অনেকদিন ধরেই ভাবি বাংলাদেশ নিয়ে লেখা দরকার । লক্ষ ছবি তুলি কিন্তু তা পি সি তেই জমে থাকে , আলোর মুখ দেখে না । আজ ছবি নিয়ে বসেছিলাম । এসে গেল গাওসিয়া – নিউমার্কেটের ছবি । ফুলুরি দিয়ে শুরু করা যাক । গাওয়াসিয়ার একদম কোনে যে দোকান খানি তার নাম ছিল রুহি সুইটমিট এবং এখনো তাই আছে । ৭৬ সালের নভেম্বরে দেখি কোনের দোকানটার সামনে একটা ছোট ষ্টোভের উপর ছোট সাইজ ব্যাচেলর কড়াই । তাতে ফুলুরি ভাজা হচ্ছে । আশেপাশে কেউ নেই । গাওসিয়া মার্কেটের ভেতরে রাতে গরু থাকত । বাইরে দুই বা তিনটি দোকান নিশ্চিত লসে চলত । এলিফ্যানট রোড ফাকা , গাওসিয়া থেকে সায়েন্স ল্যাব ফাকা মাঝে পেট্রোল পাম্প । চন্দ্রিমা ছিলনা । নিউমার্কেটের উত্তর দেয়ালএর পাশে বিশাল কাচা বাজার বিশাল ছাউনির নিচে । নুর ম্যানশন নিচের তলায় কিছু দোকান ছিল বাকি সব ফকফকা । বেশ আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কি হচ্ছে এখানে । পালং শাক ডাল বাটা দিয়ে ভাজা হচ্ছে । নাম দিলাম ফুলুরি । দাম বিশ পয়সা এক প্লেট । গুনে দেখলাম ৭ কি ৮ পিস দিয়েছে । আমরা দুজন খেলাম এবং দোকানদারকে আশ্বাস দিলাম বেশ স্বাদের হয়েছে কিন্তু । মলিন হাসি হেসে উত্তর দিল টিকলে হয় । ওরা বিকেলে জিলাপি ভাজত কিছু আর মিষ্টি একরকম মাত্র । আরও দুজন গাহাক এগিয়ে এল আগ্রহ নিয়ে । আমাদের দিকে তাকালে চোখের ইশারায় বললাম উক্কে বস । ওরাও দাড়িয়ে খেতে খেতে মুখের সন্দেহজনক মানচিত্র পাল্টে ফেলল । ব্যাস ওই শুরু । দেশ ছাড়ার আগে দাম বেড়ে আট আনা হল , মানুষ কিছুটা বেড়েছে । ৮৫ সালে ছুটিতে এসে দেখলাম আগের সেই এতিম ভাব আর নেই । দোকান পাট বেড়েছে সাথে মানুষ বেড়েছে । ফুলুরি বেশ চলছে । কড়াই বড় , ফুলুরি দেড় টাকা । খেলাম মন ভরে । ৮৮ সালে হাট বাজার বসে গেছে গোটা এলাকায় । চন্দ্রিমা একতালা । নিউমার্কেটের ভেতরে জমেছে কিন্তু তখনও দোকানিরা বারান্দা আর মার্কেটের রাস্তা দখল করেনি । এরপর বহুভাবে এই এলাকায় এসেছি এবং চারিদিকে মানুষের চেয়ে দোকানের পরিমান বাড়তে দেখে আতংক বোধ করেছি । গাওসিয়ার ভেতরের গরুর ইজ্জত মেরে শাড়িওয়ালারা দশ পনেরো হাজার টাকার দাম হেকে পুনস্থাপন করেছে । ২০০০ সালে বিকট অবস্থা । আমরা শপিঙ্গে এলে ফুলুরি খেতে বা ঠোংগা ভরে বাসায় নিতে ভুলি না । এখন পালং নয় কলমি শাক দিয়ে পোষায় , কলমি শব্দটি আমার কানে কানে বলল । ২,৪,৬,৮,১০ টাকায় ঠেকেছে । কি ভিড় , সাথে শামি কাবাব ধরিয়ে দাম করেছে ২০ টাকা । এই সেদিন ২০১৯ এই ছবি তোলার সময় ওদের শুরুর গল্প বললাম । ফুলুরিই বিক্রি হয় লাখ টাকার । স্বাদ কমেনি , তেতুলের টক একই রকম আছে ।
খুব কম কথায় বলে দেই । গোটা এলাকা এক বীভৎস রুপ নিয়েছে । ফুটপাত দখল , নিউমার্কেটের ভেতরে রাস্তা দখল , বারান্দা আগেই শেষ । ভেতরে গাড়ি ঢোকে আর এখানেই আপত্তি । গোটা এলাকায় ফাকা জায়গা নেই । ভাবছেন ব্যাবসা হচ্ছে খুব? জি না , দোকানী গাহাককে কলার ধরে শাসাচ্ছে নেবেননা দাম করলেন কেন ? ঠ্যাং ভাইঙ্গা দিমু । খুব অসহায় লাগছিল । ২০১৫ সালে চন্দ্রিমার দোতালায় দাম করে দোকান থেকে বেরিয়ে আসতেই ১০/১২ বছরের শিশু আমি ও আমার স্ত্রীকে বলল “আপনারা এই মার্কেটের কলঙ্ক” । আমরা দৌড়ে পালালাম । ঝামেলাহিন মানুষেরা আর ওদিকে যাইনা । আমরা কিছু দোকান খুজে পেয়েছি যেখানে অপমান অপদস্থ হতে হয়না । ঢাকা কলেজের উল্টো দিকের দোকানে দর দাম করে মাল না নেওয়ায় কিশোরীকে শরীরে হাত দিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নিল । ঢাকা কলেজের দাঙ্গাবাজ নেতারা এইসব দোকানের তোলা তোলে আর প্রটেকশন দেয় । আশপাশের মানুষ কিছুই বলল না , আমিও না ।
ছবিগুলো নিউমার্কেটের ওভারব্রিজের ওপর , রুহি সুইট মিট আর নিউমার্কেটের ভেতর থেকে তোলা ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:২৫