ডিজুস প্রেমিক : এই মহোদয়ের যতজন প্রেমিকা, ঠিক ততটিই সিম! অপারেটর অনুসারে প্রতিটি সিমই প্রেমিকাদের সঙ্গে এফএনএফ করা! একাধিক সিম ব্যবহারের কারণ_ ইনি জানেন অপচয় করা খারাপ। টাকা অপচয় করতে চান না বলেই এতগুলো সিম! অন্যদিকে শ দেড়েক সিমের জন্য তো ততটা সেট পোষা সম্ভব নয়; তাই তিনি এক সেটেই সময়-সুযোগ বুঝে সিম পাল্টে নেন। এই পাল্টানোর সময়টাতে যদি কেউ 'কমন' সিমে কল দেয়, বন্ধ থাকাটাই স্বাভাবিকের পর্যায়ে পড়বে!
গৃহপরিচারিকা : তরুণী গৃহপরিচারিকার প্রেম হয়েছে পাশের বাসার গৃহপরিচারকের সঙ্গে। অন্যদিকে বাসার ছোট সাহেবকেও তার খুবই পছন্দ। অসম্ভব জেনেও সে পছন্দ সরিয়ে নেয়নি, যেহেতু সে নিয়মিত ঢাকাই ছবি দেখে! সে চায়, দুপক্ষই কাছে আসুক, টিকে থাকুক। সঙ্গত কারণেই ছোট সাহেব যতক্ষণ বাসায় থাকে সে ফোন বন্ধ রাখে! মানুষের মন বলা তো যায় না, এদিকে ফিরলেও ফিরতে পারে!
ছিনতাইকারী : ছিনতাইকারী এখান-সেখান থেকে প্রচুর মোবাইল সঞ্চয় করে। নানাবিধ কারণে মোবাইলের প্রকৃত মালিকের ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে এদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন হয় না বললেই চলে! ফোন মালিকের প্রেমিকার সঙ্গে একটু ভাব নেবে কি, নকল মানুষ বুঝতে পেরে ওপাশ থেকে 'গোলামের পুত' ধরনের অমানবিক গালিও আসে, সেই সঙ্গে কটুকথা, হুমকি-ধমকি তো আছেই! সব দিক বিবেচনা করে ছিনতাইকারীরা বাধ্য হয় আত্মসাৎ করা 'নিজস্ব' সিমটি বন্ধ রাখতে। প্রয়োজনে এরা নতুন নতুন সিম ব্যবহার করে!
দেনাদার : প্রয়োজনে হোক আর অপ্রয়োজনেই হোক, ধারকর্জ করা যাদের স্বভাব, ঋণগ্রস্ত থাকতে যারা ভালোবাসেন তাদের মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কহীনতার ওপর আস্থা রাখতে হয়! পাওনাদারের সম্ভাব্য ফোন করার সময়ে অবধারিতভাবে এদের ফোন বন্ধ থাকে। প্রয়োজনবোধে সিমও পাল্টানো হয়। কিন্তু তারপরও যদি কোনো পাওনাদার বুদ্ধি করে অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন দেন, কণ্ঠ চেনামাত্রই বুলি পাল্টে ফেলতে হয়_ হ্যালো, কথা বলছেন না কেন? আপনার গলায় ডিসটার্ব নাকি নেটওয়ার্কে ডিসটার্ব! হ্যালো...!
ফাঁকিবাজ শিক্ষার্থী : মর্জিনা খাতুন কিংবা কুদ্দুস হোসেনদের একই সঙ্গে শিক্ষার্থী এবং অন্যের বাগদত্তা প্রেমিক এবং প্রেমিকা হিসেবে পরিচিত হতে বাধা নেই। তাই বলে এসব বাসায় বলা যায় না! 'অফটাইমে' একে অপরের সঙ্গে দেখা করার জন্য বাসা থেকে জরুরি ক্লাস আছে বলে বের হতে হয়। দুজন মুখোমুখি হলে অবধারিতভাবে দুজনেরই মোবাইল দুটো বন্ধ হয়ে যায়। কেন! বাসার কোনো সদস্য ফোন করে যদি হৈ-হুলেল্গাড় আর গাড়ির হর্নের শব্দ শুনতে পায়, নিশ্চিতভাবে বুঝে ফেলবে জরুরি কাজটা আসলে কী! কোথায় ক্লাস হচ্ছে!
