প্রিয়াকে আমার মেরেছিস তোরা
পোড়ায়েছো ঘরবাড়ি ।
আমি কি তোদের শয়নে স্বপনে
কখনো ভুলিতে পারি ?
আদিম হিংস্র মানবিকতার
আমি যদি কেউ হই
স্বজন হারানো শ্নশানে তোদের
চিতা আমি তুলবোই ।
--------------------------
--- সুকান্ত ভট্টাচার্য্য
সুকান্তের কবিতায় হিন্দু সম্প্রদায়ের জাতিভেদ দ্বারা এক নির্যাতিত যুবকের কথা বলা হয়েছে। আবার রবীন্দ্রনাথও লিখেছেন-
আমি যে দেখেছি তরুন বালক উন্মাদ হয়ে ছুটে ,
কী যন্ত্রনায় মরিছে পাথরে নিস্ফল মাথা খুটে ।
আমরা সন্ত্রাসকে ঘৃনা করি এবং সন্ত্রাসীকে মানবতার শত্রু বলে আখ্যা দেই। কিন্তু কি কারনে এই সন্ত্রাসের জম্ন তা খুজার চেষ্টা করি না।ইতিহাসে বর্নিত, জমিদার প্রথার সময়ে নিম্ন বর্নের অনেক নির্যাতিত হিন্দুরা মুসলমান হয়ে হিন্দু জমিদারদের উপর আত্নঘাতী হামলা চালিয়েছে। তাই সম্প্রতি বাংলাদেশে যে আত্নঘাতী হামলা শুরু হয়েছে, এটি বাংলায় একটি নতুন বিষয় বলিলে ভুল হবে ।
আমি নিজেও এই জাতীয় বোমা আক্রমণ বা আত্নঘাতী হামলা সমর্থন করি কিনা, এই আশঙ্কাজাত প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক। ইহার উত্তর দেওয়া আমি অনাবশ্যক মনে করি। বরং বাংলায় নতুন করিয়া এই আত্নঘাতী হামলা শুরু হইবার কারন খোঁজাই আবশ্যক মনে করি। এক কথায়,প্রশ্নটা সমর্থনের বা বিরোধের নহে,উত্তরটাই অর্থের।
আত্মঘাতী বা আদম বোমার প্রকোপ দুনিয়ার নানাদেশে, নানা সময়ে দেখা গিয়াছে। পশ্চিমা শাসক শ্রেণীর অন্তর্গত ধুরন্ধর ও বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় এই বোমা আবিষ্কারের কৃতিত ফিলিস্তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের দান করিতে গ্রীবা উঁচু করিয়া আছেন। ১৯৮৭ সালের পর ফিলিস্তিনের জনসাধারণ এক প্রকার ঢেলাযুদ্ধ শুরু করিয়াছিলেন। ইহার ফলাফল কী হইয়াছে তাহা সকলেই অবগত আছেন। মার্কিন দার্শনিক রিচার্ড রোর্টি বলেছেন পশ্চিমে এতদিন ‘গণতন্ত্র’ বলিয়া যে সামাজিক আদর্শ প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়াছে তাহা শেষ হইয়া গেছে।
ফরাসি কবি শার্ল বোদলেয়ার বহু আগেই সাম্রাজ্যবাদ প্রসারের ফলে এই রকম আত্নঘাতী হামলার উদ্ভব হওয়াকে নিশ্চিত বলিয়াছেন। অন্যায় ও সাম্রাজ্যবাদকে তিনি সমার্থক মনে করিতেন। বোদলেয়ার ছিলেন দুনিয়ার বঞ্চিত লাঞ্ছিত সর্বহারার কবি। আজকে সকলেই বলিতেছেন আত্মঘাতী ওরফে আদমবোমা জিনিসটা সত্যই বড় ভয়াবহ জিনিশ। অনেকেই পাশ্চাত্য বিশেষজ্ঞাদের সুরে সুর মিলাইয়া বলিবেন, আদম বোমারুরা কেবল নিরীহ, বেসরকারি, বেসামারিক লোক ধরিয়া মারিতেছে।
জঁ বেশলে নামক জনৈক ফরাশি পণ্ডিত একজন একজন আততায়ীর মনোবিশ্লেষন করেছিলেন এই ভাবে - ‘আমি আত্মহত্যার সুযোগ চাহিব বলিয়া পরহত্যা করিয়া থাকি। ইহাই আমার নীতিধর্ম ’। কার্ল মার্ক্স এক জায়গায় বলছিলেন, ‘মানুষ ইতিহাস নির্মাণ করে বটে, তবে সে ইতিহাস যাচ্ছেতাই নয়। অতীত থেকে আসা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে তাকে ইতিহাস নির্মাণ করতে হয়। তাকে কতগুলো অবস্থা ভাগ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হয়। তারপরে গিভেন মেটেরিয়েল দিয়ে সে ইতিহাস নির্মাণ করতে পারলে পারে, না হলে পারে না।’
তাহা হইলে—সিদ্ধান্ত হইতেছে—আত্নঘাতী হামলার জন্ম খোদ ইতিহাসে। আত্মঘাতী বোমা হইতেছে অসহায়ের শেষ সহায়। ভাষাহীনের শেষ ভাষা মাত্র। ইসলামের হৃদপিণ্ডে বোমা নাই—বোমা বাঁধা নিছক কোমরবন্ধে ।
২৭.০৩.২০১৭
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ২:৩০