somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিচার সাহিত্য ।। টিচার্স ট্রিওলজি

১৮ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১০:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টিচার্স ট্রিওলজি


অংকের শিক্ষক জলিল স্যার প্রথমে জালালের কান ধরেছিলেন এবং কিছুতে একটু বিব্রত হয়ে পকেট থেকে রুমাল বের করে আঙ্গুল ভালো করে মুছে এবার রুমাল দিয়ে কষে কান ধরলেন । ক্লাসে এদিক ওদিক বেশ মজা লুটছে কেউ কেউ। অংকের ক্লাসে বেতের বাড়ি অহরহ ঘটনা ।
-অংক করিসনি কেন ?
উত্তর নেই।
জালালের চোখে কেতর ও মুখের পাশ দিয়ে রাতের গড়িয়ে পড়া লালা শুকিয়ে সাদা হয়ে আছে , চুলে চিরুনিও লাগেনি । ওর মা কি খেয়াল করেন না এগুলো।
-স্কুল থেকে ফেরত গিয়ে কি করিস ?
-দোকানে বসি। মৃদু স্বরে উত্তর ।
-প্রতিদিন কত মারিস?
জালাল নিশ্চুপ । ক্লাস এবার রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছে জানবার জন্য যে জালাল কত মারে।
-সেদিন হাওড়া বেকারিতে ১৮রুপি খরচ করে বন্ধুদের খাইয়েছিস, তোর হাতের সেই ৫০ রুপির নোট কোথায় পেয়েছিলি?
লা-জবাব জালাল।
টেবিলের কিনারে বেত ছিল তা তুলে স্যার জালালের পশ্চাৎদেশে বেদম মারলেন।
জালালও দুহাত দিয়ে তা ঠেকাতে লাগলো ।
ক্লান্ত জলিল স্যার এবার ওর জামা সেই রুমাল দিয়ে ধরে টেবিলের কাছে টেনে দাড় করালেন। হাক পাড়লেন কেউ ব্লেডখানা দে তো।
পুরো ক্লাস এবার একদম নড়চড়হীন কি ঘটতে যাচ্ছে সেই অজানা ভাবনা নিয়ে। সবার কাছেই ব্লেড থাকে পেন্সিল কাটার জন্য কিন্তু কেউ দিচ্ছেনা।
স্যার হাক পাড়লেন ‘কই দিলিনা’?
আবু সালেহ ভালো সাজার নিমিত্তে ব্লেড এগিয়ে দিল সহাস্যে। এই আবু সালেহ সেদিন মেরে আনা রুপির ভুরিভোজে বেশ খেয়েছিল।
মনিটর আমি, অতএব আমার ডাক পড়ল । জালালের হাতটা টেবিলের সাথে ঠেসে ধরতে হবে। আমি খুব বিরক্তভাব নিয়ে জালালের হাত ধরলাম। স্যার এবার ব্লেড এগিয়ে নিয়ে এলেন একটা আঙ্গুলের মাথার দিকে । অমনি জালাল হাত টান দিল। এবার স্যার ডাকলেন বিশালদেহী রিজওয়ানকে । সেদিন রিজওয়ান খায়নি তাই তার আগ্রহ বেশি । স্যার এবার হাক পাড়লেন ‘কি কি খাওয়া হয়েছিল রে’? এবার কবুতরের বাকবাকুম স্বরে বর্ণনা দিল তারাই যারা একসাথে বসে খেয়েছিলাম। হতবাক আমি!
