
ডিসেম্বরে ভোট হবে বলে নভেম্বরেই আমাদের স্কুল পরীক্ষা শেষ হয়েছে । এখন অখণ্ড অবসর । ফকিরদের বাগান মাঠে খেলি অনেকের সাথে । বাবা দুমাস আগেই আমাদের ছেড়ে মহাকালে পাড়ি দিয়েছেন । আপাতত শাসনের বালাই নেই । আমাদের রাস্তা দিয়ে মিছিল যায় । আমরা দেখি বারান্দায় দাড়িয়ে । বাড়ির বাড়তি বাশ দিয়ে একটা নৌকা
বানালাম । বাড়ির সামনে রাস্তার এপার ওপার করে নৌকা টানিয়ে দিলাম সন্ধ্যার অন্ধকারে । যে শ্রমজীবী ছেলেটিকে ডেকে সাহায্য নিলাম লাইট পোস্ট বেয়ে রশি বাঁধতে । তাকে আটআনা পয়সা দিলে সে নিল না বরং খুব সন্দেহ নিয়ে আমায় জিজ্ঞাসা করল এই নৌকা তুমি বানিয়েছ ? অন্ধকারে সে মাথার ওপরে আমার বানানো নৌকা দেখতে লাগলো । আমি খবরের কাগজ ভাতের মাড় দিয়ে লাগিয়েছি । আমার মা আমায় সর্বোচ্চ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন । এরি মধ্যে পুকুর থেকে মাটি এনে ছাদে বসে শেখ সাহেবের মাথা বানিয়ে ফেললাম । এই ৫২ বছরে সেই মাথা জিলা স্কুলের ষ্টোরে আছে । স্কাউট , কাব ক্যাম্পে ওটাকে সাজিয়ে রাখে কিন্তু জানেনা কার তৈরি এই মাথা ।
কাল ভোট । বেশ উত্তেজনা আমার ভিতরে । কিভাবে ভোট হয় ?
সকাল ১০টার সময় মডেল স্কুলে ভোট কেন্দ্রে গেলাম । দুলাভাই আগেই ভোট দিয়ে বাসায় আমাদেরকে আঙ্গুলে বেগুনি রঙ লাগানো দেখাল । কেন্দ্রের সামনে জটলা , সেখানে আমার মেজ ভাইও আছেন । তারা হাতের মধ্যে লুকিয়ে সিগারেট খাচ্ছিল । ওখানে যারা আছেন তারা সবাই আমাদের পাড়ার মানুষ । একজন আমায় বললেন এই তুই কি করতে এসেছিস ? বললাম ভোট দেয়া দেখতে এসেছি । তিনি বললেন যা ঐ ঘরে ভোট হচ্ছে । ঘরের বারান্দায় বেঞ্চি নিয়ে কাগজ পত্র নিয়ে বসে পাড়ার সিনিয়র লোকেরা । একটা সিল নিয়ে আর কাগজ নিয়ে ঘরের মধ্যে যাচ্ছে আর খালি হাতে বাড়িয়ে আসছে । তার আঙ্গুলে নীল কালি লাগিয়ে দিচ্ছে । আমার কাছেই যিনি বসা তিনি মিহি কণ্ঠে আমায় বললেন ভোট দেখতে এসেছ ? আমি মাথা নাড়লাম । এবার তিনি আমায় জিজ্ঞাসা করলেন ভোট দেবে একটা ? মাথা নাড়ালাম হ্যা সুচক । আমার সামনে একটা কাগজ ধরলেন তাতে নৌকা সহ অনেক মার্কা ছাপা । আমায় তিনি বললেন ভোট যদি দিতে চাও কোনটায় দেবে ? আমি নৌকা দেখিয়ে দিলাম । এবার আমার হাতে সিল ধরিয়ে তিনি আরেকজনকে ইশারা করলেন । আমায় ক্লাসরুমের পর্দা ঘেরা জায়গায় নিয়ে বললেন এবার সিল মারো । সিল মেরে কাগজ যাকে ব্যালট বলে তা ভাজ করে দিলেন এবং বাক্সের মধ্যে ফেলতে বললেন । আমার ভিতর কি উত্তেজনা তখন । বাইরে একজন আমার আঙ্গুলে নীল কালি মেখে দিলেন । আমি হাসিমুখে বেরিয়ে এলাম , দৌড়ালাম বাড়ির দিকে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:০৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



