পত্রিকায় খবর ছেপেছে বরগুনা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর উপকুলে বড় আকারের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে । পাথরঘাটা এলাকায় একটি মৎস্য অবতরন কেন্দ্র আছে যেখানে সাগর আহরিত মাছ তোলা হয় । ইলিশ মৌসুমে লক্ষ জেলে নদীমুখ এবং স্বল্প গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যায় । কিছু নৌকা যা ইঞ্জিন লাগানো সমুদ্র থেকে ধরা ইলিশ নিয়ে পারে আসে মাছ ভাগ করে বরফ দিয়ে বরিশাল , ঢাকা , খুলনাতে লঞ্চে নিয়ে যাওয়ার জন্য । একধরনের বড় ট্রলার বরফ নিয়ে পাশেই অপেক্ষা করে । ওদের কাজ চাহিদা মাফিক বরফ যোগান দেওয়া । মধ্যস্বত্বভোগীদের কল্যানে আমরা স্বল্প দামের মাছ বহুমুল্য দিয়ে খাই । একবার ৯৫ সালে একজন ইলিশ ব্যাবসায়ীর সাথে গল্প করছিলাম । চর দুয়ানি থেকে খুলনা একটি লঞ্চ যাতায়াত করে । লঞ্চ আকারে লম্বা এবং এর পুরো শরীর জুড়ে বাধা থাকে বড় অ্যালুমিনিয়াম হাড়ি যেগুলো ফেরত আসার সময়ে মাছ এবং বরফ দিয়ে ভর্তি থাকে । এই লাইনে যাত্রী কম শুধু হাড়ি আর বাহক দিয়ে ভর্তি থাকে । পাথরঘাটা আর তালতলি , আমতলিতে সাগর থেকে আনা মাছের পাইকার হাট বসে । দুটি নদী পায়রা আর কীর্তনখোলা সমুদ্রে মিলেছে এখানে । এই নদীর পানি মিষ্টি । এই দুই নদী পদ্মা আর মেঘনার পানি বয়ে আনে । এর সঙ্গমস্থলে বঙ্গোপসাগরে নোনা পানি দিয়ে ভর্তি । লোকটি আমায় জানালো এই মিষ্টি আর লবন পানির মোহনায় ইলিশ মাছ কাঁধের দিকে চওড়া হয় এবং রান্নার সময় ইলিশের গন্ধ ছোটে প্রচণ্ড , খেতেও সুস্বাদু । আমি তাকে বললাম তাইত কোন কোন মাছ খুব বেশি স্বাদ হয় এবং রান্নার সময়েই দারুন গন্ধ ছোটে । লোকটি আমার জীবনে খুব উপকার করেছিল এসব তথ্য দিয়ে । ইলিশ দক্ষিনাঞ্চলের সর্বত্র পাওয়া যায় কিন্তু স্বাদের ইলিশ পাথরঘাটা , আমতলির । পদ্মার ইলিশ শুধুই গল্প । ও আমায় আরো বলল নোনা পানি আর মিষ্টি পানির মিলন একটা রহস্য বটে ইলিশের স্বাদের ক্ষেত্রে । এখনকার সময়ে ইলিশ মাছ খুব দ্রুত পরিবহন হয় ঢাকা খুলনা বরিশালে । সাগরের ভিতরে বড় ট্রলারে মাছ ভর্তি হয়ে ভারতের সীমানায় ঢুকতে দেখেছি নিজ চোখে । সেই গল্প পরে বলব ।
২০১৯সালে একডজন ইলিশ কিনে মজুত করেছিলাম ধীরে খাব বলে । খুব জিতেছি মনে করে দেখি মার্চ মাসে ইলিশের দাম কম বাজারে পর্যাপ্ত জোগান । গত তিন চারদিন আগে ওটার শেষ টুকরো সাবাড় করলাম । পত্রিকার খবর নিচে যোগ করলামঃ বরগুনা জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, দেশের উৎপাদিত মোট ইলিশের ১৩% বরগুনা জেলায় আহরণ করা হয়। গত অর্থবছরে এ জেলায় প্রায় ১ লাখ ২০ টন ইলিশের আহরণ ছিলো। বরগুনার পাথরঘাটায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইলিশ মৎস্য বন্দর এবং এখানে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটিও (বিএফডিসি) অবস্থিত। ইলিশ মৌসুমে এ অবতরণ কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে দুইশ’ টন রুপালি ইলিশ বেচা-কেনা হয়। গত দুই দিনে বিএফডিসি পাইকারি মাছ বাজারে যে ট্রলারগুলো এসেছে সেগুলোর