রিজওয়ান কষে হাত ধরল আমি পাশে দাড়িয়ে রইলাম । স্যার হাক পাড়লেন ‘ তুই কিসের মনিটর , ধরতে পারিসনা, যা বেঞ্চে বয় গিয়ে । আরও একজন বিদ্রোহী এসে জালালের কোমর পেচিয়ে ধরল। জালাল এবার নড়তে পারছেনা বা ভাবছে আজ রেহাই নেই। স্যার তার আঙ্গুলের আগায় পাতলা চামড়া চিরে দিলেন । রক্ত বেরুল। হাউমাউ করে জালাল কাদতে লাগলো ।
ঘণ্টা পড়ে গেছে , স্যার চলে গেলেন। একজন দৌড়ে নিচে গেল ফার্স্ট এইড বক্স থেকে তুলা ডেটল আনতে। জালালকে ধরে বারান্দায় নিয়ে গেলাম বাংলা স্যার আসার আগে। আনা তুলো ডেটল দিয়ে বেধে দিলাম ওর হাত।
১৯৬৮সাল । জালাল আর স্কুলে আসেনি । ওর বাবা এসে টি সি নিয়ে গেল।
জলিল স্যারের প্রতি সবার ঘৃণা উপচে পড়ল।
কিছুদিন বাদে সবাই জড়ো হয়ে শুনল জলিল স্যার জিলা স্কুলের সামনের বাড়ির এক তরুণীকে নিয়ে রাতের আধারে ভেগেছেন।
****
১৯৮৭ সাল। বেইজিঙের রাস্তায় আমাদের গাড়িতে চড়ে অফিসের কাজে যাচ্ছি । কাছেই আমার সাবেক স্কুল কাজেই এই ভিড়যুক্ত মোড় তুং তাঙ্গে এলেই ডানে তাকাই।এলাকাটা আমার খুব স্মরণীয়। আমাদের গাড়ী লাল লাইটে দাড়িয়ে । জেব্রা ক্রসিং পারাপাররত শত মানুষের মধ্যে আমার অতি প্রৌঢ় শিক্ষক ওয়াং লিন ই দুহাত বাচ্চাদের মত সামনে দিয়ে ধীর গতিতে ঠুক ঠুক করে মানুষের ধাক্কা খেয়েও বিশাল রাস্তা পার হচ্ছেন। উত্তেজনা বাড়ল আমার। অবসর নিয়েছেন ১০ বছর আগেই । আমাদের ক্লাশ নিতেন কন্সালট্যান্ট হিসাবে।
সবুজ বাতি জলে গেছে । গাড়ী হু হু করে চলছে , আমি তাকিয়ে পেছনে , লাওশি তো রাস্তা পার হতে পারেননি , নিশ্চয়ই মাঝের আইল্যান্ডে দাড়িয়ে আরও অনেকের সাথে। আমার চোখ ফেটে পানি এলো চীনের শীর্ষ ভাস্করের জন্য। ওয়ার্ল্ড আর্টিস্ট এনসাইক্লোপিডিয়ায় এই একজন চীনা শিল্পীর নাম আছে। থিয়েন আন মেন স্কয়ারের শহীদ বেদিতে তার খোদিত মার্বেল পাথরের রিলিফ কাজ লাগানো।ছাত্র থাকাকালীন একদিন আমায় স্কুল প্রধানের গাড়িতে করে দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন তার বিখ্যাত শিল্প কর্ম । ফরাসী দেশে উচ্চশিক্ষা সেই ১৯৩৮ সালে।জাহাজে চড়ে দেড় মাস লাগত যেতে। ভালবেসে ফরাসী মহিলাকে বিয়ে করলেন। সেই ফরাসী ভাস্কর ওয়াংকে ছেড়ে যাননি । দুর্দিনে কাছে থেকেছেন । সাদা মাটা খাবার আর এক রুমের জীবনকে মেনে নিয়েছেন , সাংস্কৃতিক বিপ্লবে তেমন ঝামেলা হয়নি ওদের । ওয়াং লাওশি ( শিক্ষক) ভেঙ্গে পড়া শরীর নিয়েও স্কুল ভুলতে পারেননা , কাজ নেই তবুও তাকে আসতেই হবে সকালে,অফিসে বসে মনোযোগ দিয়ে ছানি পড়া চোখে পুরনো ফেটে যাওয়া চশমা দিয়ে খবরের কাগজ দেখবেন। কথা বলতেন ভীষণ কম এবং কখনও কিছুই বলতেন না। আবার ১১টা বাজলে ঠুক ঠুক করে হেটে সরকারের দেওয়া ১ বিঘা জায়গার ওপর টিনের ঘর, জোড়াতালি দেওয়া