
বিমান দুর্ঘটনায় অন্যদের সঙ্গে নিহত হয়েছেন ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন। রাশিয়া তথা সারাবিশ্বে তিনি এক আলোচিত নাম। বিশেষ করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে স্বল্প সময়ের জন্য বিদ্রোহ করে অমিত সাহসের পরিচয় দিয়ে তিনি সারাবিশ্বের নজরে আসেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কতটা দুর্বল অবস্থায় আছেন, তা প্রকাশ হয়ে পড়ে তার ওই বিদ্রোহে। দেশ বিদেশে পুতিনের এই সামরিক দুর্বলতার বিষয়ে ফলাও করে রিপোর্ট প্রকাশ হয়। অর্থাৎ পুতিনের চেয়ে দৃশ্যত নিজের শক্তিমত্তা প্রদর্শন করেন প্রিগ্রোজিন। বিমান দুর্ঘটনায় তার মৃত্যুকে ঘিরে তাই এখন নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি স্বাভাবিক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন নাকি তাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন? এ প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে। এমন প্রশ্ন অমূলকও নয়। কারণ, সাবেক গোয়েন্দা সংগঠন কেজিবির সাবেক বস পুতিন খেলেন খুব ঠাণ্ডা মাথায়।
কে এই প্রিগোজিন
ইভজেনি প্রিগোজিনের জন্ম রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে। একই শহরে জন্ম পুতিনেরও। ১৯৭৯ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে প্রথমবার অপরাধী সাব্যস্ত হন প্রিগোজিন। চুরির দায়ে আড়াই বছরের স্থগিত কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে।এর দুই বছর পরেই চুরি ও ডাকাতির মামলায় ১৩ বছর কারাদণ্ড হয় প্রিগোজিনের। এর মধ্যে নয় বছর কারাভোগ করতে হয়েছিল তাকে।কারাভোগ শেষে ব্যবসা শুরু করেন প্রিগোজিন। সেন্ট পিটার্সবার্গে দোকান দিয়ে হট ডগ বিক্রি শুরু করেন তিনি। ব্যবসা বেশ ভালো চলতে শুরু করে।

নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে অরাজকতার মধ্যেই শহরটিতে একটি বিলাসবহুল রেস্তোরাঁ চালু করেন প্রিগোজিন। তখন থেকেই বিত্তবান, ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা শুরু হয় তার। রেস্তোরাঁর সূত্রেই পরিচয় হয় পুতিনের সঙ্গে। তখন তিনি শহরটির ডেপুটি মেয়র। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরেও পুতিন তার বিদেশি অতিথিদের প্রিগোজিনের রেস্তোরাঁয় নিয়ে যেতেন।
এভাবে রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেন প্রিগোজিন। কয়েক বছর পরে তার মালিকানাধীন ক্যাটারিং কোম্পানি কনকর্ড ক্রেমলিনে খাবার সরবরাহের দায়িত্ব পায়। এর মধ্য দিয়ে ‘পুতিনের বাবুর্চি’ বলে পরিচিতি পান প্রিগোজিন। এরপর সামরিক বাহিনী ও সরকারি স্কুলেও খাবার সরবরাহের দায়িত্ব পায় কনকর্ড।
২০০০ সালের পর থেকে নজরকাড়া উত্থান শুরু হয় প্রিগোজিনের। একসঙ্গে একাধিক কোম্পানির মালিক হয়ে যান তিনি। তার কোম্পানিগুলো একচেটিয়াভাবে রুশ সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ পেতে শুরু করে। এভাবে বিপুল অর্থ উপার্জন করেন তিনি।
ধারণা করা হয়, এই অর্থ দিয়েই ওয়াগনার বাহিনী গড়ে তোলেন প্রিগোজিন। পরে তিনি নিজেই বাহিনীর শীর্ষ নির্বাহী ও কমান্ডার পদে যুক্ত হন।
ওয়াগনার বাহিনী কারা?
এই বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সম্ভবত চেচনিয়ায় যুদ্ধ করা রুশ সেনা কর্মকর্তা দিমিত্রি উটকিন। তবে এর বড় উত্থান ঘটে প্রিগোজিনের হাত ধরে।ক্রিমিয়া দখলের জন্য ২০১৪ সালের যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে প্রথমবার মাঠে নামে ওয়াগনার গ্রুপ। তখনই এ বাহিনীর অস্তিত্ব টের পায় পুরো বিশ্ব। এরপর ২০১৫ সালে সিরিয়াতে সরকার সমর্থিত বাহিনীর পাশে থেকে যুদ্ধ করে ওয়াগনার বাহিনী। সেসময় সিরিয়ার তেলের খনিগুলো পাহারা দিতো এই বাহিনীর সদস্যরা। ইউক্রেন যুদ্ধেও সক্রিয় অংশ নিয়েছে ওয়াগনার গ্রুপ।
প্রথমদিকে এই গ্রুপের সৈন্যসংখ্যা ছিল মাত্র পাঁচ হাজার, যাদের অধিকাংশই ছিল বিভিন্ন রেজিমেন্টের সাবেক সৈন্য। তবে ক্রেমলিন নিয়মিত বাহিনীর জন্য লোক পেতে সমস্যায় পড়ার পর ওয়াগনার বাহিনী বড় সংখ্যায় নিয়োগ দিতে শুরু করে। বর্তমানে তাদের সৈন্যসংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি, যার ৮০ শতাংশই এসেছে রাশিয়ার কারাবন্দিদের মধ্য থেকে।
সূত্র: বিবিসি
কেএএ/
মানবজমিন
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০২৩ সকাল ১১:৫৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



