somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

The Tong Diaries (complete- 1st episode)

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

The Tong Diaries (complete- 1st episode)
প্রথম দৃশ্য
দৃশ্যপটঃ সকাল ১০টা ঢাকা বিমানবন্দর রেলস্টেশন এর প্লাটফরমের দৃশ্য। এইমাত্র ভৈরব থেকে একটি ট্রেন এসে প্লাটফর্ম এর ভিতরে ঢুকেছে।প্লাটফরমের হকার আর কুলিদের হন্তদন্ত ছুটোছুটি শুরু হল।বাঙ্গালিদের চিরন্তন তাড়াহুড়োর পরিচিত দৃশ্য এর আরও একটি মঞ্চায়ন।কালো রঙের বিশাল আকৃতির ট্রাঙ্কটি নিয়ে ট্রেন এর দরজায় এসে দাঁড়ালো পরাগ। বাইরে তাকিয়েই দেখতে পেল কুলির সাথে উচ্চস্বরে কথা বলছেন এক মধ্যবয়েসি স্যুট টাই পরা ভদ্রলোক।
“কতবার বলব আমার জিনিসে হাত দিবি না। এই তোদের মতো গোলামদের জ্বালায় শালা শান্তি পেলাম না। শুওরের বাচ্চা একদম হাত লাগাবি না”
কুলিটার বয়স খুব বেশি নয়। অল্পবয়স্ক একটি ছেলে। পরনে হাফপেন্ট আর উদাম গা। গালি শুনে বেশ হকচকিয়ে গেল বেচারা। চারদিকে তাকাতেই তার চোখ পরল পরাগের উপর।পরাগ হাতে থাকা ব্যাগটা আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।ছেলেটি দৌড়ে এগিয়ে এলো।
“মামা, ধরন লাগব?”
পরাগ ট্রাঙ্কটি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো
“কত দিব?”
“ত্রিশ টেহা দিয়েন”
“পনের টাকা দিবো, হবে?”।
“বিশ টেহা দিয়েন”
বলেই পরাগের জবাব এর অপেক্ষা না করেই ট্রাঙ্কটি মাথায় তুলে নিল ছেলেটি। বেশ দ্রুত হাটতে লাগল। দ্রুতপায়ে অনুসরণ করলো পরাগ।এই শহরের মানুষের উপর তার কানাকড়ির বিশ্বাস নেই। খবরের কাগজ খুললেই চুরি পকেটমার আর বাটপারির খবর।
দৃশ্যপটঃ রেলস্টেশন থেকে বের হওয়ার গেট।গম্ভীর মুখে দাড়িয়ে আছেন টিকেট চেকার।এই ধরনের চাকরি যারা করে এদের মুখে ভাবগাম্ভীর্য থাকা আবশ্যেক। কুলি ছেলেটি বের হয়ে গেল গেট দিয়ে।যদিও হাতের ব্যাগের ওজন খুব একটা না তারপরও একটু পিছনে পরে গিয়েছিলো পরাগ। আর এতেই ঘটলো বিপত্তি। টিকেট চেকার আটকে দিলো পরাগ কে।
“টিকেট দেখান”
“টিকেট?”
“হ্যাঁ”
পকেটে হাত বাড়াল পরাগ। ওয়ালেট টা বের করে আনতে আনতে গেটের অন্যপাশে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যেতে দেখল ছেলেটাকে। অসহায়ের মতো দেখা ছাড়া কিছুই করার নেই সোহানের। জানে তাকে টিকেট ছাড়া গেটের অন্যপাশে যেতে দিবে না।
ওয়ালেটের মধ্যে খুজে পেলো না তার টিকেট। টিকেট চেকার হাত বাড়িয়ে আছে। চোখেমুখে স্পষ্ট বিরক্তির ভাব। বিসমিল্লাহ বলে পকেটে আবারও হাত ঢুকালো পরাগ। বের করে আনল টিকেট। চেকার এর হাতে দিয়েই ছুটে বের হয়ে আসলো গেট দিয়ে।
চারপাশে তাকিয়ে খুজলো ছেলেটাকে। কোথাও দেখতে পেলো না। হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলো ক্ষণিকের জন্য। ধির পায়ে হাটা শুরু করলো। বিশ্বাস করতে পারছেনা তার সাথে এইরকম একটি জিনিস হয়ে গেছে। মনের মধ্যে এখনো আশা খুজে পাবে ছেলেটাকে।
টিকেট কাউন্টার পার হয়ে রাস্তায় নেমে আসলো পরাগ। ট্রাঙ্কের ভিতরে তার সব কাপড়চোপড় রয়েছে আর প্রথম মাসের খরচটাও তো এর মধ্যেই ছিল। ঠিক মতো চিন্তা করতে পারছেনা পরাগ। সূর্যের আলোটা অসহ্য হয়ে চোখের উপর লাগছে। দিনের শুরুটা এর থেকে খারাপ হতে পারে না ভাবল পরাগ।হাত দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে শুনতে পেলো
“অই মামা এইহানে আহেন”
শব্দের স্থলের দিকে তাকাল পরাগ। ছেলেটি দাড়িয়ে আছে বেশ খানিকটা দূরে কয়েকটি অটোরিকশার পাশে। পাশেই মাটিতে ট্র্যাঙ্কটি রাখা। এগিয়ে গেল পরাগ।
“কি মামা, এত দেরি কল্লেন কে। আমার টেহা দেন আমি জাইগা”
কি বলবে খুজে পেলনা পরাগ।
পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে পঞ্চাশ টাকা বের করে দিল পরাগ।
“পুরোটাই রেখে দে”
ছেলেটির মুখে হাসি ফুটে উঠল।
“গাড়িতে তুইলা দেওন লাগবো মামা?”
“না, লাগবে না”
“সেলামালিকুম মামা” বলে খুশি মনে হাটা শুরু করলো ছেলেটি। সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চিন্তা করল সোহান এই নগরীর সব মানুষ ঠিক একরকম নয়। এইখানে যেমন স্যুট টাই পরা ভদ্রলোকও অশুভন আচরণ করতে পারে তেমনি বারো তের বছরের এক ছেলেও রাখতে পারে সততার অদ্ভুত এক নিদর্শন। আশ্চর্য পৃথিবী আর তার থেকেও আশ্চর্য এই পৃথিবীর মানুষগুলো।
ট্র্যাঙ্কটা একপাশে রেখে সিগারেট নিতে গেল পরাগ। বেন্সন সিগারটে সুখটান দিতে দিতে ভাবল পরাগ দিনের শুরুটা খারাপ হয় নি।



দ্বিতীয় দৃশ্যঃ চিটাগাং থেকে ঢাকাগামী বাস এর ভিতর এর দৃশ্য। বাস এর ভিতরে যাত্রীরা বসে আছে।
বাস এর মধ্যে উঠেই মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেল আসলাম হুজুরের। তার আসল নাম আসলাম। মাদরাসায় অনেক দিন পড়াতে পড়াতে কখন যে নিজের নাম এর সাথে হুজুর শব্দটা লেগে গেল তা নিজেও জানেন না। এখন কেউ হুজুর না বললে কেমন খালি খালি লাগে। বাসে ঢুকেই দেখতে পেলেন জানালার পাশের সিটটা দখল করে এক ছেলে বসে আছে। কানে আজকালকের অন্যান্য ছেলেমেয়েদের মতো কি একটা গুজে রেখেছে। একটুক্ষণ পরপর মাথা দুলাচ্ছে। সকালে কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছেন ঠিক মনে করতে পারলেন না আসলাম হুজুর।পুরো রাস্তা এর পাশে বসে যেতে হবে ভেবেই মুখ থেকে নিজের অজান্তেই বের হয়ে এলো “আস্তাগফিরুল্লাহ”।
হাথের ব্যাগটা উপরে রেখে সিটে বসলেন আসলাম হুজুর।
“বাবা, একটু সরবেন পিকটা ফেলাব”
“জি?, শুনতে পারলাম না। সরি আমার এয়ারফনের জন্য কিছু শুনতে পেলাম না”
হা করে মুখের ভিতরটা দেখিয়ে দিলেন হুজুর। আর কিছু বলতে হল না ছেলেটা সরে বসল। মনে মনে হাসলেন হুজুর। এসব ছেলেদের ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। এখনো নাক টিপলে দুধ বের হবে এদের।
সিটে গা এলিয়ে দিলেন হুজুর। পাচ মিনিটের মাথায় গভীর ঘুমে নেতিয়ে পরলেন। এই বেপারটা আগেও লক্ষ করেছে শান।কিছু মানুষ গা এলিয়ে দেয়া মাত্রই ঘুমিয়ে পরতে পারে।এই অভ্যাসটা থাকলে বেশ সুবিধে হতো তার। সবচেয়ে ভাল হতো যদি
একটা সুইচের মতো থাকত। বাসে উঠেই সুইচ টিপে দিয়ে ঘুমিয়ে পরতে পারত। তবে হ্যাঁ ঘুমের বদলে এখন যা করছে তাও খুব একটা খারাপ নয়। বরং বেশ ভালই উপভোগ করছে শান।কানে আবারও এয়ারফোন গুজে দিল শান। জানালার বাইরে তাকাতেই ধাণ ক্ষেতের মধ্যে চোখ পরল একটা ছোট বাচ্চার উপর। দৌড়ে হাত নাড়তে নাড়তে বাসটার দিকে ছুটে আসছে।বাচ্চাটি জানে বাসের কাছেও আসতে পারবেনা তবুও যেন দৌড়ে বাসটাকে হারিয়ে দেওয়ার খেয়াল।


হাইওয়ে ইনে বাস থামার পরই ঘুম ভাঙল আসলাম হুযুরের। পাশের সীটের ছেলেটি নেই। চোখ ডলতে ডলতে বাস থেকে নামলেন হুজুর। বেশিক্ষন নেই দ্রুত খেয়ে নিতে হবে। দ্রুতপায়ে ঢুকলেন রেস্টুরেন্ট টিতে। পনেরো মিনিটের যাত্রাবিরতি। দ্রুত হাত ধুয়ে ওযুটাও করে ফেললেন হুজুর। কোথায় বসবেন চিন্তা করতে করতে চারদিকে চোখ বোলালেন। ছেলেটা কে দেখতে পেলেন একমনে খেয়ে যাচ্ছে আর এখনো কানের মধ্যে গুজে আছে জিনিসটা।আল্লাহপাক খাওয়ার সময় অন্য কিছু করা পছন্দ করেন না। ছেলেটাকে কথাটা বলা উচিত। আবার ভয়ও লাগছে কি না কি মনে করে। আবার ভয়ই বা কিসের এসব ছেলে ছুঁকরা কত দেখেছেন তিনি। নামাজটা পরে নেয়া দরকার ভাবলেন হুজুর। আবার পেটের খিদা নিয়ে নামাজ পড়াটাও ঠিক হবে না। অনেক ভেবে চিন্তে ছেলেটির পাশে বসেই পরলেন। হোটেল এর বেয়ারারা ছুটোছুটি করছে। তার দিকে কেউ ঘুরেও তাকাচ্ছে না। আজকাল মানুষজন আগের মতো আর সম্মান করে না। দেখেও না দেখার ভান করে। আল্লাহপাকের গজব কি আর এমনিতেই আসে?।
ছেলেটা একমনে খেয়েই যাচ্ছে। তিনি যে জলজ্যান্ত একজন মানুষ বসলেন তার কোন ভাবান্তরই নেই। দেশ থেকে আদব কায়দা নামক জিনিসটা একেবারেই উঠে যাচ্ছে।
অবশেষে তার দিকে অল্প বয়েসী এক ওয়েটার এগিয়ে আসল,
“কি নিবেন আপনে”
“পরোটা আছে?”
“না পরোটা শেষ”
“হালকা খাবার কি আছে?, ভাত খাব না”
“হালকা খাবার কিছু নাই যা আছে সব ভারি”
হুজুরের কথাটা শুনে মনটা বড়ই খারাপ হল। ছেলেটা তাকে নিয়ে ঠাট্টা করছে।
“ঠিক আছে, পানি হবে?”
“কিসের পানি, ফিল্টার না জেনারেল?”
“ফিল্টার পানি হলে ভাল হয়”
“ফিল্টার পানি নাই”
ছেলেটাকে এই মুহূর্তে কষে একটা চড় লাগাতে পারলে ভাল হতো। অনেক কষ্টে রাগ দমন করলেন হুজুর। আল্লাপাক বলেছেন রাগ অত্যন্ত খারাপ ব্যাপার। হাদিসে এসেছে দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় রেগে গেলে বসে যেতে এবং বসা অবস্থায় রাগ লাগলে শুয়ে পরতে। আসলাম হুজুর বসে আছেন। তিনি এখন চাইলেও শুয়ে পরতে পারবেন না। রেস্টুরেন্ট এর মেঝেতে ভর দুপুরে পাঞ্জাবি পাজামা পরে তার শুয়ে থাকার দৃশটা মোটেও স্বাভাবিক না। হাতের ইশারায় ওয়েটার ছেলেটাকে চলে যেতে বললেন হুজুর।
আজকে আর কিছু খাওয়া হবে না, নামাজটা পরে নেয়া উচিত।

