প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্ক দিয়ে রাখলাম, কাঁচা হাতের লেখার ভ্রান্তি গুলো মার্জনা করবেন আশা করছি.....
মেটামরফোসিসঃ শুরুর কথা
মেটামরফসিসঃ যখন ভদ্রলোক ছিলাম
বিশ্বাস করেন আর নাই করেন, সরষের তেল দিয়ে রুটি খাওয়াটা মোটেই আমার করা সবচেয়ে উদ্ভট কাণ্ড নয়। একটা খুব ছোটো মানুষ মনোযোগ দিয়ে তেলে ডুবিয়ে ডুবিয়ে রুটি খাচ্ছে, দৃশ্যটা মনে হয় cuteness – এর কোন একটা পর্যায়ে পড়ে। তা না হলে সেই দুর্ধর্ষ ‘ডলা’ টা আমি প্রথম দিনেই খেয়ে যেতাম, আর তার সাথে সাথে কুঁড়িতেই আমার তেল-প্রীতির ইতি ঘটতো!
আমার মধ্যে সাধু-সন্ত কিছু একটা হয়ে যাওয়ার বিরাট সম্ভাবনা ছিল। তেল-রুটির অসম ও অভূতপূর্ব সম্মিলন ঘটানো তার সামান্য symptom ছিল মাত্র। কিন্তু এই অবিবেচক সমাজ, প্রধানত আব্বু-আম্মু ব্যাপারটাকে পাত্তাই দিল না। তার পরিনামে আমার বিচরণ কোন বোধিবৃক্ষের তলায় না হয়ে এখন মহাখালি flyover এর আশেপাশে! দুপুরবেলা বাসার সবাই যখন ঘুমের দেশে ছুটি কাটাতে ব্যাস্ত, তখনই আমার সাধু-প্রতিভা হামাগুড়ি দিয়ে বের হয়ে আসতো। বাইরে খেলতে যাওয়ার অনুমতি পাওয়ার মতো বড় তখনও হইনি, তারপরও আমার সেই অলস নির্ঘুম দুপুরগুলো কিন্তু কম রঙিন ছিলোনা......
পিঁপড়ার সারিকে follow করা ছিল আমার প্রিয় কাজগুলোর একটা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন এ কাজ করে আমি আমাদের পুরো বাসায় ৩৭/৩৮ টা পিঁপড়ার গর্ত খুঁজে পেয়েছিলাম। কি কি থাকে পিঁপড়াদের বাসায় কতোভাবে যে চেষ্টা করতাম দেখার!! অনেক পরে national geography তে পিঁপড়ার বাসার ভেতরের দৃশ্য দেখে তো আমি বিরাট হতাশ!!
আরেকটা যুগান্তকারী আবিষ্কার ছিল ‘ভেন্টিলেটর’! ছোটো সাইজের মানুষ বলেই মনে হয় কখনো খুব উপর পর্যন্ত নজর পৌঁছায়নি, তাই ভেন্টিলেটর আমার অচেনাই রয়ে গিয়েছিলো। প্রথম যেদিন দেখলাম এই বস্তু, তা ও আবার একেবারে ঘরের মধ্যেই, সেকি উত্তেজনা আমার! দুপুরে সবাই ঘুমিয়ে গেলে জানালার গ্রীল বেয়ে উঠে ভেন্টিলেটরের চোখে চোখ রেখে তাকালাম। ওরেব্বাবা...ছোটো ছোটো ঘর বাড়ি, তার উপর নীল আকাশ, তাতে আবার মেঘের ভেলা...!! জাদুর জানালা দিয়ে দেখা জগতটা যে আমার জানালার বাইরেরই দৃশ্য, তা উদ্ধার করতে আমার অনেকদিন লেগেছিল...। কিন্তু রহস্যময়, লুকানো এক জগত আবিষ্কার করে ফেলার যে আনন্দ, যার অস্তিত্তের কথা কেউ জানেনা শুধু আমি জানি, সেই আনন্দটা কাউকে বোঝানোর ক্ষমতা আমার নেই...।
এখানেই শেষ নয়, প্রত্যেকদিন, অন্তত একবার হলেও, আমার মনে এক গভীর ভাবনার উদয় হতো। মনে হতো, আমরা গতকালকে যেদিনটাকে আগামীকাল বলতাম সেটা তো আজকের দিনটাই, তারমানে আজকেই আগামীকাল!? ভাবতে ভাবতে সব তালগোল পাকিয়ে ফেলার এক পর্যায়ে ছুটতাম আম্মুর কাছে! আমার প্রশ্ন, ‘আম্মুউউউউ......!! আজকে কি কালকে...????!!!’ প্রথম প্রথম আম্মু খুব আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইতেন ঘটনাটা কি, সময়ের সাথে সাথে আগ্রহটা রূপান্তরিত হয় একধরণের আশঙ্কাতে এবং আরও পরে আমার বুদ্ধিমত্তা ও ভবিষ্যৎ বিষয়ক হতাশাতে! আমি কিন্তু প্রতিদিনই দৌড়ে দৌড়ে যেতাম একই প্রশ্ন নিয়ে আর আম্মু হতাশ গলায় বলতেন, ‘হু বাবা, আজকেই কালকে...’। আমি তখন বিজ্ঞের মতো মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে ভাবতাম, ‘আচ্ছা...!! এই তাহলে কাহিনী...!!’
লেখাটা চুইংগামের মতো বড় হচ্ছে....ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি....শৈশবটা হারিয়ে ফেলার দুঃখটা চেপে রাখতে পারছিনা....
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১২ ভোর ৪:১৫