দেওয়াল, আসবাবপত্র নামে মাত্র, সেই বাড়িতে ফেরত , একজন গৃহকর্মী দেওয়া হয়েছে সরকার থেকে, ভোর থেকে সন্ধ্যা সব কাজ করে দিত ওই মহিলা । বাইরে খোলা জায়গায় ইটের স্ট্যান্ড বানিয়ে তাতে ভাস্কর্য স্থাপন করেছেন আর আমায় বললেন লাল মাটিতে গাছ লাগাবেন। ইচ্ছে করলে ফ্রান্সে থেকে যেতে পারতেন কিন্তু এত দুর্যোগ ,অভাব অনটন , খাদ্যাভাব কোন কিছুই টলাতে পারেনি তাকে ও আজন্ম সাথী মেইলাকে। সন্তানহীন এই পরিবার সুখেই আছে।গাড়ি থিয়েন আন মেন স্কয়ার পার হচ্ছে । বা দিকে তাকিয়ে গ্রেট হিরোস মেমোরিয়াল দেখলাম।ওখানেই লাগানো তার মার্বেল খোদিত শিল্পকর্ম। ওয়াং লাওশি বেচে থাকবেন তার শিল্পকর্মে ।মানুষ বৃদ্ধ হলে তার কষ্ট বাড়ে , হৃদয়ে ক্ষরন হয় । ওয়াং লাওশির কথা ভেবে এখনো কষ্ট পাই ।
১৯৯৬ তে তার জেব্রাক্রসিং পারাপার চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল।
****
ওয়াদুদ সাহেব দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করলেন কয়েকটা স্কুলে। এম এ পাশ করার পর তাকে দেখতে এসেছিল দূর গ্রাম থেকে। সরকারি স্কুলেই প্রথম চাকরি। খুব সুনাম কুড়িয়ে ফেললেন ।টিচার্স ট্রেনিং করার পর খুব দ্রুত প্রধান শিক্ষকের পদ দখল করলেন। দূরে কোথাও বদলির আদেশ পাল্টিয়েছেন চাকরি ছেড়ে দেবেন বলে। এই দীর্ঘ সময়ে নিজের গ্রামের বাড়ি হতে আসা যাওয়া । খুব ভোর বেলা যাত্রা এবং সন্ধ্যার পর ফিরে আসা। বাস, ভ্যান বদলে বদলে। তাও বাড়িতে থেকেছেন । বৃদ্ধ বাবা , মা ভাইদের সাথে নিয়ে জমজমাট সংসার। বাবার মত ছুটির দিনে তার কাজ গাছের পরিচর্যা করা। নতুন গাছ লাগানো।পুকুরে মাছের পোনা ছাড়া আবার বড় হয়ে গেলে হইচই করে মাছ ধরা। ক্লান্তিহীন ওয়াদুদ সাহেব স্কুল প্রশাসন দেখেন এবং কম করে তিন চারটি ক্লাস নেন , বড় ক্লাসের, অঙ্ক আর ইংরেজির। ইতিহাস তার খুব প্রিয় । ইতিহাসের শিক্ষক অনুপস্থিত থাকলে নিজেই দরাজ কণ্ঠে পাঠ্যবই ছাড়াই মুখস্ত বলেন।হেড মাস্টারদের কোয়ার্টার থাকে। ওখানে তার জন্য রান্না হয় , দুপুরের এক ঘণ্টার ছুটি, একটু গড়িয়ে নেন। ঝড়-বাদল , হরতালে থেকে যান। বেশ কজন তরুন ব্যাচেলর শিক্ষক তার বাসার অন্য রুমগুলোতে বাস করেন,ওয়াদুদ সাহেব নিজেই আয়োজন করেছেন।
বয়স বেড়েছে , চাকরির জীবন শেষ হয়ে আসছে। হটাত তিনি জানলেন যে মন্ত্রনালয় তাকে শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করতে চাইছেন। ভালো এবং সুখবর। চাচা ও অন্যান্য মুরুব্বিরা সায় দিলেন। বললেন শহরের মধ্যেই অফিস ইচ্ছে করলে চেয়ারম্যানের নির্ধারিত বাংলোয় থাকতে পারবে। ছেলে মেয়েরা বড় হয়েছে , উচু ক্লাসে ঢাকাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তারা । রাজি হলেন তিনি।