শান দুটো পরোটা শেষ করে বের হল রেস্টুরেন্ট থেকে। খুব বেশি সময় নেই তাড়াহুড়ো করে পকেটে থাকা সিগারেট বের করে ধরাল। কান থেকে এয়ারফনটা খুলে নিল। কান এখনো ঝা ঝা করছে। প্রচণ্ড রোদ আকাশে। বাস এর সামনে দাড়িয়ে সিগারেট টানছে শান।
“বাবাজীর নাম কি?”
কথা শুনে ঘার ঘুরিয়ে তাকাল শান। পাশেই বাসএ পাশের সিট এ বসা হুজুর দাড়িয়ে আছেন। কখন পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন টের ও পায়নি। মানুষ হাটাচলার দিক থেকে দুই প্রকার। এক প্রকার হাটা চলা করলে পুরো দুনিয়া টের পায় আর আরেক প্রকার হাটাচলা করে এতোটাই নিঃশব্দে যে বাতাশ ও টের পায়না। ইনি হচ্ছেন শেষের গোত্রের।
“আমি শান”
“কিছু মনে করবেন না বাবাজী একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”
“হু করেন”
“জে, আপনার কানে ওটা কি ছিল? অনেকক্ষণ ধরে আমি পলো করেছি, ওটা দিয়ে কি গান শুনা যায় না?”
“জি ওটা দিয়ে গান শুনা যায়”
“হুম, দেখছেন আল্লাহপাকের কি কেরাসমতি। এইটাও কিন্তু আল্লাপাকের এক বিরাট বড় নিয়ামত। তাই না বাবাজী?”
“জী”
“তবে কথা হচ্ছে কি জানেন? আজকালকের মানুষেরা আল্লার নেয়ামতরে নষ্ট করতেছে, এই জে যেমন ধরেন আপনে এইটা দিয়ে যদি গান শুনেন আপনার কিন্তু কানে সমস্যা হতি পারে। বাজান কি মাইন্ড কইরলেন। আমি মূর্খধুরখ মানুষ মনে যা আসে বলে ফেলি। মনে কষ্ট নিয়েন না”
“না, ঠিক আছে” বলে শান সিগারেটটা ফেলে দিল।
“চলুন বাস ছেড়ে দিবে”
আসলাম হুজুর শান এর পিছন পিছন এগুলেন। মুখে ত্রিপ্তির হাসি নিয়ে এগুলেন। ছেলেটাকে কয়েকটা কথা শুনানো গেছে। বাসে উঠে সেই হাসি বেশিক্ষন থাকলো না। ছেলেটা বাস ছাড়ার সাথে সাথেই কানে জিনিসটা গুজে দিয়ে মাথা দুলানো শুরু করে দিয়েছে।
হুজুর চিটাগাং এ যে সরু গলিটিতে থাকেন সেখানে কুকুরদের অভয়াস্রম। সেখানে প্রতিদিন ই একটি কুকুর কে দেখতেন হুজুর মসজিদে যাওয়ার সময়। বিচিত্র এক রুগে আক্রান্ত কুকুরটা সারাক্ষণ ই মাথা দুলাতো। এই কুকুরের সাথে ছেলেটির মাথা দোলানোর খুব একটা তফাত নেই।পরক্ষনেই তওবা করলেন হুজুর। আল্লাপাক পবিত্র কোরআন মজিদ এ বলেছেন মানুষ হচ্ছে আশরাফুল মাখলুকাত। অর্থাৎ সৃষ্টির সেরা জিব। জন্তু জানুয়ারের সঙ্ঘে মানুষের তুলনা করলে আল্লাহ পাক নাখোশ হন। তওবা তওবা বলে আবারও গালে তিনবার হাত বোলালেন হুজুর। শান সিটে মাথা রাখতেই ঘুম চলে আসল।আসলাম হুজুর তার ঘুমের সুইচ এখনো খুজে পান নি। পাশেই ছটফট করছেন। মেয়ের বিবাহ নিয়ে বিশাল চিন্তায় আছেন।
তৃতীয় দৃশ্যঃ রেজার বেডরুমের দৃশ্য।
রেজার ঘুম ভাঙল সকাল নটায়। সাধারণত এতো সকালে ঘুম ভাঙ্গে না। অলস শরীরে উঠে বসল বিছানায় রেজা। আজকের দিনের জন্য অনেক কাজ পরে আছে। পাড়ার কয়েকটা ছেলে বড় সমস্যা করছে। এদেরকে সাইজ করতে হবে। এ কাজে বেশিক্ষন লাগবে না। রফিক, পাড়ার ছোটভাই অনেক্ষন ধরে কল দিচ্ছে। গলির মুখে সবাই ওর জন্যে দাড়িয়ে আছে। থ্রি কুয়াটারটা পায়ে গলিয়ে উঠে দাঁড়াল রেজা। সকাল সকাল ভেজাল করার কোন ইচ্ছে নেই তার। কিন্তু এদেরকে শায়েস্তা না করলেই নয়।হাতে ব্রেসলেট টা লাগিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াল। আজকে একবার সেলুনে যেতে হবে ভাবল রেজা। চুল টা ঠিক করে বের হয়ে পরল সে।
গলির মুখের চা দোকানটাতে দাড়িয়ে আছে সবাই। রফিক, ঝন্টু আর মন্টূকে দেখতে পেল। দোকানের বাইরে মোটরসাইকেল টা রফিকের ই হবে। আর ওআন ফাইভ মোটর সাইকেল। জিনিস ভাল।
“ভাই এত লেইট করলেন যে?”
“তগো লাইগা কি ঘুম বাদ দিয়া দিমু?”
“ওরা এখনো মাঠের সামনে খারাইয়া রইসে, ডাক দিমু?”
“তো বইয়া রইসত কেন, তগো কি সব বইলা দেওয়া লাগবো। বেইসিকস যদি ভুইলা যাস তাইলে কেমনে অইব” বলতে বলতে লাইটার দিয়ে সিগারেটটা ধরাল রেজা।
হাটা শুরু করল রেজা। একটু দূরে এসেই ঘুরে দাঁড়াল,
“তোর মোটরবাইক টা নিয়া আয়”
“কি কন ভাই মোটরবাইক লাগব? হাইটাই তো যাওন যাইব”
“তোরে যা বলসি কর”
রফিক অনিচ্ছা সত্ত্বেও মোটরবাইকে উঠে বসল। তেল খুব একটা নেই। আজকে বিকেলে আবার মরজিনারে কথা দিছে বাইকে করে ঘুরতে বেরুবে। আজকালকের মেয়ে ছেলে বাইক ছাড়া ডেটিংএ আসতে চায় না। মরজিনাও এর ব্যতিক্রম না। মরজিনা দেখতে অতীব সুন্দরী।তার চেহারার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারেনা রফিক।কিন্তু তার মতো মেয়েরে সকালে বিকেলে রুটিন করে পিটানো উচিত। অত্যন্ত দুশ্চরিত্রা মেয়ে। আজকে যদি বাইক নিয়ে না যায় তবে ঠিক ই পাশের পাড়ার সুমন এর সাথে বাইকে করে বের হয়ে পরবে মাগি টা। এদিকে আবার রেজা ভাই এর কথা ফেলে কেমনে। রেজা ভাই এর কথার উপরে তো কথা চলে না। ভাই রে বললেই অবশ্য টাকা দিয়ে দিবে। দেখা যাক কি হয়।
আরওয়ান ফাইভে স্টার্ট দিতেই পিছনে উঠে বসলেন রেজা ভাই। রেজা ভাই বাইক চালাতে পারেন না। এই তথ্য আবার অতি গোপন। ভাই এর কড়া নিষেধ আছে কেউ যাতে না জানে। রেজা ভাই এর অনেকগুলা গোপন কথা আছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় সবাই কেমন করে যেন ভাই এর গোপন কথাগুলী জানে। রফিকের ধারনা রেজা ভাই নিজেই কথাগুলো সবাই কে বলে বেড়ান। এই যেমন রেজা ভাই চারবারের চেষ্টায় ম্যাট্রিক পাশ করেছেন। ইন্টার অবশ্য দুই বারের চেষ্টা তেই পার পেয়ে গেছেন। এই নিয়ে তার গর্বের শেষ নেই।গত এক বছর যাবত রেজা ভাই কিছু করছেন না। এইবার তার শখ জেগেছে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। রফিক কে বলেছেন ফর্ম তুলে নিয়ে আসার জন্য। তাকে এক হাজার টাকাও দিয়েছিলেন। রফিক পুরো টাকা টা দিয়ে মরজিনার জন্য একসেট ইমিটেসন এর গয়না না কিনেছে। রাস্তার পাশে নিয়ে বসেছিল, দেখে কিনার লোভ সামলাতে পারেনি। গয়না পেয়ে মরজিনা খুবই খুশি হয়েছিল।
“আল্লা এত সুন্দর গয়না কই তেইক্কা নিয়া আইলেন”
“পছন্দ হইসে তোমার?”
“হ পসন্দ হইসে। এইটা কি সত্যি সত্যি সুনার?”
“হ হ একদম খাটি সোনা।এক্কেরে আট আনা সোনা দিয়া বানানো। ধানমন্ডির কমলা ভান্ডার থেকে নিয়া আসছি। বিশাল বড় দোকান। তোমারে একদিন নিয়ে যাবো। দেখলে মাথা আউলাইয়া যাইব।”
“আল্লাহ আপনারে ইচ্ছে করতেসে জরায়ে ধরি”
এখন তো জরায়ে ধরবি কত কিছু করবি, শালী মাগীর জাত। মনে মনে বলল রফিক। মুখে কিছু বলল না। রফিক তখনি বুঝতে পেরেছিল মরজিনার হাথে ধরা খেয়ে যাবে। শালী বহুত চালাক। ধরা যখন খাবে তখন যা হবার হবে, মরজিনার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলল রফিক।
তখনি পিছনে বসা রেজা ভাই মুখ খুললেন,
“রফিক, তোরে যে বলসিলাম ফর্ম নিয়া আসতে তার খবর কি?” জিভে কামড় দিল রফিক।
“হ ভাই গেসিলাম তো ফর্ম তুলতে।সেখানে এক বিরাট কাহিনী। গিয়া সিএনজি ভাড়া দিতে গিয়া দেখি পকেট ওয়ালেট নাই। সামনের পকেট পিছনের পকেট সব দেখলাম কোথাও কোন ঠিকানা নাই”
“কস কি! ওয়ালেট কি হাওায়ায় উইরা গেল”
“আমারও তো সেই একই কথা। ওয়ালেট যাবে কথায়।এর তো আর পাখনা নাই যে উরে যাবে। শেষমেশ সিএনজিআলার কলার চাইপা ধরলাম। শালা আমার ওইয়ালেট কই বাইর কর। সিএনজি শালা শুরু করল কান্দন। সেকি কান্দন। শেষমেশ আর কি করা খালি হাতে বাসায় ফিরত আসলাম একই সিএনজি তে করে। ড্রাইভারকে দুপুরের ভাত খাওাইয়া দিলাম। হাথে দুশো টাকাও গুজে দিলাম। খামাখা বেচারা কে দোষ দিয়ে লাভ আছে কন?”
“হুম”
“কি দিনকাল পরছে। পকেটমারদের জ্বালায় ঘর থেকে বাইর হয়ন যায় না” ঢোক গিলতে গিলতে বলল রফিক। ঠিক বুঝতে পারছে না ভাই কথাগুলো বিশ্বাস করছে কি না। মাঠের সামনে চলে এসেছে। বাইক থেকে নামলেন রফিক ভাই। এর মধ্যে কোথা থেকে যেন তার চোখে রোদ্রচশমা চলে এসেছে। রফিক এর মন টা খুশি হয়ে উঠল। রেজা ভাই এর চোখে চশমা মানে বিটলাদের কপালে খারাপি আছে।

