
১৯৭৭ সাল । আমার সিনিয়র রুমমেট রেজা ভাই বললেন চল আজ ঈদের দিন , বেড়িয়ে আসি । রেজা ভাইই একমাত্র ব্যাক্তি যিনি আমায় বিবিধ জায়গায় নিয়ে যান আর নতুন মানুষদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন । ঈদ পার্বণে ছুটি থাকলেও এবার বিদ্রোহী হয়েছি যে ইদে বাড়ি যাবনা । যেতে যেতে আমায় বললেন আমরা এক ছাত্রীর বাসায় যাচ্ছি যে দিল্লিতে শিশু চিত্রকলায় প্রথম পুরস্কার পেয়েছে । রেজা ভাই কিছুদিন আগে একটা ছোট জলরং চিত্র দেখিয়ে বলেছিলেন এটা আমি যে ছাত্রীকে ছবি আকা শেখাই তার আঁকা , দিল্লি পাঠাবো শঙ্কর শিশু চিত্র অংকন প্রতিযোগিতায় । ইস্কাটনে ঢোকার মুখে আমায় রেজা ভাই বললেন শহিদুল্লাহ কায়সারের কথা মনে আছেতো ? মুক্তিযুদ্ধের শহীদ , আমরা তার বাসায় যাচ্ছি । দরজার কাছে একটা বেতের সোফায় বসে সাদা শাড়িতে , সাজগোজ এবং গহনাবিহীন পান্না কায়সার হেসে আমাদের আহবান জানালেন এসো এসো । দুই পিচ্চি একজন শমী আরেকজন অমি । আরেকজন বালককে দেখা গেল যে একই রকম প্রিন্ট খদ্দরের জামা পায়জামা পরে আছে , ও গৃহকর্মী । রেজাভাই আস্তে আস্তে আমায় বললেন ওই ছেলেটিও তাই পরে যা অমি এবং শমী পরে । ঈদ পার্বণের উৎসবে ওর আলাদা বলে কিছু নেই । এবার পান্না আপা আমাদের বললেন টেবিলে খাবার দেওয়া আছে , তুলে দেওয়ার অভ্যাস নেই , না খেলে ঠকবে । আসলেই কত কিছু রান্না করেছেন আপা । পছন্দসই খাবার তুলে নিলাম এবং খেলাম । এরপর দীর্ঘসময় চলে গেছে , প্রবাসী হওয়ার কারনে ছোট বন্ধনটুকু আর রইল না । শমী বড় হয়েছে এবং নাটক সিনেমা করছে । পান্না কায়সার সংসদ সদস্যা হলেন , কাগজে , টি ভি তে দেখি । পান্না আপার শেখানো উৎসবে সমমানের পোশাক আর টেবিলে মুক্ত বিচরন বহুদিন পালন করেছি । স্ত্রী (প্রয়াত) যথেষ্ট আগ্রহ না দেখানোতে বাদ গেল সাম্যবাদ প্রকল্প ।
আজ দুপুরে অনলাইনে পান্না আপার মৃত্যু সংবাদ অনেক স্মৃতিময় সময়কে টেনে আনল । শমী এখন এফ বি সি সি আইএর সহ সভাপতি , ভাল লাগলো জেনে ।
মৃত মানুষের জন্য দোয়া পড়ে নিলাম ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