বাংলা সিনেমার নায়িকা : একই দিনে দুই পরিচালকের ছবির শুটিং। ভুলবশত দুজনকেই শিডিউল দেওয়া আছে! তাই বলে একই সঙ্গে তো দুটি ছবির শুটিং করা যাবে না! কাকে ছেড়ে কার মনই বা রক্ষা করবেন! শেষমেষ সিদ্ধান্ত নেন, নিজ বাসা থেকে বের হয়ে পর্দায় তার জুটি নায়কের বাসায় সময় কাটাবেন। নায়ককেও বলবেন, তার শুটিং ক্যানসেল করে দিতে। অবধারিতভাবে দুজনের ফোনই বন্ধ থাকবে!
রিকসাওয়ালা : একটা সময় মোবাইল শুধু উচ্চবিত্তদের ঠাঁটবাটের জিনিস থাকলেও বর্তমানে সেটা সর্বক্ষেত্রে, সবার হাতেই পেঁৗছে গেছে। কোনো কোনো রিকসাওয়ালার ক্ষেপের বিষয়টা মোবাইল ফোনেই নির্ধারিত হয়। রিকসাওয়ালা কথা এবং শিডিউল দিয়েছেন একজন প্যাসেঞ্জারকে কিন্তু পরক্ষণে না চাইতেই আরেকজন মোটা দাগের প্যাসেঞ্জার পেয়ে গেলেন! সঙ্গত কারণেই আগের অর্ডার ক্যানসেল। সরাসরি না বলা বেমানান, ফোন বন্ধ রাখলেই হলো! বুদ্ধি থাকলে চুক্তিকারী বুঝে নেবে, ফোন অফ তো ইচ্ছাও অফ!
বেকার : বাংলাদেশের বেকাররা এখনও প্রয়োজনীয় প্রাপ্য সম্মানসীমার নিচে বসবাস করে। নিজ পরিবারেই এটা প্রকট! অকর্মার ধাড়ি বলে পরিবারের সবাই গালি দেবে ঠিকই, কিন্তু কেউই ভাজা মাছটিও উল্টে খেতে চাইবে না! বেকার সদস্য উল্টে দেবে, তারপর তারা খাবে_ এই হলো অবস্থা! বাসার বিভিন্নজনের বিভিন্ন সওদাপাতি আনার টাকা নিলেও বেকার যখন নিজস্ব খাতে ব্যয় করে ফেলে, এই করতে করতে সবার অবিশ্বাসের পাত্রে পরিণত হয়। এমন অবস্থায় বাসা থেকে রিমাইন্ডার দেওয়ার জন্য কেউ কল দিলে ফোন বন্ধই পাবে! কারণ হিসেবে বেকার বাসায় এসে বলবে, 'চার্জ শেষ হয়ে গেছে, ব্যাটারিটাও ডিসটার্ব দিচ্ছে!'
অফিসের বড় কর্তা : কত কারণেই মানুষের মুড অফ থাকতে পারে! বড় সাহেবের মুড উল্টোদিকে টার্ন নিলে তিনি অফিসের রিসিপশনে বলে দেন, যে-ই আসুক যেন বলে দেওয়া হয় তিনি অফিসে নেই। সে অনুযায়ী কাজ হয় ঠিকই কিন্তু সন্ধানপ্রার্থী মানুষরা মোবাইলে খোঁজ নিতে তৎপর হয়, তখন ফোন বন্ধ না রেখে উপায় কী! মেজাজ খারাপ অবস্থায় কি সুন্দরভাবে মিথ্যা বলা যায়!