রেজার কাধ টা এমনিতেই চওড়া আর মোটরবাইক থেকে নামার পর সেটাকে যেন আরো চওড়া মনে হল। দুলকি চালে হেটে এগুলো সে ছেলেগুলোর দিকে। এই ছেলেগুলোর মধ্যে কেউ একজন রফিকের নাম ধরে ডেকেছে। বিষয়টাকে ছোট করে দেখা যেত কিন্তু ছেলেটা নাকি তার নাম শুনেও ভয় পায় নি। আজকে দেখিয়ে দিতে হবে রেজা কি জিনিস। রফিক পাশে এসে দাঁড়াল।
“ভাই পা ছালান শালাদের সাইজ করে আসি”
“চল, কোন ছেলেটা নাম ধরে ডাকছে দেখা আমারে”
“ইয়ে মানে একটা সমস্যা হইসে যে”
“কি সমস্যা?”
“মাইন্ড কইরেন না। আমার প্যচ লাইগা গেছে কুনটার সাথে যে ভেজাল হইসে এইটাই ভুইলে গেসি। আজকালকের ছেলে ছোকরাদের চেহারা সব দেখতে একরকম”
“আজকালকের ছেলে ছোকরাদের চেহারা সব দেখতে একরকম গাধার বাচ্চা গাধা। তোর বাপ কি সবগুলারে পয়দা করসে যে একরকম চেহারা হইব? তরা যে কোনদিন মানুষ হবি”
ইতিমধ্যে বাকীরাও চলে এসেছে।
“ওই তরা কেউ চিনস না কোন বাল টার সাথে কথা হইসে?”
“চিনি ভাই আমি ভাল করেই। আপনি কন তো ডাইকা নিয়া আসি?”
“যা ডাইকা নিয়া আয়। বলিস তার আসল বাপ ডাকতাসে”
“ঠিক আছে বস” বলেই জব্বার হাটা শুরু করল
ঠিক এক মিনিট পর বাম গালে ঠাস করে একটা চড় খেলো জব্বার। দৃশ্যটা দেখে রফিকের মুখ হা হয়ে গেল। রেজার চেহারা দেখে মনে হলো তাকে পাচ তালার ছাদ থেকে ফেলে দেয়া হয়েছে।
জব্বার গালে হাত বোলাতে বোলাতে ফিরে আসল।
“ভাই চড় মারসে”
“তা তো দেখতেই পাইসি। এখন কি পুরো পাড়া মাইকিং করাবো?”
“ভাই এর কিন্তু একটা বিহিত আপনার করতেই হইব”
“তুই খারা এইখানে। বাকিরা আয় আমার লগে। টিটু রফিকের বাইক নিয়া আমার বাসায় যা। বিছানার নিচে দেখবি হকিস্টিক আর রাম দা রাখা আছে নিয়া আয়”
“ঠিক আছে বস”
রেজা ছেলেগুলোর সামনে গিয়ে দাঁড়াল। একটাকে দেখে মনে হচ্ছে একটু নেতা গুছের সামনে এগিয়ে এলো।
“কি সমস্যা?”
“ সমস্যা কিছু না। জব্বার রে মাইরা কাজটা ভাল কর নাই। এক বার বলব দুইবার বলব না। জব্বার এর পায়ে ধরে মাপ চাবা। আর কালকে থেকে যেন এইখানে না দেখা যায়। কথা কি কানে গেছে?”
“আর যদি মাপ না চাই?”
“শোন, পাড়ায় নতুন আসছ। দেখে তো মনে হয় বুদ্ধিশুদ্ধি খারাপ না। তুমি আর যাই হোক বেকুব না। কয়দিন আগে আর এক ছেলে বড় বারা বাড়ছিল। মোড়ের দুকানে জিজ্ঞেস কইর তারে কি করসি। লাশ খুইজা পাইবানা।থানা পুলিশ কইরা লাব নাই। আমি সপ্তাহে একদিন উনাদের সাথে নাস্তা করি, সকালের নাস্তা। আমার বড়ই আদর যত্ন করে তেনারা।ঘুষের টাকা তো তাই প্রতিদিনই পরোটা আর গরুর মাংস থাকেই।অত্যন্ত ভাল খাবার। যাইহোক সেই গল্প আরেকদিন কড়া যাবে। তোমার বইন তো মাশাআল্লাহ দেখতে খারাপ না। কুন জায়গায় পরে যেন? তুমার বইন রে বইল রেজা ভাই বলসে বোরখা পরে চলাফেরা করতে। লজ্জা হচ্ছে নারীর ভূষণ। দিন কে দিন জিনিসটা একদম উঠে যাচ্ছে। আমি জানি এখন তুমার আমারে ছিরে খাইতে ইচ্ছে করতেসে। জানো ছেলেটারে কি করেছি। মোড়ের যে দুকানটার কথা বলছি সেইখান এ দেইখ ছয়টা কুত্তা আছে। এদের চউখের দিকে তাকাইলে বুঝতে পারবা লাশ কই গেছে। মাপ চাওয়া না চাওয়া তুমার ব্যপার। কুত্তা গুলা অনেকদিন না খেয়ে আছে। অতিসত্বর এদের খাওয়ার ব্যবস্থা আমারেই করতে হবে।আইজ আমি আসি। ছাছা ছাছিরে সেলাম দিয়ো” ঘুরে দাড়িয়ে দুলকি চালে হাঁটা শুরু করল রেজা।
এতক্ষনে চোখ পড়ল টিটুর উপর। হকিস্টিক হাথে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। সোজা আঙ্গুলে যেমন ঘি উঠে না তেমনি বাঙ্গালীদের জন্য সোজা কথায় কাজ হয় না। এদের জন্য মাথা বাঁকানো হকিস্টিক লাগে।
চতুর্থ দৃশ্যঃ
টং দোকানের দৃশ্য
দোকানটার ঠিক সামনে একটা বেঞ্চ পাতা। তার পাশেই আড়াআড়ি করে তিনটা চেয়ার পাতা। দোকানটার ভিতরে একটা মিনি ফ্রিজার রাখা। করিম দোকানের কাঠের মেঝেতে বসেই কাজ করে। ঠিক তার সামনেই একটা ট্রে তে চা য়ের কাপগুলো সারিবদ্ধ করে রাখা। চিনি কনড্যান্স মিল্ক সহ বাকি সরঞ্জাম গুলোও ট্রে তেই রাখা। এর পাশেই পানিভর্তি লাল একটা বালতি রাখা কাপগুলো ধোয়ার জন্য।
উপরের কাঠের কাঠামো থেকে সারি সারি চিপস এর প্যাকেট ঝুলছে। আরো ঝুলছে কেক আর হরেক রকমের বিস্কিট এর প্যাকেট। করিমের বসার জায়গার ঠিক ডানদিকে রয়েছে সারি সারি সিগারেটের বাক্স সাজিয়ে রাখা। এর পাশেই রয়েছে পানির ফিল্টার। হরেক রকম চা এর পাশাপাশি হাতে বানানো কফিরও ব্যবস্থা আছে করীম ভাই এর টং এ।
ইউনিভার্সিটি থেকে বের হয়েই ছেলে মেয়েরা ভিড় করে করিম ভাই এর দোকানে।
কেউ চা খায় কেউ বা কফি। অনেকেই আবার একটার পর একটা সিগারেট টেনে যায়। ক্লাস চলাকালীন সময় তো বটেই, সন্ধ্যার পরও ভিড় লেগেই থাকে।
আশেপাশে আরও কয়েকটা টং এর দোকান আছে। তবে করিম ভাই এর টাই বেশি চলে।


আমার নাম করিম। আমি ক্লাস টেন পাশ। বাড়ি আমার সিলেটে। তবে ঢাকায় আমার বাপের আমল থেকেই আছি। ভালই শুদ্ধ পারি। আমার স্ত্রী সবসময় বলে সাহেবদের মতো স্যুট লাগিয়ে শুদ্ধ বললে কেউ ধরতেই পারবনা আমি ম্যাট্রিক পাশ। আমার স্ত্রী দেখতে মাশাল্লাহ খারাপ না। বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে বিয়ে করেছে আমায়। বেশ বড় ঘরের মেয়ে। তার মুখে প্রশংসা শুনলে মনটা ভরে যায়। বড়লোকের বেটি হলে কি হবে পালিয়ে বিয়ে করেছে বলে বাপ কখনোই মেনে নেয় নাই। শালা বুইরা খাটাশ।নিজেই বিয়ে করছে তিনটা। যাই হোক সেই গল্প আরেকদিন করা যাবে। বিয়ের পরে আমি পরলাম বিশাল ঝামেলায়। অদিকে ওর বাপ মেনে নেয় না আর এদিকে আমার বাপ এর ইনকাম নাই।এ যেন উভয় সংকট। এই ঢাকা শহরে ম্যাট্রিক পাশ করা লোকের চাকরি নাই। ড্রাইভার হতে হলেও এইচএসসি পাশ করতে হয়। চাকরীর জন্য অনেক ঘোরাঘুরি করলাম। কিছুতেই কোন কাজ হলোনা।শেষমেস কোনরকম বিভিন্ন জায়গায় হাথে পায়ে ধইরা কয়টা টাকা যোগাড় করলাম। ঠিক করলাম টং দোকান খুলে বসব। যেইখানে থাকি সেই জায়গার পাশেই বিশাল এক রাস্তা হবে। বাংলাদেশি সরকার এত বড় রাস্তা করতে তিন বছর তো লাগবেই। যেই ভাবা সেই কাজ। রাস্তার পাশেই পসরা সাজিয়ে শুরু হল আমার ছোট টং এর যাত্রা। আপনাদের সাথে মিথ্যা বলবনা। আমার কিন্তু আয় ইনকাম বেশ ভালই আছে। বড় রাস্তার পাশেই তিন তিনটা ইউনিভার্সিটি। ওই গুলোর মামাদের উছিলায় বেশ ভাল রুটি রোজগার আমার। আজাকালকের ছেলে দের কে মামা বললে কোন এক বিচিত্র কারনে তারা বেশ খুশি হয়। আর উনাদের উছিলায় আমারও বেশ ভালই চলে যায়।



