somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রমজান মাস এবং ঈদুল ফিতরঃ মানবতাবোধের এক মহান শিক্ষা

২৬ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছেলেটি পথের ধারে অঝোরে কাঁদছে। পাশকেটে সবাই চলে যাচ্ছে যে যার কাজে। কেউকেউ নতুন জামা-কাপড় পরে আনন্দে হইচই করছে। অনেকে ঈদের মাঠে যাবার জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছে। কিন্তু ওর দিকে কারও নজর নেই। হঠাৎ নজর আটকে গেল একজনের। তিনি থমকে দাঁড়ালেন। মমতামাখানো কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেনঃ কাঁদছো কেন, বাবা?
-আমার মা-বাবা নেই। আমার ঈদের জামা-কাপড় নেই, তাই-

-আর কেঁদোনা; তোমার মা-বাবা নেই তো কী হয়েছে, এসো আমার সঙ্গে। তোমারও নতুন পোশাক হবে-বলে তিনি ওকে সাথে নিয়ে তবে বাড়ি ফিরলেন।

বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ডাকলেন সহধর্মিনী আয়েশাকে (রাঃ), দেখো-কাকে নিয়ে এসেছি, সে-ও আমার মতো এতিম। একে গোসল দিয়ে নতুন জামা কাপড় পরিয়ে দাও। মহানবীর (সাঃ) স্ত্রীও দ্বিরুক্তি বা বাদ-প্রতিবাদ না করে সঙ্গেসঙ্গেই ওকে গোসল করিয়ে ঈদের সাজে সাজিয়ে দিলেন। ছেলেটি তখন মা-বাবার শোকভুলে আনন্দে একেবারে আত্নহারা।


ইসলামের দুটি ঈদই আসলে ত্যাগের আনন্দে অদ্বিতীয়। যদিও ঈদ শব্দের অর্থ খুশি বা আনন্দ। কিন্তু ইসলামে তার ব্যাপ্তি নির্দোষ আনন্দের মাত্রাছাড়িয়ে সীমাহীন নয়। ঈদুল ফিতর অর্থ হচ্ছে ফিতরার ঈদ অর্থাৎ ফিতরাপ্রদানের মাধ্যমে যে আনন্দ তা-ই ঈদুল ফিতর। এ কারণেই এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে পবিত্র রমযানমাস ও রোজার মহান শিক্ষা। নবী (সাঃ) বলেন, যারা রমযানের রোজা রাখেনা, তারা যেন ঈদের মাঠে না আসে। অর্থাৎ তাদের কোন ঈদ নেই। তাদের ঈদের আনন্দ করার কোন অধিকার নেই।

এর কারণ কী? আল্লাহ একমাসব্যাপী নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সকলপ্রকার ইন্দ্রীয় সুখ ও পানাহার থেকে বিরত থেকে শুধুমাত্র ‘‘আল্লাহভীতি’’ অর্জনের জন্যই রমযানমাসের রোজা বাধ্যতামুলক করেছেন। হাদীসে বলা হয়েছে- রোজা হচ্ছে যুদ্ধে আত্নরক্ষার ঢালস্বরূপ। প্রকৃতপক্ষে রোজার কঠোর সাধনার মাধ্যমে সকল প্রকার মানবীয় গুণাবলীর চরম বিকাশ ঘটে এবং খারাপ অভ্যাসগুলো বিদুরীত হয়। একজন মুসলমান রোজা রেখে আরও উত্তম মুসলিমে পরিণত হবে-এটাই স্বাভাবিক। ফলে রোজার মাধ্যমে ক্ষুধার জ্বালাবোধ, অভাবী-গরীবদের দুঃখ-কষ্টবোধ, মানবতাবোধ, শৃঙ্খলাবোধ, দুস্থদের প্রতি সহমর্মিতা, সহানুভুতি, সমানুভুতি, সময়ানুবর্তীতা ইত্যাদি জাগ্রত হতেই হবে। এটাই রোজার মূলশিক্ষা।

একজন রোজাদার সারামাস ইন্দ্রীয় সুখ-সম্ভোগ ও পানাহার পরিহার করে যে শিক্ষা অর্জন করে, তা বাকী এগারো মাস নিজের জীবনে সমুন্নত রাখতে পারলেই সে সফল। অন্যথায় তার রোজা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে বাধ্য। এ ব্যাপারে প্রচুর হাদীস রয়েছে। রোজার পুরস্কার তাই স্বয়ং আল্লাহই দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর এ রোজা পালনের সফল উপসংহারের নামই হচ্ছে- পবিত্র ঈদুল ফিতর ঈদ উদযাপন। অর্থাৎ একমাসব্যাপী সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ হালালকাজসমূহ আবারও চালু হলো এবং ঈদের আনন্দের মাধ্যমে ধুমধামের সাথেই এখন খাও, দাও আর স্ফূর্তি করো। ঈদের আগের ও পরের দিনসহ ঈদের কয়দিন তাই রোজারাখা হারাম করা হয়েছে। অর্থাৎ এ সময় রোজাদারদের আনন্দ-স্ফূর্তি করার জন্যই ঈদের আগমন, রোজা রাখার জন্য নয়। তাই আর কোন উপোস নয়।


