somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কল্প গল্প: মেঘের পরে মেঘ জমেছে.......

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজ ছুটির দিন। তিনটা বাজে। খবরের কাগজ সকালেই পড়া হয়েছে এখন আবারও পড়ছি কারন আমি লক্ষ্য করেছি খবরের কাগজ দ্বতীয়বার পড়ার সময় অনেক ইন্টারেস্টিং খবর চোখে পড়ে যা প্রথমবারে চোখ মিস করে যায়। এই যেমন দারুন একটা খবর চোখে পড়ল-- ‘কাঠাঁল খেয়ে একই পরিবারের চার জনের মৃত্যু’। দিনাজপুরের বিরামপুর থানার জনৈক মজনু মিয়ার পরিবারে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। মজনু মিয়া সকালে নিজের বাড়ীর পেছনের কাঠাঁল গাছ থেকে একটা পাকা কাঠাঁল পেড়ে এনে বাড়ীর সবাই মিলে আরাম করে খেয়েছে। রাতেই মজনু মিয়া ও তার পরিবারের সকলের রক্ত বমি এবং মৃত্যু। আশ্চর্যজনক সংবাদ তো বটেই। বৃক্ষের ফল কি বিষাক্ত হতে শুরু করেছে।
দরজা ধরে কে যেন দাঁড়িয়েছে।
আমি বসে আছি বারান্দায়, আমার পিঠ দরজার দিকে তারপরও আমি যেন স্পষ্ট বুঝতে পারছি পেছনে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। অবাক বিষয় চোখে না দেখেও কি করে বোঝা যাচ্ছে? এমন তো না যে দাঁড়িয়ে আছে তার ছায়া এসে ঘরে পড়েচে। কিংবা তার নিঃশ্বাসের শব্দ আমি পাচ্ছি। আমি বুঝতে পারছি পেছনে কে দাঁড়িয়ে আছে- স্বাতী, আমার মেয়ে। মেয়েটার চুপিচুপি দরজা ধরে দাঁড়ানোর অভ্যাস আছে। মেয়েটার পাখি স্বভাব। পাখি যেমন গোছের ডালে বসে থাকে, কিন্তু কাছে গেলেই উড়ে যায়। আমার মেয়েটাও হয়েছে সেরকম। ঘাড় ঘুরিয়ে আমি তাকালেই সে সরে যাবে।

আমি কিছুটা বিব্রত বোধ করছি। আমি স্বাতীর বাবা নই। আমি চার আলোকবর্ষ দূরের সূর্যের সবচয়ে কাছের নক্ষত্র প্রক্সিমা সেনচুরির গ্রহ ‘জিয়ন’ থেকে পৃথিবীতে প্রেরনকৃত কৃত্রিম বুদ্ধিমাত্তা সমৃদ্ধ জৈব যন্ত্র। স্বাতীর বাবা জাহেদুর রহমানের দেহটাকে আমি ব্যবহার করছি। ভালবাসা, রাগ ,বিষ্ময়, ভয়- জাতীয় মানবিক আবেগ থেকে আমি মুক্ত। ভালবাসা একটি মানবিক ব্যপার, আমার চিন্তার ধরনে আবেগ প্রকাশ পেলেও আমি তা থেকে মুক্ত। আজকে আমি ফিরে যাব। আমি ফিরে যাবার পড়ে খবর প্রকাশ হবে জাহেদুর রহমান নিখোঁজ। স্বাতী কি তখন খুব কাঁদবে। এসব আমি কি ভাবছি।