পঞ্চম দৃশ্যঃ রাশেদ ফুপুর সাথে গাড়িতে বসে আছে। ফুপু মিনিট পাঁচেক পর পর তার লিপস্টিক ঠিক করছেন। রাশেদের মনে হল ঠিক করেছেন না বলে ঠিক জিনিস কে নষ্ট করছেন বললেই সঠিক বলা হবে। আজকে তার ভর্তির ফর্ম জমা দেয়ার কথা। এই মহিলা সাথে আসার কোন দরকার ছিল না তবুও খানিকটা জোর করেই তিনি চলে এসেছেন। রাশেদ খানিকটা অস্বস্তি বোধ করছে। একেতো বিশ্যবিদ্যালয়ে যাবে গার্জিয়ান সাথে নিয়ে যে জিনিসটা মোটেই মেয়েদের ক্ষেত্রে আপিলিং না। তার থেকেও বড় কথা এই মহিলাকে একনাগাড়ে বেশিক্ষন সহ্য করা যায় না। রাশেদ এর কখনো কখনো মনে হয় মানুষের মুখে তালা চাবির একটা ব্যবস্থা থাকলে ভাল হতো। মনে মনে ফুপুকে নিয়ে একটা কবিতাও লিখে ফেললো
“lady will you shut up
Or I will come up
Smash u so hard
That u cant fart
Not anymore not anymore
Oh You whore! oh you whore!”
কবিতা টা নিয়ে খুব একটা খুশি হতে পারলনা রাশেদ।Firt শব্দটা যেন ঠিক মানাচ্ছে না। এই কবিতা এমন একটা মেয়েকে বলা যায় যার সাথে কারো সদ্য ব্রেক আপ হয়েছে। এই জিনিস নিজের ফুপু কে বলা যায় না। তবে রাশেদ তার ফুপু কে বলতে পারে। ভদ্রমহিলার এত সাজগোজ এর পিছনে কারন আছে। রাশেদের ধারনা মহিলা পরকীয়া করে বেড়ান। এই ধারনার পিছনে আরেকটা যুক্তি আছে। পৃথিবীর তাবদ গবেষণায় মানুষের শরীর থেকে ফেরোমোন নিঃসৃত হয় কিনা তা আজও জানা না গেলেও রাশেদ এর ধারনা সে বাতাশে মানুষের শরীর থেকে নিঃসৃত হওয়া ফেরোমোনের উপস্থিতি পরিষ্কার টের পায়। রাশেদ এর এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে তার ফুপু নরমাল স্কেল এর বেশ উপরেই ফেরোমন রিলিজ করছেন। গাড়ির ভিতরে দম বন্ধ হয়ে আসছে রাশেদ এর অথচ ফুপু আর ড্রাইভার দিব্যি গাড়িতে বসে আছে। রাশেদ এর বমির ভাব হচ্ছে।ব্যাপারটা বুঝতে পারছেনা কেন এতো বিশাল পরিমানে ফেরোমোন সিক্রেশন হচ্ছে গাড়ির ভিতরে। এমনকি হতে পারে যে ফুপুর সাথে সাথে ড্রাইভারও ফেরোমোন রিলিজ করছে। ড্রাইভার কে রিয়ার ভিউ মিরর দিয়ে ফুপুর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখল রাশেদ। ব্যাপারটা বেশ সুবিধের মনে হচ্ছে না রাশেদ এর। জানালাটা নামিয়ে নিজের নাকটাকে বাইরে বের করে দিল রাশেদ।
ষষ্ট দৃশ্যঃ
নাবিলা বসার ঘরে ড্রাইভার এর সামনে দাড়িয়ে আছে। ড্রাইভার এর হাথে তার বিশ্ববিদ্যালয় এর ভর্তির ফর্ম। ড্রাইভার এর উচিত নাবিলার হাতে ফর্মটা দেয়া কিন্তু সে তা না করে বসে আছে।
“হে দিন ফর্মটা”
নিরিহ মুখ করে ফর্ম এগিয়ে দিল ড্রাইভার। নাবিলা হাত বাড়িয়ে ফর্ম নিতে নিতেই বেশ ভাল করে তার দিকে একনজর তাকিয়ে নিল ড্রাইভার।নাবিলা বিষয়টি দেখলেও কিছু বলল না। মানুষজন বাইরে যেতে হলে যেমন আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে দেখে নেয় তাকে কেমন লাগছে তেমনি নাবিলাও দাড়ায়। তবে প্রতিদিনই তার বাড়তি আয়না হচ্ছে এইসব নিচুস্তরের মানুষেরা যারা তার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয় সাহসের অভাবে। কিন্তু তারা তাদের চেহারা থেকে মুগ্ধতার ছাপ মুছে ফেলতে পারে না।নাবিলার সেই ছাপ টা পড়তে বেশ ভাল লাগে।
ফর্ম হাতে নিয়ে ওপরে নিজের রুম এ চলে আসল নাবিলা। ভর্তির ফর্ম টা টেবিল এ রেখে বারান্দায় এসে দাঁড়াল। আজকে বাবাকে ফোন করতে হবে। নাবিলার বাবা অত্যন্ত ব্যস্ত মানুষ। তার মেয়ে হয়েও নাবিলার তার সাথে কথা বলতে বা দেখা করতে হলে দুদিন আগে থেকে এপয়েন্টমেন্ট নিতে হয়। তার আজকে দুপুর ঠিক একটা পাঁচ মিনিটে তার বাবাকে ফোন করার কথা। এখন বাজে একটা চার। নাবিলা ঠিক করল সে তার বাবাকে কল দিবে না। তার বাবা বিরক্ত হবেন কিঞ্চিত রাগও করতে পারেন। মানুষের জন্য মাঝে মধ্যে রাগ করা ভাল। ঠিক একটা বেজে ছয় মিনিট এ নাবিলার হাথে থাকা আইফোন বেজে উঠল।
“হ্যালো”
“হ্যালো নাবিলা মা তুমি তো জানো যে আমি অত্যন্ত রুটিন মাফিক চলাফেরা করি। তারপরও কেন তুমি আমার সাথে এই ব্যপারগুলা ইচ্ছে করে করো?”
“বাবা আমি শাওয়ার করছি। বাথটাব এ শুয়ে আছি। আমার কথা বিশ্বাস না করলে আমার একটা ছবি তুলে পাঠাই তোমাকে তখন তো বিশ্বাস করবে? আমি কেন তোমাকে খামাখা কষ্ট দিবো?”
“মা তুই এই ভাবে কথা বলিস কেন আমার সাথে? একটিবার এর জন্যেও তুই আমার সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলিস না। তোকে কতবার বলেছি তোর মায়ের সাথে যা হয়েছে তার জন্য সে ই দায়ি আমি না”
“আমি কি তোমাকে কিছু বলেছি বাবা বল। আচ্ছা ঠিক আছে চল আমরা স্বাভাবিক ভাবে কথা বলি। তুমি কি করছিলে?”
“এইতো একটা মিটিং এ ছিলাম। এখন লাঞ্চ এর জন্য ব্রেক দিয়েছি। আচ্ছা একটা কথা বলবি সত্য করে?”
“বাবা সত্য করে বলে লাগে না। মিথ্যা করে বলতে হয়। সে যাই হোক বল”
“তুই কি এখনো তোর মা আর আমার ডিভোর্স এর জন্য আমাকেই দুষিস? জানিস মা প্রতিবার যখন ভাবি যে আমার মেয়েটা আমার জন্য কষ্ট পাচ্ছে তখন মনটা অনেক খারাপ হয়ে যায় রে মা”
“ না বাবা একদম না আমি তোমাকে বা মাকে কাউকেই দুষী না। আর আমরা এতো মণ খারাপ করা বিষয় নিয়ে কেন কথা বলছি? আচ্ছা এক কাজ করলে কেমন হয়। আমি সুন্দর করে সেজেগুজে একটা ছবি তুলে তোমাকে পাঠাই তুমি তোমার মিটিং এর সবাইকে দেখাবা আর জিজ্ঞেস করবা যে এটা হচ্ছে আমার মেয়ে।এই মেয়ের চেয়ে সুন্দর কিচ্ছু কি তোমরা কেউ কখনো দেখেছো? তখন দেখবা কেউ কিছু বলতে পারছেনা।অনেকেই বলতে চাইলেও তোমার ভয়ে কিছু বলতে পারবে না। ব্যাপারটা তোমার মন ভাল করে দিবে না বাবা? সত্যি করে বল?”
“হে রে মা অনেক ভাল লাগবে। তবে মানুষের কেন বলা লাগবে আমি কি জানিনা আমার মেয়ে কতটা সুন্দর? আমার বিশ্বাস সৃষ্টিকর্তা তোকে তার সেরাটাই ঢেলে দিয়েছেন”
“থ্যাংক ইউ বাবা”
“আর একটা কথা মা তোকে যে ছেলেটার কথা বলেছিলাম গত মাসে সে দেশে এসেছে”
“বাবা আমি তো বলেছি তোমাকে যে আমার এখনি কারো গলায় ঝুলে পরার ইচ্ছে নেই”
“তুই একবার দেখা কর মা। ছেলেটা গতবছর একটা মাল্টিনেশনাল কোম্পানি শুরু করেছে বেশ রাইজ করছে। তুই কথা বলে দেখ তোর ভাল লাগবে”
“বাবা আমার মাল্টিনেশনাল ন্যাশনাল কোন ধরনের গাধার গলায়ই ঝুলে পরার ইচ্ছে নেই বললাম তো”
“আমি ওকে কথা দিয়েছি মা তুই ওর সাথে দেখা করবি”
“তুমি যখন কথা দিয়েছ তখন তুমিই যাও দেখা করতে”
“ আমার কথাটা রাখ মা। বলছি তো তোর ভাল না লাগলে ঠিক আছে”
“আচ্ছা ঠিক আছে বাট এবারই শেষ বারের মত বলে দিচ্ছি”
“থ্যাংক ইউ মা”
খট করে বাবার মুখের ওপর ফোন রেখে দিল নাবিলা।
সপ্তম দৃশ্য
ফাইজা পাঁচতলা ভবনের সামনে দাড়িয়ে আছে। টুলেট লাগানো আছে গেটের ওপর। বড় বড় করে লিখা

To-let খালি আছে
Only for GIRLZ


ফাইযার খুব ইচ্ছে হচ্ছে একটি মারকার দিয়ে গারলয বানান টা ঠিক করে দিতে। অনেক কষ্ট করে ইচ্ছে দমন করল ফাইযা। গেইটে নক করতেই দারোয়ান বের হয়ে এলো।
“আফায় কি চান?”
“জি টুলেট দেখে আসলাম”
“আফা কি ফেমেলি না সিঙ্গল?”
“ জি আমি সিঙ্গেল”
“ ঠিক আছে আপনে ভিতরে খারান আমি চাবি নিয়া আহি”।
ফাইযা ব্যাগে রাখা মার্কারটা খুজতে লাগল। ঠিক তখনি মাইশা বাসার খোলা গেইট দিয়ে ভিতরে ঢুকল।
“এক্সকিউয মি, বাইরের টুলেট দেখে আসছিলাম”।
“ আমিও একই কারনে এসছি, একটু দাঁড়ান গার্ড ভিতরে গেছে চাবি নিয়ে আসতে”
“ওকে থ্যাংক ইউ”
“আচ্ছা আপানার কাছে কি কাগজ আর স্কচটেপ হবে?”
“না”
“আহ, Did u see the writing on the to-let? They wrote girlZ”
“ ওহ না আমার আসল চোখে পরেনি” মাইশা অবাক হয়ে বলল। তার কথা শেষ করতে করতেই গার্ড এসে হাজির। গার্ড এর সাথে আরেকটা লোক। লোকটা লুঙ্গি পরে আছে। লোকটা ওদেরকে দেখেই গার্ডের উদ্দেশ্যে বলে উঠল
“কলিমের বাইচ্ছা কলিম তোরে কতদিন কমু আফারা আইলে আমারে একটা সিগনাল দিবি যাতে আমি আমার লুঙ্গিটা বদলাইয়া আইবার ফারি। আফারা মাইন্ড কইরেন না এই কলিম্যা একটা আস্তা গাধা। যা তুই গেইটে গিয়া খারা। আইয়েন আফনারা আইয়েন। আমি হইতাসি গিয়া এই বিল্ডিঙের খেয়ার টিকার।সবকিছু আমিই দেখভাল করি। আফনাগ কয় রুম এর বাসা লাগবো?”
“আমাদের দুজনের দুটো রুম লাগবে”
“দুটো রুম লাগবো না? আফনারা কি একলগেই আইসেন না?”
ফাইযা কিছু বলার আগেই মাইশা বলে উঠল
“হ্যা আমরা একসাথেই আসছি”।
“তাইলে তো আর হইলই। আমগো পাঁচ তলায় তিনটা ফেলেট আছে দুই বেডরুমের। আফনাগ ঝেইটা ইচ্ছা ওইটা নিবেন। চলেন আফনাগরে দেখাইয়া নিয়া আহি”।
মাইশা আর ফাইযা লোকটার পিছন পিছন গিয়ে লিফটে উঠলো। মাইশার মনে হচ্ছে কেয়ার টেকার লোকটা বেশি সুবিধের নয়। নোটিশে স্পষ্ট করে লিখা আছে মেয়েদের জন্য বাসা খালি আছে তারপরও তাদের কে দেখে লোকটার এতো অপ্রস্থুত হওয়াটা তাকে অবাক করেছে। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে লোকটাকে অনুসরণ করলো তারা দুজনে।
দুই রুমের এপার্টমেন্ট টা বেশ মনে ধরল ফাইযা মাইশা দুজনেরই। প্রথম মাসের এডভান্স দিয়ে দুজনে পাকা কথা দিয়ে বের হয়ে এল।ওইদিন বিকেলেই মাইশা এবং রাতের বেলা ফাইযা নিজ নিজ মালামাল নিয়ে এপার্টমেন্টে উঠে গেল তারা।মালামাল বলতে নিজেদের কাপড়চোপড় আর বইপত্র। ফাইযা নিজের জন্যে একটা তোষক নিয়ে এসেছে কিন্তু মাইশা তাও নিয়ে আসেনি। শুনেছে পাশেই একটা পুরনো আসবাবের দোকান আছে সেখান থেকেই সব কিছু কিনে নিবে ঠিক করেছে।
অষ্টম দৃশ্য
রাহমা বাস থেকে নেমে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে হাঁটা ধরলো বাসা থেকে আসেনি সে, সে এসেছে শিল্পকলা ভবন থেকে। আগামি পহেলা বৈশাখীর জন্য ছায়ানটে গান গাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাহমা। আজকের প্রস্তুতি খুব একটা ভাল যায়নি। মন খারাপ থাকলে আর যাই হোক গান গাওয়া যায় না। রাহমার মন আজ খুবই খারাপ। তার বাবার অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে।আগে হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করতে পারতেন এখন তাও পারছেন না। বাবার বানানো তিন তলা বাসা থেকে যে ভাড়া আসে তা থেকে সংসারের খরচ আর তাদের দুই ভাইবোনের খরচ মোটামুটি চলে যায়। তবে তার নিজের হাতখরচের জন্য রাহমার বেশ খাটতে হয়।ছোট ভাই অনেক বায়না ধরেছে তাকে একটা ভাল ফোন কিনে দিতে হবে।হাতে খুব একটা টাকা পয়সা এই মুহূর্তে নেই। এদিকে আবার তার কলেজের ফ্রেন্ডদের সাথে কয়েকদিনের মধ্যেই একটা পুনর্মিলনি অনুষ্ঠান এ যেতে হবে। রাহমার মনে হয় পৃথিবীতে টাকা জিনিসটা শুধুই জটিলতা বাড়িয়েছে অথচ আশ্চর্যের বিষয় টাকার প্রণয়ন হয়েছিলো ঠিক উল্টো কারনে। হাটতে হাটতে চিন্তা করছিলো সে আজকেই বিশ্ববিদ্যালয় এর টাকা জমা দেয়ার কথা। রাহমার দিবে না। ফিনেনশিয়াল এইড এর ফর্ম গত সপ্তাহে তুলেছিল। তারা এখনো তাকে ডাকে নি তবে সে ঠিক করেছে আজকে একবার ঢু মেরে আসবে। ইউনিভারসিটিতে চলে এসেছে রাহমা। বাস থেকে নামার পর প্রায় পনেরো মিনিট হেটে আসতে হয়েছে রাহমার। গেইটে এডমিশন পরিক্ষার পাস দেখিয়ে ভিতরে ঢুকল সে। খুজে বের করল ফিনেনশিয়াল এইডের অফিস। পাশাপাশি দুটি রুম আর বাইরে কয়েকটি চেয়ার রাখা। বড় অফিসারের রুমের বাইরে বড় করে নোটিশ ঝুলছে।

