somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেটামরফসিসঃ তখনও ভদ্রলোক ছিলাম

১৮ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ২:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্ক দিয়ে রাখলাম, কাঁচা হাতের লেখার ভ্রান্তি গুলো মার্জনা করবেন আশা করছি.....
মেটামরফোসিসঃ শুরুর কথা
মেটামরফসিসঃ যখন ভদ্রলোক ছিলাম


বিশ্বাস করেন আর নাই করেন, সরষের তেল দিয়ে রুটি খাওয়াটা মোটেই আমার করা সবচেয়ে উদ্ভট কাণ্ড নয়। একটা খুব ছোটো মানুষ মনোযোগ দিয়ে তেলে ডুবিয়ে ডুবিয়ে রুটি খাচ্ছে, দৃশ্যটা মনে হয় cuteness – এর কোন একটা পর্যায়ে পড়ে। তা না হলে সেই দুর্ধর্ষ ‘ডলা’ টা আমি প্রথম দিনেই খেয়ে যেতাম, আর তার সাথে সাথে কুঁড়িতেই আমার তেল-প্রীতির ইতি ঘটতো!

আমার মধ্যে সাধু-সন্ত কিছু একটা হয়ে যাওয়ার বিরাট সম্ভাবনা ছিল। তেল-রুটির অসম ও অভূতপূর্ব সম্মিলন ঘটানো তার সামান্য symptom ছিল মাত্র। কিন্তু এই অবিবেচক সমাজ, প্রধানত আব্বু-আম্মু ব্যাপারটাকে পাত্তাই দিল না। তার পরিনামে আমার বিচরণ কোন বোধিবৃক্ষের তলায় না হয়ে এখন মহাখালি flyover এর আশেপাশে! দুপুরবেলা বাসার সবাই যখন ঘুমের দেশে ছুটি কাটাতে ব্যাস্ত, তখনই আমার সাধু-প্রতিভা হামাগুড়ি দিয়ে বের হয়ে আসতো। বাইরে খেলতে যাওয়ার অনুমতি পাওয়ার মতো বড় তখনও হইনি, তারপরও আমার সেই অলস নির্ঘুম দুপুরগুলো কিন্তু কম রঙিন ছিলোনা......

পিঁপড়ার সারিকে follow করা ছিল আমার প্রিয় কাজগুলোর একটা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন এ কাজ করে আমি আমাদের পুরো বাসায় ৩৭/৩৮ টা পিঁপড়ার গর্ত খুঁজে পেয়েছিলাম। কি কি থাকে পিঁপড়াদের বাসায় কতোভাবে যে চেষ্টা করতাম দেখার!! অনেক পরে national geography তে পিঁপড়ার বাসার ভেতরের দৃশ্য দেখে তো আমি বিরাট হতাশ!!

আরেকটা যুগান্তকারী আবিষ্কার ছিল ‘ভেন্টিলেটর’! ছোটো সাইজের মানুষ বলেই মনে হয় কখনো খুব উপর পর্যন্ত নজর পৌঁছায়নি, তাই ভেন্টিলেটর আমার অচেনাই রয়ে গিয়েছিলো। প্রথম যেদিন দেখলাম এই বস্তু, তা ও আবার একেবারে ঘরের মধ্যেই, সেকি উত্তেজনা আমার! দুপুরে সবাই ঘুমিয়ে গেলে জানালার গ্রীল বেয়ে উঠে ভেন্টিলেটরের চোখে চোখ রেখে তাকালাম। ওরেব্বাবা...ছোটো ছোটো ঘর বাড়ি, তার উপর নীল আকাশ, তাতে আবার মেঘের ভেলা...!! জাদুর জানালা দিয়ে দেখা জগতটা যে আমার জানালার বাইরেরই দৃশ্য, তা উদ্ধার করতে আমার অনেকদিন লেগেছিল...। কিন্তু রহস্যময়, লুকানো এক জগত আবিষ্কার করে ফেলার যে আনন্দ, যার অস্তিত্তের কথা কেউ জানেনা শুধু আমি জানি, সেই আনন্দটা কাউকে বোঝানোর ক্ষমতা আমার নেই...।

এখানেই শেষ নয়, প্রত্যেকদিন, অন্তত একবার হলেও, আমার মনে এক গভীর ভাবনার উদয় হতো। মনে হতো, আমরা গতকালকে যেদিনটাকে আগামীকাল বলতাম সেটা তো আজকের দিনটাই, তারমানে আজকেই আগামীকাল!? ভাবতে ভাবতে সব তালগোল পাকিয়ে ফেলার এক পর্যায়ে ছুটতাম আম্মুর কাছে! আমার প্রশ্ন, ‘আম্মুউউউউ......!! আজকে কি কালকে...????!!!’ প্রথম প্রথম আম্মু খুব আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইতেন ঘটনাটা কি, সময়ের সাথে সাথে আগ্রহটা রূপান্তরিত হয় একধরণের আশঙ্কাতে এবং আরও পরে আমার বুদ্ধিমত্তা ও ভবিষ্যৎ বিষয়ক হতাশাতে! আমি কিন্তু প্রতিদিনই দৌড়ে দৌড়ে যেতাম একই প্রশ্ন নিয়ে আর আম্মু হতাশ গলায় বলতেন, ‘হু বাবা, আজকেই কালকে...’। আমি তখন বিজ্ঞের মতো মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে ভাবতাম, ‘আচ্ছা...!! এই তাহলে কাহিনী...!!’

লেখাটা চুইংগামের মতো বড় হচ্ছে....ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি....শৈশবটা হারিয়ে ফেলার দুঃখটা চেপে রাখতে পারছিনা....



সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১২ ভোর ৪:১৫
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×