

কিম ইল সুং , কিম জং ইল, কিম জং উন । দাদা থেকে পুত্র ও পৌত্র সবার বিমান ভীতি আছে প্রচণ্ড । এ কারনে তারা সব সময় বিশেষ ট্রেনে চড়ে ১০ দিনের সফরে মস্কো পর্যন্ত যেতেন । তবে এবার কিম জং উনের সফর নিয়ে পশ্চিমা মিডিয়াগুলো বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে । কিম জং উন মস্কো নয় কাছাকাছির ভ্লাদিভোস্টকে যাচ্ছেন পুতিনের সাথে দেখা করতে । রোববার গভীর রাতে পিয়ংইয়ং ত্যাগ করেছেন কিম। মঙ্গলবার সকালের দিকে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তিনি। পিয়ংইয়ং থেকে যাত্রা শুরু করা বিশেষ ট্রেনটি কিমকে রাশিয়ার সাথে উত্তর কোরিয়ার উত্তর-পূর্ব সীমান্ত এলাকায় নিয়ে যাবে। ভ্লাদিভোস্টকে দুই নেতার শীর্ষ বৈঠক মঙ্গলবার অথবা বুধবার অনুষ্ঠিত হতে পারে। রাশিয়ার দূরপ্রাচ্যের শহর ভ্লাদিভোস্টকে ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরামে যোগ দেবেন পুতিন ।
ধীরগতির নিজস্ব বুলেট প্রুফ ট্রেনে ২০ ঘণ্টায় ১ হাজার ১৮০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রাশিয়ায় পৌঁছাবেন কিম। বলা হচ্ছে— এই ট্রেনটিতে একটি আস্ত রেস্টুরেন্ট রয়েছে। যেটিতে পাওয়া যায় ফরাসি ওয়াইন ও উন্নতমানের গলদা চিংড়ি।রেস্টুরেন্ট ছাড়াও কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টিত এই ট্রেনটিতে রয়েছে আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা। তবে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকায় এ ট্রেনটি ঘণ্টায় মাত্র ৫০ কিলোমিটার বেগে ছুঁটতে পারে। এই ট্রেনটির ভেতর কী কী সুবিধা আছে সেটির কিছুটা ধারণা পাওয়া গেছে, এতে চড়া কয়েকজন যাত্রীর বর্ণনাতে।তাদেরই একজন রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সাবেক কমান্ডার কোনস্টানটিন পুলিকোভস্কি। তিনি ২০০১ সালে উত্তর কোরিয়ার সাবেক নেতা কিম জং ইল এর সঙ্গে এই ট্রেনে চড়েছিলেন। নিজের আত্মজীবনী ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেসে ট্রেনটির বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।এতে তিনি লিখেছেন, ‘ট্রেনের ভেতর রাশিয়ান, চাইনিজ, কোরিয়ান, জাপানিজ এবং ফরাসি খাবার অর্ডার দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল।’তিনি আরও জানিয়েছেন, ট্রেনে জীবন্ত চিংড়ি নিয়ে নেওয়া হয়েছিল, যেন তাজা খাবার পরিবেশন করা যায়। এছাড়া এতে ফ্রান্স থেকে আনা ওয়াইনও ছিল।
এই সামরিক কর্মকর্তা তার আত্মজীবনীতে এমনকি বলেছিলেন, ‘পুতিনের ব্যক্তিগত ট্রেনেও এসব সুযোগ-সুবিধা নেই যা এই ট্রেনে আছে।’রাশিয়ার অপর এক কূটনীতিক, জর্জি তোলোরায়া, ২০১৯ সালে এক লেখনিতে ২০০১ সালে ট্রেনটিতে চড়ার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ট্রেনটির ভেতর সুস্বাদু গাধার মাংস এবং এক ধরনের ঝিনুক ছিল। এছাড়া রাশিয়ান মদও ছিল এতে।
এই দুইজনই জানিয়েছেন, ট্রেনের যাত্রীদের বিনোদনের জন্য সঙ্গীত শিল্পীসহ আরও অনেক ব্যবস্থা ছিল।উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, ২০১১ সালে এই ট্রেনের ভেতরই হার্টঅ্যাটাক করে মারা গিয়েছিলেন কিম জং ইল।২০০৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম ডেইলি কোসুন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, এই ট্রেনটিতে ৯০টির মতো বগি আছে। সবুজ রঙ ও হলুদ রঙের ডোরা কাটা এই ট্রেনটির ভেতর কনফারেন্স রুম, অডিয়েন্স চেম্মার এবং বেডরুম রয়েছে। এছাড়া এতে স্যাটেলাইট ফোন এবং বড় আকারের টেলিভিশনের পর্দা আছে।এছাড়া ট্রেনটির প্রকাশিত কয়েকটি ছবিতে দেখা গেছে এতে চামড়ার তৈরি চেয়ার রয়েছে।উত্তর কোরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের দাদা কিম ইল সুংয়ের সময় এই ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়। তিনি ট্রেনটিতে করে ভিয়েতনাম এবং পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে গিয়েছিলেন।
বলা হয়, এই ট্রেনগুলোকে নিরাপত্তা দিয়ে থাকে ভারী অস্ত্রবাহী সেনারা। নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকা এসব সেনা লাইন পরীক্ষা করা এবং পরবর্তী স্টেশনে কোনো ধরনের বোমা হামলার ঝুঁকি আছে কি না সেটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন।
কিম জং উনের বাবা ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত উত্তর কোরিয়াকে শাসন করেন। একটি মতবাদ ছিল, কিমের বাবা প্লেনে উঠতে ভয় পেতেন। এ কারণে তিনি ট্রেনে করেই বেশি যাতায়াত করতেন।
দেখা যাক এবারের সফরে কত রুবলের অস্ত্র বিক্রি করতে পারে কিম পুতিনের কাছে ।
ঢাকা পোস্ট

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