প্রথমে পাশের রুমে
নক করুন
রাহমা পড়ল নোটিশ টা। পাশের রুমে না ঢুকে সোজা বড়সাহেবের রুমে নক করলো রাহমা। ইশারায় ভিতরে ঢুকতে বললেন বড় অফিসার।
“আস্লামালিকুম স্যার”
“কি চাই?” গম্ভীর গলায় বললেন অফিসার
“স্যার I wanted to talk about the financial aid”
“হু?! পাশের রুমে গেছো?”
“না স্যার কেন?”
“হুম আমার দরজায় কি লিখা আছে পড় নাই?”
“স্যার আমি বাংলা পড়তে পারি না”
“হুম…….” অফিসার এর চোখ দুটি বেশ লাল মনে হচ্ছে কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। রাহমার মনে হচ্ছে লোকটা স্বাভাবিক নয়। লোকটার সামনেই একটা ফ্লাস্ক রাখা। তার মনে হল ফ্লাস্ক এর ভেতরে আর যাই হোক চা নয়। লোকটা প্রচণ্ড ঘামছে অথচ রুমে বেশ ভালই এসি চলছে। রাহমার মনে হলো লোকটা আসলে এই অসময়ে কাউকে আশা করে নি। সেমিস্টার এখনো শুরু হয় নি এই সময়ে খুব একটা কাজ থাকার কথা নয় অফিসে তাই বোধহয় অফিসার সাহেব একটু আরাম করছিলেন। সেই আরামের মধ্যে সকাল সকাল রাহমা এসে হাজির হয়েছে বাগড়া দেয়ার জন্য।
অফিসার সাহেব বেশ খারাপ অবস্থায়ই আছেন বলে মনে হল রাহমার। কিছু একটা বলার জন্য চেষ্টা করছেন কিন্তু গলা দিয়ে কোরবানির গরুর মতো গ্রররর শব্দ বের হচ্ছে। সেঁজুতি মুহূর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল সুযোগের সদব্যবহার করতে হবে।
“স্যার আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে?”
“জিবেরিশ”
“কাউকে ডাক দিব?” লোকটা তার সর্বশক্তি দিয়ে এইবার মাথা নাড়তে শুরু করল। সেঁজুতি লোকটার সামনে বসে পরলো।
“স্যার, আমি কি এক কাপ চা খেতে পারি আপনার ফ্লাস্ক থেকে?”
লোকটা বিস্ফুরিত চোখে চেয়ে আছে। যেনো নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছেনা।
“আচ্ছা ঠিক আছে আমি না হয় চা নাই খেলাম। কিন্তু আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আজকে মনে হয় আপনি আপনি একটু বেশিই চা খেয়ে ফেলেছেন। শুনুন আজকে অনেকেই আসবে আপনার কাছে অফিসিয়াল কাজে। পাশের রুমে এখনো কেউ আসেনি, আমার মনে হয় আজকে আর আসবেনা বেলা তো প্রায় ১১ টা বেজে গেল। আর আপনার যে অবস্থা তাতে আমার মনে হয় না আগামি দু তিন ঘণ্টা আপনি কাজ করতে পারবেন।কারও সাথে দেখা করতে গেলে কেলেংকারি ঘটে যাবে। তারচেয়ে বরং আমি বলি কি আজ পুরো সকাল আমার কোন কাজ নেই। আমি এখানে বসে থাকি। কেউ ভিতরে ঢুকতে চাইলে গম্ভীর গলায় বলব দরজায় কি লিখা আছে পড় নাই? বা আরও একটা কথা বলতে পারি স্যার এখন ব্যাস্ত আছেন আপনি কালকে আসুন। লোকগুলো তখন বিরস মুখে চলে যাবে। আর আপনি চেয়ারে বসে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিবেন। আর ভাববেন না আমি কোন কারন ছাড়া এই কাজটা করব। আমি এই কাজটা করছি কারন আমার ফিনেনশিয়াল এইডটা বিশেষ দরকার।আমার বাবা বিছানায় পরে আছেন আমার পক্ষে এই জায়গায় এতো টাকা দিয়ে পড়া একেবারেই সম্ভব নয়।তবে আমি এটা ভেবেও বসে নেই যে আমার কাহিনী শুনে আপনার চোখে পানি চলে আসবে আর আমি ফিনেনশিয়াল এইড পেয়ে যাবো। আমি জানি আমার চেয়ে অনেক ভাল রেজাল্ট নিয়েও অনেকে এই সুবিধে পায় না তবে আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আপনি আমাকে ফিনেনশিয়াল এইড টি দিবেন। আমি অবশ্য ঠিক জানিনা আপনি কেন আমাকে বেছে নিবেন।এর একটি কারন হতে পারে আমি দেখতে সুন্দরী মানুষের কনশিয়াস ও সাবকনশিয়াস মাইন্ড দুটিই সুন্দরের প্রতি বায়াসড।দুই নাম্বার কারন হতে পারে আমি বুদ্ধিমতী এবং আপনি নিশ্চয়ই সেটা এতক্ষনে বুঝে গেছেন। আপনার চায়ের ফ্লাস্কে যে চা নেই সেটা বুঝা সবার পক্ষে সম্ভব নয় কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছি। সুতরাং কোন সন্দেহ নেই আমি বুদ্ধিমান। কথায় আছে যে মেয়ে রূপবতী তার বুদ্ধি থাকে হাঁটুতে। যেই বলে থাকুক কথাটা অত্যন্ত ভুল। এখন আসি তিন নম্বর কারনে। এই ব্যাপারটিতে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত নই। এখানে আসার পর প্রথমেই আমার চোখ পরে আপনার দরজার নোটিশ এর উপরে। নোটিশ টা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল আজকে খুব বেশিক্ষন হয় নি এটা টাঙ্গানো হয়েছে। অথচ পাশের রুমে আপনার কর্মচারীদের কেউ নেই। আপনাকে দেখে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে আপনি ওটা টাঙ্গিয়েছেন। আপনার হুকুম দেয়ার অভ্যাস পালন করার নয়। আজকে সেমিস্টার এর অফিসিয়াল কাজকর্ম শুরুর দিন বেশ ভালই ছাত্রছাত্রীরা আসার কথা এপ্লিকেশন জমা দিতে অথচ আপনার সহকারীরা সব গায়েব। প্রথম থেকেই আমার মনে কিছু একটা খচখচ করছিলো। আপনার রুমে ঢুকার পর
দেখলাম আপনি চা এর ফ্লাস্ক নিয়ে বসে আছেন। এই পর্যন্তও কোন সমস্যা ছিল না। কিন্তু যখন দেখলাম আপনার টেবিল এর উপরে আধখাওয়া চকলেট পরে আছে তখন মনে হল নিশ্চয়ই কোন ঘাপলা আছে। আপনার মত শিক্ষিত মানুষ নিশ্চয়ই এলকোহল এর সাথে চকলেট খাবে না, আপনার বেশ ভাল করেই জানা থাকার কথা যে এটি রক্তের মধ্যে এলকোহলের মাত্রা বাড়িয়েই দেয় শুধু।এর মধ্যে আমি ঘরে ঢুকার পর আপনি একবার চার কাপে চা নিয়েছেন। আমি ঠিক জানিনা এলকোহলে ঠিক কিরকম স্মেল থাকে বা আদৌ কোন স্মেল থাকে কি না তবে আপনার কাপ বা ফ্লাস্ক কোনটা থেকেই আমি কোন স্মেল পাচ্ছিলাম না। বলে রাখা ভাল আমার ঘ্রানশক্তি অত্যন্ত প্রবল। পুরো ব্যাপারটা কাকতালীয় হতে পারতো কিন্তু বড় বেশি কাকতালীয়তার উপস্থিতি যখন হয় তখন তা পরিকল্পনায় রুপ নেয়। তাই আমার ব্রেইন এর একটা বড় অংশ বলছে যে এই পুরো ব্যাপারটাই একটা সেটাপ”। একটানে কোথাগুলো বলে লম্বা করে শ্বাস নিল রাহমা। পরক্ষনেই আবার মুখ খুলল
“আমার ধারনা যদি ঠিক হয় তাহলে ফ্লাস্কের মধ্যে পানি থাকার কথা। অনেক্ষন কথা বলায় গলাটা শুকিয়ে গেছে আপনার ফ্লাস্ক থেকে কি একটু পানি খেতে পারি?”
অফিসারসাহেব ফ্লাস্ক থেকে পানি ঢেলে সেঁজুতির দিকে এগিয়ে ধরলেন। ত্রিপ্তির হাসি হেসে পানিগ্লাসে চুমুক দিল সে।
“ধরে নাও তোমার অনুমান সত্য, তোমার কি মনে হয় why did we go through so much hassle”
“আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে এটি কোন এক ধরনের ইন্টারভিউ এর অংশ। আমার মনে হয় আমি বেশ ভাল করেই পাশ করেছি। তাই না স্যার?”
“ওয়েল উই উইল সি বাট ই রিয়ালি লাইক ইওর কনফিডেন্স।আফটার আ লং টাইম সামওয়ান একচুয়েলি ইম্প্রেসড মি।কীপ ইট আপ ইয়াং লেডি”
“থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। আমি কি এখন আসব?”
“হে এসো”
অফিসার সাহেব অনেক ইম্প্রেসড হয়েছেন মেয়েটাকে দেখে নিঃসন্দেহে অনেক দূর যাবে মেয়েটা। নিজের ড্রয়ার থেকে জ্যাক ড্যানিয়েল এর বোতল তা বের করে চায়ের কাপে খানিকটা ঢেলে নিলেন।