জেলেরা ৮০০ গ্রাম থেকে পৌনে দুই কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি করেছে। তবে দামটা ছিল খুব চড়া। এক কেজি ওজনের ওপরের ইলিশের মণ ছিল ৪৬ হাজার টাকা এবং এক কেজি ওজনের নিচের ইলিশের মণ ৩৪ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। প্রতিটি ট্রলারই ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি করেছে জানালেন, পাথরঘাটা বিএফডিসি পাইকারি মাছ বাজারের মার্কেটিং অফিসার মো. অলিউল্লাহ। তিনি আরও জানান, গত এক সপ্তাহে এই বাজারে নদী ও সাগরের ৯১ হাজার ৭২৪ মণ ইলিশ মাছ বিক্রি হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। সাগরে ঝড়-বাদল যদি না থাকে তাহলে এ বছর ইলিশের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।
নদীগুলোতে কম সংখ্যক হলেও বড় সাইজের ইলিশ ধরা পড়ছে। ইলিশের আকার বড় হওয়ায় স্থানীয় বাজারে দামও খুব চড়া। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার দু’শ টাকা দরে আর তার চেয়ে একটু বেশি ওজন হলেই তা বেড়ে দেড় হাজার টাকায় উঠে যাচ্ছে বলে ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান। পাথরঘাটায় অতি সম্প্রতি ২ কেজি ৭০০ গ্রাম ওজনের একটি মাছ বেচাকেনা হয়েছে পাঁচ হাজার ৯০০ টাকায়।
দাম চড়া হওয়ার কারন দাদন ব্যাবসা । এই দাদন ব্যাবসা দেশকে খেয়ে ফেলল । জেলেদের জন্য ব্যাঙ্ক লোণ আছে । লোণ নিতে গেলে গোন ( মাছ ধরার সময়) ফুরিয়ে যায় । ব্যাঙ্কের লোকেরা তেল ছাড়াই ঘুমায় । আমরা প্রায় দ্বিগুণ পয়সা খরচ করে মাছ কিনি । মাছের উৎপাদন যেমন বাড়ানো গেছে তেমনি দাদন বন্ধ করা যায় এতে জেলে উপকৃত হয় । আমাদের সবকিছু অগোছালো ।
খুলনাতে ৯৫সালে চিংড়ি খামার থেকে ফিরে শুনি বাজারে ইলিশে সয়লাব , দাম ৬৮ টাকা কেজি । পরদিন নাস্তা না খেয়েই বাজারে গিয়ে দেখি ক্রেতা নেই বা আমিই দেরি করে এসেছি । ইলিশ ৭১ টাকা কেজি । সবচে বড় ৩,৯০০ গ্রাম । বাকিগুলো গড়ে আড়াই থেকে তিন কেজির মধ্যে । দশটি মাছ কিনে কাটতে দিলাম । লবন আর হাড়ি পাশেই ছিল , কিছু মাছ লবনজাত করে বাসায় ফিরলাম । কাজের মেয়েটিকে বললাম নাস্তা খাবনা তুই ভাত দে আর বড় মাছের চার টুকরো তেলে ভাজ । গান বাজিয়ে গোসল করছি এমন সময় মেয়েটি ভয়ার্ত স্বরে বাথরুমের দরজায় আঘাত করছে । ভাবলাম আমার পুত্রধন ৮ মাসের , মেঝেতে গড়াগড়ি দিয়ে চলাফেরা করে , তারকি কোন বিপদ হল । তোয়ালে পেঁচিয়ে মেয়েটির পিছপিছ রান্নাঘরে গিয়ে দেখি চুলার উপরে কড়াইয়ে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে । আমি তাৎক্ষণিক গ্যাস লাইন বন্ধ করে দেখলাম কড়াই ভরে তেল গড়িয়ে পড়ছে আর বাড়তি তেলে আগুন জ্বলছে । মেয়েটি তাড়াতাড়ি বলল মামা তেল অল্পই দিয়েছি মনে হয় মাছের তেল------- । যাক কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি । তেল কমিয়ে আলাদা বাটিতে রাখলাম । খেতে বসে মনে হল স্বর্গ থেকে আনা ইলিশ খাচ্ছি । মাছের বাড়তি তেল দিয়ে পরের ক’দিন ইলিশ রান্না , সব্জি ইত্যাদিতে কাজে দিল।
পাঠক , আপনাদের জীবন ইলিশময় হোক ।।