স্কুল তাকে বিদায় দিল চোখের পানিতে ভাসিয়ে। কত ছাত্র এখন উচু পদে কর্মরত, বড় শিল্পপতি, এম পি সবাই এলো বিনা নোটিশে । বিদায় ভাষনে বললেন আমি তোমাদের মাঝেই থাকছি তবে একটু দূরে , শিক্ষা ব্যাবস্থা ছেড়ে আমি থাকতে পারবনা, তোমাদের সাথেই থাকছি।
প্রথম দিন তাকে নিতে গাড়ী এল। তিনি অফিস করলেন, দেখলেন, বুঝলেন এবং সন্ধ্যায় আবার ফিরে এলেন। ২৭ কিলোমিটার পথ তাও ১০ কিলোমিটারে ইট বালু পড়েনি কোন কালে, মাটির রাস্তা । গাড়ির ড্রাইভারকে বললেন আগামিকাল পৌনে নয়টায় গ্রামে ঢোকার আগে মেইন রোডে দাড়িয়ে থাকবে আমার জন্য। ড্রাইভার খুব অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো তার নতুন স্যারের কাণ্ডকারখানা দেখে। আগের স্যারদের বেগম সাহেবরা রাত পর্যন্ত ঘুরতেন এখানে সেখানে , যাক বাচা গেল, এখন ড্রাইভারির পদ উঠিয়ে দিলে তার চাকরি শেষ মানে তেলের হিসাব ডাবল করা যাবেনা। ওভারটাইমের কিচ্ছা শেষ । একটা বিড়ি ধরাল হায়দার , ওয়াদুদ সাহেবের ড্রাইভার। কি মনে পড়ায় গাড়ী থামিয়ে রাস্তায় বিড়ি ফুঁকতে লাগলো । আজ স্যার গাড়িতে উঠে জিজ্ঞাসা করছিলেন গাড়িতে সিগারেট কে খায় । হায়দারের বুকের পানি শুকিয়ে কাঠ আর মুখেতো কথাই নেই।
পরদিন ওয়াদুদ সাহেব সময়মত ভ্যানগাড়িতে চড়ে বসলেন। চালক বলল ‘কাকা আজ গাড়ী আসলো না যে !’ ওয়াদুদ সাহেব শুধু বললেন ইঞ্জিন খারাপ। বড় রাস্তার কিনারে তার জন্য অপেক্ষমান গাড়ী । চায়ের দোকানে ড্রাইভার এক হাতে চা , এক হাতের আঙ্গুলের ফাকে বিড়ি আর মুখে গুলতানি। ওয়াদুদ সাহেব গাড়ির পাশে দাড়িয়ে । চায়ের দোকানদার দ্রুত বলল তোমার সাহেব ! ড্রাইভার দৌড়ে দরজা খুলে ধরল। ওয়াদুদ সাহেব তাকে জিজ্ঞাসা করলেন চা’তো শেষ করনি , বিড়িটাও ফেলে দিলে , অপচয় করা ভালো না, তুমি গিয়ে চা শেষ করে বিড়িটাও শেষ করে এসো। লজ্জিত হায়দার গাড়ী চালু করে অফিসের দিকে রওনা দিল।
অফিসে সবাই তাকে দরজায় দাড়িয়ে বরন করল কারন গতকাল ওয়াদুদ সাহেব কাউকে না বলেই বোর্ড অফিসে হাজির। অনেকবার তাকে আসতে হয়েছে স্কুলের চাকুরিতে। প্রায় সবাই পূর্ব পরিচিত।
তার পিয়ন পরিস্কার ঝকঝকে চেয়ারটাকে গামছা পিটিয়ে ছাফ করছে , তিনি বুঝলেন তাকে খুশি করার কৌশল ।
চা চলে এল চেয়ারে বসার পরই । ক্যাশিয়ারকে ডেকে চায়ের হিসাব নিলেন। কেউ কেউ দশ কাপ চা’ও খায় । সব বন্ধ করে দিনে দুবার চায়ের অর্ডার দিলেন। লেখার কাগজ বড্ড বেশি ব্যাবহার হয়। খোজ পেলেন সামনের দোকানে বিক্রি হয় ওগুলো। ড্রাইভারকে লগবুক করে তেলের হিসাব আর কিলোমিটারের হিসাব লিখতে বললেন।