দশম দৃশ্যঃ ধানমন্ডি থানার ওসি সাহেবের রুম।
রেজা ধানমন্ডি থানার ওসির সামনে বসে আছে। ওসি সাহেব এর টেবিল এর ওপর কাগজপত্রের স্তূপ এর বদলে নান রুটি আর গরুর মাংস রাখা। রেজা ব্যস্ত ভঙ্গিতে খেয়ে যাচ্ছে। ওসি সাহেব রেজার খাওয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন। প্লেটের খাবার শেষ হলে রেজা অনেক কায়দা করে তার হাতের আঙ্গুল চেটেপুটে খেলো। ওসি সাহেব তার টেবিল এর ড্রয়ার থেকে টিস্যু পেপার বের করে দিলেন। রেজা টিস্যু পেপার নিতে নিতে বলল “আলমগির ভাই, মানুষজন যে আপনাদের এত গালি দেয়, জিনিসটা কিন্তু অত্যন্ত খারাপ। ওরা যদি একবার আপনারে চিনতো তাইলেই কিন্তু কেল্লা ফতে। আমি যখন প্রধানমন্ত্রী হবো তখন কিন্তু আপনারে আমি পুলিশের হেড বানায়া ছাড়বো। আপনি কিন্তু না করতে পারবেন না। চিন্তা কইরা দেখেন বিজয় দিবসের মঞ্চে আমি দাড়ায়ে আছি আর আপনি পুরো পুলিশ বাহিনিরে নিয়ে এসে আমারে সেল্যুট করতেছেন। জিনিসটা চিন্তা করতেই আমি পিনিকে আটকাইয়া আছি।
ওসি সাহেব গম্ভীর মুখে তার দিকে তাকিয়ে আছেন।তার সামনে যে ছেলেটা বসে আছে তাকে এতো আদর যত্ন করে খাওয়ানোর কোন প্রয়োজন ছিল না। তিনি যখন প্রথম বনানি থেকে ধানমন্ডি থানায় বদলি হয়ে আসেন তখন থেকেই একে চেনেন। চার বছর তো হবেই।চার বছর আগের কথা। থানায় এসে ওসি সাহেব শাদা পোশাকেই বের হলেন তার এলাকাটা ঘুরে দেখবার জন্য। এই সুযোগে মানুষজন কে কিরকম তাও একটু খোঁজ খবর নেয়া হয়ে যাবে।একবার সবাই চিনে গেলে এই সুবিধে টা আর পাওয়া যাবে না। সাপ যেমন খোলস পাল্টায় মানুষও তেমন খোলস পাল্টায়। তফাত টা হচ্ছে সাপের টা দেখা যায় আর মানুষেরটা দেখা যায় না। যদি দেখা যেত তবে টা যে সাপের চেয়েও বর্ণিল ও ধাধাময় হতো তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। তো যাই হোক ওসি সাহেব আসর এর আজান এর পর পরই বের হয়ে পরলেন তার মোটরবাইক টা নিয়ে।মাগরিব পর্যন্ত এ পাড়া ও পাড়ায় চষে বেরুলেন। তার এলাকাটা আয়তনে খারাপ না। বেশ ক্লান্ত হয়েই বড়সড় দেখে এক রেস্তরায় ঢুকলেন ওসি সাহেব। রেস্তরার মালিকের বিশাল কুস্তিগিরের শরীর।কালো আলখাল্লা পরে আছে লোকটা। এর সাথে ন্যরা মাথা হওয়ায় বেশ ভয়ানক দেখাচ্ছে লোকটাকে। পুলিশ হওয়ার পর থেকেই যখন সাথে অস্ত্র থাকে না আর বড়সড় কোন মানুষের সাক্ষাত পান, ওসি সাহেব বেশ ভয়ে ভঁয়েই থাকেন। পরিষ্কার দেখে একটা টেবিলে বসে পরলেন। উর্দি গায়ে থাকলে এতক্ষনে তাকে নিয়ে টানা হেঁচড়া শুরু হয়ে যেত। অবশ্য বেশিক্ষন বসতে হলো না বাচ্চা একটা ছেলে তার অর্ডার নেয়ার জন্য এসে গেল।
“কি খাইবেন বস?”
“আগে এক গ্লাস পানি নিয়া আয়”
“ঠিক আছে। অক্ষনি আন্তাসি” ছেলেটি ঘুরে পানি আনতে চলে গেল। আলমগির সাহেব এর বাইরে বের হওয়ার আরেকটা গোপন উদ্দেশ্য আছে। অনেকদিন ধরে এই লাইন এ কাজ করতে করতে অনেক জিনিস দেখা হয়ে গেছে আলমগির সাহেব এর। সাধারণত যারা প্রতিনিয়ত অপরাধ করে তারা গ্রুপিং করেই কাজগুলো করে। আর প্রতি এলাকাতেই এইরকম অজস্র গ্রুপ বা গ্যাং থাকে। মজার কথা হচ্ছে কিছু লোক আছে যারা সব গ্যাং এর সাথেই খাতির রেখে চলে। ওসি সাহেব এর দরকার এইরকম এক লোকের।এইরকেমর লোকেরা পুলিশের কাজ অনেক কমিয়ে দিতে পারে। উনি এইরকম এক ইনফরমার এর খুজে আছেন। তবে ব্যাপারটা সহজ হবে না। মানুষজন তো আর তাকে খুজে বের করে এসে বলবেনা “স্যার আপনে কি আমারে খুজতেসেন”?। এর জন্য চোখ থাকা দরকার। অভিজ্ঞ্য ওসি সাহেব এর সেই চোখ আছে।
এর মধ্যে পানি চলে এসেছে। পানি নিতে হাত বাড়াবেন ঠিক তখনি ঘটলো দুর্ঘটনা। ছেলেটার হাত থেকে পরে গেল গ্লাস টা। কাচের গ্লাস ভাঙ্গার শব্দে রেস্তরার অন্যান্য সবকিছু থমকে গেল ক্ষণিকের জন্য। আর ঠিক তার পর পরই ওসি সাহেব চোখের কোনে দিয়ে কিছু একটা আসতে দেখলেন। কিচ্ছু বুঝে উঠার আগেই ছেলেটার গালে বিরাশি সিক্কার এক চড় পড়ল। চড়টা বসিয়েছেন স্বয়ং রেস্তরার মালিক। ওসি সাহেব হতভম্ভ হয়ে আছেন। একে তো গ্লাস ভেঙ্গে সে এমন কোন অপরাধ করেনি যে তাকে এইরকম চড় মারা হবে। তার চেয়েও যে বিষয়টা নিয়ে তিনি অবাক হচ্ছেন সেটা হচ্ছে এই লোক এত বিশাল শরীর নিয়ে যে খিপ্রতা দেখাল তা শুধুমাত্র চিতা বাঘের সঙেই তুলনীয়।কাউন্তার থেকে কখন যে উঠে এসেছে তিনি টের ও পেলেন না।
ছেলেটা চড় খেয়ে প্রায় তিন চার হাত দূরে ছিটকে পরেছে। গালে হাত চেপে বসে আছে। তার মনে হচ্ছে তার উপর আরও খারাপ কিছু আছে। ওদিকে ওসি সাহেবও ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না কি করবেন। শুধু মিন মিন করে একবার বলার চেষ্টা করলেন “আরে বাদ দেন বাচ্চা মানুষ”। লোকটার কানে ঢুকল কিনা ঠিক বুঝা গেলনা।লোকটা এগিয়ে গিয়ে বিশ্রী ভাষায় গালি দিতে দিতে বাচ্চাটার গায়ে আরও একটি মাঝারি সাইজ এর লাথি বসিয়ে দিলো। ঠিক তার পর পরই যা ঘটলো তাতে পুরো রেস্তরা থমকে গেলো। ওসি সাহেব যে টেবিলে বসে আছেন তার ঠিক পাশের টেবিলের বিশ বাইশ বছর বয়েসই ছোকরাটা উঠে দাড়িয়ে বডিবিল্ডার এর গালে বেশ টানিয়ে এক চড় বসিয়ে দিল। বডিবিল্ডার হতভম্ব হয়ে গেল। চড়ের চেয়ে তার ধাক্কা বেশি লেগেছে। তবে মুহূর্তেই সামলে নিলো। ঝাপিয়ে পরতে যাবে ছোকরার উপর তার আগেই ছোকরার সাথে থাকা সাত আট জনের দলটা তাকে কোণঠাসা করে ফেলল।ঠিক দুই মিনিট এর মাথায় ওই রেস্তরার দৃশ্যপট পালটে গেল। নতুন দৃশ্যপটে ছোকরার টেবিলে ছোকরা আর রেস্তরার মালিক মুখোমুখি বসে আছে। রেস্তরার মালিকের পাশে বসে আছে ছোকরার অন্য বন্ধুরা। রেস্তরার কাজ কাম সব বন্ধ। ওয়েটার যারা ছিল তারা টেবিলের পাশে গোল হয়ে দাড়িয়ে আছে। দুই একজন একটু গলা উঁচু করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু ছোকরাদের অশ্রাব্য গালিগালাজ আর হুমকি ধামকিতে সুবিধে করতে পারল না। এখন তারাও মজা দেখতে টেবিলের পাশে দাড়িয়ে পরেছে। পিন পতন নিরবতা। এর মধ্যেই সিগারেট ধরাল ছুঁকরা।
নিরবতা ভাঙল রেস্তরা মালিক “আমার হোটেলে ধূমপান নিষেধ। অইজে লিখা আছে”
লিখার দিকে তাকাল ছোকরা সিগারেট এ ফোক দিতে দিতে বলল “তোর বউরে যে আম জনতা লাগাতে পারবে না এই কথা টা লেইক্ষা টাঙাইয়া রাখবার পারলি না। শালা বেইঞ্ছদ”। বডিবিল্ডার কিছু বলল না। পাঠকেরা নিশ্চয়ই এতক্ষনে বুঝে গেছেন ছোকরাটা রেজা ভাই ছাড়া কেউ না।
“ কালাছানের নাম কি?” পাশে থেকে রফিক জিজ্ঞেস করল। জবাব দিল না বডিবিল্ডার। ঠাশ করে আরেকখানা চড় খেলো। নিরুপায় হয়ে বুঝতে পারল আসলেই ফেঁসে গেছে লোকটা।এই ছোকরার দল এত সহজে ছাড়ার পাত্র না। যত তাড়াতাড়ি কথা বলবে তত তাড়াতাড়ি মুক্তি।
“আমার নাম বদি”
“ বদি?? হম তোর বাপ তোর জন্মের সময়ই বুঝতে পারছে তুই বদ বদ কাম কইরা বেড়াবি। এইজন্যই তোর নাম বদি। অত্যন্ত দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ তোর বাপ। এখন কাজের কথায় আসি। তুই কি জানস তোর কি অপরাধ?”
“হ জানি আমি পিচ্ছিরে মারসি”
“হুম তো এখন তোরে কি শাস্তি দেওন যায় বলতো?”
“চড় তো দুইটা খাইলাম”
“দুইটা খাইছস আরো দুইটা খাবি। কোন সমস্যা? মনোযোগ দিয়ে শোন কি বলি। তুই এই মাসের পুরো বেতন পিচ্ছিরে এখনি দিয়া দিবি। আমার পরিচিত দোকান আছে পিচ্ছি এখন থাইক্কা অইখানেই কাজ করবো। কি করবিনা রে পিচ্ছি? আমার ভাল কইরাই জানা আছে পিচ্ছি রে এইখানে রাইক্ষা গেলে আমরা যাওয়ার পর তুই তার শিয়াল কুকুর এর মতো ছিরে খাবি। কথা কি কানে গেছে”
এবার তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল বদি “ফাইজলাম নাকি? আমি পুলিশে কমপ্লেইন করুম। তোদের সবকয়টারে আমি জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়বো। কি...” কথাটা শেষ করতে পারল না আবারো ঠাশ করে চড় খেলো বদি। এইবার চড় টা মেরেছেন রেজা ভাই
“ শোন শূয়রের বাচ্চা, তুই যে পুলিশের কথা বলতাসস তাগো লগেই আমগো চলা ফেরা। আজকে সকালেও ওসি সাহেব এর সাথে থানায় বইসা একসাথে পরোটা আর গরুর মাংস দিয়া পেট পুরে খেয়ে আসছি। তুই তোর কমপ্লেইন লেখাইস। তোর পুলিশের কমপ্লেইনে আমি পিচ্ছাব করি। ওই জব্বার ক্যাশ বাকশ থাইক্কা টাকা নিয়া আয়। সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবনা। পিচ্ছি তোর বেতন কতো?”
“আডশহ টাহা”
“ ওই ক্যাশ থাইক্ষা এক হাজার টাকা নিয়া আয়। দুইশ টাহা চড়ের জরিমানা। কাহিনী শেষ। পিকছার খতম”
ওসি সাহেব পুরো বিষয় টা পাশের টেবিলে বসেই অবলোকন করলেন।
দশ মিনিট এর মাথায় রেজা তার দলবল আর পিচ্ছি রে নিয়ে বের হয়ে আসল। ওসি সাহেবও পেছন পেছন বের হলেন। তিনি দূর থেকেই রেজার নাম ধরে ডাক দিলেন। রেজা ঘুরে তাকিয়ে হাতের ইশারায় কাছে ডাকল। ছেলেটার স্পর্ধা দেখে গা জ্বলে গেলেও এগিয়ে গেলেন ওসি সাহেব।
“জে, জনাব রে কি আমার কোন কারনে ছেনার কথা”
“না আমি এই ভিতরে ছিলাম তো। পুরো ব্যপারটা দেখলাম আরকী। বেশ ভাল ছিল”
“হুম রেজার মধ্যে কোন খারাপ কিছু নাই যা আছে সবই ভাল। আমারে কি খালি এই কথা বলার জন্য ডাকছেন। নাকি আর কিছু বলবেন?”
“না মানে তোমার সাথে একটু আলাদা বসে কথা বলা দরকার”
“আপনার সাথে তো আমার এমন কোন পরিচয় হয় নাই যে আলাদা বসে বিবাহের রাইতে কে কি করসি এইতা নিয়া কথা বলত হইব। আজাইরা প্যাছাল পারার অভ্যাস আমার নাই। আপনে ফুটেন”
“না ভিতরে শুনলাম তুমি নাকি ওসি সাহেব এর সাথে সকালের নাস্তা করে আসছ। আমার মনে হয় আমিই সেই নাদাণ ওসি। এই যে আমার কার্ড। বয়স হয়েছে তো সকালের ঘটনা বিকেলে ভুলে যাই। অনেক কষ্ট করে মনে করতে পারলাম না পরোটা আর গরুর মাংশ খাবার কথা। তুমি যদি একটু মনে করিয়ে দিতা বড়ই উপকার হইত” গলা নামিয়ে প্রায় রেজার কানে কানেই বললেন কথাগুলো ওসি সাহেব।
রেজা ভাই ভেতরে ভেতরে চরম ভাবে চমকে উঠলেও তার চেহারা দেখে কিছু বুঝা গেল না। এক হাত দিয়ে ওসি সাহেব এর কার্ড টি হাথে নিতে নিতে বলল
“চলেন জনাবের সাথে এক কাপ চা খেতে খেতে গল্প করা যাবে”।
সেই দিন থেকেই রেজা ওসি সাহেবের সাথে আছে। ওসি সাহেবের টুকটাক খবর যোগাড় করে দেয়। আর যখন ইচ্ছে ওসি সাহেবের অফিসে এসে পরোটা আর গরুর মাংস খেয়ে যায়।
রেজা পান শেষ করে ওসি সাহেব এর দিকে সিগারেট বাড়িয়ে দিতে দিতে বলল “ একটা সিগারেট ধরান তো দেখি। ফাইন কাট নতুন মাল আসছে জিনিস ভাল” রেজার হাত থেকে সিগারেট নিতে নিতে বললেন ওসি সাহেব
“রেজা তোমাকে অতি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্য ডেকেছি” রেজা এক হাত দিয়ে সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল
“বলেন আলমগির ভাই”
“রেজা আমার ওপর নির্দেশ আছে যেন তোমাকে দেখামাত্র আর্যািস্ট করি। তুমি গত তিন বৎসর যাবত আমার কাজ করছ আর আমিও তোমার দিকটা দেখে রেখেছি যতটা পেরেছি। তবে গত সপ্তাহে তুমি যারে থ্রেড দিয়ে আসছ সে হচ্ছে আমাদের যোগাযোগমন্ত্রীর আপন ভাগ্নে। তুমি তো বুঝতেই পারছ মন্ত্রী তন্ত্রী দের হাত কতো লম্বা হয়। আমার পক্ষে তোমাকে আর শেল্টার দেয়া সম্ভব না। তুমি বরং কয়েকদিনের জন্য আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাও। বুঝতে পারছ কি বলছি?”
“জি ওসি সাহেব বুঝতে পারছি”
“তোমার কি কিছু বলার আছে?”
“একটা প্রশ্ন ছিল”
“কি?”
“আচ্ছা আলমগির ভাই এই ধরনের কেইসে আর্যাপস্ট হইলে কি কোর্টকাচারি হয় নাকি ডাইরেক্ট ক্রসফায়ারে দিয়ে দেন?”
“রেজা এটা ফাজলামি করার সময় না। রফিকের মুখে শুনলাম তুমি নাকি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছে বেক্ত করেছ। অত্যন্ত ভাল সিদ্ধান্ত। আমি মনে করি না তোমার মধ্যে আর কোন পড়ালেখা বাকি আছে। তবে এখন যেহেতু তোমার আন্ডারগ্রাউন্ডে যেতে হবে তোমার জন্য ব্যাপারটা খারাপ হবে না। আমি তোমার জন্য এপ্লিকেশন আনিয়ে রেখেছি। মনে করো এটা আমার তরফ থেকে তোমার জন্য ছোট উপহার”
“ধন্যবাদ আপনাকে আলমগির ভাই। মানুষ আপনা মানুষজনদের যা করেনা আপনি তা আমার জন্য করেছেন। আপনার উপকার ভুলব না আমি। কখনো যদি প্রধানমন্ত্রীর হই এই রেজা আপনারে জবান দিল আপনারে পুলিশ বাহিনির হেড বানিয়ে ছাড়বই। তখন দুজনে মিলে যোগাযোগমন্ত্রী আর তার ভাগনেরে খুজে বের করে এমন ব্যাবস্থা করবো যে তারাও আন্ডারগ্রাউন্ডে ছলে যাবে”।
ওসি সাহেব রেজার দিকে তাকিয়ে আছেন। তার কেন জানি বেশ খারাপ লাগছে। ওসি সাহেব ক্ষমতাধর মানুষ কিন্তু তার ক্ষমতারও সীমারেখা আছে।তার সামনে বসে থাকা রেজার ক্ষমতা বলতে কিছুই নেই। তবে তার আছে দুচোখ ভরা স্বপ্ন আর সেই স্বপ্নের কোন সীমারেখা নেই। তাই তার পক্ষে অবলীলায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখার বিলাসিতা করা সম্ভব
একাদশ দৃশ্য
অবশেষে ঢাকায় এসে নামল শান। তার লাগেজ হাতে নিয়ে সিএঞ্জির খোঁজ করতে রাস্তার পাশে দাঁড়াল শান। একটুক্ষণ দাড়াতেই একটা সিএঞ্জিএর দেখা পাওয়া গেল।
“কই যাবেন?”
“বসুন্ধরা যাবো যাবেন?”
“তিনশো টাকা দিবেন”
“মামা সামান্য জায়গা একশো বিশ দিবো যাবেন?”
“না” কথাটা বলেই শানকে আর কোন সুযোগ না দিয়েই গাড়ির গতি বাড়িয়ে চলে গেল ড্রাইভার। শান বিরক্ত হয়ে পকেট থেকে আরেকটা সিগারেট বের করল। ধরাতে যাবে ঠিক তখনি কানের কাছে আসলাম হুজুর কথা বলে উঠলেন
“বাবাজী কি বসুন্ধরা যাবেন?” শান একটু হলেই চমকে উঠে সিগারেট ফেলে দিতো। লোকটা সাপের মত নিঃশব্দে হাটে।
“জি বসুন্ধরা যাবো”
“আপনি নিশ্চয় চিন্তায় পরে গেছেন আমি কেমন করে জানলাম? ভয় পাওয়ার কিছু নেই আমি পীর ফকির না। আপনার সাথে সিএঞ্জিওয়ালার কথা আমি দূর থেকে শুনেছি। আর সে জন্যে আমি অত্যন্ত লজ্জিত”
“না ঠিক আছে আমি কিছু মনে করিনি”
“শুকরিয়া বাবাজী। বাবাজী আরও একটা কথা ছিল যে”
“জি বলুন?”
“আমিও বসুন্ধরাতেই যাবো। আমার এক ছাত্রের বাসায়। ছাত্র নতুন বিবাহ করেছে। মাত্র সাত মাসের মধ্যেই বউএর পেটে বাচ্চা আসছে।ছাত্র আমারে চিঠি লিখে পাঠিয়েছে অবশ্যই আসতে হবে।ঘটনা কি এখনো পুরোপুরি জানিনা। তবে সারসংক্ষেপ সুবিধের মনে হচ্ছে না। আপনি চাইলে চিঠি টা আমি আপনাকে পড়ে শুনাইতে পারি। যাই হোক সেটা পরেও করা যাবে তো বাবা কথা হচ্ছে আমি তো খুব একটা ঢাকায় আসি না রাস্তা ঘাটও তেমন একটা ছিনি না।তোমার সাথে বসুন্ধরা যাতি পারলে আমার বড়ই সুবিধে হয়।এক মুসলমানের বিপদে আরেক মুসলমানের সাহায্য করা উচিত। আমি কি তোমার সাথে যেতে পারি”।
“হে যেতে পারেন আমার কোন সমস্যা নেই”
“শুকরিয়া বাবা শুকরিয়া”
আসলাম হুজুর নতুন উদ্যমে ঝাপিয়ে পরলেন সিএঞ্জি যোগাড় করতে। তার লাফালাফি ঝাপাঝাপিতে খুব তাড়াতাড়িই সিএঞ্জির যোগাড় হয়ে গেল। শান বেশ খানিকটা বিরক্ত হলেও সিএঞ্জি পাওয়ার পর সস্থির নিঃশ্বাস ফেলল। তবে তার সস্থিতে ব্যাঘাত ঘটল অচিরেই। আসলাম হুজুর তার ছাত্রের চিঠিখানা বের করে বেশ বড় গলায় পড়তে শুরু করেছেন।
আসসালামুয়ালাইকুম
জনাব
আমার সালাম নিবেন। আশা করি আপনি ও আপনার পরিবারবর্গ ভালই আছেন। ছোটবেলা থেকে আপনার শাসন আর স্নেহ দিয়ে লেখাপড়া করিয়েছেন আমাদের। আপনার কাছে আমি চির ঋণী। আজকে আমি যা কিছু হয়েছি তার পিছনে আপনার অবদান অনস্বীকার্য। তবে দুঃখের বিষয় এই যে দিন দিন আমি ঋণের বোঝা শুধু বাড়িয়েই চলেছি। আজ বড় বিপদে পরে আপনার কাছে লিখছি। আপনি তো জানেন গত জানুয়ারী মাসে আমার বিয়ে হয়েছে। আপনাকে দুদুটি মাঝারি সাইজ এর চিঠি লিখে আমন্ত্রন জানানোর পরও আপনি বিয়েতে হাজির হন নি। হৈমন্তী ব্যাপারটা নিয়ে অনেক মন খারাপও করেছিল।হৈমন্তী আমার রূপবতী স্ত্রী।আমার মুখ থেকে আপনার প্রশংসা শুনে শুনে তার বড়ই শখ জেগেছিলো আপনারে দেখার। সে যাই হোক বিয়ের পর হৈমন্তীর সাথে আমার সংসার চরম সুখে শান্তিতে চলতে লাগল। বিয়ের এক সপ্তাহের মাথায় হৈমন্তিকে নিয়ে ঢাকার বাসায় চলে আসি। নতুন বাসায় আসার পর থেকে উল্টাপাল্টা সব জিনিস ঘটতে লাগল। দুই মাসের মাথায় হৈমন্তী অন্তঃসত্ত্বা হল। আমার জীবনটা যেন সার্থক হয়ে উঠল। বাবা হওয়ার খুশি সামলে উঠার আগেই লক্ষ করতে লাগলাম যে হৈমন্তী কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। যত দিন যেতে লাগল আমার বাবা হওয়ার খুশি বিশাদে বদলে গেল। আজ হৈমন্তীর পেটে বাচ্চা এসেছে সাত মাস হয়েছে আর এতো দিন পর আমি নিশ্চিত যে হৈমন্তীর গর্ভের সন্তান আমার নয় আর শুধু তাই নয় হৈমন্তীর পেটে যে বাচ্চা রয়েছে তা মানুস্য সন্তান নহে ইহা পিশাচের বংশ। এমতাবস্থায় আমি আপনি ছাড়া আর কারও ওপর ভরসা রাখতে পারছিনা। পত্রের মধ্যে সবটুকু বলার সাহস হল না সাক্ষাতে বিস্তারিত বলিব। আপনি পত্রপাঠে অতিসত্বর ঢাকায় চলে আসুন। মন মেজাজ বিদ্ধস্থ অবস্থায় আছে। ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমা করবেন।
ইতি
আপনার একান্ত বাধ্য
সাইফুর ইসলাম।
আসলাম হুজুর পড়া শেষ করলেন। শান হুজুরের দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখেমুখে বিরক্তির ভাব উধাও হয়ে গিয়ে কৌতূহলের ছাপ পরেছে। সে জানতে চায় পুরো গল্প অথচ তাকে শুধু শুরুর দিকটা পড়ে শুনানো হয়েছে। আজকে যদি নতুন বাসায় উঠা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি না থাকত তবে শান হুজুরের সাথে যেত পুরো ঘটনা জানার জন্য। আজকে তা সম্ভব হবে না। তবে ডিজিটাল বাংলাদেশ যখন তখন নিশ্চয়ই হুজুরের কাছে একটা ফোন থাকতেই পারে। চিন্তার সুতা এতটুকু আসতেই আসলাম হুজুর সুতায় টান দিলেন।
“বাবাজী ছেলেটার জন্য বড় মায়া হচ্ছে। অনেক মনকষ্টে আছে ছেলেটা”
“হুজুর! আপনি কতদিন আছেন ঢাকাতে?”
“তা বাবাজী আছি কয়েকদিন। এই ঘটনার সমাধান না করে তো বাড়ি ফিরতে পারি না”
“হুজুর কিছু মনে করবেন না। আমার নিজেরও ব্যাপারটা জানতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে। আপনার কাছে একটা আবদার করি?”
“জি বলেন”
“আপনি যাই করেন না কেন ঢাকা ছাড়ার আগে আমাকে একবার পুরো কাহিনীটা বলে যাবেন? দরকার হলে আপনার ছাত্রের অনুমতি নিয়ে রাখবেন?”
“ঠিক আছে বাবাজী। কিন্তু এতো বড় শহরে আমি আপনারে পাব কোথায়?”
“আপনার ফোন আছে?”
“জি আছে”
“আপনার নাম্বার টা দিন আমাকে”
“এক্সক্সক্সক্সক্সক্সক্স”
“কি নামে সেভ করবো?”
“আসলাম। আসলাম হুজুর” নামটা বলতে বলতে দাড়িতে হাত বুলালেন আসলাম হুজুর। পরক্ষনেই হাত নামিয়ে নিলেন। তার মনে পড়ে গেল আল্লাহপাক পবিত্র কোরআন মজিদে বলেছেন যে কারো হৃদয়ে যদি সর্ষে পরিমান অহঙ্কার থাকে তবে সে বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না। এবার শান হুজুরের চিন্তার সুতোয় টান দিল।
“হুজুর আমরা বসুন্ধরা চলে এসেছি। আপনি কোন ব্লকে যাবেন?”
“আমি ব্লক এ তে যাব”
“আপনি যখন রাস্তা চিনেন না তাহলে আপনিই সিএঞ্জি নিয়ে জান। আমি এইখানে নেমে হেটে চলে যাব”
“বাবাজীর অসুবিধে হবে না”
“না আমার হাঁটার অভ্যাস আছে”
“বাবাজিরে কষ্টের মধ্যে ফেলে দিলাম”
“আর না না ঠিক আছে। আপনি শুধু আপনার ফোন চার্জ দিয়ে রাখবেন। দেখা হবে”
“আল্লাহ হাফেয”
শান তার লাগেজ নিয়ে সিএঞ্জি থেকে নেমে পরলো। কানে ইয়েয়ারফন গুজে দিয়ে হাটা শুরু করলো শান। সেদিকে তাকিয়ে আছেন হুজুর। সিএঞ্জি ড্রাইভার রাস্তার পাশে ড্রেইনে প্রকৃতির ছোটখাটো ডাকের সাড়া দিতে গেল। হুজুর এখনো তাকিয়ে আছেন শানের দিকে। অবাক হয়ে লক্ষ করলেন ছেলেটা কান থেকে ইয়েয়ারফন খুলে ফেলেছে। অল্পক্ষনের মধ্যেই শানের অবয়ব মিলিয়ে গেল দূরে। এর মধ্যেই ড্রাইভার চলে এসেছে।
“ড্রাইভার সাহেব”
“জে”
“আপনারে একটা কথা বলি কিছু মনে করবেন না তো?”
“জে বলেন”
“আমরা একটুক্ষণ আগে একটা বিশাল মসজিদ পার হয়ে আসলাম। জিনিসটা লক্ষ্য করেছেন?”
“জে”
“আপনার যদি প্রস্রাবের বেগ এতো বেশি পেয়ে থাকে আপনি ওখানে গিয়েও তো করে নিতে পারতেন। তাই না? সেখানে পানির ব্যবস্থাও পেতেন। আল্লাহপাক পাক পবিত্র থাকতে বলেছেন। আমাদের কি উচিত না এইসব ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকা?”
“জে আর হবে না, এখন থেকে মসজিদে গিয়ে পেচ্ছাব করে আসব” বিচ্ছিরী হাসি হেসে ড্রাইভার বলল।
আসলাম হুজুর চুপ করে গেলেন। আল্লাহপাক যাকে হেদায়েত দেন শুধু তারাই হেদায়েতপ্রাপ্ত হয় আর যাদের কে হেদায়েত বঞ্চিত করেন তারা সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করে। হুজুর মনে মনে আওড়ালেন “আল্লাহ ড্রাইভারকে হেদায়ত দান করুন”
দ্বাদশ দৃশ্য
পরাগ রেল ষ্টেশন থেকে বের হয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছে। অন্য শহরের মানুষদের জন্য ঢাকা শহরের বাসে উঠা অনেক কষ্টের ব্যাপার হলেও পরাগের জন্য বাসে ওঠা দুধভাত। তার ছোটবেলাটা পুরোটাই কেটেছে বাসে করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে। নারায়ণগঞ্জের এক ছোট বস্তিতে জন্ম পরাগের। মা পেশায় বেশ্যা আর বাবা মাদকের ডিলার। বস্তির মধ্যেই এ ঘর ও ঘরে নিজের বয়েসি বাচ্চাদের সাথে দৌড়াদৌড়ি করে কেটেছে পরাগের জীবনের প্রথম তিন বছর। বেশির ভাগ মানুষ তার জীবনে কথা বলা শুরু করে মা শব্দ টা দিয়ে আর পরাগের জীবনের প্রথম শব্দ ছিল মাগি। তার প্রথম উচ্চারিত শব্দ যতই খারাপ হোক না কেন তার মা-বাবা দুজনে বেশ খুশি হয়েছিলো তার এই অগ্রগতি দেখে।মাত্র তিন বছর বয়েসেই বস্তির ছোটবড় সব গালি তার আয়েত্তে চলে আসে। তার বাবা তখন বেশ ভালই মাদকের ব্যাবসায় ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। বেশ সুখেই চলছিল পরাগের বাল্যকাল কিন্তু সুখ বেশিদিন টিকল না। বস্তির প্রধান মাদক ব্যবসায়ীর লোকজন এসে একদিন তার বাবাকে শাসিয়ে গেল। তার বাপ তবু ব্যবসা বন্ধ করলো না। একদিন সকালে পরাগ বিছানায় বসে বাংলা সংখ্যা পড়ছিল। একদল লোক হুড়মুড় করে ঘরের ভিতর ঢুকে পরলো। পরাগের বাবা বাসায় ছিল না।তার মা ভয়ে কুঁকড়ে গিয়ে বিছানার পাশে এসে দাঁড়ালেন। চোখেমুখে তীব্র ভয়ের ছাপ স্পস্ট। পরাগ কিছু না বুঝতে পেরে ফেল ফেল করে তাকিয়ে রইলো। লোকগুলোর মধ্যে নেতাগোছের একজন এগিয়ে এসে পরাগের বই হাতে নিল।
“বাবা তুমি কি গুনতে পার?”
“ পারি তো” ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলল পরাগ
“ঠিক আছে বেটা তুমি কি আমাকে ভয় পাইতাছো”?
“না”
“এইতো আমার সাহসী বেটা। কথা হচ্ছে এতো সাহস থাকা ভাল না। তোর বাপেরও অনেক সাহস। সাহস খারাপ না তবে কোনকিছুই অতিরিক্ত ভাল না। তোর বাপের সাহস অতিরিক্ত। যাই হোক বেটা আমার কাজ আমি ঘড়ি দেইখা করি। আজকে আমার ঘড়ি বাসায় ফালায়্যা আসছি। তুমি এক কাজ কর এক থেইক্কা একশো পর্যন্ত গণা ধরতো। আর এই ফাকে আমরা আমাদের কাজ শেষ করি। তবে খবরদার গণা বন্ধ করবা না। আমি সময়ের হিসেব হারানো পছন্দ করি না। গণা শুরু করো”
পরাগ গণা শুরু করে “এক দুই তিন চার পাঁচ......”
পরাগের চোখের সামনে তার মাকে দা আর বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হলো। পরাগ সংখ্যা গণা বন্ধ করেনা। পরাগ যখন একশোতে পৌঁছল তখন নেতা গোছের লোকটা এক কোপে তার মার ঘাড় থেকে ধর আলাদা করে ফেলে। তারা পরাগকে সেখানে রেখেই বের হয়ে যায়। পরাগ বিছানার ওপর বসে গুনতে থাকে
“একশো এক একশো দুই একশো তিন............”

