা সোহান।
পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে পঞ্চাশ টাকা বের করে দিল সোহান।
“পুরোটাই রেখে দে”
ছেলেটির মুখে হাসি ফুটে উঠল।
“গাড়িতে তুইলা দেওন লাগবো মামা?”
“না, লাগবে না”
“সেলামালিকুম মামা” বলে খুশি মনে হাটা শুরু করলো ছেলেটি। সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চিন্তা করল সোহান এই নগরীর সব মানুষ ঠিক একরকম নয়। এইখানে যেমন স্যুট টাই পরা ভদ্রলোকও অশুভন আচরণ করতে পারে তেমনি বারো তের বছরের এক ছেলেও রাখতে পারে সততার অদ্ভুত এক নিদর্শন। আশ্চর্য পৃথিবী আর তার থেকেও আশ্চর্য এই পৃথিবীর মানুষগুলো।
ট্র্যাঙ্কটা একপাশে রেখে সিগারেট নিতে গেল সোহান। বেন্সন সিগারটে সুখটান দিতে দিতে ভাবল সোহান দিনের শুরুটা খারাপ হয় নি।


বাস এর মধ্যে উঠেই মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেল আসলাম হুজুরের। তার আসল নাম আসলাম। মাদরাসায় অনেক দিন পরাতে পরাতে কখন যে নিজের নাম এর সাথে হুজুর শব্দটা লেগে গেল তা নিজেও জানেন না। এখন কেউ হুজুর না বললে কেমন খালি খালি লাগে। বাসে ঢুকেই দেখতে পেলেন জানালার পাশের সিটটা দখল করে এক ছেলে বসে আছে। কানে আজকালকের অন্যান্য ছেলেমেয়েদের মতো কি একটা গুজে রেখেছে। একটুক্ষণ পরপর মাথা দুলাচ্ছে। সকালে কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছেন ঠিক মনে করতে পারলেন না আসলাম হুজুর।পুরো রাস্তা এর পাশে বসে যেতে হবে ভেবেই মুখ থেকে নিজের অজান্তেই বের হয়ে এলো “আস্তাগফিরুল্লাহ”।
হাথের ব্যাগটা উপরে রেখে সিটে বসলেন আসলাম হুজুর।
“বাবা, একটু সরবেন পিকটা ফেলাব”
“জি?, শুনতে পারলাম না। সরি আমার এয়ারফনের জন্য কিছু শুনতে পেলাম না”
হা করে মুখের ভিতরটা দেখিয়ে দিলেন হুজুর। আর কিছু বলতে হল না ছেলেটা সরে বসল। মনে মনে হাসলেন হুজুর। এসব ছেলেদের ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। এখনো নাক টিপলে দুধ বের হবে এদের।
সিটে গা এলিয়ে দিলেন হুজুর। পাচ মিনিটের মাথায় গভীর ঘুমে নেতিয়ে পরলেন। এই বেপারটা আগেও লক্ষ করেছে শান।কিছু মানুষ গা এলিয়ে দেয়া মাত্রই ঘুমিয়ে পরতে পারে।এই অভ্যাসটা থাকলে বেশ সুবিধে হতো তার। সবচেয়ে ভাল হতো যদি
একটা সুইচের মতো থাকত। বাসে উঠেই সুইচ টিপে দিয়ে ঘুমিয়ে পরতে পারত। তবে হ্যাঁ ঘুমের বদলে এখন যা করছে তাও খুব একটা খারাপ নয়। বরং বেশ ভালই উপভোগ করছে শান।কানে আবারও এয়ারফোন গুজে দিল শান। জানালার বাইরে তাকাতেই ধাণ ক্ষেতের মধ্যে চোখ পরল একটা ছোট বাচ্চার উপর। দৌড়ে হাত নাড়তে নাড়তে বাসটার দিকে ছুটে আসছে।বাচ্চাটি জানে বাসের কাছেও আসতে পারবেনা তবুও যেন দৌড়ে বাসটাকে হারিয়ে দেওয়ার খেয়াল।
(To be continued….)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৯:০১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×