কিন্তু সেই ঈদপালন যেনো অমানবিক ও স্বার্থপরের মতো না হয়, তাই আল্লাহতায়ালা ফিতরার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করেছেন। মূলতঃ গরীব-দুঃখীদের ঈদে একাত্ম করার জন্যই এ ফিতরার প্রচলন। ঈদের মাঠে যাবার আগে নিজ নিজ পরিবারের জীবিত সদস্যদের পক্ষ থেকে মাথাপিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ (চাল বা গম) অর্থ তুলে দিতে হবে গরীব প্রাপকদের হাতে, যাতে তারাও নতুন কাপড় কিনে পরতে পারে, খাদ্য কিনে আনন্দ-ফূর্তি করতে পারে। এদেশে বর্তমানে মাথাপিছু ফিতরার পরিমাণ হচ্ছে মাত্র ৫০ টাকার ওপরে। যদিও সুনির্দিষ্ট হিসেবের বাইরেও ইচ্ছেমতো ফিতরার অর্থ বিতরণ করা যায়। ফিতরার টাকা যেহেতু গরীব-দুঃখীদের হক-অধিকার, তাই টাকাটা এমনিভাবে বন্টন করা উচিৎ যাতে একটা দুঃস্থ পরিবার সত্যিই ঈদের আনন্দে শরিক হতে পারে এবং তাদের আর কারো কাছে হাত পাততে না হয়। নবীর রাজত্ব বা শাসনামলে যাকাত আদায় এবং তা যথাযথভাবে প্রাপকদের হাতে তুলে দিতে শক্তিশালী যাকাত বিভাগ বা যাকাত ব্যাংক ছিলো। ফলে আদায়কৃত যাকাত বিতরণে কখনো সমস্যাও হয়নি; এমনকি এখনকার মতো একজনের প্রাপ্য আরেকজনে ভোগ কিংবা ভক্ষকের টাকা রক্ষকের পেটে যাবার সুযোগও ছিলোনা।

মনে রাখতে হবে যে, যাকাত বা ফিতরা কোন দান বা সাহায্য নয় আদৌ বরং এটি দুঃস্থের অধিকারমাত্র। তাই এখনকার মতো ভিক্ষার আদলে ফিতরার টাকা ভেঙ্গেভেঙ্গে আর জনেজনে বিলিয়ে দিলে ফিতরার পুরো উদ্দেশ্য-লক্ষ্য আসলেই অর্জিত হয়না, এ বিষয়টি আমাদের ভাবা দরকার। বলা হয় যে, এ দেশের যাকাত আর ফিতরা প্রদানকারীদের নিকট থেকে যে পরিমাণ টাকা সংগৃহীত হবে, তা দিয়ে অন্তত আমাদের পুরো একটা বাজেট প্রণয়ন করা সম্ভব। ফলে আমাদেরও উচিৎ কর্মসংস্থান ব্যাংক এবং যুব ব্যাংকের আদলে সুনির্দিষ্ট লক্ষাভিসারী শক্তিশালী যাকাত ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা যাতে সরকারী-বেসরকারীভাবে সংগৃহীত যাকাত ফান্ডের অর্থ যথাযথভাবে প্রাপকদের কাছে পৌঁছানো যায় এবং দেশের ব্যাপক বেকারত্ব ও দারিদ্রবিমোচনে যাকাত কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রাপকদের ভিজিডি বা ভিজিএফ কার্ডের আদলে কিংবা যাকাত ব্যাংকের নির্দিষ্ট বই বা চেকবইয়ের মাধ্যমে তাদের প্রাপ্য সহজেই হস্তান্তর করা যেতে পারে।


কিন্তু আমাদের সমাজে আমরা কী দেখি। রোজা রাখুক বা না রাখুক জাঁকজমকের সাথে ঈদপালন করা চাই-ই। অথচ ঈদের আনন্দ হচ্ছে ত্যাগের মাধ্যমে নির্দোষ ও পবিত্র আনন্দ। আমরা কীরকম আনন্দ করি? কোনকোন ক্ষেত্রে এমনই কদর্য প্রকৃতির আনন্দ, যা রোজার শিক্ষার ধারেকাছেও যেতে পারে না। তাছাড়া, ফিতরার ত্রুটিপূর্ণ বন্টননীতি বা হযবরল পদ্ধতির মাধ্যমে বর্তমানে ঈদের আগে-পরে গরীব দুঃখীদের তেমন একটা ভাগ্য পরিবর্তনও হয় না। যেমন এতিমশিশুটির ক্ষেত্রে তার ভাগ্যই বদলিয়ে দিয়েছিলেন নবী (সাঃ)। তিনি তাকে বলেছিলেন, ‘‘ আজ থেকে তুমি এতিম নও। আমি তোমার বাবা আর আয়েশা (রাঃ) তোমার মা।’’ তাই আমরাও কি গরীব দুঃখীদের দুদর্শালাঘবে নবীর (সাঃ) অনুসরণে সমানুভূতি, সহানুভূতির প্রকাশ ঘটাতে পারি না?

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:২৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×