পরাগের বাবা পরাগকে নিয়ে বস্তি ছেড়ে পালালো। টঙ্গিতে এসে বাস চালকের চাকরি নিল। সেই থেকে পরাগের তিনটি বছর কাটে বাবার সাথে বাস বাসে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ঘুরে। বাসের সবকিছু পরাগের চেনা হয়ে গেল তার হাতের পাঁচ আঙ্গুলের মতন।
পরাগ নিজের ওপর বেশ খানিকটা বিরক্ত হল। তার এখন এসব কিছুই মনে আসার কথা না। জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছে সে। এখানে পুরনো অধ্যায়ের কোন স্থান নেই।
পরাগ চলন্ত বাসের দরজার সিঁড়ির মধ্যে এক পা দিয়ে উঠে পরে আর তার আগেই চোখের পলকেই তার ব্যাগ টা দরজার ভিতরে থেলে দিল। বাসের ভিতরে প্রচণ্ড ভিড়। পরাগ বাসের দরজার হ্যান্ডেল ধরে ঝুলতে থাকে।চকিতেই যেন তার শৈশবে ফিরে যায় পরাগ।বাসের গতি বাড়ার সাথে পরাগের জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরু হয়। গন্তব্য ইউনিভারসিটি।
ত্রয়োদশ দৃশ্য
ফাইজা তার নতুন চাদর বিছানো তোষকের ওপর বসে আছে। তার রুমে আশবাব বলতে এই এক তোষক। আজকে রাতে মাইশার সাথে একই তোষকে শুতে হবে। মেয়েটা তোষক নিয়ে আসেনি। মেয়েটা কে চিনেছে মাত্র আজকে সকালে।ব্যপারটা মোটেও ভাল লাগছেনা তার।তাড়াহুড়োর মাথায় আগে ভাবেনি, তবে এখন সন্দেহ হচ্ছে এভাবে হুটহাট করে অচেনা একজনের সাথে ওঠা ঠিক হল কি না। তার ওপর আরও ভুল করেছে তাড়াহুড়ো করে সব মালপত্র নিয়ে এসে সবকিছু গোছাতে এতই ব্যস্ত হয়ে পরেছিল যে রাতের খাবারের কথা একদমই মনে আসেনি। নতুন বাসায় বাজার কিছুই করা হয় নি। যখন মনে এসেছে তখন বারটা বাজে। খাবার যোগাড় করার সময়ও পার হয়ে গেছে। মাইশারও একই অবস্থা। এছাড়াও তার হ্যান্ডব্যাগ মোটামুটি খালি হয়ে গেছে। আগামি পরশু দিনের আগে টাকা তুলতেও পারবেনা ব্যাংক বন্ধ। আজকালকার অন্যান্য ছেলেমেয়েদের মতো করে ফাইযা এখনো এটিএম বুথে অভ্যাস্ত হয়ে উঠতে পারে নি।
মন খারাপ করে বসে আছে ফাইযা। খিদেয় পেট চো চো করছে। ছোটবেলা থেকেই ফাইজা খিদে সহ্য করতে পারে না। তার মনে আছে একবার ছোটবেলায় তার খালাকে দেখতে পাত্রের বাড়ি থেকে মানুষ এসেছেন। পাত্র বসে আছেন। খালা পাত্রের হাতে সেমাইয়ের বাতি তুলে দিলেন। অনেক সামলে বসেছিল ফাইজা। একপর্যায়ে বসে থাকতে না পেরে পাত্রের সামনে গিয়ে হা করে বসল সে। পাত্র বেচারা ভ্যবাচেকা খেলেও পরক্ষনেই কোলে তুলে নেয় ছোট ফাইযা কে। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ফাইযার মোবাইলে রিং বেজে উঠল। বাড়ি থেকে ফোন এসেছে
“হ্যালো”
“হ্যালো ফাইজা”
“হ্যা মা বল”
“তোর বাবা বলল তুই নাকি বাসা খুজে পেয়েছিস?”
“হ্যা মা নতুন বাসায় চলেও এসেছি”
“ হ্যা শুনেছি তোর বাবার কাছে। যাক রে মা অনেক বড় চিন্তে দূর হল। তুই তো জানিস না তুই ঢাকা যাওয়ার পর থেকেই আমি সারাটা সময় কত দোয়া দুরুদ পড়েছি। বাসা টা কেমন হয়েছে রে মা?”
“হ্যা মা ভালই হয়েছে”
“যাক ভালই হল। খাবারদাবারের কি ব্যাবস্থা করেছিস?”
“কালকে বাজার করে রান্না করব মা”
“হুম ঠিক আছে আজকে কি খেলি?”
“......”
“কিরে চুপ করে আছিস যে”
“ খেয়েছি মা। বাইরে থেকে খেয়ে নিয়েছে”
“ভাল করেছিস। তোর সাথে আর কে উঠেছে রে?”
“ মা আমার এখন কথা বলতে ভাল লাগছে না। পরে কথা বলি?”
“ ঠিক আছে মা। মশারি টাঙ্গিয়ে ঘুমাস”
“ রাখি মা”
ফোন রেখে দিল ফাইযা। তার চোখের কোনে পানি জমে আছে। মাইশা মেয়েটা এখনো আসছে না। কি করছে মেয়েটা? ফোনে কথা বলছে না তো? ছেলেবন্ধু আছে কি না কে জানে। ফাইযা ঠিকমতো চিন্তা করতে পারছেনা।উঠে দাঁড়াল সে দেখে আসা দরকার মেয়েটা কি করছে।