তিনি সবার সাথে আলাদা করে মিটিং করলেন। কাগজ পত্র , ফাইল দেখলেন। কদিন আগে রেজাল্ট হয়েছে এবং গোল্ডেন জি পি এ তে পুরো দেশটাই গোল্ডেন হয়ে গেছে। প্রধান শিক্ষক হবার পর আর খাতা দেখেননি কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অতিরিক্ত ভালো ফলের রহস্য তিনিও জানতেন তবে কারো সাথে আলাপ করতেন না। খাতা কেলেঙ্কারি সবসময় হয় । গার্জেনরা দূর শহর/গ্রাম থেকে হাজির হতেন বাসায়। টাকা সাধতেন , করুন কণ্ঠে বলতেন মেয়েটার বিয়ে , পাশ না হলে ভেঙ্গে যাবে।
হেড মাস্টার হয়ে বেচে গেলেন।
স্যারের মাথায় গোলমাল আছে ,কথাটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল। অফিস চলছে নিয়ম মাফিক । তাকে গাড়ির কথা বলতেই তিনি বললেন আমি দূরে থাকি বলে কেন ৫৪ কিঃ মিঃ রাস্তার তেল খরচ করব ! সামনেই ইন্টারমিডিয়েট , কোশ্চেন ঢাকা থেকে আসবে। কলেজের সীট ব্যাবস্থাপনা দেখলেন । পরীক্ষার আগের দিন ছড়িয়ে পড়ল প্রশ্ন পত্র ফাস। তবু পরীক্ষা হলো । মানুষ তাকে জিজ্ঞাসা করে তিনি উত্তর দেন না। পরীক্ষা চলাকালীন একখানা লেফাফা ডাক পিয়ন সরাসরি তার হাতে দিল। সরকারী ডাক। খুলে যা পড়লেন তাতে তিনি ঘামতে শুরু করলেন। সব পরীক্ষার্থীকে ২০ থেকে ৩০ নম্বর গ্রেস দিতে হবে, ফেলের মান কমিয়ে ১০% সীমার মধ্যে রাখতে হবে।
শার্টের বোতাম খুলে দিলেন।
ওয়াদুদ সাহেবের মাথার মধ্যে কেমন জানি করছে।
হেড মাস্টার পদ ভালই ছিল চেয়ারম্যান হওয়ার লোভ নগদে দিতে হবে। তার সারা জীবনের অর্জিত সুনাম এখন পরীক্ষাপত্র চেক করা শিক্ষকদের কানে কানে বিলীন হবে। আরও এলিয়ে বসলেন জুতা খুলে পা দুখানা মেলে দিলেন। পিয়নকে বললেন এখন কার সাথে দেখা করব না, শরীরটা ভালনা।
প্যারাসিটামল এনে দেই স্যার?
ইশারায় বললেন ‘না’।
এক ঘণ্টা পর প্রশাসনিক কর্মকর্তা দরজা দিয়ে উকি দিয়ে দেখলেন স্যার ঘুমিয়ে আছেন, মাথা একদিকে এলিয়ে কাত করে। তিনি ড্রাইভার পিয়ন সবার কাছে জিজ্ঞাসা করলেন। শুধু পি এস বলল একখানা গোপনীয় চিঠি দিয়ে গেছে পিয়ন। অতি অভিজ্ঞ প্রশাসন কর্মকর্তা ঢুকে গেলেন দ্রুত রুমের ভিতরে চেয়ারের পাশে। বাকিরা একটু দূর থেকে দেখছে। মাথাটা আলতো করে ঘুরিয়ে তিনি বলে উঠলেন ‘ গাড়ী বা অ্যাম্বুলেন্স, দ্রুত’। ওয়াদুদ সাহেবের বা দিকটা মুখের ফেনায় ভেসে গেছে।
হাসপাতালে তাকে সর্বোচ্চ জীবন রক্ষাকারী ওষুধ প্রয়োগ করা হল । পরিবারের সবাই এসে গেছে। স্ক্যান করে দেখা গেল তার ড্যামেজ খুব বেশি এবং এর আর কোন চিকিৎসা এখানে নেই। লাইফ সাপোর্টে চলতে চলতে ২০১৪ সালের জুলাই মাসে রাত ১০ টায় ওয়াদুদ সাহেব গোল্ডেন জগত ছেড়ে অন্ধকার জগতে চলে গেলেন ।।
-------------------------------------------------------------------------------
আব্দুল জলিল , খুলনা জিলা স্কুল

ওয়াং ই , একাডেমী অফ ফাইন আর্ট , বেইজিং

ওয়াদুদ ভুইয়া , মোল্লাহাট , বাগেরহাট
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১০:১৭
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×