বারান্দা থেকে দেখা যাচ্ছে বাইরে ঝুম বৃষ্টি পড়ছে। আমি আর কিছু না ভেবে ছাতা নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লাম। রাস্তায় পানি জমে গেছে। আমি পানি ভেঙ্গে হাটাতে রাস্তায় ছপ ছপ শব্দ হচ্ছে। আমি ছপ ছপ শব্দ করতে করতে এগুচ্ছি আমার খুবই ভাল লাগছে। হলুদ স্ট্রিট ল্যম্প জ্বলছে। হলুদ আলো পানিতে নানা রকম নকশা তৈরি করছে। দেখতে এতো ভাল লাগছে। আমার মনে হলো পানি বেড়ে রাস্তাটা অনেকখানি ডুবে গেলে ভাল হতো। রাস্তাটাকে মনে হতো নদী। একটা মানুষ নদীর উপর হেঁটে হেঁটে চলে যাচ্ছে। খুবই অদ্ভুত একটা দৃশ্য হতো। হঠাৎ কি মনে করে যেন পিছন ফিরে তাকালাম। মনে হলো বাড়ীর সদর দড়জা দিয়ে স্বাতী আমার দিকে দৌড়ে আসছে। তাই তো মনে হচ্ছে দৌড়াবার ভঙ্গিটাও একেবারে স্বাতীর মত। আচ্ছা স্বাতী কি বুঝতে পেরেছে আমি চলে যাচ্ছি। ও জানে আমাকে জড়িয়ে ধরলেই আমি কাঁদতে শুরু করব। ও আমাকে কাঁদাতে চায় না,তাই আমাকে বিদায় দিতে আসল না। । আমি অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে হাঁটা শুরু করলাম।

পৃথিবী নামক গ্রহটার ইতিহাসে প্রগতি হয়েছে। মানুষ জঙ্গলে ছিল। সেখানে মানুষ কী করতো? মানুষ সেখানে ছিল পেগান। তারা প্রকৃতি-পূজারি ছিল। তারপর একসময় তারা বুঝতে পেরেছে প্রকৃতিপূজা নয় কোন দেবির কি দেবতার পূজা করতে হবে। তারপর মানুষ ভাবল, না, না, গোষ্ঠী বা জাতি (ট্রাইব),পূজা এসবও ঠিক নয়। সমগ্র নিখিল জগতের এক প্রতিপালক আছেন তাঁর পূজা করতে হবে। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি আমাদের কোন কোন প্রভু নাই। কিন্তু এখন আমার কেন যানি মনে হয় যে পরিমাণে আমি নিজেই আমার প্রভু সেই পরিমাণেই আমি অসহায়। ফ্রিডম ইজ এ ডেঞ্জারাস থিং। মানুষ একহাতে বাইবেল আরেক হাতে রাইফেল নিয়ে গেছে। জয় করেছে। জয় করে তাঁরা সেখানে সভ্যতা কায়েম করেছে। কিন্তু আমার মনে হয়,মানুষ পূর্ণাঙ্গ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যখন তৈরি করে ফেলবে- তখনই মানুষ নিজেই ডেকে আনবে মানবজাতির বিলোপ। কেননা আমাদের গ্রহ দেখেই আমি বুঝতে পারছি।কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে , বা দ্রুতগতিতে নিজেকে পরিবর্তন করতে পারে - তার সাথে মানুষ পাল্লা দিতে পারবে না। কারণ মানুষের বিবর্তন হয় ধীরগতিতে।

একই ধরনের পোশাক পড়া কতগুলো লোক আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল। মাথার ভেতর কথোপকথন শুরু হয়ে গেছে। টেলিপ্যথিক যোগাযোগ......

তুমি অসাধারন ক্ষমতা নিয়ে জম্নগ্রহন করেছ। এই ক্ষমতার জন্যই তোমার মস্তিষ্কের ভেতরে অতি ক্ষুদ্র ইলেকট্রোড বসানো সম্ভব হয়েছে।এজন্যই তোমাকে পৃথিবী পর্যবেক্ষন এর মত জটিল দ্বায়িত্ব বিজ্ঞান পরিষদ থেকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তুমি সীমা লংঘনের চেষ্টা করবে না। আমরা যদিও পৃথিবী থেকে তোমাকে নিতে আসব না, তবে পৃথিবীর প্রকৃতিতে তুমি বাঁচতে পারবে না। প্রকৃতি সীমা লংঘনকারীকে সহ্য করে না্। প্রকৃতি কাউকে সীমা লংঘন করতে দেয় না। কাউকেই না। তোমাকেও দেবে না।