মাইশা বাসায় উঠার পর থেকেই ব্যস্ত তার রুম নিয়ে। বেশ খানিক্ষন আগে জানতে পেরেছে তার আজ রাতে কিছু খাওয়া হবে না।তারপরও তাকে দেখে সে রকম চিন্তিত মনে হচ্ছে না। মেঝেতে একটা চাদর বিছানো তার ওপর ওর ল্যাপটপ আর বইপত্র রাখা। এরিমধ্যে সে দুবার রুম ঝাড়মুছ করেছে। ডান দিকের দেয়ালে বেশ কায়দা করে একটা পোস্টার সাঁটানো হয়ে গেছে। মাইশার আজকে শুতে হবে ফাইযার সাথে। ফাইজার সাথে আজকেই প্রথম পরিচয়।একই বিছানায় শুতে হবে ব্যাপারটা ভাবতেই কেমন অস্বস্তি বোধ করছে সে। চোখে বড় চশমা। মেয়েটাকে বেশ সহজ সরল বলেই মনে হয়েছে মাইশার। তারপরও একসাথে ঘুমানোর ব্যাপারটা কেমন যেন লাগছে মাইশার। এখনই ঘুমানোর ইচ্ছে নেই তার। একটুক্ষণ গান শোনা যেতে পারে। ল্যাপটপ অন করলো মাইশা। গান ছাড়া আর হল না তার । সারাদিনের ধকল নেয়া অভুক্ত শরীর নিয়ে মেঝেতেই ঘুমিয়ে পরল মাইশা।

ফাইজা মাইশার দরজায় তিনবার নক করে ভিতরে ঢুকে পরল। ভিতরে ঢুকে দেখতে পেল মাইশা মেঝেতে ঘুমিয়ে আছে। ফাইজা মাইশার মাথার নিচে বালিশ গুজে দিয়ে নিঃশব্দে বের হয়ে এল। নিজের রুমে এসে বালিশ আর চাদর নিয়ে চলে এল মাইশার রুমে। চাদর বিছিয়ে শুয়ে পরল মাইশার পাশে। দূরে কোথায় থেকে ভেসে আসছে কয়েকটি গানের লাইন
“Let the wind carry you home
Blackbird fly away
May you never be broken again

Beyond the suffering you've known
I hope you find your way
May you never be broken again
May you never be broken again”
গান শুনতে শুনতে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল ফাইজা।











































































০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×