তোমরা বলেছিলে প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে মানুষের মস্তিষ্কের স্মৃতি ধারণক্ষমতা আরও উন্নত হবে। মানুষের বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে যোগ হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। কিন্তু তোমরা আমার মস্তিষ্ককে জুড়ে দিয়েছ কম্পিউটারের সঙ্গে। তোমরা নিউরাল নেটওয়ার্ক, কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা এবং ক্লাউড-বেইজড ম্যাশিন লার্নিং এই তিনের সমন্বয় ব্যবহার করে কৃত্রিম মানুষ তৈরি করেছ। এই সমন্বয়ের ফলে তোমাদের তৈরি কৃত্রিম মানুষগুলো পশুপাখি এবং অন্যান্য জড়বস্তুগুলোকে আলাদাভাবে সনাক্ত করতে পারে এবং সেই অনুযায়ীই সেই বস্তুগুলোতে ইফেক্ট তৈরি করে।
না ঠিক তা নয়, কোনো কাঠামো ছাড়াই তোমার মস্তিষ্ক সরাসরি যন্ত্রের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারে। এটাই তোমার অসাধারন ক্ষমতা।

আমি না ফেরার জন্য এক তীব্র আবেগ অনুভব করছি। এই আবেগ এতদিন কোথায় লুকিয়ে ছিল। স্বাতীকে ছাড়া জীবন অর্থহীন মনে হচ্ছে।
তুমি এসব কি করছ। তুমি না ফেরার জন্য মনস্থির করেছ। এটা তুমি করতে পার না।
আমি আমার আবেগ নিয়েই থাকতে চাই্ যারা মানবিক আবেগ থেকে মুক্ত আমি তাদের পছন্দ করি না।
তুমি বিরাট ভূল করছ।
আমি কোন কথা বলতে চাচ্ছি না ।
স্বাতীকে তোমার প্রয়োজন নেই ।
কে বলল প্রয়োজন নেই ।
আমরা বলছি ।
তোমরা বললে তো হবে না। আমার প্রয়োজন আমি বুঝব। আমি আমার মেয়েকে এই পৃথিবীতেই চাই।
আমাদের কথা শোন । পৃথিবীর প্রকৃতি তোমাকে বাঁচিয়ে রাখবে না।
আমাকে ডাকাডাকি করে কোন লাভ হবে না। আামি আমার ক্ষমতা অনুভব করছি। আমি ভালবাসতে পারি।

আমি বাড়ীর গেটে হাত রাখতেই স্বাতী দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমি কোমল গলায় বললাম, কেমন আছ মা।
আকাশ ঘন কৃষ্ঞবর্ন। মেঘের পরে মেঘ জমেছে। ভয়াবহ দুর্যেগের আর দেরী নেই। আমি যানি এই প্রকৃতি অনিয়ম সহ্য করবে না। এবং কিছুক্ষনের মধ্যেই আমাকে গ্রাস করবে।
স্বাতী বলল- বাবা আমার ভয় লাগছে। খুব ভয় পাচ্ছি বাবা।
আমি লক্ষ্য করলাম, আমার স্মৃতি ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে। পায়ের নীচের মাটি কাঁপছে। প্রকৃতির ক্রোধের সমস্তই যেন আমার উপর দিয়া একই নিশ্বাসে ধূলির স্রোতের মতো উড়ে চলছে। মনে হয় প্রকৃতির হাসিও নাই, কান্নাও নাই। কেবল মানুষই অতীতের জন্য শোক করে, বর্তমানের জন্য ভাবে, ভবিষ্যতের আশাপথের দিকে চেয়ে থাকে। কিন্তু প্রকৃতি প্রতি বর্তমান নিমেষের শতসহস্র নূতন অভ্যাগতকে নিয়ে ব্যস্ত। কেউ কি কখনও মনে রাখবে এই পৃথিবীর বাতাসে আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে গেলাম। আমি চলে গেলে কি কেউ আমার পশ্চাতে পড়ে বিলাপ করতে থাকবে, নূতন অতিথিদের চে অশ্রু বরন করতে কে চায়? বাতাসের উপরে বাতাস কি স্থায়ী হয়। না না, বৃথা চেষ্টা। প্রকৃতি কিছুই পড়ে থাকতে দেয় না – হাসিও না, কান্নাও না ।

১৮.০৪.২০১৭

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৪:৪০
১৯টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×